ওয়াটার ইনটক্সিকেশন

0 9
Avatar for alma45
Written by
4 years ago

🔰ওয়াটার ইনটক্সিকেশন

পানি বেশি খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে বা অতিরিক্ত পানি খেলে মারা যেতে পারেন। এমন কথা আমরা প্রায়ই শুনি। আমরা জানবো বিজ্ঞান কি বলে, আর মেকানিজম টা কি তা বোঝার চেষ্টা করবো একটু সহজভাবে। ওয়াটার ইনটক্সিকেশন কি, কেন হয়, লক্ষন কি আর আপনার এটি নিয়ে চিন্তিত হবার প্রয়োজন আছে কিনা জানবো আমরা।

ওয়াটার ইনটক্সিকেশন কে ওয়াটার পয়জনিং ও বলা হয়। অনেক বেশি পানি পান করার কারণে ওয়াটার ইনটক্সিকেশন হয়ে থাকে। অনেক বেশি পানি পান করলে তা আপনার রক্তে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত পানি রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে সোডিয়ামের। যখন সোডিয়াম লেভেল ১৩৫ মিলিমোল/লিটারের থেকে কমে যায় তখন একে হাইপোন্যাট্রেমিয়া বলে। সোডিয়াম আমাদের কোষের ভিতর এবং বাইরের তরলের মাত্রা ব্যালান্স করে। যখন অতিরিক্ত পানি পানের কারণে সোডিয়াম লেভেল কমে যায়, তখন কোষের বাইরের পানি কোষের ভিতরে চলে যায় এবং কোষের আকার বৃদ্ধি পায়। যখন এটি আমাদের মস্তিষ্কেরর কোষে হয় তখন তা প্রানঘাতী হতে পারে।

🔰ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের লক্ষন🔰

কোষের আকার বৃদ্ধি পায় ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের কারণে। যখন মস্তিস্কের কোষের আকার বৃদ্ধি হওয়া শুরু করে তখন মাথার ভিতর চাপ বৃদ্ধি পায়। এই চাপের কারণে প্রাথমিকভাবে কিছু লক্ষন দেখা দেয়, সেগুলো হলঃ

👉মাথা ব্যাথা

👉বমি বমি ভাব

👉বমি হওয়া

অবস্থা যদি আরও সঙ্গিন হয় তবে নিচের লক্ষন গুলো দেখা দিতে পারে।

👉রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া।

👉তন্দ্রাচ্ছন্নভাব।

👉কনফিউশন।

👉ডাবল ভিষন।

👉শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

👉পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া, খিল ধরা।

ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের কারণে ব্রেইন ড্যামেজ, কোমা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের কারণে মৃত্যুর কারন হতে পারে শুনে অনেকে হয়তো ভয় পেলেন। অতিরিক্ত পানি পান করা অনেক কঠিন, ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের কারণে মৃত্যুর যে কেস গুলো সামনে এসেছে সেখানে তারা খুবই অল্প সময়ে অতিরিক্ত পানি পান করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সৈনিক বা এথেলেট দের মধ্যে ওয়াটার ইনটক্সিকেশন দেখা গেছে। যারা মারা গেছে তারা মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ২.৫-৫.৬ গ্যালন (১০-২০ লিটার) পানি পান করছেন। আর এথেলেটরা ডিহাইড্রেশন এড়াতে অনেক সময় অতিরিক্ত পানি পান করে ফেলে, সে কারণে তাদের মধ্যে হাইপোন্যাট্রেমিয়া দেখা দেয়।

সহজ করে যদি বলি, আপনি ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে ১০-২০ লিটার পানি পান করলে ওয়াটার ইনটক্সিকেশন হতে পারে।

🔰এবার জেনে নেই কতটা পানি অনেক বেশি🔰

আপনার কিডনি প্রসাবের মাধ্যমে শরীর থেকে যতটা পানি বের করতে পারে তার চেয়ে বেশি পানি পান করলে তখনই ওভার-হাইড্রেশন এবং ওয়াটার ইনটক্সিকেশন হবে। তবে পানির পরিমাণ একমাত্র সূচক না, আপনি কতটা সময়ের মধ্যে পানি পান করছেন সেটাও এক্ষেত্রে বিবেচ্য। আপনি যদি খুব অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত পানি পান করেন তবে আপনার ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই ঝুঁকি আবার অনেকাংশে কমে আসে যখন আপনি একই পরিমান পানি দীর্ঘ সময় ধরে পান করেন। হাইপোন্যাট্রেমিয়ার লক্ষনগুলো তখনই প্রকাশ পাওয়া শুরু করে যখন কেউ ৩-৪ লিটার পানি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে পান করে।

আপনার কিডনি সারাদিনে ৫.৩-৭.৪ গ্যালন বা ২০-২৮ লিটার পানি শরির থেকে বের করতে পারে, তবে ঘন্টায় ৮০০ মি.লি থেকে ১ লিটারের বেশি পানি শরীর থেকে বের করতে পারেনা। তাই হাইপোন্যাট্রেমিয়া এড়াতে আপনার কখনোই ঘন্টায় ৮০০ মি.লি থেকে ১ লিটারের বেশি পানি খাওয়া উচিৎ নয়। ঘন্টায় ২ লিটারের বেশি পানি পান করলে ওয়াটার ইনটক্সিকেশনের লক্ষনগুলো দেখা দিতে পারে।

এখন এক্সপার্টরা যখন দিনে ৫-৬ লিটার পানি পান করতে বলে তখন বেশিরভাগ মানুষের চোখ কপালে উঠে যায়। জাঙ্কফুড, সফট ড্রিংক খাবার সময় কেউ ভাবে না কিডনির কথা, তবে যখনই পানির কথা বলা হয় সবাই কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে এ চিন্তায় পড়ে যায়। আমাদের কিডনি রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিতে কাজ করে। অতিরিক্ত পানি শরিরে হলে তা বের করে দিয়ে শরীরের ফ্লুইড লেভেল ব্যালান্স করবে। আর ঘন্টায় কতটা পানি আমাদের কিডনি শরীর থেকে বের করতে পারে তা আমরা উপরে জানলাম। এর বেশি যদি পানি পান করি তবেই না কিডনির উপর চাপ পড়বে এবং কিডনি ড্যামেজের সম্ভাবনার কথা আসবে। ঘন্টায় ৫০০ মি.লি- ১ লিটার পানি পান করলে তা কিভাবে কিডনি ড্যামেজ করবে বা কিডনির উপর চাপ ফেলবে? আমরা সারাদিনে এভারেজে ১৬ ঘন্টা জেগে থাকি। প্রতি ঘন্টায় যদি ৫০০ মি.লি পানি পান করি তাহলে ৮ লিটার পানি হয়। যেখানে ঘন্টায় লিমিট হল ১ লিটার। এখন যদি ৫-৬ লিটার পানি সারাদিনে কেউ পান করে কিভাবে তার ওয়াটার ইনটক্সিকেশন হবে বা হাইপোন্যাট্রেমিয়া হবে! ঘন্টায় ১ লিটারের বেশি পানি না পান করলে আপনার চিন্তার কিছুই নেই।

পানি আমাদের জন্য খুবই জরুরি।

1
$ 0.00
Avatar for alma45
Written by
4 years ago

Comments