ডায়াবেটিস

0 16
Avatar for alma45
Written by
3 years ago

👍মনে রাখবেন খাবারের অতিরিক্ত লোভ এবং আলস্য এ রোগ কে হাত ছানি দিয়ে ডেকে আনতে পারে ! ডায়াবেটিস (Diabetes) শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ Diabainein থেকে ।

🎗**** সর্বপ্রথম ১৪২৫ সালে Thomas Willis ডায়াবেটিস মেলিচীস সম্পর্কে মেডিক্যাল বইতে লেখেন। ১৭৭৬ সালে Mathew Dobson মূত্র এবং রক্তে সুগার খুজে পান। সুত্রঃ +++ (D) #3 = Diet, Drug and Discipline এই তিনটি শব্দ মনে রাখলেই আপনি প্রাথমিক পর্যায়ের ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে পারেন – তার পর ও সারা পৃথিবীতে ৩০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা আগামিতে প্রতি ৩/১ পরিবারে একজন রোগী থাকবেন । সে জন্য সকলের ভাল অভিজ্ঞতা থাকা অবশ্যই দরকার।

🎗ডায়াবেটিস দুই ধরনের রয়েছে।

👉একটা হলো ডায়াবেটিস মেলাইটাস ( সুগার বেশী হওয়া )

👉আরেকটা হলো ডায়াবেটিস ইন্সিপিডাস ( সুগার কমে যাওয়া )

👉 এ ছাড়া আরেক ধরনের ডায়াবেটিস আছে

যাকে Gestational Diabetes বলা হয় ( ইহা গর্ভবতি মায়েদের বেলায় হয় )

❤ ডায়াবেটিস মেলিটাস(Diabetes mellitus) একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো 'ডায়াবেটিস' বা 'বহুমূত্র রোগ'।

👉তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।

👉ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে।

👉ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা-এর যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।

💜💜 মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

👉👉ডায়াবেটিস মেলাইটাস আবার দু'রকম হতে পারে।

যথাঃ টাইপ-১ বা ইনস্যুলিন নির্ভরশীল এবং

টাইপ-২ বা ইনস্যুলিন নিরপেক্ষ ডায়াবেটিস।

💢টাইপ-১

+টাইপ-১ বহুমূত্র হল অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

+ তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম।

+এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়।

+ শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। +১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়।

+ ইহা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হল HLADR 3 এবং HLADR 4 নামক দুটি জিন ।

💢টাইপ-১ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

👉টাইপ-১-এ অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ।

👉টাইপ-১-বি এটিও বিটা কোষের ধংসের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু এর সঠিক কারণ জানা যায়নি ।

(১) রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (>130 mg/100ml)।

(২) রক্তে ছিটোনো বডির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।

(৩) মুত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজের নির্গমন বা গ্লুকোসুরিযা হয়।

💢টাইপ-২

👉টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’।

👉টাইপ-২ রোগীরা শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না।

👉ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়।

👉 তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন।

👉৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের বহুমূত্র রোগ দেখা দেয়।

👉মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়।খাবারে চর্বির ধরনও গুরুত্বপূর্ণ;স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড ঝুঁকি বাড়ায় পক্ষান্তরে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ঝুঁকি কমায়।

👉 অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

👉শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ।

👉বিশ্বজুড়ে ২৪৬ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হল টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

🤔🤔দুই ধরনের ডায়াবেটিসই গুরুতর এবং হতে পারে শিশু ও তরুণদেরও। এ জন্য ডায়াবেটিসের বিপদ-চিহ্নগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। ‘মৃদু ডায়াবেটিস’ বলে কিন্তু কিছু নেই।

💢সাধারণ লক্ষণাদি

👉ঘন ঘন প্রস্রাব। এ কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ ;

👉অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া ;

👉অতিশয় দুর্বলতা ;

👉সার্বক্ষণিক ক্ষুধা ;

👉স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস ;

👉চোখে ঝাপসা দেখা ;

👉ঘন ঘন সংক্রমণ।

💢রিস্ক ফ্যাক্টর

পরীক্ষা করে দেখা গেছে কিছু কিছু ব্যাপার ডায়াবেটিস তৈরিতে প্রভাব ফেলে।

👉১. যাদের বংশে মা-বাবা কিংবা রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়দের ডায়াবেটিস আছে।

👉২. যাদের শরীরের ওজন অনেক বেশি এবং যারা শারীরিক পরিশ্রম প্রায় করেনই না।

👉৩. যাদের দেহে উচ্চ রক্তচাপ এবং মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল আছে।

👉৪. যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করেন।

💢বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন জটিলতা

👉অতিরিক্ত মেদ এ রোগের অন্যতম কারণ ;

👉উপসর্গহীনতা বা অসচেতনতার কারণে চিকিৎসার অভাব ;

👉কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতার অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস ;

👉অন্ধত্ব বা দৃষ্টিবিচ্যূতির অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস ;

👉বিনা দুর্ঘটনায় অঙ্গচ্ছেদের অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস।

👉ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সম্পাদনা

ইনসুলিন

👉অ্যান্টিডায়াবেটিক ঔষধ ( মুখে খাওয়ার ঔষধ )

🌾🌾কি খাবার বেশি খাবেন🌾🌾

👉উপকারী চর্বি যেমন, বাদাম, অলিভ ওয়েল, মাছের তেল ইত্যাদি।

👉শাক সবজি ও ফলমূল– মূলত পরিষ্কার, টাটকা ও রঙিন শাকসবজি ভাল।

👉জুসের থেকে ফল বেশি খেতে হবে।

👉দেশজ মাছ ও মুরগি।

👉ভাল প্রোটিন জাতীয় খাবার– যেমন, ডিম, অল্প চর্বি জাতীয় দুধ, টক দই ইত্যাদি।

🌾🌾কি খবার কম খাবেন🌾🌾

👉ডিপ ফ্রাই খাবার বা অতিরিক্ত রান্না করা খাবার

👉প্যাকেটজাত ফাস্ট ফুড, বিশেষ করে যাতে চিনি, বেকিং করা খাবার, মিষ্টি, ডেজারট, চিপস ইত্যাদি থাকে।

👉সাদা পাউরুটি,

👉চিনিযুক্ত সেরিয়াল,

👉 প্রক্রিয়াজাত পাস্তা বা চাল

👉প্রক্রিয়াজাত মাছ বা মাংস

💢উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার ও স্লো রিলিজ কার্বোহাইড্রেট

🍚আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর বিশাল ভূমিকা রয়েছে, এটি শরীরের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কি এটির ভূমিকা চর্বি বা প্রোটিনের তুলনায় বেশি।

🍚সুতরাং কি ধরনের শর্করা জাতীয় খাবার খাচ্ছেন এ ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত।

🍔 প্রক্রিয়াজাতকরণ শর্করা যেমন, সাদা পাউরুটি, চিনিযুক্ত সেরিয়াল, প্রক্রিয়াজাত পাস্তা বা চাল ছাড়াও সোডা, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাবার যাতে চিনি যুক্ত থাকে ইত্যাদির ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।

🤔মনযোগী হতে হবে স্লো রিলিজ কার্বোহাইড্রেট ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবারের প্রতি। এগুলো ধীরে ধীরে শরীরে রক্তের সাথে মিশে যা ধীরে ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করে।

💢💢গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কি?

রক্তে শর্করার পরিমাপক হিসেবে এটি কাজ করে। শর্করার মাত্রা কি পরিমাণে বাড়ছে বা কমছে তা এর মাধ্যমে জানা যায় । বিভিন্ন খাবারে কি পরিমাণ শর্করা থাকে তা নিরূপণ করা হয় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দ্বারা। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হোন।

√ ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI )জানা জরুরী,

√ কম GI যুক্ত খাবারে এর মাত্রা থাকে ৫৫ এর কম, √মধ্যম GI যুক্ত খাবারে ৫৬–৬৯

√ উচ্চ GI যুক্ত খাবারে ৭০ এর বেশি,

🍜ডায়াবেটিক আক্রান্ত ব্যাক্তিদের কম GI যুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক।

💢💢অবশ্য, সত্যিকার অর্থে– এ ব্যপারে এখন পর্যন্ত কোন সুন্দর ধারনা তৈরি হয়নি, দেখা যায় অনেকে কম জি আই ভুক্ত ওষুধ সেবন করছেন যা হয়ত আরো খারাপ কোন অবস্থার সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন রিসার্চে দেখা গেছে জি আই এর উপরে নির্ভর না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে দেয়া খাবারের তালিকা অনুযায়ী চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশি ভূমিকা রাখে।💢💢

🍱🍱আশ যুক্ত খাবার সনাক্তকরণ

👎কি পরিহার করবেন / 👍 কি খাবেন

সাদা চালের ভাত👎/ বাদামি বা লাল চাল এর ভাত👍

গোল আলু– ভর্তা 👎/ মিষ্ট আলু, ফুলকপি👍

রেগুলার পাস্তা👎 / গমের পাস্তা,👍

সাদা পাউরুটি 👎/ গমের রুটি,লাল আটার রুটি👍

চিনিযুক্ত সেরিয়াল👎 / উচ্চ আশ ও কম চিনি যুক্ত সেরিয়াল👍

ইনস্ট্যান্ট ওট মিল👎 /গোল ওটস👍

করনফ্লেক্স 👎/কম চিনি যুক্ত করনফ্লেক্স👍

ভুট্ট👎 / সিম বা সবুজ শাক।👍

💥💥শর্করা জাতীয় খাবারে সাবধানী হোন–

ডায়াবেটিক খাবার মানে এই না যে এটি আপনার শরীরের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করবে বা নিঃস্বরন করবে। আপনি যদি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে সাধারণ সকল শর্করা জাতীয় খাবার খেতে পারবেন, কিন্তু নিয়ম মাফিক ও পরিমিত আকারে।

যেমন–

√👍অল্প পরিমাণে দৈনিক খাবারের তালকায় চিনিযুক্ত খাবার রাখতে পারেন।

√👍খাবারের তালিকায় মিষ্টি থাকলে, সাদা পাউরুটি, ভাত বা পাস্তা খাবেন না। ডেজারট খেতে পারেন।

√👍অল্প পরিমাণে সুষম চর্বি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন, চর্বি ধীরে ধীরে খাবার হজমে সাহায্য করে।

√👉এ জাতীয় খাবারের মধ্যে পিনাট বাটার, পনির, টক দই বা বাদাম রাখতে পারেন।

√👍অন্যান্য সুষম খাবারের সাথে চিনি জাতীয় খাবার খান, শুধু মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ শুধু মিষ্টি খেলে এটি হটাত করে রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

♥♥খাবারকে উপভোগ করুন, যাই অল্প পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় খাবার খান না কেন তার প্রতিটি বাইট কে উপভোগ করুন, পাশাপাশি লক্ষ্য রাখুন কি খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন ও কতবার খাচ্ছেন।❤❤

♠কিভাবে চিনি জাতীয় খাবার কমাবেন?

√√কোমল পানীয় ও জুস – প্রতিদিন এক বোতল ( ২৫০ মিলি) কোমল পানীয় বা জুস পানে রক্তের শর্করার মাত্রা প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এর বদলে লেবুর শরবত বা কমলার রস পান করতে পারেন।

√√ চিনিযুক্ত দুধ চা এর বদলে চিনিহীন রঙ চা পান করতে পারেন।

♣♣সম্পৃক্ত চর্বি ও চিনি–

√√ আপনার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখা সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, যেমন– সরযুক্ত দুধ এর বদলে চিনি সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করুন।

√√ আমরা অনেকেই ভাবি দুধের বদলে মিষ্টি খাবার খেলে এর চাহিদা পূরণ হবে, কিন্তু এটি ভুল ধারনা।

√√দৈনিক এক গ্লাস দুধ শরীরের পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করে।

♦প্রক্রিয়াজাত খাবার নির্বাচন–

বাইরের প্যাকেটজাত খাবারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন এর গায়ে শর্করার মাত্রা কত। কম শর্করাযুক্ত খাবার নির্বাচন করুন। বিশেষ করে চিপস, কোমল পানীয়, বিস্কিট ইত্যাদি। সবচে ভাল হয় ঘরে তৈরি করা খাবার গ্রহণ।

♦খাবারে চিনির বদলে ফ্লেভারকে গুরুত্বদান–

খাবারে চিনির মাত্রা এক তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ কমিয়ে এনে এতে পুদিনা, ভ্যানিলা, জলপাই ইত্যাদি ফ্লেভার যুক্ত করুন।

♦অন্যভাবে খাবারে পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করুন–

যেমন আইসক্রিমের বদলে ফ্রোজেন কলা, কালো চকলেট ইত্যাদি।

♥♥চর্বি জাতীয় খাবার নির্বাচন–

চর্বি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি রয়েছে এর অনেক গুন, তাই চর্বি যুক্ত খাবার নির্বাচনে সাবধানী হোন–

♠♠অস্বাস্থ্যকর চর্বি– সবচে খারাপ চর্বি হল এটি ( প্রক্রিয়াজাত ট্রান্স ফ্যাট) । প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবার , প্রাণীজ তেলে ভাজা খাবার এছাড়া– চিপস, বার্গার ইত্যাদি খোয়া থেকে বিরত থাকুন।

♥♥স্বাস্থ্যকর চর্বি– অসম্পৃক্ত চর্বি সবচেয়ে ভাল, এটির প্রধান উৎস হল মাছ ও উদ্ভিদ; যেমন– অলিভ অয়েল, বাদামের তেল ইত্যাদি। মাছের তেলে থাকে ওমেগা–৩ ফ্যাটি এসিড যা, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করার পাশাপাশি মগজ ও হৃদপিণ্ডকে সবল রাখে।

♠♥সম্পৃক্ত চর্বি– সাধারণত বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য, লাল মাংস, ট্রপিক্যাল তেল এর উৎস। এটি খাওয়া যেতে পারে , কিন্তু হিসেব করে।

♠♠কি ভাবে অস্বাস্থ্যকর চর্বি পরিহার করবেন?

√চিপস বা ক্র্যাকারস এর বদলে বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবার খতে পারেন।

√সাধারণ বাটার বা মাখনের পরিবর্তে পিনাট বাটার বেশ ভাল।

√খাবার কড়া করে ভাজার পরিবর্তে হালকা তেলে ভাজি, সিদ্ধ খাবার বা সেকা খাবার খেতে পারেন।

√প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন।

√লাল মাংসের ( যেমন– গরুর মাংস) বদলে চামড়াবিহিন মুরগির মাংস, মাছ, কুসম ছাড়া ডিম ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেতে পারেন।

√পাস্তা, সবজি ও সালাদে জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারেন।

√স্যান্ডউইচ, বার্গার ইত্যাদির মাংসে থাকে অসম্পৃক্ত চর্বি, এগুলোতে মাংসের বদলে সবজি যোগ করলে খাবারে ভিন্নমাত্রা আসবে।

√পরিমিত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ।

#শাকসবজি

#ডায়াবেটিস রোগীর খাবারে শাকসবজির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। সারা বছরই এ দেশে নানা ধরনের শাকসবজি উৎপাদন হয়। প্রকৃতির এই নেয়ামতকে বিজ্ঞানসম্মত কাজে লাগিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রতিরোধ করা যায়। ডায়াবেটিস রোগীর সুবিধার জন্য শাকসবজিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

১। শর্করা সম্বলিত সবজি যেমন-

আলু,

মিষ্টি কুমড়া,

কাঁচা কলা,

বরবটি, থোড়,

মোচা,

বিট,

শিম,

মাটির নীচের কচু,

গাজর,

কাঁকরোল,

শিমের বিচি,

কাঁঠালের বিচি,

শালগম,

ইঁচড়,

ঢেঁড়স,

বেগুন,

মটর শুঁটি,

কচুরমুখী,

পাকা টমেটো।

২। শর্করাবিহীন শাকসবজি যেমন-

সব ধরনের শাক,

যেমন

লালশাক, পুঁইশাক,

পালংশাক, কলমিশাক,

ডাঁটাশাক, কচুশাক ইত্যাদি

সবজি

যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি,

মুলা, ওলকপি,

কাঁচা টমেটো, কাঁচা পেপে,

শসা, খিরা,

উচ্ছে, করলা,

ঝিঙা, চিচিঙা,

পটোল, লাউ,

চালকুমড়া, ডাঁটা,

সজনা, ধন্দুল,

ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ,

মাশরুম ইত্যাদি।

উপরোক্ত শাকসবজিগুলো প্রতিটি মৌসুমেই কোনটা না কোনটা উৎপাদিত হয়।

ডায়াবেটিস রোগীর উচিত প্রতি দিন একই ধরনের শাকসবজি না খেয়ে পাঁচ মিশালী শাকসবজি খাওয়া।

এতে করে সব ধরনের শাকসবজির ভিটামিন মিনারেলস শরীরের কাজে লাগবে, খাবারে বৈচিত্র্য আসবে, পেট ভরবে, মনে পরিতৃপ্তি আসবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

♥নিয়মিত খাবার গ্রহণ ও খাবারের তালিকা প্রস্তুত

👉মজার ব্যাপার এই যে মাত্র ৭% শরীরের ওজন কমালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অর্ধেক কমে যায়। এর জন্য অতিমাত্রার সচেতনতার দরকার নেই।

👉শুধুমাত্র নিয়ম করে খাবার গ্রহণ ও কি খাচ্ছেন তার তালিকা প্রস্তুতি বা সচেতন হওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

🍳🍶দিনটি শুরু করুন সুসাস্থ্যকর নাস্তা দিয়ে– এটি সারাদিনের শক্তি যোগাবে পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়মিত রাখবে।

💢 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেঃ

🎗সকালের নাস্তা হিসেবে

২/৩ পিস লাল আটার রুটি,

১ টি সিদ্ধ ডিম

পরিমাণ মত সবজি ছাড়াও

১ কাপ দুধ যথেষ্ট।

🎗দুপুরের খাবার হিসেবে

১ কাপ ভাত,

১/২ কাপ সবজি ,

মাছ বা মাংস ১ পিস ও

পরিমাণ মত সালাদ যথেষ্ট।

🎗রাতের খাবার হিসেবে

২/৩ পিস রুটি,

১ কাপ সবজি ও

মাছ বা মুরগি ১ পিস যথেষ্ট।

🍜অল্প অল্প খাবার গ্রহণ– সরবোচ্চ ৬ বারের বেশি খাবেন না। এভাবে খাবার গ্রহণে সহজে হিসেব রাখতে সুবিধা হয়।

🍜ক্যলরি নিয়মিতকরন– নিয়মিত চাহিদানুযায়ি খাবার গ্রহণ করুন।

🍜কোন এক বেলার খাবার পরিহার করা থেকে বিরত থাকুন। ধরুন রাতে না খেয়ে পরেরদিন সকালে বেশি খেলেন, এটা কাম্য নয়। খাবার পরিহারে রক্তের শর্করার মাত্রার তারতম্য হয়।

📘খাবারের ডায়েরি

📖একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা খাবারের ডায়েরি তৈরি করেছেন, তাদের ওজন হ্রাসের হার, যারা করেন নি তাদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ।

📖খাবারের ডায়েরি তৈরিকরণের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন খাবারে আপনার ঘাটতি রয়েছে ও কোন খাবার বেশি খাওয়া হচ্ছে।

📖এভাবে আত্ম সচেতনতা তৈরি করে নিজেই খাবারের তালিকা প্রস্তুত করতে পারেন।

🚸কর্মমুখর হোক প্রতিদিন – সকালটি শুরু হোক ব্যায়ামের দ্বারা।

🚸৩০ মিনিট করে জোরে হাটা বা ১০ মিনিট বিরতিতে মোট ৩০ মিনিট হাটা শরীরের ইনসুলিন এর কর্মপ্রক্রিয়া অনেক বাড়িয়ে দেয়।

🚸হাঁটাহাঁটি ছাড়াও, ব্যায়াম, সাতার, সাইকেল চালানো, দড়ি লাফ ইত্যাদি মধ্যম মাত্রার কায়িক শ্রমের মাধ্যমে রক্তের শর্করার মাত্রা থাকে সহনীয় পর্যায়ে।

👉সুতরাং, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শর্করা সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি চর্বি ও আমিষ জাতীয় খাবারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে,

👉একটি সুন্দর খাবারের তালকা প্রস্তুতি বা ডায়েরির মাধ্যমে কি খাচ্ছেন তার তালিকা তৈরির মাধ্যমে তা লিপিবদ্ধ করে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত নিয়ম মাফিক ব্যায়ামের মাধ্যমে যে কেউ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বা ডায়াবেটিস এর মাত্রা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারেন।

💜💜জীবনধারার পরিবর্তন: নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা, অসুখ সম্বন্ধে রোগীর প্রয়োজনীয় ধারণা।

🎀প্রতিকার

🎗শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যাবশ্যক।

🎗 খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হবে।

🎗সেই সাথে ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

🎗ফলে রক্ত চলাচল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়।

🎗সঠিকভাবে জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

🎗 তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ঔষধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইনসুলিন ইনজেকশন ব্যবহার করতে হয়।

🎀প্রতিরোধ

🎗ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ওজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 🎗ওজন বেশি থাকলে তা খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে কমানো আবশ্যক।

🎗চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।

🎗 আঁশ যুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে। 🎗একটি খাদ্যতালিকা মেনে চললে সব থেকে ভালো হয়।

🎗কোনো ব্যক্তি যদি ইনসুলিন কিংবা অন্যান্য ঔষধ নিয়মিত গ্রহণ করতে থাকে, তাহলে খাবার নিয়মিত খেতে হবে। কেননা কোনো বেলার খাবার বাদ দিলে তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে।

💢💢সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বর্তমানে ডায়াবেটিস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এজন্য সবার মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ সচেতনতাই পারে আমাদের এই বিভীষিকা থেকে দূরে রাখতে।💢💢

🚸❤🚸প্রি-ডায়াবেটিক

প্রি-ডায়াবেটিক থেকে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে। তবে আমার কথা হলো কিছু অভ্যাস এবং জীবন প্রণালীর পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেওয়া যায়। যেমন-

🎗১. শরীরের সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ-প্রত্যেকটি মানুষের নারী ও পুরুষভেদে উচ্চতা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ওজনসীমা থাকে। যা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। কম ক্যালরিসম্পন্ন সুষম খাবার গ্রহণ করে সবাই নিজের ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

🎗২. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন- শর্করা, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু, চিনি ইত্যাদি খাবার যতটা সম্ভব কম আহার করুন। পেট ভরে সবুজ শাক সবজি ও সালাদ আহার করলে রক্তের সুগার থাকবে নিয়ন্ত্রণে। যেকোনো মাংসের চেয়ে মাছ বেছে নিন আপনার খাদ্যতালিকায়।

🎗৩. নিয়মিত হাঁটুন-ফিনিস একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোক বেশি ব্যায়াম করেছেন, সপ্তাহে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বা দিনে ৩৫ মিনিট, তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে গেছে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। ব্যায়াম বা হাঁটা খুবই স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে ইনসুলিনের রিসেপ্টর সংখ্যা বাড়ে। এই ইনসুলিন রক্তের সুগারকে কোষের ভেতর ঢুকতে সাহায্য করে এবং শরীরে সুগার বা গ্লুকোজ দহন করে পায় শক্তি ও পুষ্টি।

🎗৪. ফাস্টফুড পরিহার করুন-যারা নিয়মিত ফাস্টফুড গ্রহণ করেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কারণ ফাস্টফুডে আছে অস্বাস্থ্যকর ট্রান্সফ্যাট এবং প্রচুর সুগার (শর্করা)।

🎗৫. মসলাযুক্ত খাবার খান-জার্মান গবেষকগণ বলেছেন, ১ গ্রাম দারুচিনি খাবার খেলে রক্তের সুগার কমে ১০ শতাংশ। এই মসলাটি রক্তের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।

🎗৬. দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন- যে কোন ধরনের দুশ্চিন্তা রক্তের সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই চেষ্টা করুন চাপহীন জীবন কাটাতে। পরিবারের সাথে সময় কাটান, ভালো থাকুন।

💢💢ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা💢💢

🚩১. করল্লার রস:

💢ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে করল্লার রস

প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় করল্লার রস খেলে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাবে,রক্তে ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়বে,অন্ত্রে গ্লুকোজের শোষণ কমে যাবে এবং রক্তে ক্ষতিকর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে।

🚩করল্লার রসে মূল উপাদানঃ

চ্যারানটিন(Charantin),পিপিপি[Insulin like peptide(PPP)], লেকটিন(Lectin), ভাইসিন(Vicin) ,কিউকারবিটেন (Cucurbitane glycosides),মমোরডিন(Momordin) এবং স্যাপোনিন (Saponin).

🚩কীভাবে কাজ করেঃCharantin,PPP, Lectin,Vicin- এরা ইনসুলিনের মত কাজ করে।.Momordin-অন্ত্রে গ্লুকোজ শোষণে বাঁধা দেয়।Saponin-ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়ায়।Cucurbitane glycosides- কোষের গ্লুকোজ গ্রহণে সহায়তাকারী প্রোটিন AMPK কে সক্রিয় করে ফলে সহজেই কোষের মধ্যে গ্লুকোজ ঢুকতে পারে।

🚩মাত্রা :

প্রতিদিন ১০০মিলি করল্লার রস সমান দুই ভাগে ভাগ করে দিনে দুই বার খাবেন খাওয়ার পর পর।এছাড়াও করল্লার রসের পাউডার পাওয়া যায় যা প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্য ১০০মিগ্রা হিসাবে পরিমাণ বের করে তাকে সমান দু ভাগে ভাগ করে দিনে দু’বার ভরা পেটে খাবেন।

🚩সাবধানতা:

মাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

🚩2.ডুমুরের পাতা:

💢ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে

ডুমুরের পাতা:

স্পেনের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে প্রতিদিন সকালে নাস্তার সাথে ডুমুরের পাতার চা খেলে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিক রোগীদের দৈনিক ইনসুলিনের চাহিদা ১২% কমে যায় মাত্র এক মাসে। এছাড়াও ডুমুর পাতার চা পানে রক্তে ক্ষতিকর চর্বির মাত্রা কমে যায়। (সূত্র:ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন,ইউনিভার্সিটি হসপিটাল,মাদ্রিদ,স্পেন)

🚩ডুমুরের পাতার মূল উপাদান: পলিফেনল

🚩কীভাবে কাজ করেঃ

ডুমুরের পাতার চা পলিফেনল হুবহু ইনসুলিনের মত কাজ করে। জেনে নিন কীভাবে এই চা বানাবেন: -আধা লিটার পানিতে ২ টেবিল চামচ শুকনা ডুমুরের পাতার গুড়া ছেড়ে দিন।এরপর ১৫মিনিট বা তার অধিক সময় ধরে ফুটান যাতে পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়।এখন এই চা পান করুন নাস্তার সাথে।

🚩সতর্কতা:

মাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

🚩3.জিরার :

💢ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় জিরার ব্যবহার:

প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা পত্রে দাবী করা হয়েছে যে জিরা ১)রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় ২)রক্তে চর্বির মাত্রা কমায় ৩)ডায়াবেটিক জটিলতার জন্য দায়ী AGE(Advanced Glycated End-product) তৈরীতে বাঁধা দেয়। কোন কোন গবেষক দাবী করেছেন জিরা’র কার্যকারিতা বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ঔষধ Glibenclamide(যেমন Dibenol) এর সমতুল্য।

🚩জিরার মূল উপাদান: কিউমিন অ্যালডিহাইড (Cuminaldehyde).

🚩কীভাবে কাজ করে:

👉১। জিরার কিউমিন অ্যালডিহাইড ক্ষুদ্রান্তের(পেটের নাড়ী-ভুড়ির অংশ) ভিতরের দেয়ালের কোষের আলফা-গ্লুকোসাইডেজ এনজাইমকে কাজ করতে বাঁধা দেয় ফলে পরিপাককৃত শর্করাজাতীয় খাদ্যের ওলিগোস্যাকারাইড মনোস্যাকারাইডে(গ্লুকোজ) পরিণত হতে বাঁধাগ্রস্থ হয়।

👉২। কিউমিন অ্যালডিহাইড অ্যালডোজ রিডাকটেজ এনজাইমকে বাঁধাদানের মাধ্যমে দেহের জন্য ক্ষতিকর ও ডায়াবেটিক জটিলতার জন্য দায়ী AGE(Advanced Glycated End-product) তৈরীতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।ফলে ডায়াবেটিসের নানাবিধ জটিলতা এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

🚩নিয়ম:আধা চা-চামচ সদ্য গুড়াকৃত জিরা পানি বা চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে সকালে নাস্তার আগে ও রাতের খাবারের আগে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা মনে রাখতে হবে যে জিরার কিউমিন অ্যালডিহাইড বাতাসের অক্সিজেনের সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই ঔষধীগুণ পেতে তাৎক্ষণিকভাবে গুড়াকৃত জিরাই ব্যবহার করতে হবে।

🚩সতর্কতা:

জিরা’র গুড়ার কার্যকারিতা বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ঔষধ Glibenclamide এর সমতুল্য হওয়ায় রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

🚩4. ক্যাসিয়া বা দারুচিনি:

গবেষণায় দেখা গেছে ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয় এমন ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত ক্যাসিয়া (আমাদের দেশে যেটা দারুচিনি নামে পাওয়া যায়) খেলে মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা(FBS) ১৮-২৯% কমে যায়; ট্রাইগ্লিসারাইড কমে ২৩-৩০%; লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন(LDL) কমে ৭-২৭% এবং কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমে ১২-২৬%

🚩মূল উপাদান: MHCP ও সিনামিক এসিড।

🚩কীভাবে কাজ করে:

MHCP ইনসুলিনের ন্যায় কাজ করে।আর সিনামিক এসিড PPAR-gamma কে সক্রিয় করে।এর ফলে একদিকে কোষের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে যাওয়ায় কোষে সহজেই গ্লুকোজ প্রবেশ করতে পারে আর অন্যদিকে কোষের মধ্যে চর্বিকে প্রবেশ করিয়ে রক্তে এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।

🚩নিয়ম:

প্রতিদিন ৩-৬ গ্রাম ক্যাসিয়া সকাল ,দুপুর ও রাতে সমানভাগে ভাগ করে খেতে হবে।এটা আপনি সরাসরি পাউডার আকারে বা স্টিক চিবিয়ে বা এটা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন।

🚩সাবধানতাঃমাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।তাছাড়া ক্যাসিয়াতে কুমারিনের(কুমারিন রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধা দেয়) মাত্রা বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত সেবনে আঘাতপ্রাপ্তস্থানে রক্ত জমাট বাঁধা বাঁধাগ্রস্থ হয়।তাছাড়া যাদের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা আছে তাদের রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে।কাজেই এসব বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

🚩5.স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গী

💢স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গী ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক Prof.Steve Hertzler এর মতে প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে ১গ্রাম স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গীর নির্যাস (Salacia extract) খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে প্রায় ২৩% এবং দেহে ইনসুলিনের চাহিদা কমে ২৯%।স্যালাসিয়ার কাজ ডায়াবেটিসের ঔষধ Acarbose (যা আমাদের দেশে Gluco-A,Sugatrol,Carbos ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়) এর মত।

🚩স্যালাসিয়া , সপ্তরঙ্গীর মূল উপাদান:

স্যালিসিনল (SALICINOL) ও কোটাল্যানল (KOTALANOL)- উভয়েই অত্যন্ত শক্তিশালী আলফা-গ্লুকোসাইডেজ এনজাইমের কাজে বাঁধাদানকারী।

🚩কীভাবে কাজ করে:

শর্করাজাতীয় (ভাত,রুটি,আলু…) খাবার পরিপাককৃত হয়ে অপেক্ষাকৃত সরল শর্করা ওলিগোস্যাকারাইড ও ডাইস্যাকারাইডে পরিণত হয়।অন্ত্রের ভিতরের দেয়ালের কোষের আবরণীতে থাকা আলফা-গ্লুকোসাইডেজ এনজাইম এসব শর্করাকে ভেঙ্গে অতিসরল শর্করা বা মনোস্যাকারাইডে(যেমন-গ্লুকোজ) রূপান্তরিত করে।স্যালিসিয়ার স্যালিসিনল ও কোটাল্যানল এই এনজাইমের কার্যকারিতাকে বাঁধা দেওয়ায় শর্করাজাতীয় খাবার অতি দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে পারে না।ফলে খাওয়ার পর পর দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে পারে না।

🚩মাত্রাঃপ্রতিদিন ১গ্রাম স্যালাসিয়া এক্সট্র্যাক্ট (নির্যাস) সকালে নাস্তার সাথে।এক্সট্র্যাক্ট না পাওয়া গেলে ৩-৬ গ্রাম স্যালাসিয়া গাছ/কাঠের গুড়া বা গুড়া দিয়ে তৈরী চা পান করলেও চলবে।

🚩সাবধানতাঃস্যালাসিয়া হাইপোগ্লাইসেমিয়া না করলেও অপরিপাককৃত শর্করার কারণে পেট ফাঁপতে পারে,পেট ভার লাগতে পারে,পেট ব্যাথা হতে পারে কিংবা ডায়রিয়া হতে পারে।

6.💢জামের বীচিতে ডায়াবেটিস নিরাময়:

আমাদের দেশে ডায়াবেটিসের ভেষজ চিকিৎসায় জামের বীচির ব্যবহার অতি পরিচিত। গবেষণায় দেখা গেছে জামের বীচি (Eugenia jambolana) ১)অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় ২)মাংসপেশীর কোষে গ্লুকোজ গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেনে পরিণত হওয়া তরান্বিত করে এবং ৩)রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়।

🚩জামের বীচি,জামের মূল উপাদানঃজাম্বোলিন (Jamboline)

🚩কীভাবে কাজ করেঃ

👉১। ধারণা করা হয় জাম্বোলিন ইনসুলিন নিঃসরণ করায় বা নিজেই ইনসুলিনের মত কাজ করে

👉২। জাম্বোলিন পেশীকোষের গ্লুকোজ পরিবহণকারী প্রোটিনকে সক্রিয় করে ফলে রক্ত থেকে গ্লুকোজ সহজেই মাংসপেশীতে ঢুকে রক্তে এর মাত্রা কমায়

👉৩। গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণের জন্য দায়ী এনজাইমকে উত্তেজিত করে মাংসপেশী ও লিভারে এদের সঞ্চিত হতে সাহায্য করে।—এই ত্রিমুখী কার্যকলাপে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়।

🚩মাত্রাঃজামের শুকনো বীচির গুড়া ১গ্রাম করে সকালে,দুপুরে ও রাতে খাওয়ার অব্যবহিত পূর্বে।

🚩সতর্কতা:

মাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

7.🚩গুরমারির পাতা

💢ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে গুরমারির পাতা:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরমারির (Gymnema sylvestre) পাতার ব্যবহার বেশ পুরোনো।হামদর্দ এর ডায়াবেটিসের ঔষধ ‘দোলাবী’র মূল উপাদান গুরমারি।গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণিতও হয়েছে।কিন্তু যেটি তারচেয়েও বেশী চমকপ্রদ তা হলো কিছু গবেষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে এটি ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।যদি বিষয়টি সত্যি হয় তবে ডায়াবেটিস থেকে চিরমুক্তি পাওয়া সম্ভব।

🚩গুরমারির পাতার মূল উপাদান: জিমনেমিক এসিড (Gymnemic acid)

🚩কীভাবে কাজ করে:

জিমনেমিক এসিডের গঠনের সাথে গ্লুকোজ অণুর মিল থাকায় পরিশোষণ (absorption) কিংবা মিষ্টি স্বাদ উদ্রেক করতে(sweet taste) গ্লুকোজ কোষের যে রিসেপ্টরের সংযুক্ত হয় জিমনেমিক এসিডও সে রিসেপ্টরের সাথে প্রতিযোগিতামূলকভাবে আগে গিয়ে সংযুক্ত হয়।ফলে জিমনেমিক এসিড ও গ্লুকোজ একই সাথে উপস্থিত থাকলে গ্লুকোজের মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয় না এবং সঠিকভাবে অন্ত্র থেকে শোষিত হয়ে রক্তে দ্রুত যেতে পারে না।

অামি নিজেই পরীক্ষা করে দেখেছি,গুরমারির পাতা চিবিয়ে খাওয়ার পর চিনি বা গ্লুকোজ খেলে ২ ঘন্টা পর্যন্ত মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয় না।

🚩নিয়ম:

প্রতিদিন সকালে ও রাতে ৪০০মিগ্রা করে গুরমারি পাতার নির্যাস (extract) খাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে।

8.💢বংশলোচন ডায়াবেটিস কমায়:

বংশলোচন বা তাবাশীর (Tabasheer) এক বিশেষ প্রজাতির বাঁশের ভিতর গিঁটে জমে থাকা তরল ক্রমান্বয়ে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে তৈরী হয়।বংশলোচনের মূল উপাদান অর্গানিক সিলিকা।গবেষণায় দেখা গেছে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়,চর্বির(কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড) মাত্রা কমায় এবং লিভারের সুরক্ষা প্রদান করে। ডায়াবেটিসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে Qurs Tabasheer বহুল ব্যবহৃত ঔষধ Glimepiride ( Amaryl, Dialon,Secrin ইত্যাদি নামে অামাদের দেশে পাওয়া যায়) চেয়েও বেশী কার্যকরী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।হামদর্দের জনপ্রিয় ডায়াবেটিসের ঔষধ ‘দোলাবী’র প্রতিটি ট্যাবলেটে ৯৫.৬০মিগ্রা বংশলোচন আছে।

🚩বংশলোচন , তাবাশীর মূল উপাদান: অর্গানিক সিলিকা (Silicic acid)

🚩কীভাবে কাজ করে:

বংশলোচন কীভাবে কাজ করে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও রক্তে এর উপস্থিতিতে লিভারে গ্লুকোজ ও চর্বি বিপাকের সাথে সংশ্লিষ্ট কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমের মাত্রার তারতম্য ঘটে।যেমনGlucose-6-Phosphatase ওFructose-1-6-biphosphatase এর মাত্রা কমে যায় এবং Hexokinase এর কার্যকারিতা বেড়ে যায়।ধারণা করা হয় বংশলোচন এসব এনজাইমের কাজকে প্রভাবিত করেই রক্তে গ্লুকোজ ও চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

🚩নিয়ম:

১-৩ গ্রাম প্রতিদিন সমান দু’ভাগে ভাগ করে দিনে ২বার খেতে হবে।

সাবধানতাঃমাত্রাতিরিক্ত বা অন্যন্য ডায়াবেটিসের ঔষধের সাথে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।কাজেই এ বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

9.🚩নিম পাতা

💢ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে নিম পাতার জুড়ি নেই:

নিম গাছের ঔষধি গুণের কথা আমরা সবাই জানি।নিম গাছের পাতার নির্যাস ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।International Research Journal of Biological Sciences [Vol. 1(6), 76-79, October (2012)] থেকে জানা যায় ডায়াবেটিক ইঁদুরকে মাত্র ১ডোজ নিমের পাতার নির্যাস খাওয়ানোর পর তার রক্তে glucose এর মাত্রা কমেছে 18%,cholesterol কমেছে 15%,triglycerides কমেছে 32%,urea কমেছে 13%,creatinine কমেছে 23% এবং lipids বা চর্বি কমেছে 15%।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাতেও নিমের পাতার ডায়াবেটিস বিরোধী গুণের কথা প্রমাণিত হয়েছে যা Bangl. J. Vet. Med.(2010). 8(1): 75 – 80 তে প্রকাশিত হয়েছে।তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্যটি দিয়েছে Evidence-Based Complementary and Alternative Medicine [Volume 2011 (2011), Article ID 561625] নামক জার্নালটি।সেখানে বলা হয়েছে নিম পাতার নির্যাস ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।এটা বাস্তব হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিসকে চিরতরে বিদায় জানানো সম্ভব হবে।

🚩নিম পাতা রমূল উপাদান:

নিম পাতার নির্যাসে প্রায় ১৩৫টি ঔষধীগুণসম্পন্ন উপাদান পাওয়া গেছে।তবে গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন কোন কোন উপাদান ডায়াবেটিস নিরাময়ে কাজ করে।গবেষণায় দেখা গেছে নিম পাতার জলীয় নির্যাসের (aqueous extract) এর তুলনায় ক্লোরোফর্ম দ্বারা নিষ্কাষিত নির্যাসের (chloroform extract) ডায়াবেটিস নিরাময়ের ক্ষমতা অনেক বেশী।

🚩কীভাবে কাজ করে:

🚩ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার নির্যাসের কার্যকরী উপাদান নিম্নোক্ত উপায়ে কাজ করে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে-

👉১। খাদ্যের শর্করাকে গ্লুকোজে রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম হলো অন্ত্রের গ্লুকোসাইডেজ।নিম পাতার নির্যাস অন্ত্রের এই এনজাইমের কার্যকারিতা ৩৫%-৫২% পর্যন্ত কমিয়ে দেয় ফলে পরিপাকের পর খাদ্য থেকে গ্লুকোজ খুব দ্রুত ও বেশী মাত্রায় রক্তে প্রবেশ করতে পারে না।

👉২। ইনসুলিন নিঃসরণকারী অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের কার্যকারিতা ও সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

👉৩। রক্তে প্রবেশের পর অতিরিক্ত গ্লুকোজ বিভিন্ন কোষে প্রবেশ করে গ্লাইকোজেন আকারে জমা হয় ফলে রক্তে মাত্রাতিরিক্ত গ্লুকোজের উপস্থিতি থাকে না।গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরে glucose-6-phosphate dehydrogenase এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ডায়াবেটিসে এই এনজাইমের কার্যকারিতা বেশ কমে যায়।নিম পাতার নির্যাস এই এনজাইমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

👉৪। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিতে বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়।কিন্তু সেরোটোনিন ইনসুলিন নিঃসরণে বাঁধা সৃষ্টি করে।নিম পাতার নির্যাস সেরোটোনিনের কাজে বাঁধা দেওয়ার মাধ্যমে ইনসুলিনের স্বাভাবিক নিঃসরণ বজায় রাখে।

🚩নিয়ম:

ডায়াবেটিসে কার্যকরী নিম পাতার উপাদান খুব ধীরে ধীরে পানি ও ক্লেরোফর্ম দ্রবণে বের হয়ে আসে। যেহেতু chloroform extract ঘরে করা সম্ভব নয় (যদিও এটি ডায়াবেটিস নিরাময়ে সবচেয়ে কার্যকরী) তাই আপনাকে নিম পাতার জলীয় দ্রবণেই এর কার্যকরী উপাদানকে বের করে আনতে হবে।

প্রয়োজনীয় সংখ্যক (অভিজ্ঞ হেকিম/কবিরাজ কর্তৃক নির্দেশিত) তাজা নিম পাতা বেঁটে তা ১০০মিলি মাঝারি মাত্রার গরম পানিতে (ফুটন্ত পানি নয়) মিশিয়ে একটি হটপটে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিন।২৪ ঘন্টা পর সেটি পান করুন। এটি কেবলমাত্র সকালে নাস্তার সময় পান করতে হবে।

🚩সতর্কতা:

মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদী নিমের নির্যাস সেবন লিভার ও কিডনীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।নিমের তেল (বীচি থেকে প্রাপ্ত) যদিও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় তবুও এটি একটি বিষাক্ত উপাদান;এক্ষেত্রে মৃত্যঝুঁকিও রয়েছে।এছাড়াও নিম পাতা গর্ভপাত ও গর্ভনিরোধে ব্যবহৃত হয়।সুতরাং গর্ভধারণে ইচ্ছুক বা গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এটা কোনক্রমেই ব্যবহার করা যাবে না।রক্তে ক্ষতিকর মাত্রায় গ্লুকোজ কমে যাওয়ার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে।

10.🚩গুরমার গাছ

💢গুরমার গাছের পাতা ব্যাবহার করে দেখতে পারেন:

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই পাতা ডায়াবেটিক বা সুগার রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। গুরমারের পাতা সেবনেই অনায়াসে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রক্তে শর্করা মাত্রা মানে সুগার লেভেল। এক মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

🚩গুরমার গাছ

🚩নিয়ম:

– শুকনা পাতা গুঁড়া করে খাবারের আগে খেতে হবে।

– গবেষণায় দেখা গেছে গুরমার অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।

– বহুমূত্র বা ডায়াবেটিক রোগ দেখা দেয়ার শুরুতে এটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

👉👉👉এছাড়াও শিলাজিত বা অ্যাসফল্টাম,চুকা পালং শাক,কালোজিরা,বাগান বিলাসের নির্যাস,গুরচা,মেথী,চিরতা,কাঁচা ঢেঁড়শ ইত্যাদি নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের খুবই কার্যকরী উপাদান রয়েছে।কিন্তু সম্মানিত পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতির বিষয়টি মাথায় রেখে আর্টিকেলটির কলেবর অার বৃদ্ধি করলাম না।

💢💢কিছু কথা না বললেই নয়:

1. উপরোক্ত আর্টিকেলটি কেবলই তথ্যমূলক;কোনক্রমেই তা রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লেখা হয়নি এবং সম্পূর্ন তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

2.যেহেতু এসব প্রাকৃতিক উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় তাই এগুলোর মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণে বা অন্যন্য ডায়াবেটিক বিরোধী ঔষধের সাথে সেবন করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে ক্ষতিকর মাত্রায় গ্লুকোজ কমে যাওয়া) হতে পারে। কাজেই ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

3.রেজিস্টার্ড ভেষজ চিকিৎসক (হেকিম/কবিরাজ) এর পরামর্শ ছাড়া এসব প্রাকৃতিক উপাদান চিকিৎসায় ব্যবহার না করার অনুরোধ রইলো।

1
$ 0.00
Avatar for alma45
Written by
3 years ago

Comments