বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে একটি অন্যতম নক্ষত্রের নাম বেসবাবা সুমন। সম্পূর্ন নাম সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন। আমরা মিউজিক ভক্তরা ডাকি বেসবাবা নামে। তার গানের ধরন হেভি মেটাল, প্রগ্রেসিভ মেটাল, হার্ডরক। এছাড়া রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীত ও শোনা যায় তার মুখে। উইকিপিডিয়ার মতে তার পেশায় সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, প্রযোজক, অভিনেতা, মডেল এবং ব্যবসায়ী থাকলেও বেসবাবা বলেন আমি আবেগের বসেই গান গায়। পেশা হিসেবে নই।
এছাড়া তার মুখে এটাও শুনা যায়-
"আমি আঠারোটা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, আরো সাতটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আমার টাকা নিয়ে কখনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু আমি কখনোই সেটি আমার পরিচয় হিসেবে রাখি না। আমার পরিচয়- আমি একজন গায়ক।"
তিনি একাধিক ব্যান্ড বা দলে গান করেছেন। তন্মধ্যে ফিলিংস, ফেইথ, ওয়ারফেজ, ত্রিমাতৃক, আর্টসেল, ক্রনিক। কোথাও অতিথি হিসেবে কোথাও ক্যারিয়ার শুরু করেন। নিজের ব্যান্ড "অর্থহীন" শুরু করেন। তিনি অর্থহীন ব্যান্ড থেকে ডজন খানেক জনপ্রিয় গান উপহার দেন।
আজ উনার ব্যাপারে লেখার মুল কারন জীবনে বেচে থাকার মানে শেখা, বেচে থাকার উপায় শেখা।
যাই হোক মুল কথায় আসি।
মানুষটার ওজন ছিলো ১৭৪ কেজি। কোমড়ের সাইজ ছিলো ৫৮। পাজামা আনাইতে হতো বিদেশ থেকে। এরপর তিনি ওজন কমাতে শুরু করেন। এবং সফল হোন।
প্রথম যেদিন দেখলেন যে তার ওজন ১০-১২ কেজি কমে গেছে, তখন বুঝলেন যে এটা সত্যিই তিনি পারবেন। আসলে নিজের মনের মধ্যে যখন তার বিশ্বাস গেঁথে নিয়েছেন যে তিনি পারবেন, তার মানে তিনি পারবেনই। এই পুরো ঘটনাটা নিয়েই তিনি খুব গর্ববোধ করেন যে তিনি সফল।
এর পর চলেন এই শতকের শুরুতে…
২০০১ সালে কনসার্টে তিনি দেখেন চোয়াল বন্ধ করতে পারছেন না। ডাক্তারের কাছে গেলে। ডাক্তার জানান চোয়ালের লিগামেন্ট (সম্ভবত নাকি অন্য কিছু মনে পড়ছেনা) ছিড়ে গেসে। ডাক্তার জানান তিনি গাইতে পারবেন না আর। এটা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। গান গাইতে পারবেন না এ কেমন কথা?
এরপর ডাক্তার এর চোয়ালবন্ধনী নিয়ে চলাফেরা করতেন। একবছরের মাথায় তিনি আবার গান গাইলেন। ডাক্তার অবাক। বললেন এটা মিরাকেল।
এরপর একজন ক্যান্সার ফাইটার হিসেবে দেশে এটলিস্ট তার নাম সর্বোচ্চ উচ্চতায় থাকবে। ক্যান্সারকে জয় করেন তিনি।
হঠাৎই ক্যান্সার ধরা পড়ে সুমনের। ডাক্তাররা তার মেরুদণ্ডে দুটি টিউমার খুঁজে পান, যা প্রথম ধাপের ক্যান্সার। এই খবর সুমনের মনোবল ভেঙে দেয়। নিজের পরিবারে ক্যান্সারে মারা যাওয়া মানুষ থাকায় ভয় পেয়ে যান তিনি। তা সত্ত্বেও নিজের মনে শক্তি যুগিয়ে ডাক্তারের ছুরির নিচে যান। সার্জারি করার পর ১০ মাস ভালোই ছিলেন। গান শুরু করার কথা ভাবছিলেন যখন ঠিক তখনই ক্যান্সার আবার আঘাত হানলো! এই সময়ে পাকস্থলীতে চতুর্থ ধাপের! আবারো সার্জারি, কেমোথেরাপি। সুমনের পাকস্থলীর ৮৫% কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছিলো। এরপর আবারো সার্জারি
২০১৩ সালে আবার ক্যান্সারের আক্রমণে পড়েন সুমন। পিটুইটারি গ্লান্ডের টিউমার ছিল এটি। আবারো সার্জারি করান।
এরপরও আরো কয়েকবার ছোট-বড় ক্যান্সারের জন্য বার বার ডাক্তারদের ছুরির নিচে যেতে হয়েছে তাকে।
থুতনির টিউমার অপসারণের জন্য সার্জারি করতে ব্যাংকক যেতে হয়। সার্জারি শেষে বিকালে হসপিটাল থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তা পার হবার সময় একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় তাকে। এজন্যও পাশের হসপিটালে ১১ ঘণ্টাব্যাপী নয়টি সার্জারি হয় তার! এরপর থেকে মেরুদণ্ডে ১১ টি স্ক্রু নিয়ে ঘোরেন। কিডনী, পাকস্থলী, মাথা, ত্বক প্রায় সব ক্যান্সার বিজয় করেন। একসময় তার অপারেশন এ সম্পূর্ন পাকস্থলী কেটে ফেলে দেওয়া হয়। এরপরেও তিনি ক্যান্সার বিজয় করেন।
উনার পেশাগত জীবন, পারিবারিক জীবনে দেখা যায় অনেক ধনাঢ্য তিনি।
আমার জানামতে বিএমডব্লিউর এদেশী ব্র্যান্ড এম্বাসেডর একমাত্র তিনি। এছাড়া অনেক ধনী ঘরের সন্তান।
১৮টি প্রতিষ্ঠান এর মালিক আরো ৭টার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
তাও গান গেয়ে গেলেন আমাদের জন্য। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগে এত ধনী ঘরের মানুষ স্বাভাবিক টাকার জোরে ক্যান্সার ফাইট করতে পারছে। এখন আমার প্রশ্ন
কয়জন টাকাওয়ালা ক্যান্সার ফাইট করেছে?
জীবনের অনেকটা সময় চড়ায় উতরায় পেরিয়ে আজকের বেসবাবা। বেচে থাকতে যে একটা শক্ত মনোবল দরকার তা তিনি দেখিয়েছেন। তার সম্পর্কে একটা তথ্য দেই:
তার শরীরে সাড়ে ৪হাজার সেলাই আছে।
একটা মানুষ প্রকৃতি থেকে এতটা অসহযোগিতা পেয়েও বেচে আছে। আর আমরা ঠুনকো কষ্টে মরন কামনা করি। মানুষটা এত এত কষ্টেও বেচে আছে।
কনসার্টে যেমন রক মেলোডি মেটালে আমরা তার গানে হেডব্যাং দেই আবার রবীন্দ সংগীত, সফট জনরায় ও গ্যালাক্সি বানাই ফ্ল্যাশলাইট দিয়ে।
মানুষটার আরেকটা পরিচয় আছে। তিনি অদ্ভুত নিকৃষ্ট ছেলের জনক।
বাংলার সংগীত এর একটা কিংবদন্তি তিনি। বেচে থাকুক তার তৈরী শিল্প গুলা আমাদের মাঝে হাজার বছর। এই তরুন-তরুনী যারা প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে ধোকা খেয়ে বেচে আছে তাদের জন্য তার গান স্বস্তির।
[বিঃদ্রঃ বেসবাবার ওজন বেশি অবস্থার চবি নেই আমার সংগ্রহে। ভিডিও ছিলো।খুজে পাচ্ছিনা। এই তথ্যের সত্যতা আপনারা অনলাইনে পাবেন]
ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।
ভালো থাকবেন।বেচে থাকবেন।
জন্ম-মৃত্যু স্রষ্টার হাতে। আমাদের এখানে হস্তক্ষেপ এর অধিকার নেই। তাই বেচে থাকুন।
ধন্যবাদ আপনাকে।অনেক না জানা কথা জানিয়ে দিলেন।আর সবচেয়ে বড় ব্যপারটা হচ্ছে লেখাটার মধে্যকার শিক্ষণীয় বিষয়টা।ফাইট করার মনোবল রাখতে হবে।