নাফাখুম, আমিয়াখুম, সাতভাইখুম এবং ভেলাখুম ট্যুরের বিস্তারিত রিভিউ

18 23
Avatar for Saroj43
3 years ago

আমরা ছিলাম ৫ জন, ট্যুরের প্লান ছিল ৩ দিন চার রাতের কিন্তু পরবর্তীতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ট্যুরটা ৪ দিন পাঁচ রাতের হয়ে যায়। সে ব্যাপারে পরে বলছি।


গত ১ জানুয়ারী ২০২০  তারিখ রাতে ১১.৩০ টার বাসে টিকিট কাটি তারও এক সপ্তাহ আগে কিন্ত দুঃখের ব্যাপার যাওয়ার এক সপ্তাহ আগেও বান্দরবনের কোনো বাসে কোনো সিট ছিলনা তাই একই ভাড়ায় কক্সবাজারগামী এস.আলম বাসে কেরানিহাটের টিকিট করি। কেরানিহাট বান্দরবন শহর থেকে ২৩ কিমি দূরে চট্রগাম-কক্সবাজার রোডের একটা জায়গা যেখান থেকে বান্দরবান রোডে ঢুকতে হয়।


যাওয়ার দিন বাস ছাড়ে রাত ১.০৫ এ। আমাদের প্লান ছিল সকাল ৭/৭.৩০ টার মধ্যে বান্দরবন পৌঁছায়ে নাস্তা করেই থানচির বাসে উঠবো যেন ওইদিন ১/২ টার আগেই থানচি যেতে পারি কেননা বিকাল ৪ টার পর আর কোনো ট্যুরিস্টকে থানা বা বিজিবি ক্যাম্প থেকে নৌকায় উঠার বা নাফাখুম যাওয়ার আর কোনো পারমিশন দেয়না। কিন্ত কপাল মন্দ থাকলে যা হয় আরকি! কেরানিহাট পৌঁছায় তখন দুপুর ১ টা বাজে। তাড়াতাড়ি বান্দরবন আসার জন্য বাসে না উঠে ৩০০ টাকায় সিএনজি নিয়ে ওই ২৩ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে বান্দরবন পৌঁছায়, তখন দুপুর ২টার কাটা ছুঁই ছুঁই। গাইডের সাথে সর্বক্ষণ মোবাইলে আপডেট জানাচ্ছিলাম।


বান্দরবন থেকে থানচি যাওয়ার সর্বশেষ বাস ছাড়ে বিকাল ৩ টায়। ওই বাসের টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। টানা সাড়ে পাঁচ ঘন্টা বাসে কাটানোর পর রাত নয়টা নাগাদ থানচি পৌঁছাই। বান্দরবন থেকে থানচি এই ৭৯ কিমি এর কথা আপনার সারাজীবন মনে থাকবে, কেনো মনে থাকবে সেটা গেলেই বুঝবেন। যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন শৈল প্রপাত, নীলাচল, চিম্বুক পাহাড়, নীল দিগন্তসহ কয়েকটা ট্যুরিস্ট প্লেস যেগুলো সাধারণত মানুষ একদিনের ট্যুরে ঘুরতে যায়।


আর হ্যা যেহেতু সারাটা দিন বাসে বাসেই কেটে গেলো তাই প্লান অনুযায়ী সব প্লেস বাকি দুই দিনে ঘুরে শেষ করা সম্ভব না তাই বান্দরবন নেমেই আমাদের ঢাকা থেকে করা এ্যাডভান্স শ্যামলীর রিটার্ন টিকিট ৩২০ টাকা এক্সট্রা ফি দিয়ে যাওয়ার ডেট একদিন পিছাই। যাহোক থানচি নেমেই গাইডের সাথে মিট করে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে চলে যায় এবং ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে নিই এবং ওখান থেকেই থানায় জমা দেওয়ার ফর্ম কালেক্ট করি। তারপর গাইড আমাদেরকে নিয়ে যায় থানচি কটেজে এবং ওখানেই রাত কাটাই।


দ্বিতীয় দিনের শুরুতে খুব সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে পাশের এক হোটেলে নাস্তা করে থানায় যায়, সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত করা আমাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি আর রাতে ফিলাপ করা ফর্ম জমা দিই, ওখানে থানা থেকে আমাদের সবার ছবি তুলে রাখে, এটাই নিয়ম। থানা থেকে বের হয়েই সোজা চলে যায় বিজিবি ক্যাম্পে এবং তাদের খাতায় সবাই সাইন করেই নেমে পড়ি নৌকা ঘাটে তখন ৭.৩০ বাজে। আগে থেকে ঠিক করে রাখা নৌকায় উঠামাত্র শুরু হয় আমাদের বহুল আকাঙ্খিত সাঙ্গু নদী ভ্রমণ।💜💜


সাঙ্গু নদীর দুই পাশের ভিউ এর কথা আর কি বলবো, রসগোল্লা খুবই মিষ্টি, খেতে খুবই ভাল এসব বলার চাইতে নিজে একটা খেয়ে দেখলেই তার আসল স্বাদ বোঝা যায়। আড়াই ঘন্টা পর আমরা রেমাক্রি পৌঁছাই। রেমাক্রির পরে হাঁটা ছাড়া আর কোনো ধরনের যোগাযোগের ব্যবস্হা নাই। রেমাক্রি নেমে হালকা চা বিস্কুট খেয়েই আমরা হাঁটা শুরু করি। ২ ঘন্টা হাঁটার পর দেখা মেলে বাংলার নায়াগ্রা খ্যাত ‘নাফাখুম জলপ্রপাতের’। 😍😍


আমাদের গাইড ওখানের পাহাড়ের উপর আদিবাসীদের ছোট্ট একটা বাড়িতে আমাদের দুপুরে খাওয়ার জন্য রান্নার অর্ডার দিয়ে আসে।আমরা ঐ বাড়িতে ব্যাগ রেখে সুবিধামত জামা কাপড় চেন্জ করে নেমে পড়ি নাফাখুমের খুমে। আর টানা ৩০/৪০ মিনিট লাফ ঝাপ আর সাঁতার। তখনকার ফিলিংসটা কেমন ছিল আমি বোঝাতে পারবো না। ✌✌

খুমে গোসল শেষ করে ঐ বাড়িতে এসে কাপড় চেন্জ করে, খাওয়া দাওয়া সেরে, রেস্ট নিয়ে জিন্নাপাড়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করি বিকাল ৪ টা নাগাদ। এইবারের রাস্তাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কখনো বড় ছোট পাথর টপকিয়ে কখনো নদী ক্রস করে কখনো জঙ্গলের মধ্য দিয়ে কখনো বাশেঁর সাকো পার হয়ে হাঁটতে হবে দুই ঘন্টা। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তেই আমরা পৌঁছে যায় জিন্নাপাড়া।


পাহাড়ের উপরে আদিবাসীদের কয়েকটা টং ঘরই হচ্ছে জিন্নাপাড়া। সবাই ত্রিপুরা। তাদের পোশাক, কালচার,ভাষা সবই আপনাকে মুগ্ধ করবে। ট্যুরিস্ট দের সাথে বাংলায় কথা বললেও তাদের নিজস্ব ভাষার ভ ও বুঝবেন না আপনি। রাতে ওখানেই খাওয়া দাওয়া করে, পাহাড়ে কিছু সময় হাটাচলা করে, আড্ডা দিয়ে শুয়ে পড়ি রাত ১০ টায়। কারণ পরের দিনই আমাদের আসল মিশন দেবতা পাহাড় আর আমিয়াখুম


তৃতীয় দিন খুব সকাল সকাল হালকা নাস্তা করেই লোকাল গাইড আর আমাদের মূল গাইডের সাথে আমরা ৪ জন (আমাদের একজন অসুস্থ হয়ে গেছিল তাই ওকে রেখে গেছিলাম) কিছু হালকা শুকনা খাবার,স্যালাইন, গ্লুকোজ আর কিছু কাপড় নিয়ে আর পায়ে নি ক্যাপ আর এ্যাংলেট পড়ে রওনা করি দেবতা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। দুইটা বড় বড় পাহাড় ক্রস করলেই দেখা পাওয়া যায় দেবতা পাহাড়ের। কিন্ত এই দুইটা পাহাড় ক্রস করতেই যে আমাদের কি অবস্থা হয়ে গেছিল বলার মত না। সত্যি বলতে পাহাড় ট্রেকিং করা অনেক কষ্টের আর অনেক স্টামিনা লাগে, অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। লোকাল গাইড কে দিয়ে কিছু ছোট বাঁশ কাটিয়ে নিছিলাম ট্রেকিং এর সুবিধা জন্য। হাতে বাঁশ থাকলে ট্রেকিং এ অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।


প্রায় ঘন্টা এক হাঁটার পরেই পৌঁছে যায় দেবতা পাহাড়ে অর্থাৎ দুইটা পাহাড়ের উপরে বেয়ে বেয়ে দেবতা পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে হয়। এবার দেবতা পাহাড় থেকে নামার পালা যেটায় সব থেকে বেশি ভয় পায় ট্যুরিস্টরা। আর সত্যিই ভয় পাওয়ার মতোই পাহাড়। কখনো ৮০ ডিগ্রী কখনো ৯০ ডিগ্রী আর কখনো ১০০ ডিগ্রী খাঁড়া মাটি আর পাথর মিশ্রিত এই দেবতা পাহাড়। একবার পা পিছলে পড়লেই হাজার ফুট নিচে মানে ফুল ডেড। খুবই সতর্কতার সাথে নামতে হয়, খুব ভাল হয় যদি মুখ নিয়ে নি:শ্বাস না নিয়ে নাক দিয়ে নি:শ্বাস নেয়া যায় আর নামার সময় উপরে বা তলদেশ দেখার চেষ্টা না করাই ভাল।


যাওয়ার আগে শুনছি দেবতা পাহাড় থেকে নামতে দেড় ঘন্টা লাগে, আমাদের ৪০ মিনিট লাগছিল। মূলত কত সময় লাগবে এটা নির্ভর করে যারা নামবে তাদের বয়স, স্টামিনা, জেন্ডার আর সাহসের উপর। পাহাড় থেকে নেমেই দেখা পাওয়া যাবে আমিয়াখুমের পানির প্রবাহ আর শোনা যাবে ঝরণার গর্জন। মাত্র ২ মিনিট হাটলেই সেই বহুল আকাঙ্খিত আমিয়াখুম জলপ্রপাত।👌👌


এটা দেখতে কেমন, পানি কতটুকু, ফিলিংসটা কেমন ছিল এগুলোর ব্যাপারে সবাই রিভিউ দেয় তাই আমি আর এগুলো নিয়ে কিছু বলবো না, যাস্ট গাইডলাইনটা দিবো যেটা ট্যুরে যাওয়ার আগে সব ট্যুরিস্টই জানতে চায় ইভেন আমিও যেটা অনেক খুঁজেছিলাম। 😁

আমিয়াখুম আর সাতভাইখুম পাশাপাশি। সাতভাইখুম বলতে আপনাকে বাঁশের ভেলায় করে দুই পাথরের পাহাড়ের মাঝখানের সরু জলধারায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। যাওয়া আসায় ৫০ মিনিট মত লাগে। মন চাইবে বার বার পানিতে নামতে বাট ভুলেও নামবেনা। ব্যাপক গর্ত। আমরা আগে সাতভাইখুম ঘুরে তারপর আমিয়াখুমে এসে ঝর্ণায় গোসল সহ যা মজা করার করেছি। আমিয়াখুমে আপনি নিজেও ভেলা চালাইতে পারবেন একা একা।


এই দুইটায় প্রায় ৩ ঘন্টা কাটিয়ে অপর দিকে চলে আসি ভেলাখুমে। আমিয়াখুম থেকে হেঁটে ৫ মিনিট। এখানেও আপনাকে বাঁশের ভেলায় উঠতে হবে। তবে সাতভাইখুম আর ভেলাখুমের পার্থক্য হল ভেলাখুমে ভেলায় কিছুদূর যেয়েই আমাদেরকে নেমে পাথরের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে নতুন আর একটা ঝরণায় যেতে হইছিল। আর সেখানেই ন্যাইক্ষারমুখ। সেখানে আবারো গোসল করে ৪৫/৫০ মিনিট মত সেখানে থেকে ভেলায় করে আবারো ফিরে আসি।


এবার দেবতা পাহাড় উঠে আবারো সেই দুইটা পাহাড় থেকে নেমে জিন্নাপাড়ায় যাওয়ার পালা। দেবতা পাহাড় থেকে নামতে ৪০ মিনিট লাগলেও উঠার সময় ৩৭ মিনিটেই উঠে গেছিলাম। মূলত উঠার চাইতে নামাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। হাল্কা নাস্তা করেই দেবতা পাহাড়ে উঠা শুরু করি, বিকাল ৪.৩০ নাগাদ পৌঁছে যায় জিন্নাপাড়ায়। খাবার আগে থেকেই রান্না করা ছিল। খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিয়ে তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে যায়। পরেরদিন নাস্তা না করেই ভোরের আলো ফুটতেই রওনা দিই রেমাক্রির উদ্দেশ্যে। টানা ৪ ঘন্টা হেঁটে সকাল ১০ টায় রেমাক্রি পৌঁছে যায়। পথে অল্প অল্প করে ৪/৫ বার বিশ্রাম নিয়ে নাফাখুম এসে সাথে থাকা শুকনা খাবার দিয়ে নাস্তা করে নিই।


রেমাক্রি আগে থেকেই আমাদের সেই নৌকা রাখা ছিল। নৌকায় উঠে আড়াই ঘন্টায় থানচি চলে আসি। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে বিকাল ৩ টার লাস্ট বাসে বান্দরবন চলে আসি রাত ৭ টায়। তারপর হালকা খাবার খেয়ে শ্যামলী রাত ৯ টার গাড়িতে ব্যাক।


11
$ 0.00
Avatar for Saroj43
3 years ago

Comments

Nice tour. I hope u have enjoy ur tour. Now, stay home stay safe.

$ 0.00
3 years ago

Thanks NNita..... Stay safe 😍

$ 0.00
3 years ago

Beautiful landscapes. Here in Venezuela in the Monagas state there is a very similar place, it is called "Las Puertas de Miraflores"

$ 0.00
3 years ago

Oh wow..... Thanks sharing this..... 😍

$ 0.00
3 years ago

Nice

$ 0.00
3 years ago

Thanks dear

$ 0.00
3 years ago

U have done a great job

$ 0.00
3 years ago

Thanks 😍😍😍

$ 0.00
3 years ago

অনেক সুন্দর জায়গা। ট্যুর এর জন্য এসব জায়গা পচন্দীয়

$ 0.00
3 years ago

Thanks 😍

$ 0.00
3 years ago

Good

$ 0.00
3 years ago

Thanks 😍

$ 0.00
3 years ago

Onk valo golpo likhachan

$ 0.00
3 years ago

Thanks dear

$ 0.00
3 years ago