চা,কফি কথোপকথন (পার্ট-১):
চা, কফি বর্তমানে আমাদের খাদ্য তালিকায় এক অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে।সমাজের ধনী-গরীব সকলের জনপ্রিয় পানীয় এটি।কেউ রং চা,কেউ মসলা চা,গ্রীন টি, কফি আবার কারো কারো দুধ চা,মালাই চা, দুধ কফি পছন্দ।
আমরা কফি পাই কফি বিচি আর চা পাই চা পাতা থেকে।মূলত কিছু বিশেষ উপাদানের উপস্থিতির জন্যই এগুলো আমাদের আকৃষ্ট করে।কফিতে থাকে ক্যাফেইন,ট্যানিন আর চায়ে থাকে ক্যাফেইন, ট্যানিন ও ক্যাটেচিন।
☘️ ক্যাফেইন :ক্যাফেইন হলো একটি উত্তেজক উপাদান।যা চা,কফি দুটিতেই থাকে।চা পাতায় ৩.৫% আর কফিতে (০.৮-২.২)% ক্যাফেইন থাকে।এখানে মজার বিষয়,এক কাপ চা তৈরীতে অল্প পরিমাণ চা পাতি লাগে পক্ষান্তরে এক কাপ কফি তৈরীতে কফির পরিমাণ বেশি থাকে।তাই বলা হয় কফিতে ক্যাফেইন বেশি।
☘️ ট্যানিন : যা অপরিশোধিত ফল,রেড ওয়াইন,চা ইত্যাদিতে থাকে।কফিতে খুবই সামান্য পরিমাণে এটি থাকে।খেয়াল করে দেখুন চা পানের পর মুখের মধ্যে যে শুকনো এবং স্নিগ্ধ অনুভূতির সৃষ্টি করে,তাই ট্যানিন।এটি একটি দুর্দান্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ।এটি ক্যাফেইন এর উত্তেজককে শান্ত রেখে ভারসাম্য তৈরী করে।
☘️ ক্যাটেচিন: এটি একটি ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটা চায়ে বিদ্যমান।এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।কফিতে ক্যাটেচিন এর পরিবর্তে ক্লোরোজেনিক এসিড থাকে যা ট্যানিনের রস।
চা,কফি এগুলো নানাভাবে আমাদের দেহ ও মনকে প্রশান্তি দিয়ে থাকে।যেমন:
🌸গ্রীন টি তে ক্যাটেচিন বেশি থাকায় এটি ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ন্যায় কাজ করে। ফলে এটি
✔️ব্রেন ফাংশন সহায়তা করে।
✔️ফ্যাট বার্ন করে।
🌸 চিনি ছাড়া লেবু, মসলা যুক্ত রং চা,গ্রীন টি এগুলো Detox water ও বলে।ওজন হ্রাস,কুষ্টকাঠিন্য ও প্রশান্তি মূলক একটি জনপ্রিয় পানীয় হলো Detox water.
🌸সর্দি কাশির ঔষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল হতে ব্যবহার হচ্ছে।
🌸চা,কফি শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
🌸 কফি ক্যান্সার,টিউমার এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
🌸দুধ চা ওজন বৃদ্ধি করে।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১-২ কাপ রং চা মসলা চা ,গ্রীন টি খাওয়া যাবে।ব্ল্যাক কফি এক কাপ।দুধ চা ও দুধ কফি সপ্তাহে ১-২ দিন।গর্ভকালীন সময় ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত চা, কফি এমনকি গ্রীন টি ও না খাওয়াই ভালো।এসবের বাহিরে এগুলো বেশি মাত্রায় পানে দেখা যায় নানা জটিলতা।
আগামীকাল আমরা এর জটিলতা সমূহ আলোচনা করবো।
চা,কফি কথোপকথন (পার্ট ২)
🌲 চা,কফির প্রধান অপরাধী উপাদান হলো ক্যাফেইন।ক্যাফেইন এর ক্ষতিকর সমূহ হলো-
✔️ এটি মূত্রাশয়ের ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে তুলে।ফলে প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে থাকে।
✔️অনেকক্ষেত্রে বয়স্কদের মধ্যে হাঁচি-কাশিতে প্রস্রাবে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।এটি ও অনেক চা,কফি পানের ফল।
✔️ নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়।
✔️ ক্যাফেইন নেশার ন্যায় অভ্যাস তৈরী করে।যাদের প্রতিদিন চা খাবার অভ্যাস,তাদের নির্দিষ্ট সময়ে এটি পান না করলে মাথা ব্যাথা,বিরক্তি, ক্লান্তি ও হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে।
✔️ অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে হজমে বাঁধা সৃষ্টি হয় ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা,বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়।
✔️ গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য ক্যাফেইন নিষিদ্ধ।
✔️মাইগ্রেন সমস্যাতে ক্যাফেইনযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।
🌲 চা ও কফির আর একটি উপাদান ট্যানিন।
✔️ চা,কফির ট্যানিনের জন্য দাঁতে দাগের সৃষ্টি হয়। তাই চা, কফি পানের ১০-১৫ মিনিট পর ভালো করে মুখ কুলকুচি করা উত্তম।এতে অনেকটা দাগের সৃষ্টি কম হয়।আবার গরম চা,কফি পানের সাথে সাথে কুলকুচি নয়।
✔️অতিরিক্ত ট্যানিন খাবার হতে আয়রণ শোষণ বাঁধা দেয়।ফলে বেশি চা,কফির জন্য অ্যানেমিয়া হতে পারে।
🌲 ক্যাটেচিন চা এ থাকে বিশেষ করে গ্রীন টি তে।মাত্রাতিরিক্ত চা পানের যা হবে-
✔️ মাথা ব্যাথা।
✔️ ঘুমের সমস্যা।
✔️ হজমের সমস্যা।
✔️ লিভারের সমস্যা।
🌲 বেশি চা,কফি ধীরে ধীরে মুখের স্বাদ নষ্ট করে ও ক্ষুধামন্দা তৈরী করে।
🌲 অতিরিক্ত চা,কফি পানে Dehydration বা পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
🌲 চিনিযুক্ত চা, কফি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে।
🌲 দুধ চা অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি করে।
এসব ছাড়া চা,কফি পানে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।তা হলো -
🌸 ইনস্ট্যান্ট কফি,বিন কফি কোন অবস্থাতেই জ্বাল দেয়া যাবে না।
🌸 চা ২-৩ মিনিটের বেশী জ্বাল দেয়া উচিত না, বিশেষত গ্রীন টি।এতে চায়ের অ্যান্টিঅক্সিজেন গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়।
🌸দুধ চায়ের ক্ষেত্রে দুধ ও চায়ের যৌগটি খেতেই সুস্বাদু কিন্তু এর পরিণাম ভালো কিছু না।
🌸চা, কফি ও দুধের মিশ্রণ যা চাফি নামে পরিচিত। এটি হংকং এর একটি জনপ্রিয় পানীয়।এটি খেতে ভালো লাগলে ও এটি আপনাকে ভালো ফলাফল দিবে না।
🌸কোন ভারী খাবারের সাথে সাথে চা,কফি পান করা যাবে না। এক্ষেত্রে কম করে হলেও (২-২.৩০) ঘন্টা পর চা,কফি পান করতে হবে।
🌸যাদের অ্যাসিডিটি সমস্যা তাদের চা,কফি পানের ১৫-২০ পরে পানি খেলে অ্যাসিডিটি কিছুটা কম অনুভূত হয়।
উপরের আলোচনা হতে চা,কফি প্রেমিরা হয়তো চিন্তিত হয়ে গেছেন।কিন্তু চাইলে একটি আদর্শ নিয়ম অনুযায়ী সবাই স্বাস্থ্যকর চা,কফি পান করতে পারেন।
☘️ কফি গরম পানিতে মিশিয়ে খাবেন।
☘️ চায়ের ক্ষেত্রে, পানি ২ মিনিটের মতো উত্তপ্ত করে ফুটাতে হবে।তার পর গ্যাস বন্ধ করে সামান্য চা পাতি পানিতে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।এভাবে ২ মিনিট রেখে তারপর কাপে পরিবেশন করতে হবে।চাইলে আপনি আপনার পছন্দ মতো লেবু,মালটা,আদা ইত্যাদি যোগ করতে পারেন।বর্তমানে ক্যাফেইন মুক্ত বিভিন্ন হারবাল চা দেখা যায়।যেমন বিভিন্ন মসলা,পাতা ও ফুলের চা।
☘️ চা,কফিতে চিনির ব্যাপারটা আপেক্ষিক।স্বাদ মতো নিবেন।তবে স্থূলকার ও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য চিনি না খাওয়াই ভালো।ডায়াবেটিস রোগীরা এক্সারসাইজের পূর্ব চিনি সহ চা খেতে পারবেন।