"শূন্য থেকে মহাবিশ্ব"
✍️ কিভাবে এটি সম্ভব যে, একেবারে শূন্য থেকেই আমাদের এই পুরো মহাবিশ্বটা সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে?কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক, পদার্থবিদ্যার সূত্র কিন্তু বলে ব্যাপারটা সম্ভব।তাও আবার একেবারে পদার্থবিদ্যার পিওর সূত্র মেনে।আর পদার্থবিদ্যার নিয়ম মেনে যা কিছু সম্ভব তা অবশ্যই সম্ভব,তা যতই অসম্ভব বলে মনে হোক না কেন।কাজেই যাদের পদার্থবিদ্যার প্রতি পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে তারা ব্যাপারটাকে অবশ্যই স্বভাবিকভাবেই নেবে।মূল কথায় আসা যাক।
"কিছু না" থেকেই আমাদের পুরো মহাবিশ্বটা কিভাবে সৃষ্টি হয় তা বুঝতে হলে প্রাথমিকভাবে অন্তত দুটো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।এই দুটো প্রশ্ন প্রায় সময় আমাদের ধাঁধার মধ্যে ফেলে রাখে।প্রশ্ন দুটো হচ্ছে-
১.শুধুমাত্র যে শূন্য থেকেই এতবড় মহাবিশ্বটা সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে সে শূন্যতা আসলে কী?
২. এতবড় মহাবিশ্বে এত এত যে বস্তু ও শক্তির উপস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি কি করে তা শূন্য থেকেই সৃষ্টি হল,এতে কি শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতির ভংগ হচ্ছে না?
দুটো প্রশ্নের উত্তর আমি একই সাথে দিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি-মহাবিশ্বের সকল কণা তথা মহাবিশ্বের সবকিছু ক্ষেত্র দ্বারা তৈরি,কিন্তু ক্ষেত্রকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখলেই কেবল আমরা তার কণারূপ দেখতে পাব।
(চিত্র:১-ক)
আমাদের মহাবিশ্বে যতগুলো মৌলিক কণা আছে তারা প্রত্যকেই হচ্ছে এক একটা ঢেউ।প্রত্যেক মৌলিক কণার সাথে জড়িত থাকে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্র আবার প্রতি নিয়ত অস্থির অবস্থায় বিদ্যমান থাকে।ক্ষেত্রের অস্থিরতার ফলে সৃষ্ট যে ঢেউ তাই হচ্ছে ওই ক্ষেত্রের সাথে জড়িত কণা।যেমন কোয়ার্ক কণা হচ্ছে,কোয়ার্ক ক্ষেত্রের সাথে জড়িত ঢেউ,W কণা হচ্ছে W ক্ষেত্রের সাথে জড়িত ঢেউ, আলোক কণা ফোটন হচ্ছে তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের ঢেউ, ইত্যাদি। নিজ নিজ ক্ষেত্রের সাথে জড়িত এসকল কণার ভর কত হবে তা নির্ভর করে ক্ষেত্রটিকে কম্পমান করতে যে পরিমাণ শক্তি লাগে তার উপর,অথবা বলা যায় কণাটি ক্ষেত্রের সাথে কিভাবে মিথষ্ক্রিয়া করে তার উপর।এখন এমন একটি স্থান কল্পনা করা যাক যেখানে কোন কণার উপস্থিতি নাই কোন বিকিরণের উপস্থিতি নাই। এধরনের একটি স্থানকে আমরা শুন্যস্থান বলে থাকি।যেহেতু শুন্যস্থানে কোন ধরনের কণা ও বিকিরণের উপস্থিতি নাই, কাজেই এটিই স্বাভাবিক যে শুন্যস্থানে কোন ক্ষেত্রের উপস্থিতিও নাই।কিন্তু না,শুন্যস্থানে কণার উপস্থিতি না থাকলেও ক্ষেত্রের উপস্থিতি সবসময়ই বিদ্যমান থাকে।এবং সবসময়ই এ ক্ষেত্রের একটি অশূন্য মান থাকে। এই ক্ষেত্রটিকে বলে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র বা হিগস ক্ষেত্র।যেহেতু ক্ষেত্রের অস্থিরতাই(বা ঢেউ) হচ্ছে সে ক্ষেত্রের সাথে জড়িত কণা,কিন্তু শুন্যস্থানে কণার উপস্থিতি নাই,কাজেই আশা করা যায় শুন্যস্থানের সাথে জড়িত ক্ষেত্রের কোন ধরনের অস্থিরতা(বা ঢেউ) থাকবে না।অর্থাৎ ক্ষেত্রটি হবে একেবারে স্থির শান্ত।এ ধরনের স্থির শান্ত একটি ক্ষেত্রের প্রত্যেক বিন্দুতে একই মান পাওয়া যাবে অর্থাৎ ক্ষেত্রটির মান হবে ধ্রুবক। কিন্তু এখানেই কোয়ান্টাম মেকানিক্স বরাবরের মতোই আমাদের কমনসেন্স কে ধাক্কা দেয়।কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে, এমনকি শুন্যস্থানের সাথে জড়িত প্রত্যেক বিন্দুতে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের বা হিগস ক্ষেত্রের মান ধ্রুবক না হয়ে এটি সামান্যতম হলেও উঠানামা করতে থাকে।
(চিত্র:১-খ)
শূন্যস্থানে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের এই উঠানামা বা অস্থিরতাকেই বলা হয় কোয়ান্টাম অস্থিরতা বা কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বা ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন।এই হিগস ক্ষেত্রের সাথে জড়িত ঢেউটি হিগস বোসন নামে পরিচিত।যদিও স্থানের বৃহত্তর পরিসরে ক্ষেত্রের এই উঠানামা বা অস্থিরতা দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে না।স্থানের বৃহত্তর পরিসরে ক্ষেত্রকে স্থির শান্ত বলেই মনে হবে।কিন্তু স্থানের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পরিসরে গেলে(১০^-৩৫মি.) আমরা দেখব সেখানে ক্ষেত্রের স্থির শান্তশিষ্ট সেই চরিত্র আর নাই।তার বদলে দেখা যাবে,ক্ষেত্র টগবগে অস্থির অশান্ত।
(চিত্র:২)
ক্ষেত্রের এসব অস্থিরতাকে কোয়ান্টাম ফোম বা কোয়ান্টাম বুদবুদ ও বলা হয়।যেমন একটি পুল টেবিলের উপরিস্তরকে সাধারনভাবে দেখলে একে খুবই মসৃণ দেখায়,কিন্তু যদি বড় করে অনেক অনেক কাছ থেকে দেখা হয় তবে দেখা যাবে তাতে অনেক এবড়োখেবড়ো রয়েছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে,কেন শুন্যস্থানে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের মান ধ্রুবক না হয়ে উঠানামা করে,অথবা বলা যায় কেন শুন্যস্থানে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র অস্থিরতা ভাব দেখায়?উত্তর হচ্ছে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি।এই নীতি বলে,যে কোন কঞ্জুগেট চলকের(কঞ্জুগেট চলক হচ্ছে,পরস্পর সম্পর্কিত সে সকল জোড়া রাশি বা চলক যাদের গুণফলের একক সবসময় কাজের একক বা প্লানকের ধ্রুবকের এককের সমান হয়।যেমন:অবস্থান-ভরবেগ,শক্তি-সময় ইত্যাদি) মান যুগপৎভাবে সঠিকতার সাথে নির্ণয় করা যায় না।একটি যত সঠিকভাবে নির্ণয় করা হবে অন্যটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ততই অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়।যেমন ধরুন একটি বাটিতে একটি মার্বেল রাখা হল।কী দেখব আমরা?মার্বেলটি বাটিতে স্থির হয়ে বসে আছে।
(চিত্র:৩)
এখন মার্বেলটিকে যদি অনেক ক্ষুদ্র চিন্তা করা হয়(ইলেকট্রন প্রোটন পর্যায়ের) যেটিকে অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি বাটিতে রাখা হল,তাহলে আমরা দেখব মার্বেলটি কখনো স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না।এটি এদিক ওদিক দুলছে।এর কারণ অনিশ্চয়তা নীতি।কারণ এই নীতি অনুসারে কোয়ান্টাম স্তরে কোন কিছুকেই ১০০ ভাগ সঠিকতার সাথে নির্ণয় করা যায় না।মার্বেলটি যদি স্থির হয়ে বসে থাকত তাহলে আমরা তার অবস্থান ১০০ ভাগ সঠিকতার সাথে নির্ণয় করে ফেলতাম যা কিনা অনিশ্চয়তা নীতিকে লংঘন করছে।অনিশ্চয়তা নীতিকে রক্ষা করতে গিয়েই মার্বেলটি এদিক ওদিক দুলতে বাধ্য হচ্ছে।ঠিক একইভাবে যদি শুন্যস্থানে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের মান ধ্রুবক হতো তাহলে তা অনিশ্চয়তা নীতিকে লংঘন করত(কারণ ক্ষেত্রের মান ধ্রুবক বলে তার অবস্থান আমরা ১০০ ভাগ সঠিকতার সাথে জেনে যেতে পারছি)।কিন্তু অনিশ্চয়তা নীতিকে কখনোই লংঘন করা যায় না।কাজেই কোয়ান্টাম ক্ষেত্র অস্থির হতে বা উঠানামা করতে বাধ্য,যাতে করে এর মান এবং সময়ের সাথে এটি কিভাবে পরিবর্তীত হচ্ছে তা আমরা একইসাথে জানতে না পারি।শুন্যস্থানে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের এই অস্থিরতার ফলে সৃষ্টি হতে পারে বিশাল পরিমাণ শক্তি।আসলে এখানে শক্তি সৃষ্টি হতে পারে,না বলে সৃষ্টি হতে বাধ্য বলাটাই মনে হয় অধিকতর শ্রেয়।কারণ যদি শুন্যস্থানে কোন শক্তি না থাকত অর্থাৎ শুন্য শক্তি থাকত তাহলে এটি অনিশ্চয়তা নীতিকে অমান্য করা হতো। যেহেতু '০' একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা তাই শুন্য শক্তি আছে বলা মানে আমরা ১০০ ভাগ নিশ্চয়তার সাথে শক্তি নির্ণয় করে ফেললাম, যা কিনা অনিশ্চয়তা নীতি বিরোধী।কাজেই,শুন্যস্থানে শক্তির উদ্ভব অনিবার্য এবং এর মানের পরিবর্তন হবে সম্পূর্ণ এলোমেলো,এই এলোমেলো মানের পরিবর্তনের অনিশ্চয়তার একটি সর্বনিম্ন পরিমাণ থাকবে।শুন্যস্থানের এই শক্তিকে বলা হয় শুন্যবিন্দু শক্তি বা Zero point energy। কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের অবিরত অস্থিরতার ফলে স্বতঃস্ফূর্ত-ভাবে সৃষ্টি হয় কণা-প্রতিকণা যুগল।এদেরকে বলা হয় ভার্চুয়াল পার্টিকেল বা অসদ কণা।এদের ভার্চুয়াল পার্টিকেল বা অসদ কণা বলার কারণ হলো-এরা বাস্তব কণা নয়। কেননা এদেরকে কণা নিরূপক যন্ত্রের মাধ্যমে সরাসরি দেখা যায় না।কিন্তু এদের উপস্থিতি অপ্রত্যক্ষভাবে মাপা যায়। এমনি একটি পরীক্ষণ হলো কাসিমির প্রভাব।১৯৪৮ সালে ডাচ পদার্থবিদ হেন্ডরিক কাসিমির দেখান যে তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্থিরতা পরীক্ষনের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।শূন্যস্থানে খুবই পাতলা দুটি ধাতব প্লেটকে খুব কাছাকাছি রাখা হয়।যেহেতু প্লেট দুটির মধ্যে মহাকর্ষীয় আকর্ষন বল খুবই নগন্য কাজেই আশা করা যায় প্লেট দুটি স্থির হয়ে থাকবে।কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এভাবে স্থাপিত প্লেট দুটি আস্তে আস্তে পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।যেহেতু প্লেট দুটি শূন্যস্থানে স্থাপিত করা হয়েছে তাই বলা যায়,প্লেট দুটির মধ্যবর্তী অতি ক্ষুদ্র গ্যাপে ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের ফলে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যর(বা উচ্চ কম্পাংকের) কম্পন মোডের সৃষ্টি হয়।কিন্তু প্লেটের দুপাশে বিশাল জায়গায় সকল তরংগদৈর্ঘ্যর(বা সকল কম্পাংক) মোডেরই সৃষ্টি হতে পারে।কাজেই পাতের গ্যাপের ভেতরের তুলনাই বাইরের চাপ বেশি হবে।এই দুই চাপের পার্থক্যের কারণে পাত দুটি পরস্পরের দিকে আকর্ষিত হয়।
(চিত্র:৪)
যেখানে স্থানকাল বক্রতা যত বেশি এবং যেখানে স্থানকাল বক্রতা দ্রুত পরিবর্তীত হয় সেখানে অসদ কণাযুগল সৃষ্টির হার তত বেশি। মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রারম্ভে সকল প্রকার ক্ষেত্র ছিল প্রচণ্ড রকমের অস্থির যার মধ্যে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রও উপস্থিত ছিল।ক্ষেত্রের অস্থিরতা তাপমাত্রা বাড়ার সাথে বাড়ে অনেকটা তাপমাত্রা বাড়ালে যেমন পানি ফুটতে থাকে তেমন।সৃষ্টির প্রারম্ভে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা প্রচন্ড রকম বেশি ছিল,যেমন মহাবিশ্ব সৃষ্টির ১০^-৪৩ সেকেন্ড পর এর তাপমাত্রা ছিল ১০^৩২ কেলভিন)।এত তাপমাত্রায় ক্ষেত্রের অস্থিরতাও ছিল প্রচুর।এই অস্থিরতার কারণে স্থানকাল বক্রতাও বেড়ে হয় অত্যন্ত বেশি এবং এর পরিবর্তন হার ও হয়ে যায় দ্রুত।অর্থাৎ এক কথায় স্থানকাল বক্রতারও অস্থিরতা যায় বেড়ে।কাজেই তখন অসদ কণাযুগল সৃষ্টির হার ছিল অত্যন্ত বেশি।শুন্যস্থান হতে বা কোয়ান্টাম অস্থিরতা হতে কণা-প্রতিকণা যুগল স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রে উদ্ভব হয় এরপর খুব অল্প সময় ব্যবধানে পরস্পরের সাথে মিলে শক্তি আকারে বিনাশ হয়ে যায়।আর যেহেতু হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে, "কোন সিষ্টেমের পরিমাপকৃত শক্তি,আমরা ওই সিষ্টেমকে কত সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করছি তার ব্যস্তানুপাতিক"
∆E∆t ~ ħ
কাজেই বিনাশকৃত ওই শক্তির পরিমাণ হবে প্রায় অসীম।শুন্যস্থানে এভাবে কণা সৃষ্টি ও বিনাশ অনবরত চলতেই থাকে।
(চিত্র-৫)
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি,যাকে আমরা শূন্যস্থান বলে জানি(বস্তু বিকিরণহীন স্থান)তা আসলে ক্ল্যাসিক্যাল শূন্যস্থান।কিন্তু এই শূন্যস্থানের আরো গভীরে গেলে অর্থাৎ কোয়ান্টাম লেভেলে গেলে দেখা যাচ্ছে তা আসলে বস্তু শক্তি ও ক্ষেত্র দ্বারা পরিপূর্ণ।একে বলা যায় কোয়ান্টাম শূন্যস্থান। কাজেই ক্ল্যাসিক্যাল শূন্যস্থান আর কোয়ান্টাম শূন্যস্থান দুটো আসলে এক নই। কোয়ান্টাম শূন্যস্থান শূন্য নই,তা বস্তু শক্তি ও ক্ষেত্র দ্বারা পরিপূর্ণ।অর্থাৎ কোয়ান্টাম শূন্যতা মানেই কোন কিছুর উপস্থিতি।এখানে নাথিং মানেই সামথিং।কোয়ান্টাম শূন্যতায়, Nothing is not nothing,nothing is something।
কোয়ান্টাম শূন্যতার এই nothingness থেকে ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের এই পুরো মহাবিশ্বটাই সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে।অর্থাৎ একেবারে শূন্য থেকেই এই পুরো মহাবিশ্বটার উদ্ভব হতে পারে শক্তির সংরক্ষন সূত্রের কোন ধরনের ব্যাঘাত না ঘটিয়েই।তবে তার জন্য একটা চরম মাত্রার ধাক্কা খেতে হবে আমাদের।হিসাব করে দেখা যায়,মহাবিশ্বের মোট শক্তি শূন্য বা প্রায় শূন্য।কি করে এটি সম্ভব?প্রথমেই বলে রাখা দরকার মহাবিশ্বের মোট শক্তি শূন্য বা প্রায় শূন্য হতে পারে শুধুমাত্র সমতল বিশ্বের ক্ষেত্রে,মহাবিশ্ব বক্র হলে মোট শক্তি শূন্য হয় না আর সেক্ষেত্রে শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টিও সম্ভব হবে না।পর্যবেক্ষণে মহাবিশ্বের সমতল বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত হয়েছে(তবে গবেষণা চলছে)।এবার দেখা যাক কি করে মহাবিশ্বের মোট শক্তি শূন্য হয়।আমরা জানি মহাকর্ষীয় শক্তি,
U(r) = -GMm/r
এখান থেকে দেখা যাচ্ছে দুটি বস্তু পরস্পর হতে অসীম দূরত্বে থাকলে তাদের মধ্যকার মহাকর্ষীয় শক্তি '০' হয়।m বস্তুটি যত M বস্তুর কাছাকাছি আসতে থাকে তত তাদের মধ্যকার মহাকর্ষীয় শক্তি বেশি ঋণাত্মক(কম ধনাত্মক) হতে থাকে।আর তখন এদের পৃথক করতে আমাদেরকে মহাকর্ষীয় বলের বিরুদ্বে তত বেশি কাজ করতে হবে বা তত বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।যেহেতু বস্তু দুটিকে পৃথক করতে আমরা যে শক্তি প্রয়োগ করছি তা ধনাত্মক কাজেই বস্তু দুটি যে শক্তিতে পরস্পরকে টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করছে তা অবশ্যই ঋণাত্মক।অর্থাৎ এক্ষেত্রে মহাকর্ষীয় শক্তি ঋণাত্মক।
(চিত্র:৬)
অথবা এভাবে চিন্তা করা যায়,সূর্যের মহাকর্ষীয় সিষ্টেম থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করে সৌরজগতের বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে আমাদের ধনাত্মক শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।আর যেহেতু সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীর শক্তি হবে শূন্য কাজেই অবশ্যই পৃথিবী যখন সূর্য এর মহাকর্ষীয় সিষ্টেমে আবদ্ব ছিল তখন তাদের মহাকর্ষীয় শক্তি ছিল ঋণাত্মক।এভাবে মহাবিশ্বে যত পদার্থ আছে সকল পদার্থর মোট ভর(ধনাত্মক শক্তি)আর তাদের মোট ঋণাত্মক মহাকর্ষীয় শক্তি হিসেব করে যোগ করলে দেখা যায় তা ঠিক ঠিক 'শূন্য' বা প্রায় 'শূন্য' হয়।অর্থাৎ মহাবিশ্বের মোট শক্তি দাঁড়ায় 'শূন্য' বা প্রায় 'শূন্য'।কাজেই শূন্য থেকে শূন্য শক্তির পুরো মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলে তাতে শক্তির সংরক্ষণ সূত্রের লংঘন হচ্ছে না। অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে শূন্যস্থানের কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে আমাদের পুরো মহাবিশ্ব কোয়ান্টাম বুদবুদ আকারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবির্ভূত হয়ে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে।এখন প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে মহাবিশ্ব এত সময় ধরে টিকে আছে,কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে আবির্ভাব হওয়ার পর কেন শক্তি আকারে শূন্যস্থানেই বিলীন হয়ে গেলো না?ঠিক এখানেই মহাবিশ্বের মোট শক্তি শূন্য বা প্রায় শূন্য হওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছিল।কারণ অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে কোন সিষ্টেমের মোট শক্তি যত কম হয় সিষ্টেমটি তত বেশি সময় ধরে বিদ্যমান থাকতে পারে,কাজেই শুরুতে মহাবিশ্বের মোট শক্তি যদি বিশাল হতো তবে তা খুব দ্রুত শূন্যস্থানেই বিলীন হয়ে যেত।আজকের এই পর্যায়ে আসতে পারত না।কিন্তু যেহেতু মহাবিশ্বের মোট শক্তি শূন্য বা প্রায় শূন্য, তাই এটি বিশাল সময় ধরে টিকে থাকার সময় পেয়েছে এবং আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছে। এখানে আরো একটি প্রশ্ন আসতে পারে,পুরো মহাবিশ্ব ধারণকারী কোয়ান্টাম বুদবুদটির স্থান-কাল বক্রতা ছিল অসীম কাজেই আইনষ্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বানুসারে বুদবুদটির মহাকর্ষীয় প্রভাব অসীম থাকার কথা।আর সেক্ষেত্রে শূন্যস্থান থেকে মহাবিশ্ব উদ্ভুত হওয়ার পর তা আজকের পর্যায়ে বিবর্তিত হতে পারার কথা না,তার আগেই মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে পুরো মহাবিশ্ব চুপসে গিয়ে শূন্যস্থানেই বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা।তাহলে কিভাবে মহাবিশ্ব আজকের এ পর্যায়ে আসল?আর যদি মহাকর্ষীয় প্রভাব কাটিয়ে আজকের এ পর্যায়ে আসে তাহলে মহাকর্ষীয় প্রভাব কাটানোর মতো বিশাল সে ধাক্কাটি মহাবিশ্বকে দিল কে ? কিভাবে দিল? কেন দিল?ঠিক এখানেই এলান গুথের মতো একজন পদার্থবিদের দরকার হয়েছিল।যিনি এসকল সমস্যা সহ বিশ্বসৃষ্টি-তত্ত্বের আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে তার "স্ফীতি তত্ত্ব" প্রধান করেন।