আম

0 10
Avatar for alma45
Written by
3 years ago

#আম

ঋতু বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন ফল পাওয়া যায়।তেমনি একটি মৌসুম নিয়ে আসে আমাদের প্রায় সকলেরই প্রিয় ফল আম। জৈষ্ঠ্যমাসে সাধারণত আম পাকে।এই সময়টাকে মধুমাস ও বলা হয়ে থাকে বিভিন্ন সুমিষ্ট ফলের কারণে।কিন্তু অন্যান্য সকল ফলের তুলনায় আমের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি আমের সুস্বাদের জন্য।

পাকিস্তান,ভারত ও ফিলিপাইন এই তিনটি দেশের জাতীয় ফল আম।কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে আমের পর্যাপ্ততা বেশি।প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতেই “Mango” শব্দটির উৎপত্তি।ইংরেজিতে ম্যাঙ্গো শব্দটি সম্ভবত তামিল 'ম্যানকেই' কিংবা তামিল 'মানগা' শব্দ থেকে এসেছে।

যখন পর্তুগিজ ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ ভারতে বসতি স্থাপন করে, তারা নাম হিসেবে 'ম্যাংগা' শব্দটি গ্রহণ করে।

আর যখন ব্রিটিশরা ১৫শ এবং ১৬শ শতকের দিকে ভারতে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ব্যবসা শুরু করে, তখন 'ম্যাঙ্গো' শব্দটির জন্ম।

আমের বৈজ্ঞানিক নাম “Mangifera Indica”. সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে এবং আমের স্বাদের মত আমের নামগুলোও মনোমুগ্ধকর। আমাদের প্রায় সকলেরই বাড়িতে ছোট বড় আম গাছ রয়েছে।যা আমাদের আমের চাহিদা পূরণ করে থাকে।এছাড়াও প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ৪৬ মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়।

এখন আমরা আমের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে জানবো☺

আমে প্রায় ২০টি ভিন্ন ভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়-

প্রতি ১০০ গ্রাম আমে –

★ক্যালরিঃ ৬০ কিলোক্যালরি

 কার্বোহাইড্রেটঃ ১৫ গ্রাম

 সুগারঃ ১৪ গ্রাম

 ফাইবারঃ ১.৬ গ্রাম

★ফ্যাটঃ ০.৪ গ্রাম

★প্রোটিনঃ ০.৮ গ্রাম

 কোলেস্টেরলঃ ০ মিলিগ্রাম

★ভিটামিন সমূহ-

 ভিটামিন এঃ ৫৪ মাইক্রোগ্রাম

 বেটা-ক্যারোটিনঃ ৬৪০ মাইক্রোগ্রাম

 থায়ামিন(বি১)ঃ ০.০২৮ মিলিগ্রাম

 রিভোফ্লাভিন(বি২)ঃ ০.০৩৮ মিলিগ্রাম

 নায়াসিন(বি৪)ঃ ০.৬৬৯ মিলিগ্রাম

 প্যান্টোথেনিক এসিড(বি৫)ঃ ০.১৯৭ মিলিগ্রাম

 ভিটামিন বি৬ঃ ০.১১৯ মিলিগ্রাম

 ফোলেট(বি৯)ঃ ৪৩ মাইক্রোগ্রাম

 কোলিনঃ ৭.৬ মিলিগ্রাম

 ভিটামিন সিঃ ৩৬.৪ মিলিগ্রাম

 ভিটামিন ইঃ ০.৯ মিলিগ্রাম

 ভিটামিন কেঃ ৪.২ মাইক্রোগ্রাম

★খনিজসমূহ-

 সোডিয়ামঃ ১ মিলিগ্রাম

 পটাশিয়ামঃ ১৬৮ মিলিগ্রাম

 ফসফরাসঃ ১৪ মিলিগ্রাম

 ম্যাঙ্গানিজঃ ০.০৬৩ মিলিগ্রাম

 আয়রনঃ ০.১৬ মিলিগ্রাম

 জিংকঃ ০.০৯ মিলিগ্রাম

 ম্যাগনেসিয়ামঃ ১০ মিলিগ্রাম

 ক্যালসিয়ামঃ ১১ মিলিগ্রাম

★আমের উপকারিতা-

১. পাকা আম আমাদের ত্বক কে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। শুধু তাই নয়, এটি আমাদের ত্বকের ভেতর ও বাইরে থেকে উভয়ভাবেই সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। আম আমাদের ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ও ব্রণের সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. গাছপাকা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ লবণের উপস্থিতিও রয়েছে । আমাদের শরীরের দাঁত, নখ, চুল ইত্যাদি মজবুত করার জন্য আমের খনিজ লবণ উপকারী ভূমিকা পালন করে।

৩. সাধারণত পাকা আম ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ফলে মুখের ও নাকের উপর জন্মানো ব্ল্যাকহেড দূর করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পাকা আম খান তাহলে আপনার মুখের কালো দাগ দূর হবে।

৪. আমের উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আমের পুষ্টি উপাদান। পাকা আমের আঁশে কিছু উপাদান যেমন- ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ থাকায় তা হজমে সহায়তা করে থাকে। আমে আছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম এটা আমাদের শরীরের প্রোটিন অণুগুলো ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

৫. আমে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরাটিনোইডস উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ ও সবল রাখে।

৬. আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন আমাদের শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে রাখে পুরোপুরি সতেজ। যার ফলে খুব দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।

৭. আমে রয়েছে বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম। এসব উপাদান পরিমাণে পর্যাপ্ত থাকায় পাকা আম হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. আপনি যদি প্রতিদিন এককাপ আম খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদার প্রায় পঁচিশ শতাংশের যোগান দিতে পারবে। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।

৯. আমে প্রচুর পরিমাণে এসিড থাকে যেমন- টারটারিক এ্যাসিড, ম্যালিক এ্যাসিড ও সাইট্রিক এ্যাসিড যা আমাদের শরীরে অ্যালকালাই বা খার ধরে রাখতে সহায়তা করে অনেকাংশেই।

১০. আমের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। স্তন, লিউকেমিয়া, কোলন প্রোস্টেট ক্যান্সারের মত মারাত্মক ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে প্রয়োজনীয় এনজাইমও পাওয়া যায়।

১১. পাকা আম পটাশিয়ামসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমদের হার্টবিট ও রক্তস্বল্পতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমাদের হার্টবিটকে সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

১২. পাকা আম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কারে সহায়তা করে। আমের মধ্যে থাকা টারটারিক, ম্যালিক ও সাইট্রিক এ্যাসিড শরীরে অ্যালকোহল ধরে রাখতে সহায়তা করে।

১৩. আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ বেশি। যা আমাদের দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১৪. আম আমাদের শরীরের ক্ষয়রোধ করে। প্রতিদিন আম খেলে দেহের ক্ষয়রোধ হয় এবং স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে ইতি বাচক ভূমিকা পালন করে।

১৫. শুধু তাই নয়, আমের ভেষজ গুণ আমাদের স্কিন ক্যান্সারসহ ভিভিন্ন জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে।

১৬. আমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ সেই সাথে আরো আছে ফাইবার যা সিরাম কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টরল যেমন কম ঘনত্বের লাইপোপ্রটিন এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও কাঁচা আমের উপকারিতা

* ভিটামিন সমৃদ্ধ ও মিনারেলে ভরপুর।

*এছাড়াও কাঁচা আমের উপকারিতা

* ভিটামিন সমৃদ্ধ ও মিনারেলে ভরপুর।

* ক্যারোটিন ও ভিটামিনে সমৃদ্ধ কাঁচা আম চোখ ভাল রাখার জন্য দরকার। বিটা ক্যারোটিন থাকায় হৃৎপিন্ডের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

* ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন-২ ভাল পরিমাণে রয়েছে।

* ক্যালসিয়াম ও আয়রন রয়েছে।

* পরিশ্রমী বা নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যেস থাকলে কাঁচা আম খেতে পারেন। পটাশিয়ামের অভাব পূরণ করতে পারে।

* পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকায় অ্যাসিডিটি বা অম্বল, পেশি সংকোচন, মানসিক চাপের ফলে তৈরি শারীরিক সমস্যায় উপকারী।

* কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় তা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা সমস্যায় বেশ উপকারী।

রোগ প্রতিরোধ

* ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়া কোলন বা মলাশয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

* কলেরা, রক্তাল্পতা ও যক্ষা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

* ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে ও গরমের সময় সর্দিগর্মি থেকে রক্ষা করে।

* আমের বীজ শুকিয়ে চূর্ণ করে ডায়রিয়া সারাতে ব্যবহার করা হয়।

* আমের পাতা ব্যবহার করে বহুমূত্ররোগের প্রকোপ কমানো যায়।

* নিফ্রাইটিস বা বৃক্ক প্রদাহ এবং কিডনির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

* নিঃশ্বাসের সমস্যা, জ্বরের সমস্যা উপশম করে।

অন্যান্য উপকারিতা

* যথেষ্ট পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।

* অ্যালকালাইন জাতীয় খাবার হওয়ায় অ্যাসিডিটি উপশমে ভাল কাজ করে।

* অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় অ্যান্টি-ভাইরাস ও অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান রয়েছে।

* ত্বক উজ্জ্বল রাখতে আমের পাল্প বা আঁশ সাহায্য করে।

* আম পাতলা করে কেটে ত্বকের ওপর কিছুক্ষণ রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। রোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমে যাবে।

* কাঁচা আম শুকিয়ে তৈরি করা আমচূর গুঁড়া স্কার্ভি সারানোয় কার্যকর। যথেষ্ট পরিমাণে টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়ার ফলে সৃষ্ট রক্তঘটিত রোগই হচ্ছে স্কার্ভি।

* কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এমনকি পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে ভিটামিন সি বেশি পরিমাণে থাকে।

★আরেকটি মজার তথ্য জানিয়ে দেই,

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমটির ওজন ছিল- ৩.৪৩৫ কেজি,দৈর্ঘ্য-৩০.৪৮ সেন্টিমিটার,পরিধি-৪৯.৫৩ সেন্টিমিটার, প্রস্থ-১৭.৭৮ সেন্টিমিটার।

২০১৯ সালের ফিলিপাইনের সার্জিও ও মারিয়া সিকারো বোডিওনগানের বাগানে আমটি হয়েছিল।★

2
$ 0.00
Avatar for alma45
Written by
3 years ago

Comments