মুর্শিদাবাদ (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) থেকে ফিরে: বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজধানী ‘মুর্শিদাবাদ’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা মুর্শিদাবাদের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশের মানুষের একটা সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্ক আর সেখানকার পর্যটনকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় এখনো প্রচুর মানুষ মুর্শিদাবাদে ভ্রমণে যান। সেখানে গিয়ে জানার চেষ্টা করেন বাংলা আর বাঙালিদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রাচীনালেখ্য সম্পর্কে।
[bad iframe src]
মুর্শিদাবাদে ১৭শ ও ১৮শ শতকের বিভিন্ন স্থাপনা এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। নবাব আলীবর্দী খাঁ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার কবর-সমাধি এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনাও রয়েছে সেখানে।
হাজার দুয়ারী প্যালেস
মুর্শিদাবাদে ভ্রমণে গেলে প্রথমেই নজর কাড়ে হাজার দুয়ারী প্যালেস। ১৮২৯ সালে ইতালীয় স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন হাজার দুয়ারী প্যালেস নির্মাণ করেছিলেন মীর জাফরের পঞ্চম বংশধর নবাব হুমায়ুন ঝাঁ। বহু দরজাবিশিষ্ট হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় ‘হাজার দুয়ারী প্যালেস’। শ্রুতি আছে, এই প্যালেসে এক হাজার একটি দরজা আছে। পরবর্তীতে হাজার দুয়ারী প্যালেস হাইকোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি একটি মিউজিয়াম। এই প্যালেসের প্রতিটি কক্ষের কারুকার্য অত্যন্ত মনোরম। এক তলায় অস্ত্রাগার, অফিস, কাছারী, রেকর্ড রুম ইত্যাদি আছে। অস্ত্রাগারে ২৬০০ অস্ত্র সজ্জিত আছে। এছাড়াও ইতিহাসের সাক্ষী অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। হাজার দুয়ারী প্যালেস শুক্রবার বন্ধ থাকে।সিরাজ মদীনা
বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার তৎকালীন রাজধানী মুর্শিদাবাদে শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার একমাত্র স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা ‘সিরাজ মদীনা’। ছোট্ট ‘সিরাজ মদীনা’র অবস্থান হাজার দুয়ারী প্যালেসের বিশাল চত্বরের ঠিক মাঝখানে।
কথিত আছে, সিরাজউদ্দৌলার মা আমিনা বেগম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সিরাজ মসনদে বসলে মসজিদ বানাবেন। মায়ের প্রতিজ্ঞা পূরণে নবাব সিরাজউদ্দৌলা মদীনার কারবালা থেকে মাটি এনে তৈরি করেন সিরাজ মদীনা। ছোট্ট সিরাজ মদীনা সবসময় বন্ধ থাকলেও খুলে দেওয়া হয় মহররমের দিন।
৫ গম্বুজ বিশিষ্ট সিরাজ মদীনার চারপাশ হাজার দুয়ারী থেকে আলাদা করতে মাটিতে ইটের বেষ্টনী দেওয়া আছে। স্থানীয় গাইডরা সিরাজ মদীনার ইটের বেষ্টনীতে প্রবেশ করে বেশ নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলেন, এই আমি, স্বাধীন বাংলায় নবাব সিরাজের জায়গায় প্রবেশ করলাম। বেরুলেই পায়ে পরবো শিকল, হবো পরাধীন, ইংরেজদের দাস। এই সিরাজ মদীনা ছাড়া মুর্শিদাবাদে নবাব সিরাজের আর কোনো স্মৃতি নেই। বাচ্চাওয়ালী কামান
বাচ্চাওয়ালী কামানের বিশেষ বিশেষত্ব হলো এটি নির্মিত হয় বাংলার তৎকালীন রাজধানী জাহাঙ্গীরনগরে। এর নামকরণের পেছনেও রয়েছে বিশাল ইতিহাস।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার হাজারদুয়ারী প্যালেস চত্বরে দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষিত এই কামানটির দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট, ওজন ১৬ হাজার ৮৮০ পাউন্ড। ১৬৪৭ সালে তৎকালীন রাজধানী জাহাঙ্গীরনগরে তৈরি কামানটির নির্মাতা জনাধন কর্মকার নামে এক ব্যক্তি।
জানা গেছে, তৎকালীন সম্রাটের নির্দেশে কামানটি দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পথে ভাগীরথী নদীতে নৌকাডুবি ঘটে। এতে তলিয়ে যায় কামানটি। এর প্রায় দুইশ বছর পর ভাগীরথী নদী থেকে বালি তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার হাজার দুয়ারী প্যালেস নির্মাণের সময় কামানটি পাওয়া যায়। তখন বাংলা বিহার উড়িষ্যার মনসদে ছিলেন মীর জাফরের পঞ্চম বংশধর হুমায়ুন ঝাঁ। কামানটি তিনি পরবর্তীতে হাজার দুয়ারীতে সংরক্ষণ করেন। হাজার দুয়ারী প্যালেস ও ইমামবাড়ার ঠিক মাঝখানে রাখা হয়েছে কামানটি। এটি দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভীড় করেন।কথিত আছে, কামানটি পাওয়ার পর নবাব হুমায়ুনের নির্দেশে ১৮ কেজি বারুদ ভরে ফায়ার করার পর এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। কামানের শব্দে চারপাশের ১০ মাইলের মধ্যে যে সব মায়েরা গর্ভবর্তী ছিলেন, তাদের পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। সেই থেকেই এর নাম হয়ে যায় ‘বাচ্চাওয়ালী কামান’।
স্থানীয়রা মনে করেন, এটার জন্য মায়েদের পেটে থাকা অসংখ্য বাচ্চাকে বলি দিতে হয়। তাই এটাকে বলা হয় ‘বাচ্চাওয়ালী কামান’। জনাধন কর্মকারের তৈরি চারটি কামানের মধ্যে একটি এখনও ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংরক্ষিত আছে।
পোস্টটা অসম্ভব রকমের সুন্দর হয়েছে পোস্টাটা পড়ে অনেক ভালো লাগছে। এগিয়ে যান, ধন্যবাদ