#লিচু
গ্রীষ্মকালীন মিষ্টি, সুস্বাদু ও রসালো একটি ফল লিচু। শুধু খেতেই রসালো নয়, মৌসুমি এই ফল ভিটামিন ও খাদ্যশক্তির অন্যতম উৎস। এতে রয়েছে মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান।
লিচুকে বিবেচনা করা হয় চীন দেশের ফল বলে। চীনারা আবার একে ভালোবাসা ও রোমাঞ্চের ফল হিসেবে মর্যাদা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লিচু চীনা এলাকায়ই প্রথম ফলের কদর পায় এবং চাষবাস শুরু হয়।
লিচু’র বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensis। এটি মৌসুমি ফল। বাংলাদেশের সব স্থানেই লিচু হয়, তবে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে এর ভাল ফলন হয়।
লিচু হলো Sapindaceae পরিবারের Litchi গণের একমাত্র সদস্য। এটি নিরক্ষীয় ও উপ-নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মে থাকে। এর আদি নিবাস চীনে। বর্তমানে বিশ্বের বহু স্থানে লিচু চাষ করা হয়।
লিচু খুব ধীর গতিতে বড় হয়। ফুলের কুড়ি দিয়ে যখন গাছটি অলঙ্করিত হয়, তখন গাছটি খুব আর্কষণীয় দেখায়।
পুষ্টিমানঃ
পুষ্টিগুণের দিক থেকে বলতে গেলে বলা যায়, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’। ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালরি ৬১, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন ‘সি’ ৩১ মিলিগ্রাম।
নানারকম চর্মরোগ ও স্কার্ভি দূর করতে সাহায্য করে ভিটামিন সি। তাছাড়া এটি ত্বক উজ্জ্বল করতে ও বলিরেখা কমাতেও সাহায্য করে।
১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০টি লিচুকে বোঝায়। মার্কিন ওষুধ প্রশাসন বিভাগ বলছে, প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি ও ১৬ গ্রাম শর্করা রয়েছে। চর্বি একেবারেই নেই। আরও আছে ৭১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফলেট এবং সামান্য পরিমাণ (১মিলিগ্রাম) সোডিয়াম।
উপকারিতাঃ
১। ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিতভাবে লিচু খাওয়া ভালো।
২। বোলতা, বিছে কামড়ালে পাতার রস ব্যবহারে ভালো হয়।
৩। এতে দেহে শক্তি বাড়ে। কারণ এটা শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়ায়।
৪। এর ভিটামিন ‘সি’-এর পরিমাণ কমলালেবুর তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
৫। এ ছাড়া গাজরের তুলনায় বেশি বিটা ক্যারোটিনও আছে।
৬। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
৭। এটি বিটা ক্যারোটিনসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে।
৮। লিচু হজমে সহায়তা করে, কারণ এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার।
৯। হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম।
১০। বয়স্ক নারী যাদের মেনোপজ হয়ে গেছে, তাদের জন্য লিচু যথেষ্ট উপকারী। কারণ এসব নারীর অতিমাত্রায় ক্যালসিয়ামের অভাব হয়।
১১। এটি মৌসুমি অসুখগুলো থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
১২। একই সঙ্গে ত্বক ও চুলের পুষ্টি জোগায়।
১৩। প্রচণ্ড ক্ষতিকর আলট্র্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
১৪। এতে রয়েছে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাভিন নামক ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স।
১৫। ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স শরীরের জ্বালাপোড়া, দুর্বলতা দূর করে।
১৬। লিচুর ভিটামিন ‘এ’ রাতকানা কর্নিয়ার অসুখ, চোখ ওঠা, চোখের কোনা ফুলে লাল হয়ে যাওয়া দূর করে।
১৭। এ ছাড়া জ্বরঠোসা, জিহ্বার ঘা, জিহ্বার চামড়া ছিলে যাওয়া এসব রোগ প্রতিরোধ করে।
১৮। লিচু গরম ফল। এটি বেশি খেলে পেট গরম হয়ে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সিজন ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।
১৯। বেশি মিষ্টি লিচু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পরিহার করা উচিত।
২০। কাশি, পেটব্যথা, টিউমার দমনে লিচু কার্যকর।
২১। চর্মরোগের ব্যথায় লিচুর বীজ ব্যবহৃত হয়।
২২। কচি লিচু শিশুদের বসন্ত রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২৩। বাকল ও শিকড়ের কস্ফাথ গরম পানিসহ কুলি করলে গলার স্বর ভালো হয়।
২৪। লিচুর রস চকোলেট জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
২৫। এতে অবস্থিত পটাসিয়াম এবং খনিজের মতো উপাদান হূদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
২৬। শরীরের প্রদাহজনিত ময়লা পরিষ্কার করে। মস্তিষ্ক বিকাশেও সহায়তা করে। এছাড়া আমাদের হার্ট সুরা করে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
২৭। ত্বকের তৈলাকাততা দূর করে বিধায়, লিচু খেলে ব্রণের উপদ্রবও কমে।
২৮। কপালের ভাজ পরা, ঠোটের চারপাশের বলি রেখা, গলা এবং বুকের পিগমেন্টেশন দূর করতেও ভূমিকা রাখে।
২৯। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বকের যৌবন ধরে রাখে।
৩০। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালরি রয়েছে। যা আঙ্গুরের তুলনায় অনেক কম। লিচুতে কোন সম্পৃক্ত চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই। কিন্তু এতে ভাল পরিমাণে তালিকাগত ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অস্কিডেন্টসমূহ রয়েছে।
৩১। গবেষকরা বলেছেন, তারা লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ‘অলিগনাল’ নামক একটি আণবিক উপাদান রয়েছে। যা পলিফেনলের আণবিক উপাদান। অলিগনাল এ অ্যান্টি-অস্কিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাস কর্ম রয়েছে। যা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও রক্ত পরিবহনের মাত্রা উন্নত করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
৩৩। লিচু একটি লেবু জাতীয় ফলের মত এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল শরীরের সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শরীরের প্রদাহজনীত ময়লা পরিস্কার করে এবং মস্তিস্ক বিকাশে সহায়তা করে।
৩৪। থিয়ামিন, নিয়াসিন ও ফলেটস এর মত ভিটামিন বি কমপ্লেক্র এর সব থেকে ভালো উৎস হচ্ছে লিচু। এই উপাদানগুলো শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এসকল উপাদানে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বি রয়েছে যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
৩৫।শক্তির ভালো উৎস লিচু। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচু থেকে ৬১ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। পাশাপাশি চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
৩৬।লিচুতে খাদ্য হজমকারী আঁশ, ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা শরীরে জমে থাকে ও দেহ সুস্থ রাখে।
৩৭।লিচু মানবদেহে ক্যান্সার হওয়ার প্রবনতা হ্রাস করে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে। এতে অবস্থিত ফ্ল্যাভানয়েডস নামক উপাদান স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৩৮।লিচুতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।