চিনি এক প্রকার সুমিষ্ট পদার্থ যা গাছ বা ফলের রস থেকে প্রস্তুত করা হয়। ভারতবর্ষে সাধারণত আখ বা ইক্ষুর রস থেকে চিনি তৈরি করা হয়। এছাড়া বীট এবং ম্যাপল চিনির অন্য দুটি প্রধান বনজ উৎস। চিনির রাসায়নিক নাম সুক্রোজ। এক অণু গ্লুকোজের সঙ্গে এক অণু ফ্রুক্টোজ জুড়ে এক অণু সুক্রোজ তৈরি হয়। রসায়নাগারে যে চিনি প্রস্তুত করা হয় তা প্রধানত: ঔষধে ব্যবহার করা হয়।
#দানাদার চিনি
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
শক্তি-১,৬১৯ কিজু (৩৮৭ kcal)
শর্করা-99.98 g
চিনি-99.91 g
খাদ্যে ফাইবার-0 g
স্নেহ পদার্থ-0 g
প্রোটিন-0 g
ভিটামিনসমূহ
রিবোফ্লাভিন (বি২)-(2%)0.019 mg
চিহ্ন ধাতুসমুহ
ক্যালসিয়াম-(0%)1 mg
লোহা-(0%)0.01 mg
পটাশিয়াম-(0%)2 mg
অন্যান্য উপাদানসমূহ
পানি-0.03 g
একক
μg = মাইক্রোগ্রামসমূহ • mg = মিলিগ্রামসমূহ
IU = আন্তর্জাতিক এককসমূহ
(Percentages are roughly approximated using US recommendations for adults.)
Source: USDA Nutrient Database
বাদামী চিনি
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
শক্তি-১,৫৭৬ কিজু (৩৭৭ kcal)
শর্করা-97.33 g
চিনি-96.21 g
খাদ্যে ফাইবার-0 g
স্নেহ পদার্থ-0 g
প্রোটিন-0 g
ভিটামিনসমূহ
থায়ামিন (বি১)-(1%)0.008 mg
রিবোফ্লাভিন (বি২)-(1%)0.007 mg
ন্যায়েসেন (বি৪)-(1%)0.082 mg
ভিটামিন বি৬-(2%)0.026 mg
ফোলেট (বি৯)-(0%)1 μg
চিহ্ন ধাতুসমুহ
ক্যালসিয়াম-(9%)85 mg
লোহা-(15%)1.91 mg
ম্যাগনেসিয়াম-(8%)29 mg
ফসফরাস-(3%)22 mg
পটাশিয়াম-(7%)346 mg
সোডিয়াম-(3%)39 mg
দস্তা-(2%)0.18 mg
অন্যান্য উপাদানসমূহ
পানি-1.77 g
একক
μg = মাইক্রোগ্রামসমূহ • mg = মিলিগ্রামসমূহ
IU = আন্তর্জাতিক এককসমূহ
(Percentages are roughly approximated using US recommendations for adults.
Source: USDA Nutrient database)
চিনি উদ্ভিদের টিস্যুতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু সুক্রোজ বিশেষ করে আখ এবং চিনির বীজতে কেন্দ্রীভূত থাকে, বাণিজ্যিকভাবে আদর্শমানের চিনি তৈরীর জন্য পরিশ্রুত করতে দক্ষ নিষ্কাশন প্রয়োজন । প্রায় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্ব হতে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চিনির উৎপত্তি হয়। চিনির কাজঃ চিনি এক প্রকার শর্করা, যা খেলে আমাদের দেহে শক্তি যোগায়।
চিনিকে সাধারণত ১১ ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো :
১. দানাদার চিনি
একে টেবল সুগার বা হোয়াইট সুগার (সাদা চিনি) বলা হয়। এগুলো উচ্চমাত্রায় রিফাইন বা পরিশোধন করা থাকে। এগুলো সাধারণত পাওয়া যায় আখ, সুগার বিট ইত্যাদি থেকে। এ ধরনের চিনি ঘরোয়া রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত হয়।
২. সাসটার সুগার
এটাও দানাদার রিফাইন বা পরিশোধিত চিনি। এটা হোয়াইট সুগারের তুলনায় বেশি পরিশোধিত থাকে। এ ধরনের চিনি সিরাপ আর ড্রিংক ককটেলে ব্যবহৃত হয়।
৩. কনফেকশনারস সুগার
এটা গুঁড়ো চিনি। এটাকে টেন পারসেন্ট সুগারও বলা হয়। এটা বেক পণ্য ডেকোরেশনে (সজ্জায়), বরফ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আইস কিউব, ললির ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়।
৪. পার্ল সুগার
এটা অন্যান্য চিনির থেকে একটু শক্ত হয়। একটু ক্রিমি রঙের হয়। এটা উচ্চ তাপেও সহনশীল, গলে না। এটা প্রেসটি, কুকিজ, বাটার বান ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. স্যানডিং সুগার
এটাও তাপ সহনশীল। অন্যান্য চিনি থেকে দানাটা একটু বড়। কিছু কিছু বিস্কুটের ওপরে নতুন মাত্রা দিতে এবং মচমচে করার ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়।
৬. কেইর (আখ) সুগার
এই চিনি আখ থেকে তৈরি হয়। এটা কম প্রক্রিয়াজাত চিনি। এই চিনি সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের। এটা শরীর সহজে শোষণ করতে পারে।
৭. ডিমেরারা সুগার
এটাও কম প্রক্রিয়াজাত। এর দানাও বড়। গন্ধটা অন্য চিনি থেকে একটু ভিন্ন থাকে। দোকানের চা, কফি এগুলোকে মিষ্টি স্বাদের করতে সাধারণত এগুলো ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কেক, কুকিজে ব্যবহার করা হয়।
৮. টারবিনেডো সুগার
এই চিনিও আখ থেকে পাওয়া যায়। বড় দানাদার এবং হালকা খয়েরি বর্ণের হয়। এই চিনি ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়। এটা কোমলপানীয় শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
৯. মাসকোভাডো সুগার
এটা অপ্রক্রিয়াজাত আখের চিনি। এখান থেকে মলাসেসকে (খাদ্য উপাদান) আলাদা করা হয় না। এটা গাঢ় অথবা হালকা দুটো বর্ণের হয়। একটু ভেজা ভেজা এবং আঠালো হয়। কড়া গন্ধের হয়। বালুর মতো হয়। বার-বি-কিউ বা মেরিনেট সুগারে এটা ব্যবহার করা হয়।
১০. লাইট ব্রাউন সুগার
এটা পরিশোধিত হোয়াইট সুগারের মধ্যে সামান্য পরিমাণ মলাসেস যোগ করা হয়। এটা ভেজা ভেজা এবং বালুর মতো হয়। ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়।
১১. ডার্ক ব্রাউন সুগার
এটার গন্ধও অনেক কড়া থাকে। এটা এক ধরনের পরিশোধিত হোয়াইট সুগার। এর মধ্যে বেশি পরিমাণে মলাসেস যুক্ত থাকে।
মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার প্রস্তুত করতে চিনির বহুল ব্যবহার আমাদের সবার জানা। শরীরে শর্করার চহিদা মেটানোর উপকরণ হিসেবেও বেশ পরিচিত। কিন্তু খাবার প্রস্তুত ছাড়াও চিনির রয়েছে উপকারী বহু গুণ। ব্যবহার জানা থাকলে নিজেই পেতে পারেন এসব উপকার। আসুন আজ জেনে নেব, চিনির ভিন্ন ব্যবহারে অসাধারণ উপকার সম্পর্কে।
#চিনি খাওয়ার #উপকারিতা:
চিনির রয়েছে অনেক উপকারিতা। চিনির বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
#দ্রুত শক্তি দেয়:
যখন শরীরে চিনির ঘাটতি হয়, তখন শক্তি কমে যায়। আর চিনি খেলে শরীর তাৎক্ষণিক শক্তি পায়।
#ত্বকের টোন ঠিক রাখে:
এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলিক এসিড, যা ত্বকের টোনকে ঠিক রাখে। ত্বকের তৈলাক্ততার ভারসাম্য রক্ষা করে, দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
#নিম্ন রক্তচাপ:
চিনি নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। নিম্ন রক্তচাপ হলে চিনির শরবত বা চিনি খাওয়া যেতে পারে। যারা লো ব্লাড প্রেসারে ভোগেন তাদের সবসময় সঙ্গে চিনি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
#কাটাছেঁড়া:
চিনির দানা যেকোনো কাটাছেঁড়া ক্ষেত্রে প্রলেপ হিসেবে লাগালে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে।
#বিষণ্ণতা দূর করে:
চিনি বিষণ্ণতা দূর করতেও সাহায্য করে।
চিনির ব্যবহার:
চিনি খাওয়ার ক্ষেত্রেই শুধু উপকারিতা আছে তা নয়, চিনির রয়েছে নানাবিধ ব্যাবহারও। এবার চিনির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হল।
#ত্বকের মরা কোষ দূর:
ত্বকের মরা কোষ দূর করতে প্রাকৃতিক স্ক্রাব খুবই উপকারী। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য চিনি ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও নরম হবে এবং ত্বকের মরা কোষ দূর হবে।
#হাতের গন্ধ তাড়ায়:
খাওয়ার পর হাতে খাবারের গন্ধ শুধু সাবানে দূর হয় না। এ সমস্যার সমাধানে চিনি ব্যবহার করতে পারেন। লিকুইড সাবান, চিনি ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে গন্ধ যাওয়ার পাশাপাশি হাতের ত্বক নরম ও মসৃণ হবে।
#ফুল তাজা রাখে:
শকর্রাসমৃদ্ধ চিনি শুধু মানুষের শরীরের পুষ্টি জোগায় না, এটি ফুলকেও জীবন্ত রাখতে সাহায্য করে। একটি বোতলে তিন টেবিল চামচ চিনি এবং দুই টেবিল চামচ ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এর পর ফুলের ওপর ছিটিয়ে দিন। চিনি ফুলকে সতেজ রাখবে এবং ভিনেগার ফুলের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করবে।
#ব্লেন্ডারের দাগ দূর:
কফি মেকার, জুস মেকারের যেকোনো দাগ দূর করতে চিনি বেশ কার্যকর। এক কাপ চিনি ব্লেন্ডারে নিয়ে পানি ছাড়া ব্লেন্ড করুন। এর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, সব দাগ দূর হয়ে যাবে। এটি খুব সহজে চায়ের ফ্লাক্সেরও দাগ দূর করে। এক চামচ চিনি দিয়ে ফ্লাক্সের মুখ ভালো করে বন্ধ করে রাখুন। কয়েক ঘণ্টা পর ভালো করে ঝাঁকিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক নিমেষেই আপনার চায়ের ফ্লাক্সের দাগ দূর হয়ে যাবে।
#বিস্কুট মচমচে রাখে:
বয়ামে বিস্কুট রেখে এর মধ্যে চিনির কিউব দিয়ে বয়ামের মুখ ভালো করে বন্ধ করুন। এতে বিস্কুট মচমচে থাকবে। এভাবে আপনি রুটি, কেক, এমনকি চিজও রাখতে পারেন।
#কাপড়ের দাগ দূর:
অনেক সময় কাপড়ে লেগে থাকা কালির দাগ উঠতে চায় না। এ ক্ষেত্রে গরম পানির মধ্যে চিনি মিশিয়ে দাগের ওপর মেখে এক ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, কাপড়ের দাগ দূর হয়ে যাবে।
#কালির দাগ দূর:
অনেক সময় গাড়ি নানা কাজে হাতে কালির দাগ লেগে যায়। এই কালির দাগ সহজে যেতে চায় না। হ্যান্ডওয়াশের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ভালো করে ঘষে হাত ধুয়ে ফেলুন। এক নিমেষেই হাতের কালির দাগ দূর হয়ে যাবে।
#চিনির অপকারিতা
চিনির যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত চিনি আমাদের স্বাস্থ্যকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এ প্রতিবেদনে চিনির অপকারিতা তুলে ধরা হলো।
#জীবনের আয়ু হ্রাস করতে পারে
আপনি সম্ভবত জানেন যে ক্যান্ডি বার অথবা সোডার ক্যান স্বাস্থ্যকর নয়, কিন্তু আপনি হয়তো অবগত নন যে এসবের শর্করা উপাদান কিভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করছে। মাঝেমাঝে খাওয়া ঠিক আছে, কিন্তু নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকোর একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রতিদিন ২০ আউন্স সোডা পান করা কোষের বয়স ৪.৬ বছর বেড়ে যাওয়ার সমতুল্য, যা সিগারেট স্মোকিংয়ের প্রভাবের অনুরূপ। এই কোষ বয়স্কতার সঙ্গে মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সম্পর্ক রয়েছে।
#ইনসুলিন বৃদ্ধি করে
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের একটি তাৎক্ষণিক ফলাফল হচ্ছে ইনসুলিন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়া। ইনসুলিন আমাদের শরীরের রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। হার্ভার্ড টি.এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণা বিজ্ঞানী ভাসন্তি মালিক বলেন, ‘সোডা হচ্ছে সর্বাধিক জঘন্য কালপ্রিট। বেভারেজের শর্করা খুব দ্রুত শোষিত হয়, যার ফলে রক্ত শর্করা ও ইনসুলিন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের দিকে ধাবিত করে যেখানে শরীর সক্রিয় হতে অত্যধিক ইনসুলিন প্রয়োজন হয় এবং ব্যক্তির বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে।’ প্রাকৃতিক শর্করার (যেমন- ফলের শর্করা) অনুরূপ নেতিবাচক প্রভাব নেই, কারণ তা ফাইবারের সঙ্গে যুগ্মভাবে থাকে, ফলের ফাইবার ধীরে শর্করা শোষণে সাহায্য করে।
#ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রাখে
যদি আপনার উচ্চ রক্ত শর্করার কোনো স্পষ্ট লক্ষণ থাকে, তাহলে হয়তো আপনি ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসের রাস্তায় আছেন। ডা. সল্টজম্যান বলেন, ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স অধিক ইনসুলিন উৎপাদনের জন্য অগ্ন্যাশয়কে প্ররোচিত করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে অগ্ন্যাশয় ক্লান্ত হতে পারে এবং পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদনের সামর্থ্য থেমে যেতে পারে। এরকম ঘটলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ডেভেলপ হতে পারে।’
#ওজন বৃদ্ধি করে
আপনার শরীরে শক্তির জন্য কিছু শর্করা প্রয়োজন হয়, কিন্তু অবশিষ্টাংশ চর্বি হিসেবে জমা হয়। চিনির সঙ্গে ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক আপনার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। ডা. সল্টজম্যান বলেন, ‘কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চিনির সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতার সম্পর্ক আছে, যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিকাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এরকম কেন ঘটে তা এখনো দুর্বোধ্য, কিন্তু নিম্নমাত্রার প্রদাহের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে- যা স্থূলতা ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে হয়ে থাকে। ডা. মালিক বলেন, ‘অতিরিক্ত চিনি ভোগের কারণে পেটে মেট বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে, যা হৃদরোগের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।’ এছাড়া চিনিযুক্ত পানীয় পান শরীরকে অধিক চর্বি জমাতে প্ররোচিত করে।
#উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে
গবেষণায় দেখা গেছে, চিনির সঙ্গে উচ্চ কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যুর সংযোগ আছে। ডা. সল্টজম্যান বলেন, ‘উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহণের সঙ্গে লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (ভিএলডিএল) নামক একপ্রকার রক্তের লিপিড বৃদ্ধির সংযোগ পাওয়া গেছে, যা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। চিনি এইচডিএল নামক উপকারী কোলেস্টরল হ্রাস করতে পারে- এইচডিএল কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।’ এছাড়া চিনি হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। ডা. সল্টজম্যান বলেন, ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হাইপারটেনশন সৃষ্টি করতে পারে। কিডনি, আর্টারির গঠন ও কার্যক্রম এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালনকারী মস্তিষ্কের কেন্দ্রের ওপর চিনি গ্রহণের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এই হাইপারটেনশন হতে পারে।’
#মস্তিষ্ককে প্ররোচিত করে
চিনি মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ডা. সল্টজম্যান বলেন, ‘শক্তিসমৃদ্ধ মিষ্টান্ন খাবার আপনার লিম্বিক সিস্টেম নামক মস্তিষ্কের অংশকে এসব খাবার আরো বেশি করে খাওয়ার জন্য প্ররোচিত করতে পারে।’ মিষ্টান্ন খাবার খেলে এসব খাবার চাওয়া ও খাওয়ার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক প্রশিক্ষণ পায় এবং এভাবে এসব খাবার খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ডা. মালিক বলেন, ‘চিনি মস্তিষ্কের প্লেজার সেন্টারকে উদ্দীপিত করতে পারে, যেভাবে করে ড্রাগ।’
#আপনাকে ক্ষুধার্ত রেখে দিতে পারে
যেহেতু চিনি খেলে প্রকৃত পুষ্টি পাচ্ছেন না, সেহেতু আপনি ক্ষুধার্ত অনুভব করতে পারেন, অর্থাৎ চিনি আপনার প্রকৃত ক্ষুধা ধ্বংস করতে পারে না। একটি অস্ট্রেলিয়ান গবেষণায় পাওয়া যায়, অধিকতর পরিশোধিত চিনি গ্রহণে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রকৃত ক্ষুধা দূর হয়নি।
#ব্রেইনের ক্ষতি করে
গবেষণায় পাওয়া গেছে, সোডা ও অন্যান্য অ্যাডেড সুগার ব্রেইনের জন্য ক্ষতিকর। ওরিগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি প্রাণী গবেষণায় আবিষ্কার হয় যে, অত্যধিক চিনিযুক্ত ডায়েট জ্ঞানীয় ক্ষতি বা অবনতির দিকে চালিত করে, যেমন- স্মৃতিভ্রংশতা। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় একটি টিপিং পয়েন্ট আবিষ্কার হয়েছে, যেখানে রক্ত শর্করা অ্যালেজেইমার’স রোগকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এ গবেষণার লেখক ডা. ওমর কাসার বলেন, ‘ডায়াবেটিস ও ওবেসিটির ক্ষেত্রে বাড়তি চিনি যে আমাদের জন্য ক্ষতিকর তা বেশ পরিচিত একটি বিষয়, কিন্তু চিনির সঙ্গে অ্যালজেইমার’স রোগের সম্ভাব্য সংযোগের কারণেও আমাদের ডায়েটে চিনি নিয়ন্ত্রণের কথা বিবেচনা করা উচিত।’
#ফ্যাটি লিভারের কারণ হতে পারে
গোপনে লিভার বা যকৃতের ক্ষতি করে এমন উপায়সমূহের একটি হচ্ছে অধিক বা অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করা। ডা. মালিক বলেন, ‘ফ্রুক্টোজ লিভারে বিপাক হয় এবং অত্যধিক চিনি গ্রহণে লিভারে চর্বি জমতে পারে- যা বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করার অন্যতম একটি পন্থা।’ ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকো অনুসারে, বর্তমানে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং লিভারের ক্ষত ১৯৮০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।
#দাঁতের ক্ষয় করে
ডা. স্যান্ডা মোল্ডোভান বলেন, ‘মুখের ব্যাকটেরিয়া চিনি ভালোবাসে, যেমনটা ভালোবাসি আমরা এবং তারা যখন এসব ভোজন করে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এসিড নিঃসরণ হয়। এই এসিড দাঁতের এনামেলকে আক্রমণ করে ও ডেন্টিন নামক দাঁতের গভীর স্তরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে।’ আপনি যত বেশি চিনি খাবেন, আপনার মুখ তত বেশি অ্যাসিডিক হবে এবং দ্রুত দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্ষয় হবে। এছাড়া চিনি খেয়ে ইস্টও বিকশিত হয়, যা মুখের কর্নার বা জিহ্বা লাল করতে পারে।
#ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে
গবেষণা অনুসারে, যেসব খাবার ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতাকে আরো খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যায়, সেসবের মধ্যে চিনি অন্যতম। সাধারণ কার্বোহাইড্রেট রূপে অধিক মাত্রায় চিনি গ্রহণ গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে, যার ফলে মেজাজ খারাপ হতে পারে এবং বিরক্তি-অস্থিরতা-অনিয়মিত ঘুম-প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরিবর্তে, চর্বিহীন প্রোটিন, জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং ওমেগা৩-ফোলেট-ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
চিনির উপকার বলে শেষ করা যাবে না। অনেক।উপকারী খাদ্য