গল্পঃ এক্স গার্লফ্রেন্ড যখন অফিসের বস। পর্বঃ ৫ লেখকঃ মো: রাশেদ আমিঃ ম্যাম আমি আর চাকরি করবো না। আমার এই মাসের বেতন আর সব গুলো কাগজপত্র দিয়ে দেন। স্বপ্নাঃ what! কাজ করবেন না মানে? বললেই হলো। আমিঃ জ্বি ম্যাম আমি আর চাকরিটা করবো না। স্বপ্নাঃ এখানে চাকরি না করলে অন্য কোথাও করতে পারবেন না। আমিঃ কেন পারবো না? তাছাড়া আমি আপনার কোন কেনা গোলাম নই যে আমার এখানেই কাজ করতে হবে। স্বপ্নাঃ এখানে যদি কাজ না করেন তাহলে আপনার এমন অবস্থা করবো যে,,,,, আপনি অন্য কোথাও চাকরি করতে পারবেন না। গ্রামে গিয়ে হাল চাষ করতে হবে আপনাকে। আর আপনার একটা কাগজও পাবেন না। সব গুলো আমি ছিঁড়ে ফেলবো নয়তো বা আগুনে পুড়ে ফেলবো। আমিঃ কিন্তু ম্যাম... স্বপ্নাঃ কোনো কিন্তু নয়, যেটা বলছি সেটাই হবে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। ৩ বছর আগের সেই পুরোনো কথা গুলো মনে পড়তে লাগলো, যেই স্বপ্না আমার জন্য কতো চিন্তা করতো আজ সেই আমাকে চাকরি না করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আমি এবার সেই আগের মতোই বললাম.... প্লিজ স্বপ্না আমার সাথে এমন করো না। (ঠাসসস ঠাসসস) স্বপ্নাঃ তোর এতো সাহস কি করে হয় সামান্য একটা কর্মচারী হয়ে আমার নাম মুখে আনতে। তাও আবার তুমি করে বলতেছিস? আমিঃ সরি ম্যাম। স্বপ্নাঃ কিসের সরি!,,,,যা এখান থেকে। আমি উঠে নিজের ডেস্কে চলে গেলাম, সিহাব আমাকে দেখে বললো.... কিরে আজ এতো দেরি করে আসলি যে? আর তোর মুখে কি, লাল হয়ে আছে কেন? আমিঃ বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় ধাক্কা খাইছি তাই। সিহাবঃ ও আচ্ছা। এরপর কাজ করতে লাগলাম, একটু পর পিয়ন এসে বললো.... স্যার আপনাকে ম্যাডাম ডাকতেছে। আমিঃ ওকে আপনি যান, আমি আসতেছি। একটু পর স্বপ্নার রুমের সামনে গেলাম..... আমিঃ ম্যাম ডেকেছেন? স্বপ্নাঃ আমার জন্য কফি নিয়ে আসেন। আমিঃ ম্যাম এগুলো তো পিয়নের কাজ। স্বপ্নাঃ পিয়নের জন্যও নিয়ে আসেন। আমিঃ মানে? স্বপ্নাঃ বাংলা বুঝস না? আমার আর পিয়ন এর জন্য কফি নিয়ে আয়। যা তাড়াতাড়ি আসবি। আমি আর কিছু না বলে কফি আনতে গেলাম। আমার এমন কর্মকাণ্ড দেখে সবাই কেমন জানি অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কিন্তু সিহাব জেনেও না জানার ভান করে বসে আছে। আমার সাথে এমন হচ্ছে তবুও সে কিছু বলছে না। না বলারও কথা,,, আমার জন্য কিছু বলতে গেলে পরে দেখা যাবে ওর চাকরিটাই নেই। কফি দিয়ে এসে আবার কাজ করতে লাগলাম। সেদিন অফিস শেষ করে বাইরে আসা মাত্রই পিয়নের ডাক.... স্যার আপনাকে ম্যাডাম ডেকেছে। আমিঃ এখন তো অফিস শেষ, আবার কেন? পিয়নঃ জানি না। আপনি গিয়ে জিজ্ঞেস করেন,? আমিঃ ওকে যাচ্ছি। একটু পর স্বপ্নার সামনে গেলাম.... আমিঃ ম্যাম আমাকে ডেকেছেন? স্বপ্নাঃ হুম। আমিঃ কিন্তু এখন তো অফিস ছুটি,,,, এখন আবার কেন? স্বপ্নাঃ তোকে ছুটি দিয়েছে কে? আমিঃ মানে? স্বপ্নাঃ তুই আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি,,, তোর কোনো ছুটি নেই। সব সময় আমার সাথে থাকতে হবে তোকে। আমিঃ সেক্রেটারি বলে কি ছুটি পাবো না? স্বপ্নাঃ না, ফাইল গুলো গাড়িতে উঠা। মিটিং আছে। মিটিং এর কথা শুনেই আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো। ওই দিন গাড়ির পিছন পিছন দৌড়াতে হইছে যদি আজকেও এই রকম কিছু করায়! আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, এমন সময় স্বপ্না আবার বললো.... কিরে কথা কানে যায় না? আমিঃ জ্বি ম্যাম নিচ্ছি। ফাইল গুলো গাড়িতে দিয়ে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, স্বপ্না ভিতরে বসলো। একটু পর বললো... গাড়িতে উঠো। যাক, আল্লাহ একটু রহমত করছে। না হলে যে কি হতো আল্লাই ভালো জানে। আমি ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলাম,,,, স্বপ্না পিছনে বসে বসে মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। মনে হয় husband হবে কারণ আমাদের ব্রেকআপ হইছে ৩ বছর হইছে আর এতো বছর ধরে সিঙ্গেল থাকবে না। ওর দাদা হয়তো বিয়ে দিয়ে দিছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে একটা রেস্টুরেন্টে চলে আসলাম। আমি ফাইল গুলো নিয়ে স্বপ্নার পিছু পিছু রেস্টুরেন্টে গেলাম। দেখলাম একটা ইয়াং ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। স্বপ্না গিয়ে ওর সাথে হাত মিলালো। আমি ফাইল গুলো টেবিলে রেখে বাইরে চলে আসলাম, ড্রাইভার গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপতেছে, আমি তার কাছে গেলাম। আমাকে দেখে বললো.... ভাই আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো,,, কিন্তু সুযোগ পাইতেছি না। আমিঃ কি কথা বলেন। ড্রাইভারঃ আপামনি আপনার সাথে এমন করেন কেন? আমিঃ ভাই আমি নিজেও জানি না। সারা দিন অফিস করে এখন আবার এখানে আসতে হলো, নিজের জন্যও একটু সময় নেই। ড্রাইভারঃ আপনার তো লেখাপড়া আছে,,, এখানে এতো কষ্ট না করে অন্য কোথাও চাকরি দেখেন। আমিঃ সেই সুযোগও নাই ভাই। আপনার আপামনি এমন সিস্টেম করে রাখছে যে আমি অন্য কোথাও চাকরি করতে পারবো না। ড্রাইভারঃ কিন্তু একটা জিনিষ আমার মাথায় আসে না। আমিঃ কি? ড্রাইভারঃ আপামনি তো আমাদের সবার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে,,,, কিন্তু আপনার সাথে এমন করে কেন? আমি যে কাজ করছি সেটা জানলে তুইও আমারে বাটাম দিতি (মনে মনে) ড্রাইভারঃ কিছু বললেন? আমিঃ না কিছু বলিনি। আচ্ছা ভাই আপনার আপামনির বিয়ে কোথায় হইছে? ড্রাইভারঃ আপনি পাগল নাকি, উনার বিয়ে হলে জানতেন না? আমিঃ সত্যিই আমি কিছু জানি না। ড্রাইভারঃ আপামনির নাকি একজনের লগে সম্পর্ক ছিলো,,,, অনেক ভালোবাসতো ওই পোলাটারে,,, ফকিন্নি ওরে ছ্যাকা দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলছে। সেই থেকে আপামনি আর কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করে না,, আর বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিছে কিন্তু উনি রাজি হয় না। হায়রে সেই অভাগা ছেলেটা যে আমি সেটা যদি ড্রাইভার জানতো,,,, সেও আমার কানের নিচে একটা থাপ্পড় দিতো। কথা বলতে বলতে স্বপ্না চলে আসলো..... এরপর আবার গাড়িতে করে অফিসের সামনে চলে আসলাম। রাত প্রায় ৮.০০ টা বাজে। আমি এবার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে fb তে loging করলাম, দেখলাম স্বপ্না আর ছেলেটার অনেক ছবি। ছবি গুলো দেখে অনেক রাগ হচ্ছে,,, আবার fb থেকে বের হয়ে,, খেয়ে ঘুমিয়ে নিলাম। পরের দিন অফিসে গেলাম। কাজ করতেছি একটু পর স্বপ্না আসলো, আমাকে বললো.... সমস্যা কি আপনার? আমিঃ মানে! আমি আবার কি করলাম? স্বপ্নাঃ অফিসে টি-শার্ট কেন? এটা আপনার শ্বশুর বাড়ি নাকি? আমিঃ আসলে ম্যাম.....(বলতে না দিয়ে) স্বপ্নাঃ কি আসলে? নেক্সট টাইম এগুলো দেখলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো কথাটা মনে থাকে যেন। আমিঃ সরি ম্যাম আর হবে না। স্বপ্না চলে গেলো। আসলে অল্প টাকার বেতন আর সেটা দিয়ে ফ্যামিলি চালাতে হয়, বাবা মায়ের মেডিসিন খরচ, ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ, আবার আমার নিজের খরচ। সব সময় টানাটানির মধ্যে থাকি, সেজন্য নিজের জন্য ভালো কোনো কাপড়ও নিতে পারি না। গত কাল সারা দিন স্বপ্নার সাথে থাকার কারনে শার্ট ময়লা হয়ে গেছে। রাতে ধুয়ে দিয়েছিলাম। আমি ভাবছি সকাল পর্যন্ত শুকিয়ে যাবে, কিন্তু শুকায়নি। তাই টি-শার্ট পড়ে গেছিলাম। স্বপ্না চলে যাওয়ার পর সবাই আমাকে এটা ওটা বলে খোটা দিতে লাগলো, লজ্জায় পুরো লাল হয়ে গেলাম। কাজ করতেছি এমন সময় পিয়ন আসলো.... স্যার আপনাকে ডাকছে। কিছু না বলে সোজা স্বপ্নার রুমে গেলাম। আমিঃ ম্যাম ডেকেছেন? স্বপ্নাঃ এই ফাইল গুলো নিয়ে যান। দুপুরের আগে রেড়ি করে দিবেন। নিয়ে দেখি ৮ টা ফাইল, আজকেও যে দুপুরে খাওয়া হবে না সেটা ভালোভাবেই জেনে গেছি। কাজ করতে করতে ৩.০০ টা বেজে গেছে, সবাই খাওয়া দাওয়া করে আসছে বাট আমি পারিনি। ছুটির আগে সবাইকে বেতন দেওয়া হলো,,, সবাই বেতন পেয়ে অনেক খুশি। কিন্তু আমাকে দেয়নি। আমি ভাবছি হয়তো পরে ডাকবে কিন্তু না।। অফিস ছুটি হয়ে গেলো। নিজের কাছেও কেমন জানি খারাপ লাগছে সবাই পেয়ে গেলো আমি পেলাম না। আমি আস্তে আস্তে স্বপ্নার রুমের কাছে গেলাম..... আমিঃ ম্যাম আসবো। স্বপ্নাঃ হুম। কিছু বলবে? আমিঃ ম্যাম আমার বেতনটা যদি দিতেন উপকার হতো। বাবা মায়ের মেডিসিন শেষ, বোনেরও সামনে পরীক্ষা। স্বপ্নাঃ আপনি তো এই মাসের বেতন পাবেন না! মুহূর্তেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো.... বেতন পাবো না মানে? এটা কি ধরনের কথা? স্বপ্নাঃ হুম, পাবে না মানে পাবে না। আমিঃ কিন্তু কেন? আমার অপরাধ। #__চলবে......!
2
13
Oeiejeekk