অসাধারণ বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগ কাজ ই হয় "অ সাধারণ"। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও এর ব্যতিক্রম নয়। এমনকি তার জন্মতারিখটিও চমকপ্রদ- 3.14 ! আপাদত সালটা বাদ থাক। এবার কিছু মজার ঘটনা জানা যাক এই "অ সাধারণ" বিজ্ঞানীর জীবনী থেকে 😃😃
"১.
আইনস্টাইনের এক সহকর্মী একদিন তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। আইনস্টাইন তখন একটি টেলিফোন বই খুঁজে বের করলেন এবং সেই বই থেকে তাঁর নিজের নম্বরটা খুঁজতে লাগলেন।
সহকর্মী তাকে বললেন, ‘কী ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে নেই আপনার।’
আইনস্টাইন বললেন, ‘না। তার দরকারই বা কী? যেটা আপনি বইতে পাবেন, সে তথ্যটা মুখস্থ করে মস্তিস্ক খরচ করবেন কেন?’
২.
আইনস্টাইন ছোটবেলায় তুলনামূলকভাবে অনেক দেরিতে কথা বলতে শেখেন। তাঁর বাবা মা এ ব্যাপারে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। একদিন রাতে খাবার টেবিলে বসে সকলে খাচ্ছেন, এমন সময় বালক আইনস্টাইন চিৎকার করে বললেন, 'এই স্যুপটা বড্ড গরম।'
তাঁর বাবা-মা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ছেলের মুখে প্রথম কথা শুনে বাবা-মা বেশ অবাক হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আগে তুমি কথা বলো নি কেন?’
উত্তরে আইনস্টাইন বললেন, ‘কারণ এর আগে তো সব ঠিকই ছিল। স্যুপ কখনো গরম ছিল না।’
৩.
১৯৩১ সালে কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানান তার একটি শো দেখার জন্য। তখন চ্যাপলিনের 'সিটি লাইটস্' সিনেমার প্রদর্শনী চলছিল। শো-এর পরে তারা দুজন শহরের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সবাই আমাকে সহজেই বোঝে, এজন্যই আমার এত জনপ্রিয়তা। কিন্তু মানুষ আপনাকে কেন এত পছন্দ করে বুঝলাম না।’
আইনস্টাইন সহাস্যে প্রত্যুত্তরে জানালেন, ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতে পারে না বলেই আমার এই জনপ্রিয়তা’।
৪.
একবার আইনস্টাইন ট্রেনে চেপে যাচ্ছিলেন। চেকার সকলের টিকিট চেক করার এক পর্যায়ে আইনস্টাইনের কাছে এসে টিকিট দেখতে চাইলেন। কিন্তু আইনস্টাইন তাঁর টিকিটটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চেকার আইনস্টাইনকে চিনতে পেরে বললেন, ‘স্যার আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চয়ই টিকিট কেটে উঠেছেন। আপনাকে টিকিট দেখাতে হবে না।’
আইনস্টাইন কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন, ‘না, না, ওটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। না পেলে আমি জানব কী করে যে আমি কোথায় যাচ্ছিলাম!’
৫.
আইনস্টাইনের কাছে একবার আপেক্ষিকতার সহজ ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলো। উত্তরে আইনস্টাইন বললেন, ‘আপনার হাত একটা জ্বলন্ত চুলার উপর ধরে রাখুন, মনে হবে এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে। কিন্তু একজন সুন্দরী মেয়ের পাশে একঘন্টা বসে থাকুন, আপনার কাছে মনে হবে মাত্র এক মিনিট পার হলো...এটাই আপেক্ষিকতা।’
৬.
একবার আইনস্টাইন বাইরে থেকে বাসায় ফিরে দরজায় কড়া নাড়লেন। ভেতর থেকে তাঁর স্ত্রী ভাবলেন অন্য কেউ হয়তো আইনস্টাইনকে খুঁজতে এসেছেন, তাই তিনি বেশ বিরক্ত হয়ে চেচিয়ে বললেন, আইনস্টাইন বাড়িতে নেই। ব্যস, চিন্তিত আইনস্টাইন কোনো কথা না বলে উল্টো হাঁটা ধরলেন।
৭.
হাস্যরসপ্রিয় আইনস্টাইন তার যুগান্তকারী আপেক্ষিক তত্ত্বের আবিষ্কার নিয়ে একবার কৌতুক করে বলেছিলেন, আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্বনাগরিক। কিন্তু যদি আমার তত্ত্ব মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।
৮.
আপেক্ষিক তত্ত্বে বেশ জটিলতা এবং দুর্বোধ্যতা থাকার কারণে মুখরোচক কিছু কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল। একদিন এক সুন্দরী তরুণী তার প্রেমিকের সাথে চার্চের ফাদারের পরিচয় করিয়ে দিল। পরদিন যখন মেয়েটি ফাদারের কাছে গেল, ফাদার তাকে কাছে ডেকে বললেন, তোমার প্রেমিককে আমার সব দিক থেকেই ভালো লেগেছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া।
মেয়েটি কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করল, কোন বিষয়? ফাদার বললেন, তার কোনো রসবোধ নেই। আমি তাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করেছি আর সে আমাকে তাই বোঝাতে আরম্ভ করল। হাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি।
৯.
আইনস্টাইন আমেরিকায় গিয়েছেন, সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরল। একজন জিজ্ঞাসা করলো, আজকাল মেয়েরা কেন আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে এত আলোচনা করছে?আইনস্টাইন হাসতে হাসতে বললেন, মেয়েরা সব সময়ই নতুন কিছু পছন্দ করে। এই বছরের নতুন জিনিস হলো আপেক্ষিক তত্ত্ব।
১০.
একদিন সন্ধ্যাবেলায় প্রিন্সটনের ডিরেকটরের বাড়িতে ফোন এলো, 'দয়া করে যদি আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বরটা জানান!' আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বর কাউকে জানানো হবে না--কঠিন গলায় তা জানিয়ে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন ডিরেকটর।
খানিক পরে আবার ফোন বেজে উঠল। ওপাশ থেকে শোনা গেল, 'আমি আইনস্টাইন বলছি, বাড়ির নম্বর আর রাস্তা দুটোই ভুলে গিয়েছি। যদি দয়া করে বলে দেন।'
১১.
১৯২১ সালে ফিলিস্তিন ভ্রমণে বেরিয়েছেন আইনস্টাইন। সেখানে ‘যুব সংঘ’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২২ বছর বয়সী এক তরুণী। সমাজের নানা বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন আইনস্টাইন। একবার আইনস্টাইন তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, এখানে নারী-পুরুষে সম্পর্ক কেমন?’ এ প্রশ্ন শুনে ওই তরুণী লজ্জায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘দেখুন অধ্যাপক, এখানে কিন্তু একজন পুরুষের একটিই স্ত্রী।’ একটু হেসে তাঁর হাতখানা ধরে আইনস্টাইন বললেন, 'না, না। আমার প্রশ্নটা ওভাবে নিয়ো না। আমরা পদার্থবিজ্ঞানীরা “সম্পর্ক” কথাটা দিয়ে সহজ কিছুকে বোঝাই। আমি আসলে জানতে চেয়েছি, এখানে কতজন নারী, আর কতজন পুরুষ!'
১২.
মানুষ মাত্রই কি ভুল হয়? নিজের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কী ভাবতেন আইনস্টাইন?
১৯৩৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ আর একটা পেনসিল। সঙ্গে দরকার বড় একটা ডাস্টবিন, যেখানে আমার সব ভুল করা বা ভুলে ভরা কাগজগুলো ফেলব!’
১৩.
অনেকের কাছে অংকের সমার্থক শব্দ হলো--আতঙ্ক! একবার ১৫ বছর বয়সী এক তরুণী আইনস্টাইনের কাছে সাহায্য চাইল। গণিত বিষয়ে তার বাড়ির কাজ বা হোম ওয়ার্ক সে সঠিকভাবে করতে পারছিল না। আইনস্টাইন ওই তরুণীকে বলেছিলেন, ‘গণিতের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করো না। তোমার কাছে গণিত যতটা কঠিন, আমার কাছে গণিত তার চেয়েও কঠিন।’
১৪.
একবার এক ছাত্র আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করল, ‘গত বছর পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন পড়েছিল, এবারের পরীক্ষায়ও ঠিকঠিক ওই সব প্রশ্নই পড়েছে।’ ‘ঠিক বলেছ।’ আইনস্টাইন বললেন, ‘কিন্তু এ বছরের উত্তরগুলো আগেরবারের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা!'
১৫.
একবার এক অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি একটু সহজ করে আপনার তত্ত্বটা আমাদের বোঝাবেন?’ আইনস্টাইন তখন এই গল্পটা শোনালেন। আমি একবার বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলাম। বন্ধুটি ছিল অন্ধ। আমি বললাম, 'দুধ পান করতে ইচ্ছা করছে।' ‘দুধ?’ বন্ধুটি বলল, ‘পান করা বুঝি, কিন্তু দুধ কী জিনিস?’ ‘একটা সাদা তরল পদার্থ।’ বললাম আমি। ‘তরল আমি বুঝি, কিন্তু সাদা জিনিসটা কী?’ ‘বকের পালকের রং।’ ‘পালক আমি বুঝি, কিন্তু বক কী?’ ‘ঘাড় কুঁজো বা বাঁকানো ঘাড়ের এক পাখি।’ ‘ঘাড় সে তো বুঝি। কিন্তু এই কুঁজো কথাটার মানে কী?’ এরপর আর ধৈর্য থাকে, বলুন! আমি তার হাতটা ধরে এক ঝটকায় টানটান করলাম। বললাম, ‘এটা এখন একদম সোজা, তাই না। তারপর ধরো, কনুই বরাবর এটা ভেঙে দিলাম। এবার তোমার হাতটা যেমন আছে সেটাকেই কুঁজো বা বাঁকানো বলে, বুঝলে?’ ‘আহ্!’ অন্ধ বন্ধু বলল, ‘এবার বুঝেছি, দুধ বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ।’
১৬.
স্বামী সম্পর্কে কেমন ধারণা ছিল আইনস্টাইনের স্ত্রীর? তাঁর স্ত্রীকে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কি আপনি বুঝতে পারেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘না, কিন্তু আমার স্বামীকে বুঝি। আমি জানি, তাঁকে বিশ্বাস করা যায়!
১৭.
বিখ্যাত ভাস্কর জ্যাকব অ্যাপস্টিন একবার আইনস্টাইনের একটি আবক্ষ মূর্তি খোদাই করছিলেন। আইনস্টাইন নিজেই মডেল হয়ে ধৈর্য ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে শিল্পীকে সাহায্য করতেন। সে সময় একদিন তিনি জ্যাকবকে বলেন, 'প্রায় শ’খানেক বিজ্ঞানী বই লিখে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। আমার থিওরি যদি ভুল হয়, তবে এতজনের দরকারটা কী? একজন বললেই যথেষ্ট।'
১৮.
একবার বেলজিয়ামের রাণী আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর দেশ সফরের জন্য। নির্দিষ্ট দিনে আইনস্টাইনকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রেলস্টেশনে হাজির হল গাড়ির বহর। কিন্তু কোথায় কী? রেল স্টেশনে আইনস্টাইনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। ফিরে চলল গাড়ির বহর রাজপ্রাসাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর সাদাসিধে পোশাকে বেহালা বাজাতে বাজাতে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। রাণী ব্যাপারটাতে লজ্জিত হলেন। সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থণা করে জানালেন যে, বিজ্ঞানীকে নিয়ে আসার জন্য গাড়ি বহর রেলস্টেশনে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছে। আইনস্টাইন বললেন,'আমি ইচ্ছে করেই গাড়ি বহরকে এড়িয়ে গেছি। আর পায়ে হেঁটে বেহালা বাজাতে বাজাতে এসেছি। যদি আপনার ঐ রাজকীয় গাড়িতে আসতাম, তবে কি এভাবে বেহালা বাজাতে পারতাম? সাধারণ মানুষের মত শহরটাকে দেখে নিতে পারতাম?'
১৯.
আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কার করে তিনি তখন বিখ্যাত ও বিতর্কিত। সত্যি কথা বলতে কি, বিজ্ঞানী-অবিজ্ঞানী কারোর মগজের অ্যান্টেনাই ব্যাপারটা 'ক্যাচ' করতে পারছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উদ্ভাবিত তত্ত্বটি বোঝাতে লেকচার দিতে যেতেন। প্রায় সব সেমিনারে তিনি একই ধরনের আলোচনা করতেন। একবার এমনই এক সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন, লেকচার দেবার জন্য। পথিমধ্যে তাঁর ড্রাইভার করে বসল এক আজব আবদার। বলল, ‘স্যার, আপনার লেকচারগুলো শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আজ একদিনের জন্য আমি আইনস্টাইন সেজে সেমিনারে বক্তব্য চাই।’ মজার মানুষ আইনস্টাইনেরও কথাটা খুব মনে ধরল। তিনি এক কথায় রাজি। দেখাই যাক না, ব্যাপারটা কী হয়!
ড্রাইভার আইনস্টাইন সেজে অনুষ্ঠানে গেল বক্তব্য দিতে আর স্বয়ং আইনস্টাইন দর্শক সারিতে বসে রইলেন আইনস্টাইনেরই ড্রাইভার হয়ে। তখন তো আর মিডিয়ার এত দৌরাত্ম ছিল না। তাই ব্যপারটা কেউ বুঝতে পারল না। আইনস্টাইনরুপী ড্রাইভার মঞ্চে বক্তব্য রাখল এবং চমৎকার বক্তব্য রাখল। দর্শক সারিতে বসে মুগ্ধ আইনস্টাইন বার বার হাত তালি দিতে লাগলেন। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত একজন আইনস্টাইনের ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বললেন, ‘আপনার বক্তব্যটি আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু কি জানেন, আমি এই অমুক অমুক বিষয়গুলো একদম বুঝতে পারিনি। আপনি কি অনুগ্রহ করে আমাকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেবেন?’ আইনস্টাইনের ড্রাইভার বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে উত্তর দিল, 'ওহ! এই ব্যাপার? এই ব্যাপারটা তো আমার ড্রাইভারই বুঝিয়ে দিতে পারবে। চলুন তার কাছেই যাই।'
২০.
একবার আইনস্টাইনকে সফলতা লাভের একটি গাণিতিক ফর্মুলা দিতে বলা হল। তিনি বলেছিলেন, 'X+Y+Z=A, যেখানে X=কাজ, Y=খেলাধুলা আর A=সফলতা।' ‘আর Z মানে কী?’ আবারও জিজ্ঞেস করা হল তাঁকে।
‘তোমার মুখ বন্ধ রাখা’, আইনস্টাইনের উত্তর।
২১.
রেডিও জিনিসটার ব্যাখ্যায় আইনস্টাইন : ‘তুমি টেলিগ্রাফের তার তো দেখেছ। মনে করো, এটা লম্বা, অনেক লম্বা একটা বিড়াল। তুমি নিউইয়র্কে বসে এর লেজে টান দেবে, ওদিকে লস এঞ্জেলেসে এর মাথা মিউ মিউ করে উঠবে। ব্যাপারটা বুঝতে পারছ? বেতার ঠিক এভাবেই কাজ করে। তুমি এদিকে ইশারা দাও, ওদিকে সাড়া পড়ে। পার্থক্য হল বেতারের ক্ষেত্রে বিড়াল বলে কিছু উপস্থিত নেই।
২২.
এত সুন্দর ব্যাখ্যা যিনি দিতে পারেন, তিনি কিন্তু অনেক সময় জীবনের সহজ ব্যাপারগুলো বুঝতে পারতেন না। একবার আইনস্টাইন বাড়ি বানালেন। বাড়িটা কেমন হল একদিন তিনি তা দেখতেও গেলেন। ঘুরে ঘুরে সব দেখে তিনি জানতে চাইলেন, তাঁর ছোট্ট বিড়ালছানাটি ঘরে ঢুকবে কী করে? তার জন্য তো কোন আলাদা ছোট দরজা বানানো হয় নি?
আইনস্টাইনকে কোনোভাবেই বোঝানো গেল না যে বিড়াল মূল দরজা দিয়েও ঢুকতে পারে! অবশেষে তাঁকে খুশি করার জন্য বড় দরজার পাশে আরেকটি ছোট দরজা তৈরি করে দেওয়া হল, যেন তাঁর আদরের বেড়ালছানাটি নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বেড়ালছানাটি কোন দরজা ব্যবহার করত তা আইনস্টাইনই ভাল বলতে পারবেন।
২৩.
গুজব আছে, সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো আইনস্টাইনের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তাই একদিন মনরো আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এইভাবে, ‘চলুন না, আমরা বিয়ে করে ফেলি? তাহলে আমাদের সন্তানেরা হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওরা দেখতে হবে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত।’
আইনস্টাইন তৎক্ষণাৎ বললেন, ‘আর যদি উল্টোটা হয়? দেখতে যদি হয় আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত?’
২৪.
তিন হাজার শব্দের মধ্যে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব যে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে, তার জন্য মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে সায়েন্টিফিক আমেরিকান। এ ব্যাপারে আইনস্টাইন মন্তব্য করেন, ‘বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমিই অংশ নিইনি। আমার বিশ্বাস হয়নি যে তিন হাজার শব্দে আমি এটা ভালো বোঝাতে পারতাম!’
২৫.
অন্য সব স্ত্রীদের মত কাজে যাওয়ার আগে আইনস্টাইনকে প্রায়ই ভালো পোশাক পরে যাওয়ার অনুরোধ করতেন তাঁর স্ত্রী। বেশির ভাগ সময়ই তিনি জবাব দিতেন, ‘আমি কেন এটা করব? সেখানে সবাই আমাকে চেনে।’ তারপর আইনস্টাইনের প্রথম বড় ধরনের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় যখন ঘনিয়ে এল, তখন আবার তাঁকে একটু ভালো কাপড়চোপড় পরে সেখানে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন তাঁর স্ত্রী। এবার তিনি জবাব দিলেন, ‘কেন আমি এটা করব? সেখানে কেউই তো আমাকে চেনে না!’
২৬.
মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও। আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে ফেলে!'
২৭.
১৯৩০ সালে আমেরিকার উদ্দেশে বার্লিন ত্যাগ করেন আইনস্টাইন। বার্লিন রেলস্টেশনে পৌঁছেই স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। যা হোক, একসময় খুঁজে পেলেন তাঁকে। তারপরই টিকিট জোড়া হারিয়ে বসলেন। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল তাও, আর এভাবেই শুরু হলো তাঁর দ্বিতীয় আমেরিকা যাত্রা।
২৮.
ভবিষ্যতে কী আছে? আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে একবার জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কখনোই চিন্তা করি না। কারণ, এটা এমনিতেও তাড়াতাড়িই আসে।
২৯.
এক পার্টিতে আইনস্টাইনকে চিনতে না পেরে এক তরুণী প্রশ্ন করলেন, আপনি কী করেন? আইনস্টাইন উত্তর দিলেন, আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র।
তরুণী অবাক হয়ে বললেন, আপনি এখনও ছাত্র! আর আমি গত বছর পাশ করেছি!
৩০.
আইনস্টাইনের মেয়ের বিয়ে। সবাই চার্চে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে উনি উনার মেয়েকে বললেন, তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাবে আমার কলমটা রেখে আসছি। মেয়ে অনেক বারন করা সত্ত্বেও উনি গেলেন। ৩০ মিনিটের কথা বলে যাওয়ার পর উনি যখন সেই সময়ের মধ্যে ফিরলেন না, তখন বিলম্ব না করে সবাই মিলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। ৭ দিন পর উনার মেয়ে যখন বাসায় এসে মাকে জিজ্ঞাস করলো বাবা কোথায় তখন তার মা বলল ওই যে গেল, এরপর আর আসে নি।
আইনস্টাইনের মেয়ে বাবাকে খুঁজতে ঢুকলো তার ল্যাবে। গিয়ে দেখলো, তার বাবা একটা কলম নিয়ে বোর্ডের সামনে গিয়ে কী জানি চিন্তা করছিলেন। মেয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো সে কী করছে।
আইনস্টাইন অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বললেন, 'মা তুমি চার্চে যাও, আমি এই কাজটা ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করে আসছি।'