স্পেসশিপ jarves কন্ট্রোল রুমে বিশাল মনিটরের সামনে বসে গভীর মনোযোগের সাথে প্লেটো গ্রহ পর্যবেক্ষণ করছে রাজা। পৃথিবী থেকে 7 মাস পূর্বে প্লেটো গ্রহ এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে তারা।
তিন দিন হল গ্রহটার কক্ষপথে এসে পৌঁছেছে।
এখন তারা শুধু গ্রহটাকে পর্যবেক্ষণ করেছে এই ধরনের পর্যবেক্ষন এখন খুবই জরুরী। কারণ প্লেটো গ্রহে মানুষ হিসেবে সর্বপ্রথম তারাই অবতরণ করতে যাচ্ছে। গ্রহ টা সম্পর্কে সঠিক তথ্য গ্রহণ করতে না পারলে অবতরণের পর হয়তো ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
তাছাড়া এই গ্রহ সম্পর্কে পৃথিবী থেকে তাদের যে তথ্য প্রদান করা হয়েছে তা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। কিটো গ্রহ পৃথিবী থেকে অতিরিক্ত দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহাকাশ গবেষণা দ্বারা গ্রহটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাই তাদের এ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হল গ্রহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা পাশাপাশি প্রোগ্রাম করে প্রথম পৃথিবীর পতাকা উত্তোলন করা।
রাজা এবার অবজারভেশন ডেকে কাচের জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সবুজ গ্রহটির মধ্যে এখন পর্যন্ত তারা সন্দেহজনক অন্য কিছু পায়নি। গ্রহটাকে উদ্ভিদের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়নি তবে অবশ্যই কোন না কোন প্রাণী আছে। এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার তামিম প্রথম থেকে চুপচাপ। তবে ক্যাপ্টেন রুসো তিনি কোন বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করবেন না। এ সার্ভিস স্পেসশিপে চারজন ক্রুর মধ্যে উৎসাহিত রাজার মূল কাজ হলো ক্যাপ্টেনের সহযোগী হিসেবে কাজ করা। এই মুহূর্তে তার ডিউটি কন্ট্রোল রুমে। পালাক্রমে সবাইকে কন্ট্রোলরুমে ডিউটি করতে হবে। এটাই নিয়ম। অন্যরকম হতে পারে। অবশ্য এখানে বিশ্রামের প্রতি কোন আগ্রহ নেই কারণ জীবন সবসময় তাঁর গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত। নতুন একটা কিছু পেলে হয়ত সেটা নিয়ে থাকে। বর্তমানে কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে তার গবেষণার বিষয়বস্তু। তবে ইঞ্জিনিয়ার তামিম সে ব্যস্ত আলোক রোশনি নিয়ে। আলোকরশ্মির প্রতিদান রয়েছে এক অজানা আকর্ষণ শূন্য মাধ্যমে কোন প্রতিবন্ধক ছাড়াই কিভাবে আলোক রোশনি গতির দিক পরিবর্তন করা যায় এটি তার চিন্তার বিষয়। আলোচনা সংক্রান্ত সকল যন্ত্রপাতির তার পক্ষে রয়েছে। কোন কাজ না থাকলে এই যন্ত্রপাতি নিয়ে গবেষণা শুরু করে।
jarves মূলত একটা অনুসন্ধান স্পেসশিপ। নতুন নতুন গ্রহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান করা ও সার্বিক কাজ সম্পাদন করা। স্পেসশিপ আকারে ছোট হলেও মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 18 তম নতুন গ্রহ হিসেবে প্লেটো তে অভিযানে এসেছে jarves। এছাড়া পূর্বে নয়টি নতুন গ্রাহকতে অভিযান চালিয়েছে। প্রত্যেকবারের প্রাণের অস্তিত্ব বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উদঘাটন হয়েছে এ কারণে মহাকাশ গবেষণা jarves এর পাশাপাশি jarves এর ক্যাপ্টেনের পদমর্যাদা অনেক উপরে আর ক্যাপ্টেন রুসে সত্যিই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। বয়স 50 হলেও কাজেকর্মে 30 বছরের যুবক কে হার মানাবে। আর এ কারণে গত পাঁচ বছর ধরে একটানা ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে আছেন। তার চরিত্রের সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় কিংবা মজার ব্যাপার হলো তিনি সবসময় নবীনদের নিয়ে মহাকাশ অভিযানে বের হন।এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
জীববিজ্ঞানী জন আর ইঞ্জিনিয়ার তামিম দুজনের বয়স 32 আর রাজার বয়স 27। রাজা যখনই কিটো গ্রহকে দেখছে তখনই তার মনে হচ্ছে কিটো গ্রহে এমন কোন রহস্য রয়েছে যা তারা জানতে পারছে না আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল এই রহস্য টাকে সব সময় তার অশুভ মনে হচ্ছে। বিষয়টা এখন তার মনের মধ্যে ঢুকে গেছে। তার প্রত্যেকবারই প্লেটো গ্রহের দিকে তাকাতে নিজের অজান্তেই শিউরে উঠছে। মনে বারবার এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছে যে তার মত স্পেস ক্রুদে ভিত্তিহীন কোন কিছুতে বিশ্বাস করতে নেই কিন্তু যতবারই সে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করছে ততোবারই যেন সন্দেহটা ধীরে ধীরে বিশ্বাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। রাজা এবার কন্ট্রোল প্যানেল এর সামনে এসে বসতেই অবাক হয়ে মনিটরের দিকে তাকায়। কম্পিউটারে সিসি মনিটোরে প্রাণের অস্তিত্বের সংকেত দিচ্ছে। রাজা তাড়াতাড়ি ক্যাপ্টেন কে ফোন করল ওপাশ থেকে ক্যাপ্টেন রিসিভ করলো।
রাজা উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ক্যাপ্টেন গ্রহে অস্তিত্বের সংকেত পাওয়া গেছে।
সত্যিই বিস্মিত কণ্ঠে ক্যাপ্টেন বললেন।
হ্যাঁ ক্যাপ্টেন। এইমাত্র আমি সিঙ্গেল পেলাম।
সিসি কি গ্রহের মধ্যে থাকা প্রাণীর ছবি তুলেছে।
না ক্যাপ্টেন।
কিটো গ্রহের প্রাণীরা আমাদের কাছে কি কোন সংকেত পাঠাচ্ছে।
না ক্যাপ্টেন।
তাহলে সিসি কিভাবে প্রাণের অস্তিত্বের সংকেত পেল।
ভূমিতে বাতাসের গতির বিপরীতে উদ্ভিদে আলোরনের উপস্থিতি ও উপযোগী করা হয়েছে।
ক্যাপ্টেন কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল তুমি সিসি সংকেতটা আবারো কতক্ষণ দেখো, আমি এক্ষুনি আসছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্যাপ্টেন রুসো জীববিজ্ঞানি জন ইঞ্জিনিয়ার তামিম সবাই কন্ট্রোলরুমে উপস্থিত হল। সবার মধ্যে দারুণ উত্তেজনা। বিজ্ঞানীগণ বারবার ভিডিও দেখছে। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট উদ্ভিদগুলো যেদিকে বাতাস দোলা খাচ্ছে তাই বিপরীত দিকে অল্প কিছু উদ্ভিদ হলে পরে আবার সোজা হয়ে যাচ্ছে এতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হচ্ছে উদ্ভিদগুলোর নিচে কিছু একটা আছে। কিন্তু ভিডিওটা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ফলে সবকিছু স্পষ্ট ভাবে বুঝার উপায় নেই। তারপরও জয় নিশ্চিত উদ্ভিদগুলো এভাবে বিপরীত দিকে করার একমাত্র কারণ ওই প্রাণীগুলো তাই সে তার উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরে কাঁপা গলায় বললো ক্যাপ্টেন আমি নিশ্চিত এখানপ প্রাণি রয়েছে।
ওইখানে প্রাণীগুলো রয়েছে আমিও নিশ্চিত বলল তামিম।
তবে আমি সত্যিই বিস্মিত হচ্ছি সিসির পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দেখে। এতটুকু দূর থেকে সিসি যে এত সুন্দর ভাবে উদ্ভিদের এতক্ষন ও বিপণনের ভিডিওটা তুলতে পেরেছে আমি কখনও ভাবিনি' সত্যিই অসাধারণ! বলল জন
আমি অবাক হয়েছি জন তবে এটা সত্য সিসির অনুসন্ধান সংখ্যাতত্ত্ব আধুনিক এই ভিডিওটা তারই প্রতিফলন বলল তামিম।
এদিকে ক্যাপ্টেন কিছু বলছেনা দেখে জন বললো ক্যাপ্টেন আপনি মনে হচ্ছে কিছু ভাবছেন।
হ্যা জন আমি ভাবছি এরা কতো উন্নত হতে পারে?বলল ক্যাপ্টেন।
ঠিক সেই সময় স্পেসসিপ লড়ে চড়ে বসল।
সব জায়গায় লাল বাতি জ্বলছে।
বিপদ।বলল তামিম।
.
.
.
.
চলবে............
.
.
প্লেটো
.
.
ফওজুল কবির চৌধুরী রাজা