ভ্রমর

পর্বঃ২

লেখাঃসামিয়া খান

দুজন তৃতীয় লিঙ্গধারীর সাথে একজন রিকশাওয়ালার দারুণ জমজমাট তর্ক চলছে।গাড়ীতে বসে বসে ইহসান তাদের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছেন।তৃতীয় লিঙ্গের লোকগুলো নারী বেশভূষা অনেক সুন্দর করে রপ্ত করে নিয়েছেন।ঠোঁট ভর্তি গোলাপি লিপস্টিক গালে লাল আভা।কমনীয় মুখমন্ডল ভর্তি সাদা পাউডার।কিন্তু পুরুষালী কণ্ঠ এবং পুরুষের ন্যায় দাপট।কি অদ্ভুত তারা।তাদের বেশভূষা চালচলন নারীদের মতো কিন্তু কণ্ঠ থেকে শুরু করে আচার আচরণ সব কেন পুরুষদের মতো?আচ্ছা তবে কি তারা ফেমিনিস্ট লাইট ভার্সন?ইহসান নিজের এহেন অদ্ভুত চিন্তাধারায় একবার বাঁকা হাসলেন।যদি ফেমিনিস্টরা জানতে পারেন যে তাদেরকে সে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সাথে তুলনা করেছে তবে তাকে ছিঁড়ে খাবে।

গাড়ীটা একটা এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়া করালেন ইহসান।গাড়ীর ফ্রন্ট মিররে নিজের চুলগুলো আরো একবড় পর্যবেক্ষণ করে নিলেন।তার বোন ইশা বলে তার গায়ের রঙ নাকী মিল্ক হোয়াইট ক্যারামেল কালার।যখুনি ইহসান মিরর দেখে তখুনি কথাটা মনে পড়ে যায় তার।ইহসান যখন হাঁটেন এক আলাদা মার্ধুযতা বের হয় তার প্রত্যেক কদমে।অনন্য তার পদচারণ অনন্য।সেজন্যই ইহসান ফরাজী দ্বিতীয়জন নেই।

লিফটে উঠতে গিয়ে ভ্রুক্রুটি করতে গিয়েও করলেন না ইহসান।উল্টো আলাদা মোহনীয় হাসি হাসলেন।

তার পাশে এক মাঝবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন।মহিলাটির চোখের দৃষ্টিতে অবাক হওয়া স্পষ্টত।ইহসান একবার খেয়াল করলো মহিলাটিকে।হাই সোসাইটি লেডি।দামী শাড়ি, লাইট এক্সপেন্সিভ অর্নামেন্ট মুখভর্তি হাইলাইট আর ফাউন্ডেশনের আস্তরণ।গা দিয়ে ভুরভুর করে দামী পারফিউমের গন্ধ বের হচ্ছে।চোঁট দুটো ঈষৎ ফাঁক থাকায় মুখের ভেতর চকচকে সাদা দাঁত দুটো দেখা যাচ্ছে।মহিলাটি এবার ইহসানকে অদ্ভুত ভঙিতে জিজ্ঞেস করলেন,

"ইহসান ফরাজী না?"

"জ্বী ম্যাম।আপনি আমাকে চিনেন?"

এবার মহিলাটি ঠোঁটদ্বয় প্রসস্থ করলেন।

"আমাকে চিনেননি?আমি মিসেস তালুকদার।"

ইহসানের জবাব দেওয়ার আগেই লিফটের দরজা খুলে গেলো।

"দুঃখিত ম্যাম।আমার আর্জেন্ট যেতে হবে।"

পিছন থেকে মহিলাটি কিছু বললেও শুনলো না ইহসান।সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো মহিলাটির অভিরুচি কেমন হতে পারে।এসব মেয়ে মানুষকে সে বহু আগ থেকে দেখে এসেছেন। , ,

একটা করিডোরের শেষ মাথার দিকে তাঁকিয়ে হঠাৎ ইহসান থমকে দাঁড়ালো।তার মুখের রেখাগুলো বেশ কঠিন।সামনে একজন নারী দাঁড়িয়ে হুইল চেয়ারে বসা এক লোকের সাথে হাসি ঠাট্টায় ব্যস্ত।তাদের হাসির গুঞ্জন নিরব করিডোরে শব্দ তৈরী করছে।পাশে নয় বছরের এক ছেলে বল নিয়ে পা দিয়ে প্র্যাকটিস করছে।এ দৃশ্য দেখে ইহসান আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না।গম গম পায়ে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালো।লিফট না থাকায় সিঁড়ি দিয়ে হেঁটেই নিচে নেমে এলো।

বেশ নির্লিপ্ত ভঙিতে একটা মেয়ে জড়সড় হয়ে ইহসানের মা তারার কাছে বসে রয়েছেন।কেমন যেন উদভ্রান্তের মতো দৃষ্টি তার।পড়নে ইহসানের মায়ের একটা পুরোনো শাড়ী।দুধে আলতা গায়ের রঙ।ইহসানের তাকে দেখে হুট করে একটা কৌতূহল হলো কারণ তার চেহারায় কাজের মেয়ের মতো ছাঁপ নেই।পরে যদিও সে শুনেছে এ মেয়ে টাকে নাকী তার বাবা রাস্তায় ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।মেয়েটা কথাও বলতে পারেনা কানেও শুনতে পারেনা।

রুমে ঢুকে ইহসান তার মায়ের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।মেয়েটা সেদিকে একবার তাঁকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন।

"বাহ!স্যারের তো দেখেছি কোন কান্ড জ্ঞান নেই।অচেনা মেয়ের সামনে বিছানাতে গড়াগড়ি খায়।"

"মা তাই কি?"

"তাই কি মানে?উঠো ইহসান।এটা ভালো স্বভাব নয়।।"

বাধ্য ছেলের মতো ইহসানের উঠতে হলো।তারা গিয়ে নিজের ছেলের পাশে বসলেন।

"আদিয়ার কোন খোঁজ পেয়েছো?"

ইহসান ফোঁস করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বললেন,

"এখনও পাইনি মা।"

"মেয়েটা হঠাৎ কর্পূরের মতো উবে গেলো।"

"সেটাই তো কথা মা।"

"ওর বাবা শুনছি কেস করবে।"

"আরে আমার শ্বশুর পাগল।মেয়ে অন্য ছেলের সাথে গিয়েছে।কেস করে আরো আমার সম্মানটা নষ্ট করবে।"

"কিন্তু হাজার হোক মেয়ে তো।"

"তার মেয়ে ঠিক আছে নতুন জামাইয়ের সাথে।"

"এক মিনিট!তুমি কীভাবে জানলে?"

"ধারণা করেছি মা।"

"তুমি তো আবার কিছু করিসনি?"

ইহসান ভ্রুক্রুটি করে তার মায়ের দিকে তাঁকালেন,

"আমাকে তোমার এমন মনে হয়?শুনো মা ইহসান আর যাই করুক মেয়েদের সাথে খারাপ করে না।"

"সারাদিন ওই ফ্ল্যাটে একা পড়ে থেকে কি করো বুঝতে পারিনা।"

"মাংস কাঁটি।কেঁটে বিক্রি করি।"

"আশ্চর্য কফি খাবে?"

"সাথে তোমার বেক করা লেমন্ড কুকিজ থাকলে অবশ্যই খাবো।"

"অপেক্ষা করো। কিছু সময়।"

তারা চলে যেতে নিলে ইহসান তাকে থামালেন।

"মা তিন কাপ নিয়ে এসো।"

"কেন?"

"এই মেয়ের জন্যও আনবে।বাই দ্যা ওয়ে এর নামধাম কিছু জানো?"

"তোমার বাবা রেখেছেন নাম আসমীরা।"

"ভালো ইউনিক নাম তো।"

তারা চলে গেলে ইহসান আরো কিছু সময় আসমীরাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন।হঠাৎ কল আসায় তার পর্যবেক্ষণে ব্যাঘাত ঘটলো।ফোন বের করে ইহসান দেখতে পেলেন আবাদ কল করেছেন তাকে।

"এইযে প্রাণতিমির এখন মনে হলো আমার কথা?"

ইহসানের এমন ডাকে ভেতর থেকে সব তছনছ হয়ে গেলো আবাদের।

"কি বললেন?"

"কিছুনা।কেন কল করলেন?"

"আমি আপানার ফ্ল্যাটে আসবো না।"

"কেন?"

"জানিনা।"

"আশ্চর্য আবাদ।আমি আমার ফ্ল্যাটে সেইফ থাকবেন।ভয় কেন পাচ্ছেন?"

"ভয় না বাবা মানবেনা।"

"মানবে।"

"কীভাবে?"

"তা আপনি আমার উপর ছেড়ে দেন।"

"ছাড়লাম।"

আবাদ কল কাঁটার পর তারা কফি হাতে রুমে প্রবেশ করলেন।

"কার সাথে কথা বলছিলে?"

"বিজনেস ক্লায়েন্ট।"

"ঠিক আছে তুমি এখানে বসে কফি খাও।আমি তোমার দিদানের কাছে যাচ্ছি।"

তারা চলে গেলে ইহসান আবার ফোনে কাউকে কল করলো।

"আনায়া বলছেন?"

ওপাশ থেকে শুধু হু শব্দ এলো।

"দেখেন না আবাদ কি করছে?আমার ফ্ল্যাটে এসে থাকবে।তাও একা।কি জঘন্য ব্যাপার।"

বেশ কিছুসময় ইহসান আবাদের গীবত করে ফোন রেখে আরামসে কফি গিলতে লাগলেন।তার পাশে বসে আসমীরা কেমন শূন্য দৃষ্টিতে ইহসানকে দেখছে।কফি গিলতেও ভুলে গিয়েছে আসমীরা।

চলবে,,,

1
$
User's avatar
@faruk420 posted 4 years ago

Comments