পুষ্টির যুগলবন্ধি
আমরা খাবার খাচ্ছি পুষ্টি এবং এনার্জি পাওয়ার জন্য কিন্তু আমরা কি জানি আমরা যা খাচ্ছি তা আমাদের শরীরে কতখানি পুষ্টির যোগান দিচ্ছে? সেই খাবার থেকে কতটুকু পুষ্টি আমাদের দেহ শোষণ করতে পারছে ?
আমাদের দেহের পুষ্টি শোষণ করার ক্ষমতাকে আমরা পুষ্টি বিজ্ঞানের ভাষায় “বায়ো-এভেলেবিলিটি অফ ফুড” বলে থাকি। মোদ্দাকথা, পুষ্টি আমাদের দেহে কত সহজে শোষিত হয় তা নির্ণয় করা।
যখন আমরা খাই তখন আমাদের প্লেটে কতটুকু খাবার আছে এবং কত ভ্যারাইটির খাবার আছে সেটার উপরে জোরদার করি কিন্তু আমাদের প্লেটে যে খাবার আছে সেই খাবারগুলো একটি আরেকটির সাথে কিভাবে খেলে কিভাবে পেয়ারিং বা যুগল বন্দি করলে আমাদের দেহে খাদ্য উপাদানগুলো সহজে খুব তাড়াতাড়ি শোষিত হবে সেই ধারণা আমাদের নেই। কয়েকটি পুষ্টিকর খাবারের নাম হয়তো আমরা জানি কিন্তু দেহের ভিটামিন মিনারেলস শোষণ নিয়ে অনেকেরই ধারণা নেই বললেই চলে।
আজ আমি কিভাবে ও কোন কোন ভিটামিন মিনারেলস আমাদের দেহের পরিপূর্ণ পুষ্টিগুলি শোষণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে,তা নিয়ে আলোচনা করবো।
#ভিটামিন ডি+ক্যালসিয়াম
দেহের হাড় শক্তিশালী রাখতে খাবার থেকে ক্যালসিয়াম শোষনের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন।প্রাকৃতিকভাবে খুব কম খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি এর একটি উৎস।এর সাথে চমৎকার পুষ্টির সম্বনয় হতে পারে ব্রকলি।
দুধে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম।তাই চিকিৎসকরা ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্টস নেয়ার পরামর্শ দিলে দুধ দিয়ে খেতে বলেন।
#ভিটামিন সি+আয়রন
ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে।তাই আয়রন জাতীয খাবার যেমন-লালশাক,কচুশাক ইত্যাদির সাথে সাইট্রাস ফল যেমন- লেবু দিয়ে খাবেন,তাতে করে দেহে ৮৫% আয়রন শোষণ হবে। যারা ভেজিটেরিয়ান তাদের জন্য এই কম্বিনেশ্ন খুব জরুরি, কারন প্লান্ট আয়রন দেহে শোষণের উপযোগি করার জন্য ভিটা- সি অত্যাবশ্যক।
#পটাশিয়াম+উচ্চ প্রোটিন
পেশী গঠনে এদের ২ জনই একসাথে খাবারে রাখা আবশ্যক।বিশেষ করে যারা নিয়মিতো জীম করেন।উদাহরণ-কলা+দই।
#ভিটামিন কে+আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট( স্বাস্থ্যকর/ভালো ফ্যাট)
ডেনসিটোমেট্রি জার্নালে প্রকাশিতো হয় যে ভিটামিন কে হাড়কে সুরক্ষা দেয় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।কে শোষণ হতে আনস্যাচুরেটেড বা ভালো ফ্যাট যথা-আখরোট,বাদাম,চিনাবাদাম,কাজু বাদাম,অলিভ অয়েল ইত্যাদির যেকোনোটির সম্বনয়ে খেতে হবে।উদাহরণ-অলিভ অয়েল দিয়ে সবুজ শাকসবজি, সালাদ খাওয়া।
#ভিটামিন বি +ফোলেট
হাভার্ড বিশেষজ্ঞদের মতে বি১২ ফোলেটকে শোষণ করতে সাহায্য করে।এরা দেহের মরা কোষ প্রতিস্থাপন করতে সাহায্য করে।খাবার উদাহরণ-সবুজ সবজি/ মটরশুঁটি+মাংস/ডিম/দুধ
পারফেক্ট পেয়ারিং হবে যদি ডিম( ভিটামিন বি ১২)+ পালং শাক (ফলিক এসিড) একসাথে খাওয়া হয়
এবং গরুর মাংস(ভিটামিন-বি ৬+ বি ১২)+ ডাল(ফলিক এসিড) (বুটের ডাল /মুগ ডাল) সোজা কথা হালিম।
#হলুদ+কালো গোলমরিচ(কারকিউমিন+পিপরিন )
হলুদে রয়েছে কারকিউমিন যার এন্টি ইনফ্লামেটরি প্রোপার্টিজ গুণাগুণ রয়েছে
আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ,কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং অ্যালঝেইমার রোগে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে।
কারকিউমিন শোষন করতে পিপরিনের প্রয়োজন হয়।তাই এই দুটি খাবার একসাথে গ্রহণ করতে হবে।
এক কাপ পানিতে হলুদের গুঁড়া অল্প গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে হার্টের রোগী ও আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় ভুগছে তারা সকালবেলা খেতে পারে।
সাধারণত আমরা ডাল খাই কিন্তু যদি ডালের স্যুপ রান্না করি তাতে একটু হলুদের গুঁড়া এবং খাবার আগে একটু গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে দিলে ভাল।
#লাইকোপিন ও স্বাস্থ্যকর তেল
আমরা জানি লাইকোপিন হচ্ছে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে এবং নিরাময় করতে সাহায্য করে। ট্মমটো ও তরমুজে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন আছে। ফ্যাট জাতীয় খাবার এর সাথে লাইকোপিন জাতীয় খাবার যদি এক করা যায় তাহলে তার দেহে তার শোষণ ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
তরমুজ+ ফুল ফ্যাট দই।
টমেটোর সালাদ +অলিভওয়েল ড্রসিং।
#ভিটামিন এ ডি ই কে এবং ফ্যাট
আমরা জানি ভিটামিন এ, ডি, ই, কে ফ্যাট সলিউবেল ভিটামিন অর্থাৎ তেলে এই ভিটামিনগুলো খুব ভালোভাবে দ্রবীভূত হয়।তাই এই ভিটামিনগুলো শাকসবজি বা অন্য কোন খাবার থেকে পাওয়ার জন্য তার সাথে স্বাস্থ্যকর তেল যোগ করা আবশ্যক।
বিভিন্ন ধরনের শাক ও সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
সবশেষে চা,কফি ইত্যাদি ক্যালসিয়াম পরিশোষণে বাঁধা দেয়।আপনারা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এখন থেকে কোন খাবার কিভাবে নিজের পুষ্টিতালিকায় রাখবেন। অতএব বুদ্ধি খাটিয়ে করলে কাজ অপুষ্টিতে ভুগবেন না আর।