বিশাল রঙ্গীন পেখমের ময়ূর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবার। এর রঙের বিন্যাস, সৌন্দর্য্য এবং চালচলনে আভিজাত্য একে সবার থেকে আলাদা করে। ময়ূর তাই আঁকা হয় ক্যানভাসে, লেখা হয় কবিতায়, তার পালক স্থান পায় শখের সংগ্রহে। কিন্তু ময়ূরের সব গাম্ভীর্য্য শেষ হয়ে যায় তার কন্ঠস্বরে। আসুন জেনে নিই আমাদের সবার প্রিয় এই ময়ূর সম্পর্কে এমনই আরও মজার কিছু তথ্য।
১। শুধু পুরুষ ময়ুরকেই বলা হয়, "peacock". গোষ্টীগতভাবে এদের ইংরেজী নাম "peafowl"। নারী ম্যূরের নাম "peahen"। আর ময়ূর ছানাদের বলা হয় “pea chicks”। ময়ূর পরিবারকে বলা হয় "bevy"।
২। ময়ূর কিন্তু তার এই সুন্দর পেখম নিয়েই জন্মলাভ করে না। ৩ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ ময়ূরের লাজ জন্মে না। এমনকি অনেক দিন পর্যন্ত এদের লিঙ্গই বোঝা যায় না। ময়ূর এবং ময়ূরী একদম একই রকম থাকে দেখতে। ৬ মাস বয়স থেকে ময়ূর রঙ বদলাতে শুরু করে।
৩। সৌভাগ্যজনকভাবে ময়ূর প্রতি বছর তাদের প্রজনন সময়ের পর পেখম বদলায়। তাই সেগুলো জড়ো করে সহজেই সংগ্রহ বা বিক্রী করা যায়। ময়ূরের পালক নিয়ে ব্যবসা করার জন্য ময়ূর মেরে ফেলবার প্রয়োজন হয় না।
৪। ময়ূর তার বন্য জীবনে গড়ে ২০ বছর বাঁচে।
৫। ময়ূর কিন্তু উড়তে পারে। বিশাল পেখম থাকা সত্ত্বেও তারা ভালই উড়তে পারে।
৬। ময়ূরের পেখম ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের শরীরের ৬০ ভাগই হল পেখম।
৭। সচরাচর দেখা যায় না শিল্পীর তুলির আঁচড়ে। সব চিড়িয়াখানাতেও হয়ত দেখা মিলবে না। কিন্তু ধবধবে সাদা ময়ূর কিন্তু আছে। লিউসিজম নামক একটি প্রজনন ত্রুটির কারণে জেনেটিক মিউটেশন ঘটে এবং এর কারণে ময়ূরের ত্বক স্বাভাবিক রঙ হারায়। লিউসিজম আক্রান্ত প্রাণীদের চোখের রঙ অবশ্য স্বাভাবিক থাকে।
৮। মধ্যয্যগে ময়ূর ছিল আভিজাত্যপূর্ণ খাবার। এদের রোস্ট করে আবার পালক বসিয়ে সাজানো হত এবং খাবারের টেবিলে পরিবেশন করা হত। পাখিটি দেখতে যত সুন্দরই হোক না কেন, স্বাদে কিন্তু জঘন্য। সে সময় ফিজিয়ানরা খাবারটির সমালোচনা করেন কারণ ময়ূরের মাংস শক্ত এবং মোটা, হজমেও সমস্যা তৈরি করে।
৯। ময়ূর অনেক চতুর প্রাণী। সম্প্রতি এক গবেষণায় পাওয়া গেছে এই তথ্য। যখন ময়ূর কোন ময়ূরীর সাথে মিলিত হয় তখন তারা বিশেষ এক প্রকার শব্দ করে। গবেষক রোজলিন ডাকিন এবং রবার্ট মন্টগোমারি আবিষ্কার করেন যে, ময়ূর এই শব্দ বা ডাক অন্য সময়ও ব্যবহার করে আরও ময়ূরীকে আকর্ষণ করার জন্য। তারা বোঝাতে চায় যে তারা মিলিত হচ্ছে, কিন্তু আসলে তা নয়। শুধু দূর থেকে এই শব্দ শুনে ময়ূরীরা ভাবে সে মিলনে সক্ষম। এটাই তার বুদ্ধি।
১০। ময়ূরের পালক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রিস্টালের মত গঠন দ্বারা আবৃত। এই ক্রিস্টালের আবরণের কারণেই এক ময়ূরের পালকে প্রতিফলিত হয় এত রঙ। হামিং বার্ড এবং শিমারি প্রজাপতির পাখাতেও একই ধরণের ক্রিস্টালের গঠন থাকে।