ভূতুড়ে বন

0 3
Avatar for alma45
Written by
3 years ago

বিজ্ঞানের সকল সম্ভাব্য কারণকে উপেক্ষা করে গুরুতর রহ্যস্যকে ধারণ করে যুগের পর যুগ দাঁড়িয়ে রয়েছে এক বিশাল বন। নানারকম অদ্ভুত ঘটনার ঘটনাস্থল এই বন। বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর বহু চেষ্টা করেও এর রহস্যের কোনো কূল-কিনারা করতে পারেননি। যার ফলে অসংখ্য গাছ-গাছালিতে ঘেরা বনটি ‘ওয়ার্ল্ড’স মোস্ট হন্টেড ফরেস্ট’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে সকলের কাছে।

রোমানিয়ার ট্রান্সসিলভানিয়ায় অবস্থিত ক্লাজ নাপোকা শহরে হইয়া বাছিউ নামক একটি বন অবস্থিত। এই বনে প্রায়শ ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত ঘটনা বনটিকে ভৌতিক ও রহস্যময় করে রেখেছে। প্রায় ২৫০ হেক্টর জায়গার উপর বনটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই বনের গাছগুলোর আকৃতিও কিছুটা অস্বাভাবিক, কেমন যেন ডালে ডালে প্যাঁচানো সব গাছ।

অশরীরী কোনো কিছুর উপস্থিতি, অদ্ভুত কিছুর আবির্ভাব, আলোর বলয় সহ এমন অনেক কিছুরই বর্ণনা পাওয়া যায় এলাকাবাসী এবং বন পরিদর্শনে আসা লোকদের কাছ থেকে।

বনে ঘুরতে আসা প্রায় সকলের কাছ থেকেই শোনা যায়, তারা বনে থাকার পুরো সময়টা জুড়েই এক ধরনের অস্বাভাবিক মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভুগে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, তারা অনুভব করেন, কেউ তাদেরকে প্রতিনিয়ত চোখে চোখে রাখছে।

১৯৬৮ সালে এই বনটি সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীর কাছে তার রহস্য নিয়ে পরিচিত হয় এমিল বার্নিয়া নামক এক ব্যক্তির তোলা ছবির মাধ্যমে। এই বনে ভ্রমণের প্রাক্কালে এমিল বার্নিয়া একটি ইউএফও দেখেন বলে দাবি করেন এবং সাথে সাথেই তিনি তা ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কিছুদিন পরেই জীববিজ্ঞানী আলেক্সান্ডু শিফট সেখানে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন এবং আশেপাশের এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলেন। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এমন গোলাকৃতির তীব্র আলোর বলয় বন থেকে উর্ধ্বাকাশের দিকে মাঝে মাঝে যেতে দেখেছেন। ২০০২ সালে সর্বশেষ ইউএফও দেখেছিলেন দু’জন ক্লাজবাসী। তারা বনের খুব কাছাকাছি প্রতিবেশী শহর মানাস্তুরে থাকেন। তারা সিগারেটের মত লম্বা, প্রায় ৫০ মিটার দীর্ঘ একটি অতি উজ্জ্বল আলোকবস্তু বন থেকে আকাশের দিকে ছুটে যেতে দেখেছিলেন। প্রায় ২৭ সেকেন্ডের জন্য তারা বস্তুটিকে দেখতে পেয়েছিলেন।

কথিত আছে, একবার এক মেষপালক প্রায় ২০০টি মেষশাবককে ঘাস খাওয়ানোর জন্য এই বনে প্রবেশ করেছিল। আশ্চর্যজনকভাবে তারা আর কখনো ফিরে আসেনি, একেবারে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পরে অনেকেই এই বনে প্রবেশ করতে যথেষ্ট পরিমাণ ভয় পায়। তাদের মাঝে একধরনের ভীতি কাজ করে, একবার এই বনে কেউ গেলে হয়ত আর ফিরে আসবে না কোনোদিন। এরপরেও সাহস করে যারা গেছেন, তারা মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, বমিভাব, গায়ে ফোস্কা পড়া, আঁচড়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুড়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুবিধার শিকার হয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই বনে অস্বাভাবিক মাত্রায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ ও ইনফ্রারেড বিকিরণ হয়ে থাকে। এছাড়াও এখানে চুম্বকীয় ও তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের বেশ কিছু বিচ্যুতি রয়েছে। বনের ঠিক মাঝখানে এমন একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে কখনো কোনো ঘাস বা অন্যান্য কোনো গাছ-গুল্ম জন্মাতে দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা এখানকার মাটি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন, কিন্তু পরীক্ষা করে এমন কোনো পদার্থের উপস্থিতি সেখানে পাওয়া যায়নি, যার কারণে কোনো উদ্ভিদের জন্ম এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই জায়গাটিকে ভূতুড়ে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু বলে থাকেন। তাদের ধারণা, কোনো অশরীরী কিছু বা অতৃপ্ত আত্মার বাস এ জায়গায়।

ভূতুড়ে ঘটনাবলীর কারণস্বরূপ এলাকাবাসীরা বলে থাকেন, রোমানিয়ার বেশ কিছু চাষীকে নাকি অন্যায়ভাবে এই বনে হত্যা করা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে। তাদের অতৃপ্ত আত্মাগুলো হয়ত এই বনে আটকে রয়েছে। রহস্যময় আলোর কুন্ডলী, বনের গাঢ় স্তব্ধতা ভেদ করে অদৃশ্য রমণীর কন্ঠস্বর এবং কখনো বা হাসির আওয়াজ- এ সকল ঘটনা প্রায়শই এলাকাবাসী প্রত্যক্ষ করে থাকেন। বনের গাছগুলোর মাঝ দিয়ে মাঝে মাঝে সারি সারি আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসতে দেখেন স্থানীয়রা। এত আলোকরশ্মির কারণে সেই জায়গার তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু থার্মাল ডিটেক্টর দিয়ে মেপে তাপমাত্রার কোনো তারতম্য পরিলক্ষিত হয়নি।

বছরের পর বছর যে রহস্যকে আগলে রেখেছে এই বন, তার স্বরূপ উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা লেগে রয়েছেন দিনের পর দিন। কিন্তু কোনোভাবেই রহস্যের জালটাকে ঠিক ছিন্ন করতে পারছেন না। সকল নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও ভৌতিকতার ঘন অন্ধকারে ঢাকা পড়ে রয়েছে ট্রান্সসিলভানিয়ার এই বনটি।

তো এই অরণ্যের এসব অদ্ভুত ঘটনা গুলো নিয়ে আপনার কি মনে হয়?

1
$ 0.00
Avatar for alma45
Written by
3 years ago

Comments