হুমায়ুন আহমেদের নুহাশপল্লীর মতো একটা বাড়ি বানাতে হলে কী পরিমাণ টাকা লাগবে? নিশ্চয়ই অনেক অনেক টাকা, তাই না? আচ্ছা যদি আপনাকে বলা হয় একদিন আপনি সত্যি সত্যিই নুহাশপল্লীর চেয়েও হাজার কোটি গুণ সুন্দর, অপরূপ, অকল্পনীয়, অভাবনীয় প্রাসাদের মালিক হবেন, বিশ্বাস করবেন? ইট আর পাথর দিয়ে নয়, সেই প্রাসাদ হবে মণী-মুক্তোর তৈরি। দৃষ্টিসীমা যতদূর বিস্তৃত হবে, ততদূর আলোকিত হয়ে পড়বে সেই মণি-মুক্তোর ঝলকানিতে। প্রাসাদের নিচে থাকবে ঝরনা।সেই ঝরনার কলকল ধ্বনি আপনি শুনতে পাবেন। সামনে থাকবে অনিন্দ্য সুন্দর ফুলের বাগান। সেই ফুলগুলো আপনি এর আগে আর কখনো দেখেননি। ফুলের গন্ধে ম-ম করবে আপনার চারিপাশ। আপনি চাইলেই সেখানে জোছনা নামবে। বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেবে আপনাকে। চাইলেই কোকিলের গান, নদীর কলতান আর অরণ্যের সবুজ-সবকিছুই আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে। অনন্তকালের জন্য আপনি হয়ে যাবেন এই অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদের মালিক। সেই প্রাসাদের সামনে দুনিয়ার নুহাশপল্লিকে তখন আপনার নস্যি মনে হবে। চাকচিক্য ঘেরা সেই প্রাসাদ দেখে আপনি এতই বিমোহিত, চমৎকিত আর বিস্ময়ভিভৃত হবেন যে, দুনিয়ার নুহাশপল্লির কথা আপনার মনেই থাকবে না।
আপনি এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কিসের কথা বলছি। পরম আরাধ্য জান্নাত। প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের অন্তরে লালিত স্বপ্ন।এ রকম একটি অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদের স্বপ্ন দেখেছিলেন ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া (আ.)। তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করে বলেছিলেন-
"হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার সন্নিকটে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন"।[সূরা-তাহরিম,আয়াতঃ১১]
কত অপূর্ব সুন্দর এই দুআ! এই দুআতে তিনি বলেননি, 'হে আমার মালিক! ফিরাউনের প্রাসাদে এটা-ওটা আছে, জান্নাতেও আমার জন্য সেগুলোর ব্যবস্থা করে দিন। তিনি কেবল আল্লাহর কাছে থাকতে চেয়েছেন। আল্লাহর কাছে কাছাকাছি থাকতে পারার সৌভাগ্যের চেয়ে বড় আর কিছুই নেই। কিচ্ছু না।
জান্নাতে বাড়ি বানাতে হলে কিন্তু লাখ লাখ টাকার দরকার নেই। দৌড়ঝাঁপ দিয়ে জোগাড় করা রাজউকের সার্টিফিকেটও আপনার লাগবে না।নিতে হবে না কোনো মিথ্যার আশ্রয়। কেবল দরকার একটুখানি চেষ্টা। একটু সদিচ্ছা আর একটু আন্তরিকতা। জান্নাতে বাড়ি নির্মাণের কৌশল তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই কৌশল অবলম্বন করে আমিও চাইলেই অনায়েসে জান্নাতের অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদের মালিক হতে পারি।
আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা। এই ওয়াক্তগুলোতে ফরয সালাতের বাইরে সাধারণত আমরা আরো কিছু সালাত পড়ে থাকি। সেগুলোকে বলা হয় সুন্নাত এবং নফল সালাত। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১২ রাকাআত সুন্নাত আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন। সেই ১২ রাকাআত সুন্নাতগুলো হলো-ফজর সালাতের পূর্বে দুই রাকাআত, যোহরের আগে চাঁর রাকাআত এবং পরে দুই রাকাআত, মাগরিবের পরে দুই রাকাআত এবং ইশার পরে দুই রাকাআত। আমরা যদি নিয়মিত এবং যত্নের সাথে এই সালাতগুলো আদায় করি, তাহালে জান্নাতে একটি বাড়ি পাওয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (স.)। কত সহজ তাই না? লাখ লাখ টাকা লাগছে কী? লাগছে কোনো পরিশ্রম কিংবা নিতে হচ্ছে কোনো অসততার আশ্রয়?
আবার ধরুন, কোনো এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন। কথা কাটাকাটি, বাড়াবাড়ি শুরু হলো। আপনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, আপনি যা বলছেন বা বলতে চাইছেন তা একদম ঠিক ও নির্ভুল। অপরদিকে আপনার বন্ধু যা বলতে চাইছে বা বলছে তা সঠিক নয়। এই মুহূর্তে আপনার করণীয় কী? তর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া? নাহ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে বলেননি। এমন মুহূর্তে তিনি আপনাকে থেমে যেতে বলেছেন। তাই, থেমে যান। চুপ করে থাকুন। তর্ক বেশিদূর গড়ানোর সুযোগ দেবেন না। এতে ফিতনা ছড়ানোর ভয় থাকে এবং ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এই যে আপনি সঠিক হওয়া সত্ত্বেও চুপ করে গেলেন, এর বিপরীতে আপনার জন্য কী পুরষ্কার অপেক্ষা করছে জানেন? এর বিপরীতে জান্নাতে আপনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে একটি অপরূপ সুন্দর বাড়ি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও তর্কে লিপ্ত হয় না'।[সুনানে আবি দাউদঃ৪৮০২]
এ ছাড়াও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি- যে ব্যক্তি দুনিয়ার বুকে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো মসজিদ নির্মাণ করবে, হোক সেটা চড়ুই পাখির বাসার সমান, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন। [সুনানু ইবনি মাজাহ,৭৩৮]
"বেলা ফুরাবার আগে " বই থেকে।