গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান

0 5
Avatar for alma45
Written by
4 years ago

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশ কষ্টকর। নানা কারণে,আমরা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে পারি। কম বেশি আমরা সবাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কষ্ট পাই। তবে যাদের সমস্যা ক্রনিক তাদের কষ্টের পরিমাণ একটু বেশিই। আমরা সবাই কম বেশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকি। কারো,কারো ক্ষেত্রে সমস্যা এত বেশি যে নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে হয়। যাদের,গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম,তাদের ও যেকোন উৎসবের পর,খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের কারণে গ্যাস্টিকের সমস্যা বেড়ে যায়।

তাই,আজ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানের জন্য,কিছু ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব।যারা একটু পেট ফেঁপে উঠলে,গলার কাছে ভারী কিছু আছে এমন মনে হলে, ঢেঁকুর উঠলে,পেট ভারী হলে কিংবা বুকে একটু অস্বস্তি হলেই নিজের মন মত,ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করে থাকেন তারা নীচের প্রাকৃতিক উপাদান গুলো খেতে পারেন।যেগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে দারুণ কার্যকর।

👉আজওয়াইন:

যারা, প্রায়ই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাতে ভুগে থাকেন তারা যদি, প্রতিদিন এক চা চামচ আজওয়াইন বা জোয়ান এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খান তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সহজেই দূর হবে।আজওয়াইন বা জোয়ানে থাকা থাইমল নামক উপাদান পাখস্থলী থেকে গ্যাস্ট্রিক জুস নিঃসরণে সাহায্য করে

👉পানিঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এটি শুধু আপনার গ্যাস্টিকের সমস্যা কমাবে না আরো অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন

👉দই : দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে করে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার ঝামেলা দূর হয়।

👉 পেঁপে : পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।

👉কলা: কলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কলার সলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারাদিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার জুড়ি মেলা ভার।

👉আদা : আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে কাঁচা খান, দেখবেন গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে।

👉ঠাণ্ডা দুধ : পাকস্থলির গ্যাসট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠাণ্ডা দুধ। এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করলে অ্যাসিডিটি দূরে থাকে।

👉দারুচিনি : হজমের জন্য খুবই ভালো। এক গ্লাস পানিতে আধ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।

👉জিরা : জিরা পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা, রক্তবিকার প্রভৃতিতে অত্যন্ত ফলপ্রদ। জ্বর হলে ৫০ গ্রাম জিরা আখের গুড়ের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি বড়ি তৈরি করতে হবে। দিনে তিনবার এর একটি করে বড়ি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যাবে।

👉লবঙ্গ : ২/৩টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বালা, বমিবমিভাব, গ্যাস দূর হয়। সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

👉এলাচ : লবঙ্গের মতো এলাচ গুঁড়ো খেলে অম্বল দূরে থাকে।

পুদিনা পাতার পানি : এক কাপ পানিতে ৫টা পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট ফাঁপা, বমিভাব দূরে রাখতে এর বিকল্প নেই।

👉মৌরির পানি : মৌরি ভিজিয়ে সেই পানি খেলে গ্যাস থাকে না।

👉কালো জিরা

এসিডিটির ব্যথা কমানোর জন্যে কালো জিরা বেশ উপকারী। কালো জিরার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। চায়ে কালো জিরা মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার হয়। কালো জিরার চা বানানোর জন্যে, প্রথমে এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ কালো জিরা বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এক চামচ মধু মিশিয়ে দুপুরে অথবা রাতের খাবারের পূর্বে এক কাপ কালো জিরার চা হজমে বেশ সাহায্য করে।

👉ঘোল বা মাঠা

টক দই দিয়ে তৈরি এই পানীয়কে আঞ্চলিকভাবে অনেকেই ঘোল বা মাঠা বলে থাকে। এসিডিটি কমাতে ঘোল বা মাঠা বেশ ভালভাবেই সাহায্য করে। এর কারণ হলো টকদই বেশ হজম উপকারী। টক দইয়ে লেবুর রস, পুদিনা পাতার রস, আদার রস, সামান্য লবণ এবং প্রয়োজনমত চিনি বা মধু মিশিয়ে ঘোল বানাতে হয়। খাওয়ার পর এক গ্লাস মাঠা শরীরের সকল ক্লান্তি দূর করে হজমে বেশ সাহায্য করে।

👉খাওয়ার অভ্যাস

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাওয়ার অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রতিদিন দুপুরের এবং রাতের খাবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। রাতের খাবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেয়ে ফেলা উচিত। সকালের নাস্তা বেশ ভালোভাবে করার চেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে দুপুরের আহার একটু হালকা করা বাঞ্ছনীয়। একেবারে খুব বেশি না খেয়ে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর অল্প খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

👉অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার পরিহার

যারা নিয়মিত গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন, তারা শুধুমাত্র ঔষধের উপর নির্ভর না করে খাবারের ব্যাপারে বেশি নজর দেয়া উচিত। অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাদ্য, ফাস্টফুড, মশলাদার খাবার ইত্যাদি ত্যাগ করা উচিত। দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় সুষম খাদ্যের ভারসাম্য মেনে চলা উচিত। নিত্যদিনের খাবারে তেলের ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে আনতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণ ফল খেতে হবে।

👉ধূমপান ত্যাগ করা

অতিরিক্ত ধূমপানের ফলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। ধূমপান থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য এবং এর জন্য প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তির। তবে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ধূমপানের অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে।

👉পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা

ঘুমের অপর্যাপ্ততা গ্যাসের সমস্যায় একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। ঘুমের সাথে আমাদের পুরো শরীরের চলাচল সরাসরিভাবে সংযুক্ত। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, অতিরিক্ত চিন্তা করলে অথবা খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে থাকলে হজমের ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধা হয়। তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করা যায়।

👉ব্যায়াম

ব্যায়ামের নাম শুনলে অনেকেই ভয়ে দু’পা পিছিয়ে যান। সত্যি কথা বলতে কী, বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলোর কারণ হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব। বিশেষ করে চাকুরিজীবীদের ব্যায়াম করাটা আজকের দিনে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে আকাঙ্ক্ষা এবং একাগ্রতা থাকলে প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করা খুব একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সকলের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন দুপুর বা রাতে খাওয়ার সাথে সাথেই শুয়ে না পড়ি। অন্তত খাওয়ার এবং ঘুমানোর মধ্যে এক থেকে দু’ঘণ্টার ব্যবধান থাকা একান্ত আবশ্যকীয়।

অনেকের প্রাত্যহিক জীবনে গ্যাসের সমস্যা ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়ে পড়েছে। আজকাল গ্যাসের সমস্যা ছাড়া কাউকে খুঁজেই পাওয়াই মুশকিল। গ্যাসের ওষুধ এখন অলিতে-গলিতে, পাড়ার ছোট্ট দোকানটাতেও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত ওষুধ সেবন কোনোভাবেই ভালো নয়, সেটা নিশ্চয়ই কারও অজানা নয়। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলো প্রয়োগ করাটা খুব একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার মনে না করাই উত্তম।

2
$ 0.00
Avatar for alma45
Written by
4 years ago

Comments