প্রতিদিনের খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় মৌল ছাড়াও আরো কিছু এলিমেন্ট আছে যা অল্পমাত্রায় শরীরে প্রয়োজন। আর এর অভাব জনিত কারণেই আমাদের দেহ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানী হপকিংস “অত্যাবশ্যক সহায়ক খাদ্য উপাদান” বলে এগুলো কে অভিহিত করেন। ১৯১২ সালে বিজ্ঞানী ক্যাসিমির ফাঙ্ক, এলিমেন্ট গুলির নামকরন করেন “ভিটামিন”
💢ভিটামিন কি?
🚩স্বাভাবিক খাদ্যের মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে উপস্থিত থেকে, খাদ্যের যে এলিমেন্ট গুলি আমাদের বৃদ্ধি পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ত্বরান্বিত করে, সেগুলোই হলো ভিটামিন।
💢ভিটামিন এর বৈশিষ্ট্য
🎗১. খুব অল্প মাত্রায় আমাদের দেহে এটা প্রয়োজন
🎗২.ভিটামিন প্রাণীদেহের অর্গানিক ক্যাটালাইস্ট
🎗৩.ম্যাক্সিমাম ভিটামিন কো-এনজাইম রূপেউৎসেচক এর সঙ্গে সঙ্গবদ্ধ হয়ে ক্রিয়া করে।
🎗৪.বেশিরভাগ ভিটামিন মেটাবলিজম-এ ড্যামেজ হলেও পাচন ক্রিয়া এর ওপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না।
🎗৫.উদ্ভিদ, সংশ্লেষণ এর মাধ্যমে অধিকাংশ ভিটামিন উৎপন্ন করে, কয়েকটি ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-টুয়েলভ, ভিটামিন কে, যা সাধারণতঃ প্রাণীদেহেই সংশ্লেষিত হয়।
🎗৬.কিছু কিছু ভিটামিন দেহের মধ্যেই স্টোর করা থাকে।
দেহে ভিটামিনের অভাব ঘটলে তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় আভিটামিনোসিস বলে।
🚩প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের শরীরে ভিটামিন কম থাকলে তাকে হাইপোভিটামিনোসিস বলে অভিহিত করা হয়।
দেহের মধ্যে সঞ্চিত ভিটামিন সমূহ
🚩১.প্রো ভিটামিনঃ
প্রো ভিটামিন এমন একটি ভিটামিন যা যৌগ থেকে সংশ্লেষিত হয়। আর ওই যৌগ গুলিকেই প্রো-ভিটামিন বলে। ভিটামিন এ এর প্রো ভিটামিন হল বিটা ক্যারোটিন।
🚩২.অ্যান্টি ভিটামিনঃ
আমাদের শরীরে যে যৌগ গুলি ভিটামিনের কাজে বাধার সৃষ্টি করে সেই যৌগগুলোকে অ্যান্টি ভিটামিন বলে। পাইরিথিয়ামিন, ভিটামিন বি-ওয়ান এর অ্যান্টি ভিটামিন হিসেবে কাজ করে।
🚩৩.সিউডো ভিটামিনঃ
প্রাণীদেহের যে জৈব যৌগ গুলি ভিটামিন-এর পরিপূরক, কিন্তু কাজের দিক থেকে ভিটামিনের সমগুন নয়। মিথাইল কোবালামিন, ভিটামিন বি টুয়েলভএর সিউডো ভিটামিন।
🚩ভিটামিনের উৎস, কাজ ও অভাবজনিত রোগঃ
💢#ভিটামিন-এ💢
🚩ভিটামিন এ উৎসঃ
উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয়-এই ভিটামিন উৎপন্ন করে।
👉উদ্ভিদ উৎসঃ বাঁধাকপি, গাজর, সবুজ শাকসবজি, পেঁপে, পালং শাক, পাকা আম ইত্যাদি হল ভিটামিনের উদ্ভিজ্জ উৎস।
👉প্রাণিজ উৎসঃ কিছু কিছু মাছের যকৃত নিঃসৃত তেল যেমন হেলি বার্ড, হাঙ্গর ইত্যাদি, ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন হল ভিটামিন এর প্রাণিজ উৎস।
🚩আমাদের মনে রাখা দরকার সাধারণত দুই ধরনের ভিটামিন আছে। ফ্যাট সলিউবল এবং ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে হচ্ছে ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন। এ ধরনের ভিটামিন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সেবন করলে ক্ষতি নেই। কারণ ওষুধ কিংবা প্রাকৃতিক উত্স যেখান থেকেই এই ভিটামিন গ্রহণ করি না কেন এটা শরীরে জমা থাকতে পারে।
🚩ভিটামিন এ’র কাজঃ
🚩#চোখের রেটিনার
🎗১. দেহের বৃদ্ধি
🎗২. চোখের রেটিনার রড সেল উৎপন্ন করে নাইট ব্লাইন্ডনেস থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে।
🎗৩.প্রাণীদেহের রোগের সংক্রামন প্রটেক্ট করে।
🎗৪.গ্ল্যান্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
#অভাবজনিত লক্ষণঃ
🎗১.ব্লাইন্ডনেস একমাত্র ভিটামিন।-এ এর অভাবে ঘটে।
🎗২.মানবদেহের স্কিন, ভিটামিন এর অভাবে ব্যাং এর চামড়ার মত খসখসে হয়ে যায়।
🎗৩.ওয়েট লস-এর প্রাদুর্ভাব ঘটে।
🎗৪.বৃক্কে স্টোন তৈরি হয়।
🎗৫.রোগ সংক্রামণের পাওয়ার রিডিউস হয়।
💢#ভিটামিন ডি💢
🚩#ভিটামিনের উৎসঃ
🚩উদ্ভিদ উৎসঃ বাঁধাকপি, গাজর, সবুজ শাকসবজি, পেঁপে, পালং শাক, পাকা আম ইত্যাদি হল ভিটামিনের উদ্ভিজ্জ উৎস।
🚩প্রাণিজ উৎসঃ কিছু কিছু মাছের যকৃত নিঃসৃত তেল যেমন হেলি বার্ড, হাঙ্গর ইত্যাদি, ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন হল ভিটামিন এর প্রাণিজ উৎস। এছাড়া মানবদেহের স্কিনে অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়।
🚩ভিটামিন ডি’র কাজঃ
🎗১. শরীরে অস্থি গঠন করতে সাহায্য করে।
🎗২. ক্ষুদ্রান্তে, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ, কেবলমাত্র ভিটামিন ডি, মানবদেহে করে থাকে।
🎗৩. অস্তিতে ক্যালসিয়াম এর প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
🎗৪. রিকেট ও অস্টিওম্যালেসিয়া এই দুইটি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
👉অভাবজনিত রোগঃ
🎗১. এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রিকেট ও বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া এই দুইটি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
🎗২. রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা রিডিউস করে।
🎗৩. এর অভাবে ক্যারিস বা দন্ত ক্ষয় জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
💢#ভিটামিন ই💢
🚩সবজি
🚩উদ্ভিদ উৎসঃ সবুজ শাকসবজি, লেটুস শাক বা অঙ্কুরিত ছোলা উদ্ভিদের ভিটামিন ই এর উৎস।
🚩প্রাণিজ উৎসঃ ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন হল ভিটামিন এর প্রাণিজ উৎস।
🚩ভিটামিন ই’র কাজঃ
🎗১. ভিটামিন ই মাতৃদুগ্ধ স্বাভাবিকভাবে নিঃসরণ করতে সহায়তা করে।
🎗২. ব্লাইন্ডনেস দূর করে।
🎗৩. ইউট্রাস এ ভ্রূণের বৃদ্ধি ঠিকঠাক রাখে।
🎗৪. গর্ভপাত বন্ধ করতে সহায়তা করে।
🚩অভাবজনিত রোগঃ
১. এই ভিটামিনের অভাবে প্রজনন ক্ষমতা স্লথ করে।
২. ইউট্রাস-এ ভ্রূণের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
৩.মাতৃদুগ্ধের প্রোডাকশন স্লো করে।
💢#ভিটামিন-কে💢
🚩উদ্ভিদ উৎসঃ আলফা শাক, পালং শাক, বাঁধাকপি, টমেটো ইত্যাদি ভিটামিন কে এর উদ্ভিদ উৎস।
🚩প্রাণিজ উৎসঃদুধ, মাখন, যকৃত, ডিমের কুসুম হল ভিটামিন-কে এর প্রাণিজ উৎস।
🚩ভিটামিন কে’র কাজঃ
১. শরীরের রক্ত তঞ্চন রোধে ভিটামিন-কে মূল ভূমিকা পালন করে।
২. ব্লাডে প্রথ্রবিন-এর পরিমাণ ন্যাচারাল রাখে।
🚩অভাবজনিত লক্ষণঃ
১. ভিটামিন কে এর অভাবেরক্ত তঞ্চন ঘটে
২. ব্লাডে প্রথ্রবিন, কমে যায়।
💢#ভিটামিন বি কমপ্লেক্স💢
🎗ভিটামিন-বি ওয়ান টু, থ্রি, ফোর, ফাইভ, সিক্স এবং ভিটামিন টুয়েলভ এর সংমিশ্রণ হলো ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
🚩ভিটামিন বি কমপ্লেক্স-এর উৎসঃ
🚩উদ্ভিদ উৎসঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সাধারণতঃ লাল আটা, সবুজ শাকসবজি, ভাতের ফ্যান, টমেটো, ইস্ট, অঙ্কুরিত ছোলা ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
🚩প্রাণিজ উৎসঃ দুধ, মাখন, যকৃত, ডিমের কুসুম ইত্যাদি হলো ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর প্রাণিজ উৎস।
🚩ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজঃ
১. মানব দেহের বৃদ্ধি কে স্বাভাবিক রাখে।
২. রক্তাল্পতা, প্লেলেগ্রা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
৩. স্নায়ু কোষ বা ব্রেন স্থির রাখে।
🚩এর অভাব জনিত লক্ষণ সমূহঃ
১. বেরিবেরি রোগ একমাত্র ভিটামিন-বি ওয়ান এর অভাবে ঘটে থাকে।
২. জিভে ঘা এবং মুখে ঘা এর মত রোগ গুলি ভিটামিন-বি এর অভাবে ঘটে।
৩. ভিটামিন-বি টুয়েলভ এর অভাব জনিত কারণে অ্যানিমিয়া হয়।
৪.এছাড়া ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবে চুল উঠে যাওয়া, খিদে না পাওয়া বা স্নায়ু দুর্বলতা প্রভৃতি রোগ ঘটে থাকে।
💢#ভিটামিন সি💢
🚩ভিটামিন সি এর উৎসঃ
🚩উদ্ভিজ্জ উৎসঃ পাতিলেবু, কাঁচা লঙ্কা, টমেটো, আমলকি প্রভৃতি সমস্ত টক জাতীয় ফল এর মধ্যেই ভিটামিন সি এর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
🚩প্রাণিজ উৎসঃ মাছ, মাংস, গরুর দুধ এবং মাতৃদুগ্ধে ভিটামিন সি এর আধিক্য পরিলক্ষিত হয়।
🚩ভিটামিন সি এর কার্যকারিতাঃ
১. স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধকারী ভিটামিন-সি দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখে।
২. রেড ব্লাড এবং অনুচক্রিকা প্রোডাকশনে ভিটামিন সি এর জুড়ি মেলা ভার।
৩.দেহে অবস্থিত বিভিন্ন কলাকৌশল জারন-বিজারন এর কাজ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪.ক্ষতস্থান নিরাময়ে এবং রোগ প্রতিরোধ করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
🚩ভিটামিন সি এর অভাব জনিত লক্ষণ সমূহঃ
১. স্কার্ভি রোগ একমাত্র ভিটামিন সি এর অভাব এর ফলে কি ঘটে থাকে।
২. অ্যানিমিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
৩. হাড় এবং দাঁতের ক্ষয় এর মতো দুরারোগ্য ব্যাধির অর্থ শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব।
🚩# অতিমাত্রায় ভিটামিন ‘সি’ :
ভিটামিন ‘সি’ হচ্ছে ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন। এটা শরীরে স্টোরেজ বা সঞ্চিত থাকে না। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন ‘সি’ সেবন করলে অথবা প্রাকৃতিক উত্স থেকে গ্রহণ করলে এটা প্রয়োজন মেটানোর পর অবশিষ্ট ভিটামিন ‘সি’ ইউরিন বা ঘামের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তাই বেশি আঙ্গুরের রস খাওয়ালে শিশুদের শারীরিক কোনো লাভ হয় না। প্রতিদিন ৪ বছরের ঊর্ধ্বে কোনো শিশু বা প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির মাত্র ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন।তার বেশি খেলেই ডায়রিয়া, বমি, অম্বল, কমজোরি লিভার-হার্ট এমনকি কিডনিতে স্টোনের মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।একটা কাঁচা মরিচ খেলেই এ ধরনের ভিটামিন ‘সি’ আসতে পারে। তাছাড়া প্রতিদিন যে পরিমাণ সবুজ শাক সবজি, লেবু খাওয়া হয় তা থেকেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। এছাড়া বিদেশি ফল নয়, দেশের আমলকী, কামরাঙ্গা, পেয়ারা থেকেও প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়।