জানিনা আজ ২০২০ সালে এসে কয়জন আমার কথা বিশ্বাস করবেন, কিন্তু যেসব কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করব তা আমার নিজের সাথে ঘটেছে। ছোটবেলা থেকেই ভূতের গল্প আমাকে অনেক টানতো, তাই বোধহয় আমার সাথে এমন সব ঘটনা ঘটেছে যা নিজেরই বিশ্বাস হয়না।
আজ যে ঘটনার কথা আপনাদেরকে বলবো সেটা ২০০৮ সালের। আমার ঠিক মনে নেই যে রাতটি শবে-বরাতের ছিল নাকি শবে কদরের ছিল, শুধু এতটুকু মনে আছে যে নামাজ পড়ার রাত ছিল। আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে সন্ধ্যার পরে বের হয়ে যাই। তখন এইচএসসিতে পড়ি। ভয় কি ডর কি জানিনা। শুধু এতোটুকু জানি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হব। আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত তিনটা বেজে গেছে বুঝতে পারিনি।
এক বন্ধুর কথায় মনে পড়ল যে ফজরের নামাজ হতে আর বেশি দেরি নেই। ভাবলাম নামাজ শুরু করার আগে কবরস্থানে আমার নানার কবর জিয়ারত করি। যেই ভাবা সেই কাজ। আমরা পাঁচজন মিলে চলে যাই কবরস্থানে। অনেকেই হয়তো বা চিনবেন মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের কবরস্থান। আমরা পাঁচজন কবরস্থানে ঢুকি কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে।
আজকে কবরস্থান আর আগের মত নেই। চারপাশে আলো দিয়ে আলোকিত। ২০০৮ সালে এত আলো ছিল না। টিম টিমে আলো 40 ওয়াটের বাল্বের, তাও পুরা কবরস্থানে চার থেকে পাঁচটা পোস্ট ছিল হয়ত। এরকম আধো আলো আধো অন্ধকার একটা পরিবেশে আমরা পাঁচজন কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া দরুদ শেষ করে মোনাজাত করছিলাম। হঠাৎ করে কিসের জন্য জানি সামনের দিকে চোখ পড়ে আর তখনই আমার নানার কবর থেকে ঠিক সামনে একটা মানুষের মতন কিছু একটা দেখতে পাই।
প্রথমদিকে এতটা গুরুত্ব দেইনি, কিন্তু তারপর হঠাৎ করে একটা চাপা আওয়াজে আবার তাকাই।
অন্ধকারে অনেকক্ষণ থাকলে দেখবেন আপনি অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছেন। আমিও দেখা শুরু করলাম। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমাদের সামনে একজন মহিলা সাদা কাপড় পড়ে আমাদের দিকে পিছন ফিরে আছে। আমরা তার পিছনের সাইডে। জিনিসটা অস্বাভাবিক লাগলো কারণ আমি অনেকদিন ধরে কবরস্থানেও নিয়মিত আসা যাওয়া করি কিন্তু কখনোই কোন মহিলাকে কবরস্থানের ভিতর দেখিনি, তাও আবার এত রাতে।
যেই মাত্র বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা অস্বাভাবিক হাত দিয়ে আমার বন্ধুকে ধাক্কা দিলাম। আমার বন্ধু সেও সামনের দিকে তাকালো এবং কিছুক্ষণ পর সে তার পাশের জন কে ধাক্কা দিল এভাবে আমরা ৫ জনই বুঝতে পারলাম আমরা কোন মানুষকে দেখছি না। কেন জানিনা মনের মধ্যে এই ব্যাপারটা আসলো, সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে মানুষ না। তারপরও আমরা সাহস করে আমাদের মোনাজাত শেষ করি এবং কবরস্থান থেকে বের হয়ে আসতে থাকি। ঠিক সেই সময় একটা চিৎকারের আওয়াজ পাই। এক মহিলার চিৎকার। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, জীবনে সবচাইতে বেশী ভয় পেয়ে সেই রাতে এমন দৌড় দিয়েছি যা জীবনে কখনো দেইনি। এক দৌড়ে আমরা পাঁচজন বন্ধু কবরস্থানের পাশের মসজিদে ঢুকে পড়ি। ঢুকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাই সামনে একজন হুজুর, তিনি কোরআন শরীফ পড়ছিলেন।
আমরা দৌড়ে তার পাশে বসে পড়ি। উনি আমাদের দিকে একবার তাকিয়েই বুঝতে পারেন কিছু একটা হয়েছে। উনি কোরআন শরীফ একটু পরে পড়া শেষ করে আমাদের দিকে তাকান আর জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে?”
আমরা বলি কবরস্থানের ভেতরে জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম, এক মহিলাকে দেখেছি সাদা কাপড় পরা। বের হয়ে আসার সময় চিৎকার দিয়েছে।
হুজুর এতোটুকু শুনে আমাদেরকে বলেন, “এত রাতে কেন তোমরা কবরস্থানে গিয়েছো?” বলে একটু বকাঝকা করেন, কিন্তু তারপর আমাদের মাথার চুল মুঠি করে ধরে উনি ফু দেন।
তারপর যা বলেন তা আমি জীবনে ভুলিনি। ঊনি বলেন, “ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় চলে যাও আর যা দেখেছ এটা খুব স্বাভাবিক। কবরস্থান সবচাইতে শান্তির জায়গা, সবচাইতে নিরিবিলি জায়গা। এখানে এমন অনেক কিছুই দেখা যায় যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। তোমাদের জন্য এটাই ভালো হবে যদি তোমরা ব্যাপারটা ভুলে যাও।“
এটা আমার জীবনের সবচাইতে প্রথম সুপারন্যাচারাল ইন্সিডেন্ট। এটাকে ভোলা সম্ভব না এবং পরবর্তীতে এই ঘটনা থেকে এতটাই সাহস চলে আসে যে আমি জিন আছে এমন শুনলেই চলে যেতাম, হন্টেড জায়গা শুনলে সবার আগে লাফাতাম যাওয়ার জন্য।
এরকম আরো অনেকগুলো অভিজ্ঞতা আছে আমার। অনেকে ভাববেন গল্প, অনেকে ভাববেন সত্যি। আমার যায় আসে না আপনি কি ভাবছেন, কারণ ঘটনাটা যার সাথে ঘটে শুধু সেই জানে অভিজ্ঞতাটা কেমন।
এই ধরনের গল্প পরতে ভাল্লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে এই পোস্ট টা করার জন্য।