ঢাকার লালবাগ কেল্লা ইতিহাসের একটি অনন্য নিদর্শন। প্রাচীন দুর্গ নিয়েই যুগ যুগ ধরে নানা লোককাহিনী, বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত লালবাগ কেল্লা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক দুর্গগুলোর একটি। এটি বাংলাদেশে মুঘল স্থাপত্যকলার অন্যতম বড় এক নিদর্শনও।
নানা রকম রহস্যে ঘেরা এই লালবাগ কেল্লার সব থেকে রহস্যময় স্থান হচ্ছে লালবাগের বন্ধ সুড়ঙ্গ। যা সবার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ নিয়ে বছরের পর নানারকম কল্পকাহিনী শোনা যায়।
সুড়ঙ্গের ইতিহাস
লালবাগ কেল্লার নিচে রয়েছে অসংখ্য সুড়ঙ্গ যা জমিদার আমলে তৈরি করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ আছে যার ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না!
স্থাপত্যবিদদের মতে, এ পথটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে টঙ্গী নদীর সঙ্গে যুক্ত। আবার কেউ মনে করে, এটি একটি জলাধারের মুখ। এর ভেতরে একটি বড় চৌবাচ্চা রয়েছে। মুঘলদের পতনের পর লালবাগ দুর্গ যখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়, তখন ঢাকাবাসীর সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই সুড়ঙ্গ।
সুড়ঙ্গ সম্পর্কে যুক্তিগত মতামত:
যেহেতু সুড়ঙ্গ পথের রহস্য উদঘাটনের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ হয়নি, তাই এটি নিয়ে নানা কল্পকাহিনী চালু আছে। এ কারণেই এ সুড়ঙ্গ পথটি ঢাকার আদি বাসিন্দাদের কাছে এখনো রহস্যময়।
সুড়ঙ্গের রহস্য উদঘাটন
কেল্লার দক্ষিণে আগে বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গের উপস্থিতি থাকলেও মূল সুড়ঙ্গটি লোহার গেট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া আছে। পর্যটকরা বেড়াতে গেলে এই সুড়ঙ্গের গল্প অনেকেই শুনেন। বলা হয়, এখান দিয়ে নাকি সুরঙ্গ পথে দিল্লি পর্যন্ত যাওয়া যেত! কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এটি যুদ্ধকালীন বা বিপদ মুহূর্তে সুবেদারদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাবার পথ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। ভারতের সব দুর্গেই এরকম সুড়ঙ্গের ব্যবহার দেখা যায়।
সাধারণত নদীর ধারের দুর্গের নকশায় সুড়ঙ্গটি তৈরির কৌশল ছিল যেন তাড়াতাড়ি দুর্গ থেকে নৌপথে যাওয়া যায়। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় লালবাগ দুর্গের এই সুড়ঙ্গ বুড়িগঙ্গা ব্যতীত অন্য কোথাও শেষ হবার নয়।
তবে এই রহস্যময় সুড়ঙ্গে কোনো মানুষ প্রবেশ করলে আর ফেরত আসেনা। এর কারণ সুড়ঙ্গের ভেতর এতই অন্ধকার ছিল যে আলোতেও সামনে কিছুই দেখা যায় না।
সুড়ঙ্গ নিয়ে গবেষণা
একদল বিদেশি গবেষক এর রহস্য উদঘাটনের জন্য সুড়ঙ্গের মধ্যে দুটি কুকুর পাঠান। কিন্তু কুকুর দুটি আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে শিকল বেঁধে আবার দুটি কুকুরকে পাঠানো হয়েছিল। তখন শিকল আসলেও কুকুরগুলো ফেরত আসেনি।
অনেকের মতে এর মধ্যে এমন এক প্রকার গ্যাস রয়েছে যার প্রভাবে যে কোনো প্রাণী দেহের হাড়, মাংস গলে যায়। আবার কারো কারো ধারণা এর মধ্যে এমন এক প্রকার শক্তি রয়েছে যার ভেতর প্রবেশ করে কোনো প্রাণীর পক্ষেই আর ফিরে আসা সম্ভব নয়।
লোকমুখে শোনা যায়, এই সুড়ঙ্গ দিয়ে পাশেই বুড়িগঙ্গা নদীতে যাওয়া যেত। সুড়ঙ্গমুখ থেকে বেরিয়েই নৌকায় উঠে যাওয়া যেত জিঞ্জিরা প্রাসাদে। আবার নদীর বাতাস অনুভবের জন্য ওই সময়ের সেনাপতিরা এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করতেন। তবে এসব কথাকে শুধুই কল্পকাহিনী বলে দাবি করেছে লালবাগ কেল্লার কাস্টোডিয়ান কার্যালয়। কারণ এসব কথার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে যুদ্ধের সময় মুঘল সেনারা যখন বুঝতেন তাদের পরাজয় কাছাকাছি, তখন তারা এই সুড়ঙ্গ দিয়ে দুর্গের দেয়াল পেরিয়ে পালিয়ে যেতেন।
Plz subscribe my channel and stay connected with me......