আপন মানুষ –
শেষ পর্ব
দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিছানায় শুয়ে পড়ি। ঘুম আসেনা চোখে।
শুধু টেনশন হচ্ছে আমার।
আমি বুঝতে পারছি জীবনের বড় একটা ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছি আমি।
একটুপর মৌ আমার কাছে এসে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বউ আমার।
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো!
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো
-তাড়াতাড়ি মাঠে আসো।
এই বলেই ফোন কেটে দিলো জুুঁই।
আমি ফোন রেখে চেয়ে আছি মৌ এর মুখের দিকে।
শত ব্যথা বুকে চেপে আমার মুখের পানে চেয়ে আছে মেয়েটা।
আমি উঠে আলমাররির ড্রয়ার থেকে টাকা বের করলাম।
প্যান্ট, শার্ট পড়ে বের হওয়ার জন্য মৌ এর সামনে আসলাম।
অসহায়ের দৃষ্টিতে মৌ চেয়ে আছে আমার দিকে।
-আমি যাচ্ছি। তুমি এদিকটা সামলে নিও মৌ।
-হুম যাও। তবে নিজেকে দেখে রেখো। যেখানেই যাও চিন্তা, ভাবনা করে যেও।
আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে এসো। ওনাকে নিয়েই এসো।
আমি না হয় তোমার মা, বাবাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করবো।
আর সব সময় ফোনে যোগাযোগ রেখো প্লীজ।
কোন কিছু হলেই ফোন করবে আমায় আমি ঠিকাছে?
কথাগুলো একটানে বলে মেয়েটা চেয়ে আছে আমার দিকে।
জানি কথাগুলো অনেক কষ্টে বলেছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে ওর থুতনিটা ধরে বললাম আচ্ছা।
-আমি জানি সবচেয়ে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছি আজ(আর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা তোমারি করলাম)।
আমি দিশেহারা হয়ে গেছি মৌ
আমি তোমায় খুব বেশি ঠকিয়ে দিলাম। ক্ষমা চাওয়ার মতো যোগ্যতাও যে নেই আমার।
এই বলে ঘর থেকে বের হলাম আমি।
মাঠে গিয়ে জুঁই কে দেখতে পেলাম।
জুঁই আমায় দেখেই বলল কোথাও যেতে পারবো না আমি।
আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাও।
-কি বলছো এসব পাগলের মতো?!
এই মুহুর্তে তোমায় বাড়িতে নিয়ে গেলে কেউ মেনে নেবে না। এটা অসম্ভব।
-আমি কিছুই শুনতে চাই না।
আমায় বিয়ে করেছো, এখন বউ হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যাবে এটাই শেষ কথা।
-দয়া করে কয়েকটা দিন সময় দাও আমায়। এর মধ্যে একটা ব্যবস্থা করে তারপর নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তবে তিনদিন সময় দিলাম। এরমধ্যে আমায় বউ হিসেবে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে।
জুঁই কথা শুনে কিছুক্ষন ভেবে বললাম
-আচ্ছা বাড়িতে যাও। আমি এদিকটা দেখছি।
এই বলে আবার বাড়িতে চলে এলাম।
এসে দেখি মৌ মায়ের পাশে বসে মা”র মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।
আমি সোজা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার মাথায় কিছু কাজ করছে না।
তবে কিছু একটা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
একটুপর মৌ ঘরে এলো। আমার পাশে বসে মাথায় হাত দিলো।
-কিছু হয়েছে তোমার, উনি দেখা করেনি?
আমি উঠে বসলাম বিছানায়।
মৌ এর মুখোমুখি বসে ওর চোখের দিকে তাকালাম।
আমার চাওয়া দেখে ও মাথা নিচু করে আছে।
-আচ্ছা মৌ’ আমায় খুব ভালোবাসো তাইনা?
-এসব বলছো কেনো, কি হয়েছে?
-বলো আগে ভালোবাসো কিনা?
-তুমি আমার স্বামী।
স্বামী হলো বিয়ের পর যে কোন মেয়ের কাছে সবচেয়ে
# আপন_মানুষ
# আপন_মানুষকে কে না ভালোবাসে বলো?
-আমার বুকে আসবে একটু?
-হুম, তুমি যে আমার স্বামী। তুমি চাইলে সবই করবো। (লজ্জালজ্জা কন্ঠে)
-তবে এই যে আমি শুয়ে পড়লাম।
তুমি এসে আমার এই বুকে মাথা রেখে একটু শোও।
এর বেশি কিছুই চাইবো না। শুধু তোমায় বুকে নিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমাবো।
-ঠিক আছে।
মৌ আমার বুকে মাথা রেখে একটা হাত দিয়ে আমার মাথার চুলে বিলি কাটছে।
আমি চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
একটুপর কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।
সন্ধ্যার আগে ডাকছে আমায় মৌ
-মা ভাত নিয়ে বসে আছে। চলো ভাত খাই।
উঠে হাতমুখ ধুয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাচ্ছি।
কি সুন্দর সুখ, শান্তির দৃশ্য! ভালোবাসায় ভরা সংসার।
খাওয়া, দাওয়ার পর আমি ঘরে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম!
মৌ দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে মাকে ডাক দিলো।
মা, বোন আর বাবা দৌড়ে আসলো।
আমি তখন অচেতন।
আমাকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়া হলো।
ডাক্তারের সাথে বাবা কথা বলল।
ডাক্তার আমায় পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গেলো।
আমায় পরীক্ষা, নিরীক্ষা করে ডাক্তার বাইরে গেল।
এবং তিনি বললেন আমার ভিতরে বড় ধরনের কিছু হয়েছে।
ভালো হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
আমার বাবা তখন ডাক্তারকে বললেন কোন হাসপাতালে নিতে হবে? কি করতে হবে করুন।
যতো টাকা লাগে লাগোক আমার ছেলের জন্য।
তখন ঐ ডাক্তার আমাকে নিয়ে বগুড়া চলে আসলেন।
সেখানে পরীক্ষা করার পর জানিয়ে দেয়া হলো আমার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে!!
আমার বাঁচার সম্ভাবনা কম!!
এই খবর শুনে আমার পরিবারের সবাই পাগল হয়ে যায়।
হঠাৎ এমন কেনো হলো আমার?!
আমার মা, বোন সবাই আসে আমার কাছে।
ওরা আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদে।
আর ঐ মৌ নামের মেয়েটা কাঁদেনা সহজে।
ও আমার কাছে থাকে। আমার হাত পা টিপে দেয় সবসময়।
কখনো কখনো আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে তোমার কিচ্ছু হবেনা দেখো।
আমি আছি তো পাগল
এই বলে মেয়েটা আমায় জড়িয়ে ধরে। পাগলের মতো বলে আমার দুটো কিডনি আমি তোমায় দিয়ে দেবো দেখো
তুমি বাঁচবে
আমি তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না।
এসব বলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা মৌ।
হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।
ওর কান্না আর আহাজারি দেখে মনে হয় আমিই সেই অভাগা
যে কিনা এমন একটা বউ পেয়েও তাকে ভালোবাসতে পারিনি।
তার ভালোবাসার মূল্য দিতে পারিনি।
মনের অজান্তে দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আমার।
আজ তিনদিন হয়ে গেল হাসপাতালে আছি। আশেপাশের গ্রামের সবাই জানে “” আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।
তাই সবসময় গ্রামের এবং আশে পাশের চেনা’জানা সবাই আমায় শেষবারের মতো দেখতে আসে।
অথচ বারবার খবর পাঠানোর পরও আমার ভালোবাসার মানুষ জুঁইের মুখটা দেখলাম না।
খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার। ওকে একটা নজর দেখবো।
শেষমেশ আমি নিজেই জুঁই কল দিলাম
-হ্যালো জুঁই, আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। তুমি একবার দেখে যাও আমায়।
তুমি দয়া করে আমাদের বিয়ের কথাটা কাউকে বলো না।
আমার জীবনটা মূল্যহীন হয়ে যাবে।
-তুমি তো আমার বউ। এ কথা বলছো কেনো?
-কিসের বউ? দেখো এসব কাউকে বলবে না কিন্তু।
-আচ্ছা বলবো না। তবে আমায় একটা কিডনি দান করবে?
হয়তো কিডনি পাল্টালে আমি বাঁচবো।
-দেখো তুমি এখন মৃত্যুর দুয়ারে।
সেখান থেকে কেনো আরেকজনের বিপদ আনতে চাও?
-মানে? তুমি আমায় বাঁচাতে চাও না।
-ডাক্তার বলেছে যে তুমি বাঁচবে না। আমি বাঁচাবো কি করে?
তোমার হায়াত না থাকলে তুমি মারা যাবে এটাই নিয়ম।
এই বলে ফোন রেখে দেয়! জুঁই।
এইবার আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে!! ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর কথা জেনেও মানুষ এমন আচরন করতে পারে?!
কাকে ভালোবেসেছিলাম আমি!
এই কি ওকে পাগলের মতো ভালোবাসার প্রতিদান?
আজ বুঝতে পারছি বারবার বলার পরেও কেন বাবা মা জুঁইয়ের কথা শুনতে পারেনি। তাকে বউ করে আনতে চায়নি আমার সাথে।
কারন তারা ওর পরিবার ও ওর সম্পর্কে জানতো হয়তো।
আর আমি কিনা সেই মেয়েকেই বিয়ে করলাম সবার অজান্তে।
ঘরে একটা লক্ষি বউ রেখেও আমি অন্ধ ভালোবাসার মোহে পড়ে আরেকটা বিয়ে করলাম।
নকল মানুষকে আপন ভেবে আসল মানুষটাকে দুরে ঠেলে দিতে চেয়েছিলাম।
আগামিকাল আমার অপারেশন হবে।
আমার বউ মৌ আর মা একটা করে কিডনি আমায় দান করতে চেয়েছে।
অপারেশনে লাভ যদিও খুব একটা নাই। কারন ৮০% মৃত্যুর সম্ভবনা আমার।
আমি বেডে শুয়ে আছি। আমার মাথার পাশে বসে আছে আমার বউ মৌ।
হঠাৎ মা, বাবা আর ছোটবোন রুমে ঢুকলো।
ঢুকে বাবা সবার উদ্দেশ্যে বলল তোমরা একটু বাইরে যাও।
আমি আমার ছেলের সাথে আমার ব্যক্তিগত গোপন কিছু কথা আছে।
মা, বোন আর মৌ বাইরে চলে গেলো।
আমি বাবার দিকে চেয়ে আছি অবাক দৃষ্টিতে!
কি এমন কথা! যা আমায় একান্তে বলবে বাবা?
-কি বলবেন আব্বা বলেন? (আমি)
-তুমি কি বুঝতে পেরেছো কিছু? (বাবা)
-হা, আমার কিডনি নষ্ট হয়নি।
এটা আপনার নাটক ছিলো জুঁইয়ের আসল রুপটা প্রকাশ পাওয়ার জন্য তাইনা আব্বা?
-হা, তবে আরেকটা সত্য লুকিয়ে আছে। তা বাবা হয়ে ছেলেকে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
-কি সেটা? বলেন।
-তার আগে বলো, আমি যা জানতে চাইবো তার সত্য জবাব দেবে কিনা?
-হা দেবো, বলেন।
-তুমি সব ধরনের নেশা করো কতোদিন ধরে?
-আব্বা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
যেদিন প্রথম আপনাদের কাছে জুঁইয়ের কথা বলেছিলাম আর সেদিন আপনারা সরাসরি ওকে ভুলে যেতে বলেন।
তারপরেও কয়েকদিন বলার পরেও যখন মেনে নিলেন না ঠিক তখন থেকেই আমি আপনাদের না জানিয়ে নেশার জগতে চলে যাই।
আমি মদ সহ সব ধরনের নেশার জিনিষ পান করতাম নিয়মিতই।
আমি একটা মেয়ের জন্য আপনাদের না জানিয়ে এই অন্যায়টা করেছি।
আমায় দয়া করে ক্ষমা করে দেন আব্বা।
এসব বলে বাবার দিকে তাকালাম…
ওনার চোখে পানি!
-কি হয়েছে আব্বা, কাঁদছেন কেনো?
-আমরা তো তোমায় কোনকিছুর অভাব দেইনি কখনো।
শুধু ঐ একটা মেয়েকে ভুলে যেতে বলেছিলাম।
কারন মেয়েটির পরিবার সম্পর্কে জানতাম। ওরা ভালো মনের মানুষ না, স্বার্থপর।
আর তুমি আমাদের না বলেই এমন জঘন্য পথ বেছে নিলে?
জানো এতে কতো বড় ক্ষতি হয়েছে তোমার?
-কি হয়েছে আমার? বলেন আব্বা।
-এই নাও, রিপোর্ট টা পড়ে দেখো।
আমি কিডনি নষ্টের ব্যপারটা রিপোর্ট না দেখেই ডাক্তার কে বলতে বলেছিলাম যে তোমার ২টা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে এইটা জানাই দেওয়ার জন্য ।
কারন এতে তুমি বুঝতে পারবে কে
আপন_মানুষ ও কে নকল ভালোবাসার মানুষ।
কে তোমার আপন, কে তোমার পর।
হা বুঝতেও পেরেছো এখন।
কিন্তু আসল রিপোর্টটা পেয়ে…
আর বলতে পারছে না বাবা। বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।
আমি রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম…
আমার এক ধরনের ক্যান্সার হয়েছে।
তবে সময়মতো এর সঠিক চিকিৎসা করালে এই ক্যান্সার নাকি ভালো হতে পারে।
তার আগে একটা অপারেশন করাতে হবে।
প্রচুর টাকা লাগবে এই চিকিৎসায়।
তারচেয়ে বড় কথা এই অপারেশনে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।কারন অপারেশন সাকসেস হলে অনেকটা বেচে থাকার আশ্বাস পাওয়া জাবে।
-রিপোর্ট পড়ে খুব বেশি অবাক লাগছে না আমার।
কারন বেশ কিছুদিন হলো আমার কেমন জানি লাগে।
মাঝে মধ্যে ভিতরে কষ্ট হয়।
কখনো কখনো গলা থেকে মুখ দিয়ে রক্ত আসে।
কখনো আবার মাথা ঘুরে পড়ে যাই।
আবার কখনো ভিতরের যন্ত্রনায় একা একা লুকিয়ে কাঁদি।
কাউকে বলতে পারিনি। বুঝতে পারতাম আমার ভিতরে বড় কোন সমস্যা হয়েছে।
কিছুদিন হলো তাই সব নেশা বাদ দিয়ে শুধু সিগারেট টানি। তাও খুব বেশি না।
আমি ভেবেছিলাম সব ছেড়ে দিয়ে সবার অজান্তে নিজের চিকিৎসা করাবো।কারন আজ আপন_মানুষ গুলোর জন্য হাজার বছর বাচতে ইচ্ছে করছে।
.
বাবা আমার কাধে হাত রেখেছে।
-আমি ব্যপারটা এখন না বললেও পারতাম খোকা।
কিন্তু ঘরে একটা মেয়েকে এনে দিয়েছি।
মেয়েটা খুবই ভালো। আমি জানি তুমি ওকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নাওনি।
আমি চাই আল্লাহ্ যতদিন তোমায় ভালো রাখে অন্তর ততোদিন মেয়েটাকে আপন করে নাও।
আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে দোয়া করো তোমার রোগটা যেনো ভালো করে দেয় ওই মালিক।
আর তোমার চিকিৎসা আমি করাবো।
যতো টাকা লাগে লাগোক। প্রয়োজনে সব জমি বিক্রি করে দেবো।
-হা আব্বা। মৌ এর জন্যই আজ খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।
মাত্র কয়টা দিন হলো ও আমাদের বাড়িতে এসেছে। অথচ কতোটা ভালোবাসে ও আমায়।
-হা খোকা।
আর এই ব্যাপারটা তোমার মা বা পরিবারের অন্য কাউকে জানাবে না কিন্তু।
আর আজকেই তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।
তবে তোমার যে ক্যান্সার হয়েছে এটা পরিবারের কাউকে জানানো দরকার নাই।
সবাই এই নিয়ে টেনশনে থাকবে।
শুধু কিডনি নষ্টের ব্যাপারটা মিথ্যা এটাই বাড়ির লোক জানবে।
তবেঐ জুঁই নামের মেয়েটাকে ডিভোর্স না দেয়া পর্যন্ত এটা সবাইকে জানানোর দরকার নাই।
.
বাড়িতে এসে দুইদিন পরই কোর্টে গিয়ে আগে জুঁই নামের মেয়েটাকে মুক্তি দিলাম।
ডিভোর্স দিলাম ওকে।
আজ আমি চিন্তা মুক্ত। আজকেই আমি আমার বউ “মৌ” কে বউয়ের অধিকার দেবো।
এখনো আমাদের স্বামী স্ত্রীর মিলন হয়নি। আজকেই হবে আমাদের নতুন করে বাসর রাত।
.
রাত আট”টা বাজে। খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে ঢুকলাম।
একটুপর মৌ এলো ঘরে,,,ওকে কাছে ডাকলাম…
-আজকে বউ সাজবে তুমি। নিজ হাতে তোমায় সাজিয়ে দেবো আমি।
আজকে হবে আমাদের বাসর রাত।
মৌ লজ্জায় মাথা নিচু করে আমার কাছে আসে।
আমি ওকে নিজ হাতে শাড়ি, গয়না পড়িয়ে বউ সাজিয়েছি।
ও হাসছে মিটিমিটি। সাজানো শেষে ওকে বললাম তুমি খাটে গিয়ে বসো।
খাটে বসে আছে আমার লক্ষি বউ :::::”মৌ।
আমি উঠে ওর ঘোমটা সরিয়ে দিলাম।
ঠিক একটা পরী”কে দেখতেছি আমি। কি সুন্দর লজ্জাময় হাসি ওর।
-এই মৌ…
-হুমম বলো…
-আমি তোমায় খুব কষ্ট দিয়েছি এই কয়টা দিন তাইনা?
-নাহ আমি কষ্ট পাইনি।
গভীর রাতে যখন তুমি উঠে আমার কপালে একটা চুমু দিতে আমি তখন ঘুমের ভান করে থাকতাম।
তখন আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যেতো।
যখন ঘুমের মধ্যেই তোমার ঐ বুকে জড়িয়ে নিতে তখনই বুঝতাম এই লোকটা অনেক ভালো।
শুধু আমায় বউ হিসেবে মেনে নিতে পারছে না পরিস্থিতির কারনে।
তোমার ভালোবাসার মানুষ যদি তোমার হতো তবে সত্যিই আমি সব মেনে নিতাম।
এমন একটা মানুষের ঘরে চাকরানী হয়ে থাকলেও সুখ।
এই কথাগুলো বলে মৌ আমার বুকে মাথা রাখে।
আমি ওকে বুকের উপর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি।
ওর মুখটা আমার মুখের সামনে।
কিছুটা লজ্জাময় হাসি দিয়ে আমায় বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।
আমি ওর মিষ্টি ঠোটের দিকে তাকাই।
ও যেনো আমার চাহনি আর চাওয়াটা বুঝে ফেলে।
আমাকে পাগল করে দিতে থাকে। আমিও আমার স্ত্রীকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিতে থাকি।
অবশেষে শুরু হয় আমাদের নতুন জীবন।
.
ভোরে উঠে চেয়ে আছি মৌ এর ঘুমময় মুখের দিকে।
আগামিকাল আমার অপারেশন। হয়তো হতে পারে এটাই আমার শেষ দিন।
তাই এই সত্যটা ওকে জানানো দরকার।
ওকে ধীরে ডাক দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
ধীরে ধীরে ওকে সব খুলে বললাম।
ও আমায় আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে…
তোমার কিচ্ছুই হবেনা।
আমি নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করবো।
আল্লাহর কাছে আমার স্বামীর প্রান ভিক্ষা চাইবো।
দেখবে তুমি ঠিকই সুস্থ হয়ে যাবে।
-হা পাগলি তাই যেন হয়। আল্লাহ্ আমাকে ভালো করলে আমরা তার দেখানো পথেই সংসার শুরু করবো।
আমার “আপন_মানুষ” কে বুকে নিয়ে নতুন করে জীবন সাজাবো।
এইভাবে কাটিয়ে দিব বাকি জীবন যেখানে আমার ভালোবাসা টুকু শুধুই তোমার………..
পরের দিনই অপারেশন হয়েছিল ৷ আমি জানি মৌ একটু ঘুমায়নি ৷ সারা অপারেশন থিয়্যাটার এর সামনেই বসে ছিল মা-বাবার সাথে ৷
আল্লাহর রহমতে অপারেশন সাকসেসফুল হয় ৷
৪৮ ঘন্টা ছুই ছুই, ,,আমার জ্ঞান ফিরেছে ৷
সবাই অনেক দুঃচিন্তায় ছিল ৷
মায়ের কাছে শুনেছি মৌ নামাজ আমার জন্য অনেক দোয়া করেছে ৷ কান্না-কাটি করে মোনাজাত করেছে আল্লাহর দরবারে ৷ এমন ওর জীবনের বিনীময় আমার জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছে আল্লাহর কাছে ৷
আর একটু পরপরই ডাক্তাকদের কাছে জানতে চেয়েছে আমার কী অবস্থা, আমি কি আমার স্বামীর কাছে যেতে পারবো?
ডাক্তারের জবাবের অপেক্ষায় ছিল, কতোক্ষনে আমার কাছে আসবে ৷
অতপর,আমার জ্ঞান ফিরতেই অনুভুব করলাম কেউ একজন আমার হাত শক্ত করে ধরে কান্না করতেছে ৷
চোখ খুলতেই দেখি আমার পাগলী বউটা “মৌ ”
চোখে পানি আর কান্না ভেজা কন্ঠেই আমাকে বলতে লাগলো, ,,বলেছিলাম তোমার কিচ্ছু হবে না ৷
আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে ৷
তারপর আমি ঈশারায় একটু কাছে আসতে বললাম ৷
শরীর অনেকটা দূর্বল হলেও ওকে জড়িয়ে ধরতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি ৷ ওর অনিদ্রা আর কান্না ভেজা চেহারা দেখে কখন যে আমার চোখে পানি চলে আসলো টেরই পাইনি ৷ তবে এই অশ্রু কষ্টের নয় এই অশ্রু জীবন ফিরে পাওয়ার সুখ আর বাকীটা জীবন মৌ এর সাথে কাটাতে সেই সুখেরই বহিঃপ্রকাশ ৷
এতোক্ষনে মৌ এর মাথা আমার বুকের সাথে মিশে গেছে ৷ আস্তে করেই বল্লাম মৌ তুমি আমার সবচেয়ে বড় আপন_মানুষ
অতপর,মৌ বললো তুমি আমার আপনা’র চেয়েও বেশী আপন_মানুষ
শুরু হলো তাঁদের নতুন জীবন, ,,জনম জনমের জন্য তাঁরা দুজন দুজনার আপন_মানুষ
***
___________________সমাপ্ত________________
___
গল্পটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক ছিলো!
তবে এ গল্প থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে আমাদের।
আমরা যুবক, যুবতীরা অনেক সময় কারো চেহারায় পাগল হয়ে তাকে অন্ধের মতো ভালোবাসি। অথচ তার সম্পর্কে কোনকিছুর জানার প্রয়োজন মনে করিনা।
আবার মা, বাবার কথাও শুনিনা পরে।কিন্তু মা, বাবা বিষয়ে খোঁজ নিয়েই যদি কোন এক সিদ্দান্ত দেয়।
কিন্তু আমরা মনেকরি তারা কেন মেনে নেয় না?
অবশেষে আমরা গল্পের নায়কের মতো নেশায় ডুবে যাই প্রকাশ্যে বা নিরবে।
তারপর মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে যাই প্রিয় মানুষদের ছেড়ে।
আসুন সবাই এই দিকে একটু খেয়াল করে চলি। আর মা, বাবার অজান্তে বা তাদের অবাধ্য হয়ে কোন কাজ না করি।
কারন তারা কখনোই আমাদের খারাপ চায়না।
মনে রাখবেন অহংকারী শামুক গুলোই শুকনাই পড়ে মরে।
মানুষ কে ভালোবাসার পূর্বে ঠিক করে নিবেন যে সেই মায়া ত্যগ করতে পারেন কিনা।
যদি এমন হারাম ভূলে যাওয়া দায়।
তবে এইসব বিয়ের পূর্বে হারাম প্রেম থেকে দূরে থাকায় উত্তম ।
আর মৌ এর মত মেয়ে জেনো বউ হয় সবার ঘরে (আমিন)
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়।
পরবর্তীতে আরো ভালো ভালো পোষ্ট নিয়ে আপনাদের সাথে থাকবো ৷ “ইনশা-আল্লাহ
0
1