সুপার ফুড ডিম
# ডিম ও দুধ । এই ২ টি খাবার নিয়ে মানুষের অনেক ভুল ধারণা,আবার অনেকে খেতেও চায় না, আবার অনেকে জানেই না, এই ২ টি খাবার শরীরের কতো কাজে আসে। দুধ ও ডিমের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তাই যদি এই ২ টি খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন, আপনি হতে পারেন অনেকের মধ্যে একজন পরিপূর্ণ সুস্থ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেয়া যাক।
আজকে কথা বলব সুপার ফুড ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে-
# ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেয়া হয় যে ডায়েটরি প্রোটিন স্থূলত্ব এবং বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে, যার ফলে পেট ভরা ভরা মনে হয়।
তাই ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন ১টি করে ডিম খাবেন। সকালে একটি ডিম খেলে তা অনেকটা সময় ধরে পেটে থাকে এবং কম ক্ষুধার উদ্রেক করে।এতে অন্যান্য খাওয়া কম হয়। ডায়েট যারা করেন তারা একটি ডিম রাখুন সকালের নাস্তায়।
# কোলাইনযুক্ত - একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যা বেশিরভাগ মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে পায় নাঃ
কোলিন এমন একটি পুষ্টি যা বেশিরভাগ লোকেরা জানেন না যে এটি বিদ্যমান, তবুও এটি একটি অবিশ্বাস্যরূপে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ এবং প্রায়শই বি ভিটামিনগুলির সাথে যুক্ত। ১টি ডিমে ১০০ মিলিগ্রাম কোলিন রয়েছে।কোলিন কোষের ঝিল্লি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে ভালো রাখে। বিশেষত গভার্স্থায় শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইহা যকৃত ও স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, কোলিনের অভাবে মস্তিষ্কের নানা সমস্যা দেখা দেয়।
# চোখের স্বাস্থ্যে ডিমঃ
বার্ধক্যজনিত পরিণতিগুলির মধ্যে একটি হ'ল দৃষ্টিশক্তি আরও খারাপ হওয়ার প্রবণতা।এমন বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের চোখকে ক্ষতিকর কিছু প্রক্রিয়া যেমন ছানি পড়া,রেটিনা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এমন দুটি উপাদান লুটিন এবং জেক্সানথিন বলা হয়। এগুলি হ'ল শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা চোখের রেটিনাতে জমা হয়।ডিমের কুসুমে লুটেইন এবং জেক্সানথিন উভয়ই প্রচুর পরিমাণে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র ১টি করে ডিমের কুসুম ৪.৫ সপ্তাহ ধরে খাওয়ার ফলে লুটেইনের রক্তের মাত্রা ২৮-৫০% এবং জেক্সানথিন ১১৪-১৪২% পর্যন্ত বেড়েছে।
ডিমে ভিটামিন-এ এর পরিমাণও বেশি, যা অন্ধত্ব দূরে সর্বাধিক সাহায্য করে থাকে।
# কোলেস্টেরল বেশি,তবে রক্তের কোলেস্টেরলকে বিরূপ প্রভাবিত করবেন নাঃ
এটি সত্য যে ডিমের কোলেস্টেরল নিয়ে বিভ্রান্তি বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল এবং এখনো আছে।বিশেষ করে যাদের বয়স একটু বেশি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগী অথবা যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বা অন্যান্য চর্বির পরিমাণ বেশি, তাদের ডিম খেতে নিষেধ বা সম্পূর্ণ বর্জন করতে বলা হয়। অনেকেই এমনকি কিছু কিছু চিকিৎসক আবার ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে, শুধু সাদা অংশটুকুই খেতে বলেন।এর কারণ তাদের ধারণা একটাই, তা হলো ডিম খেলে রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ে, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আসলে এতদিনের এ ধারণাটা মোটেই সত্য নয়।ডিম খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ততটা বৃদ্ধি পায় না। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ দৈনিক গড়ে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারেন। আর একটি ডিমে রয়েছে ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। তাই বিশেষজ্ঞগণ এমনকি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এখন আর তাদের খাদ্যের গাইড লাইনে ডিম খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করছেন না। যে কোনো ব্যক্তি ডিমের সাদা অংশ খেলে কোনো সমস্যা তো হবেই না, এমনকি কুসুমসহ সম্পূর্ণ ১ টি ডিম সারাদিনে খেলেও উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আরেকটি বড় গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ৫-৬টি ডিম খেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক বা অন্য ধরনের হৃদরোগের কোনো ঝুঁকিই নেই। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে বলা হয়, দিনে ১টি ডিম হার্টের জন্য ক্ষতিকর নয়। সকালের নাস্তায় বরং একটি ডিম কোলেস্টেরল প্রোফাইলের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না।
# প্রোটিনে ভরপুরঃ
একটি ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। পেশি, অঙ্গ, ত্বক, চুল এবং বিভিন্ন টিস্যুর জন্য প্রোটিন সাধারণত দেহে হরমোন, এনজাইম এবং অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে।ডায়েটে পর্যাপ্ত প্রোটিন পেতে ডিমের জুড়ি নেই।
# হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেঃ
চীনে প্রায় ৫ লাখ লোকের ওপর এক গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিদিন একটা করে ডিম খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে। 'পুষ্টি সংক্রান্ত নানা গবেষণায় অনেক সময়ই কিছু না কিছু ফাঁক থেকে যায়, কিন্তু চীনে বড় এই সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে চালানো গবেষণা থেকে অন্তত একটা বিষয় পরিস্কার যে প্রতিদিন একটা ডিম খেলে তার থেকে হৃদযন্ত্র বা শরীরের রক্ত সঞ্চালনে কোন ঝুঁকি তৈরি হয়না, বরং প্রতিদিন একটা ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে'' - বলছেন ইংল্যাণ্ডে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিটা ফরুহি।
# হাড় গঠনঃ
সেদ্ধ ডিমে আছে ভিটামিন ডি যা হাড় ও দাঁতকে শক্ত করে। ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়তা করে এবং রক্তের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।ফলে শরীরের হাড়ের কাঠামো মজবুত ও শক্ত হয় এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি সেদ্ধ ডিম খেলে ৪৫ আন্তর্জাতিক ইউনিট ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
# ফোলেটঃ
ডিমে বিদ্যমান ফলেট নতুন কোষ তৈরি ও রক্তস্বল্পতা দূর করে। এটা গর্ভবতী মায়েদের গর্ভপাতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
# আয়রনঃ
ডিমে বিদ্যমান আয়রন সহজে হজম হয়। আয়রন মানব দেহের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে ও রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।সাধারণত আয়রন জাতীয় শাক সবজি খেতে ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।কিন্তু ডিমের আয়রন সরাসরি শোষিত হয়।তাই প্রতিদিন একটি ডিম আয়রনের চাহিদাও পূরণ করতে সক্ষম।