ব্রণ নিয়ে চিন্তা? আর না, আর না!

0 6
Avatar for alma45
Written by
4 years ago

কালকে বিয়ের প্রোগ্রাম।আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মুখে একটি দানাদার গোটা দেখলেন।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।তাই না?

মন খারাপ করবেন না।সব সমস্যার সমাধান সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন।আসুন আজ ব্রণ নিয়ে বিস্তারিতো জানবো-

⭕ব্রণ (Acne vulgaris বা Acne) হচ্ছে আমাদের শরীরের ত্বকের ফলিকলের এক প্রকার দীর্ঘমেয়াদী রোগ। বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন টেস্ট্রোরেন আর প্রোজেস্ট্রোরেনের প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি অধিক হারে তেল নিঃসরণ শুরু করে। কোনো কারণে সিবেসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণের বাধার সৃষ্টি হয় এবং তা ভেতরে জমে ফুলে উঠে যা ব্রণ (Acne) নামে পরিচিত। এর উপর জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে পুঁজ তৈরি হয়। অনেক সময় বাইরে থেকে এদের ছোট দেখালেও এরা বেশ গভীর হতে পারে। এজন্য ব্রণের সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে কাল দাগ থেকে যেতে পারে।

⭕কাদের হয়-

তেরো বছর থেকে উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত শতকরা নব্বই জনের এ রোগটি কমবেশি হয়ে থাকে। বিশ বছর বয়সের পর থেকে নিজে থেকেই এ রোগটি ভাল হয়ে যেতে থাকে।তবে এর ব্যতিক্রম যে হয় না তা নয়। কখনও কখনও বিশ থেকে তিরিশ বছর বয়সেও এটি দেখা দিতে পারে এবং অনেক বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

⭕দেখতে কেমন-

ব্রণের প্রকারভেদ অনেক। তবে সাধারণভাবে যে-প্রকারের ব্রণ হয়ে থাকে তারই বর্ণনা এখানে দেয়া হচ্ছে ।এটি লোমের গোড়ায় হয়ে থাকে।ব্রণের মূলে যে জিনিস তার নাম কেমডো (চাপ দিলে ভাতের দানার মতো বের হয়), তবে কখনও কখনও শুধু শুধু দানা আকারে, পুঁজ সহকারে গহ্ববরযুক্ত দানা বা বড় গোটার আকারে দেখা দিতে পারে।সাধারণত মুখেই (গলা, নাক, কপাল, থুতনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয়। তা ছাড়া ঘাড়, শরীরের উপরের অংশে, হাতের উপরের অংশে ইত্যাদি স্থানেও ব্রণ হয়ে থাকে।

⭕বিভিন্ন অবস্থায় ব্রণ

১) ট্রপিক্যাল একনি– অতিরিক্ত গরম এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে পিঠে, উরুতে ব্রণ হয়ে থাকে।

২) প্রিমিন্সট্রুয়াল একনি– কোনো কোনো মহিলার মাসিকের সাপ্তাহ খানেক আগে ৫-১০টির মতো ব্রণ মুখে দেখা দেয়।

৩) একনি কসমেটিকা– কোনো কোনো প্রসাধনী লাগাতার ব্যবহারে মুখে অল্প পরিমাণে ব্রণ হয়ে থাকে।

৪) একনি ডিটারজিনেকস– মুখ অতিরিক্ত ভাবে সাবান দিয়ে ধুলেও (দৈনিক ১/২ বারের বেশি) ব্রণের পরিমাণ বেড়ে যায়।

৫) স্টেরয়েড একনি– স্টেরয়েড ঔষধ সেবনে হঠাৎ করে ব্রণ দেখা দেয়। মুখে স্টেরয়েড, যেমন– বটানোবেট ডার্মোভেট জাতীয় ।ঔষুধ একাধারে অনেকদিন ব্যবহারে ব্রণের পরিমান বেড়ে যায় ।

⭕অনেক তো জানলেন ধরণ করণ।এবার প্রতিরোধ করতে কী খাবেন তা নিয়ে জেনে নেয়া যাক-

👉🏼পানি ও শসা-

ত্বক সুস্থ রাখতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। দেহের অভ্যন্তরে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে পানি।আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে পানির ঘাটতি মেটাতে শসার জুড়ি নেই।তাছাড়াও

শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই, পানি এবং আ্যমিনো এসিড যা ত্বককে রাখে কোমল পাশাপাশি ব্রণ প্রতিরোধ করে। শসার জুস করেও খেতে পারেন। এতে ত্বকে ব্রণের সমস্যা দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করবে।অতএব ব্রণ প্রতিরোধে পানি ও শসা আপনার জন্য হবে সুপার প্যাকেজ।

👉🏼ভিটামিন সি-

ভিটামিন সি ব্রণের জন্য অত্যন্ত উপকারী।উল্লেখযোগ্য সি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে টমেটো,কমলালেবু।টমেটোর বায়োফ্লেভানয়েডস ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের কোষ সুস্থ করে। এতে করে ত্বকে ব্রণের জন্য সৃষ্ট ক্ষতের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।

কমলালেবুকে ভিটামিন সি এর পাওয়ার হাউস হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা ব্রণ প্রতিরোধের জন্য আরেকটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন।কমলাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে যা ব্রণর চারপাশে ফোলা এবং লালভাব নিরাময়ে সহায়তা করে।এগুলি আপনার ত্বককে দীর্ঘ সময়ের জন্য চাঙ্গা রাখতে সহায়তা করে।

👉🏼সবুজ ও আঁশবহুল শাক সবজি:

ব্রোকলি, পালং শাক, লেটুস পাতা,মেথি শাক ইত্যাদিতে ফোলেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন জাতীয় পুষ্টি রয়েছে যা দেহে সামগ্রিক পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।একটি স্বাস্থ্যকর শরীর একটি সুস্থ ত্বক বোঝায়, আপনি যদি আপনার শরীরকে একটি সুষম খাদ্যযুক্ত খাবার খাওয়ান, তবে আপনার মুখ অবশ্যই একটি উজ্জ্বল আভা প্রতিফলিত হবে,তাই ব্রণ কমাতে সবুজ শাকসবজির তুলনা নাই।

👉🏼ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড

ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের অন্যতম যাদুযুক্ত পুষ্টি হিসাবে কাজ করে।তারা ত্বকের মধ্যে থেকে একটি স্বাস্থ্যকর আভা সরবরাহ করে,।ওমেগা ৩ পাওয়া যায়,সামুদ্রিক মাছ,বাদাম ইত্যাদিতে।বাদাম এবং আখরোট ত্বকের খাদ্য হিসাবে পরিচিত,এগুলি ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ও এদের রয়েছে এন্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা ব্রণ নিরাময়ে সহায়তা করে।এ উপাদান ত্বককে ভিতরে থেকে নিরাময় করে মুখ থেকে ব্রণর চিহ্নগুলি ভ্যানিশ করে দেয়।

👉🏼কুমড়ার বীজ

প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কুমড়ার বীজ যোগ করা হলে তা ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে। কুমড়ার বীজ জিংক সমৃদ্ধ।কেবল ত্বকের স্বাস্থ্যই ভালো রাখেনা বরং ব্রণের কারণে হওয়া লালচে ভাব, ব্যথা ও ফোলাভাব এবং দাগ দূর করতে সাহায্য করে। দৈনন্দিন খাবারে এই বীজ যোগ করা হলে ত্বকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে।কারণ এতে আছে, ওমেগা থ্রি এবং সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড।

👉🏼পেঁপে

এর উজ্জ্বল কমলা রংয়ে আছে অত্যাবশ্যকীয় এনজাইম-প্যাপাইন ও কায়ম্যাপোপেইন, যা ব্রণ কমাতে চমৎকার কাজ করে। পেঁপে খাওয়া হলে এটা লোমকূপকে উন্মুক্ত করে, ব্রণের দাগ কমায় এবং ত্বকে রংয়ের ভারসাম্যহীনতা থাকলে তা দূর করে। পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ যা ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবারহ করে।

👉🏼রসুন

রসুন আরেকটি সুপারফুড যা ব্রণের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে।রসুনে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অ্যালিসিন নামক উপাদানে পূর্ণ, যা আপনার শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসকে হত্যা করে।অতএব ওজন কমানো,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্রণের কাজেও দারুন উপকারী।

এছাড়াও লাল আঙ্গুর,ব্রাউন রাইস,ভিটামিন এ ও ই সমৃদ্ধ খাবার ব্রণের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

⭕কিছু নিয়ম সব ক্ষেত্রেই মেনে চলতে হয়,যাকে সংক্ষেপে বলি টিপস।এই বেলায়ও তার ব্যতিক্রম নয়-

#তৈলাক্ত খাবার, চকলেট,ঝাল, ভাজাপোড়া খাবার, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে।

#কোষ্ঠকাঠিন্য ও পুষ্টিহীনতা থাকলে প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খাবেন সাথে অবশ্যই ডায়েটিশিয়ানের শরণাপন্ন হবেন।

#ওজন বেশি ব্রণ হওয়ার আরেকটি বিশেষ কারণ।তাই অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে একজন ডায়েটিশিয়ান আপনার বন্ধু।

#ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।মুখের তৈলাক্ততা কমানোর জন্য পানির ঝাপটা দিবেন।

মুখে বা অন্য কোথাও ঘাম হলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন।

#রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে হবে,কারণ যিনি রাত জাগেন তার হরমোনজনিতো সমস্যা ছাড়াও হজম ক্ষমতা,কিডনীর অক্ষমতা ইত্যাদি লেগেই থাকবে।তাই রাতে জলদি ঘুমিয়ে যাবেন।

#মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন।

#প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করুন।

#কষ্ট হলেও সব ধরনের প্রসাধনী বর্জন করুন।

#মাথা খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।

ব্রণ একবার হয়ে গেলে চাপাচাপি, চুলকানো বা খোটাখুটি না করাই ভাল।

আর ব্রণ পেকে গেলে বা বেশী হয়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

1
$ 0.00
Avatar for alma45
Written by
4 years ago

Comments