লেক ন্যাট্রন :: প্রাকৃতিক মমি তৈরির এক আজব কারখানা
=======================
প্রাচীন মিসরীয়রা বিশ্বাস করত মৃত্যুর পরেও আর একটা জীবনের অস্তিত্ব আছে। তাই মৃত দেহকে তারা মৃত্যুর পরে মমিতে রূপান্তরিত করত। তবে এই রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াটা ছিল খুবই ব্যয়বহুল। তাই অভিজাত কেউ ছাড়া মৃতদেহ মমিতে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ পেত না।
.
তবে পৃথিবীতে এমন একটি স্থানে রয়েছে যেখানে বেশিক্ষণ অবস্থান করলে যে কোন প্রাণী আপনা আপনিই মমিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। খুবই আজব এই জায়গাটির নাম লেক ন্যাট্রন। এটির অবস্থান আফ্রিকার তানজানিয়ায় আরুশা অঞ্চলে।
.
এই লেকের পাশেই রয়েছে ওল দইন্নো লেঙ্গাই নামে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরিটি একটু ব্যতিক্রমধর্মী কারণ এটি সোডিয়াম ও পটাশিয়াম কার্বনেট সমৃদ্ধ লাভা উদগীরণ করে থাকে যা ন্যাট্রোকার্বনাটাইট (Natrocarbonatite) বা সংক্ষেপে ন্যাট্রন নামে পরিচিত।
.
এই রাসায়নিক যৌগটি এতই ক্ষারীয় যে এই লেকের পিএইচ সর্বদা 10 এর উপরে থাকে।এই রাসায়নিক দ্রব্যটি ছিল প্রাচীন মিশরের মমি বানানোর মূল উপাদান।
.
এই লেকের পানিতে নেমে সাথে সাথে উঠে গেলে সমস্যা হয় না। তবে দীর্ঘক্ষন অবস্থান করলে এই রাসায়নিকের প্রভাবে চামড়া ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে চামড়া পানিশূন্য হয়ে পাথরের মত শক্ত হয়ে যায়। ফলে মৃত প্রাণী গুলো এখানে বছরের পর বছর মমি আকারে সংরক্ষিত থাকে।
.
কিন্তু আফ্রিকার অন্যতম সুন্দর পাখি ফ্লেমিঙ্গো এখানে অবাধে চরে বেড়ায়। এদের নাকে অবস্থিত বিশেষ গ্রন্থি পানি থেকে ন্যাট্রন আলাদা করতে পারে। এদের শক্তিশালী পাকস্থলী লেকের পানিতে জন্মানো দূষিত এলজি হজমের উপযোগী।
.
এছাড়াও এদের পায়ের চামড়া বিশেষ আঁশযুক্ত এবং পানি প্রতিরোধী। লেকের পানিতে দীর্ঘক্ষন অবস্থান করলেও তাদের কিছুই হয় না। আবার লেকটি বিষাক্ত হওয়াতে অন্যান্য শিকারী প্রাণীর আগমন নেই। ফলে এটি ফ্লেমিঙ্গোদের বংশবিস্তারের উপযুক্ত জায়গা।
.
এই লেকের বিষাক্ত পানিতে জন্ম নেয় সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে এক ধরনের অণুজীব। ফটোসিনথেসিসের ফলে এই ব্যাকটেরিয়ার শরীরে জন্ম নেয় এক ধরনের বিশেষ পিগমেন্ট। এই বিশেষ পিগমেন্ট লেক ও ফ্লেমিঙ্গোদের গোলাপি রঙের জন্য দায়ী।
.
অন্যান্য প্রাণীদের জন্য যে পরিবেশ মৃত্যুকূপ , ফ্লেমিঙ্গোদের জন্য তা হয়ে উঠেছে অভয়ারণ্য।