নিঃশব্দ ভালবাসা' আকাশ কিছুটা মেঘলা হয়ে আছে । পার্কে তাই তেমন কোন মানুষ নেই এখন । নিঃশব্দা পার্কের একটি ব্যাঞ্চে চুপচাপ বসে আছে । কি যেন ভাবছে সে । আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশের ব্যাঞ্চে বসে থাকে দুজন তরুণ তরুণীর দিকে তাকাল সে । হঠাত্ করে কি যেন তার মনে পরে গেল । চোখের কোনে অশ্রুকণা জমতে শুরু করল তার । প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার । কিন্তু বাইরে বলে কাঁদতে পারছে না । অস্তে করে চোখ বন্ধ করলো নিঃশব্দা । একটি অশ্রু কণা এসে তার হাতে পরলো । খুব নিঃশ্ব লাগছে নিজেকে তার । মনে হচ্ছে যেন সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে সে । নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে তার । নিজেকে বার বার ধিক্কার দিচ্ছে সে । তিন বছর আগেও তার সুযোগ ছিল । কিন্তু সে বুঝতে পারে নি । আজ বড় একা সে । চোখ দুটো খুললো নিঃশব্দা । চোখ আবারো ঝাপসা হয়ে আসছে তার । কি ছিল আর সে আজ কি হয়েছে । তিন বছর আগে নিঃশব্দা প্রানবন্তর একটি মেয়ে ছিল । পড়াশুনা আর বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সময় কাটাতো । কিন্তু কি হতে যেন কি হয়ে গেল তার । সব কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে তার জীবনে । এখন আর কিছুই ঠিক নেই । (তিন বছর আগে) 'প্রারম্ভিকা' নিঃশব্দা চুপচাপ অনলাইনে বসে আছে । কেউ নেই । হঠাত্ মনে হল তার কেউ একজন অনলেইনে ঢুকেছে । তাকিয়ে দেখলো জিসাত ঢুকেছে । সাথে সাথে মুখে বিরক্তির ছাপ ভেসে উঠলো তার । জিসাত কয়েক মাস যাবত তার সাখে কেমন যেন ব্যবহার করছে । নিঃশব্দার তা মোটেও ভাললাগে না । নিঃশব্দা বুঝতে পেরেছে যে জিসাত তার প্রেমে পরেছে । কিন্তু নিঃশব্দা এটা মোটেও চায়না । জিসাত আর নিঃশব্দা খুবই ভাল বন্ধু । বন্ধুক্তের মাঝখানে সে এই প্রেম ভালবাসা আনতে চায় না । আর নিঃশব্দা অন্য এক জনকে ভালবাসে । অবশ্য সেই ছেলে নিঃশব্দাকে ভালবাসে কিনা সেটা নিঃশব্দা জানে না । নিঃব্দার কাছে মনে হয় সেই ছেলেটি তাকে হয়তো তাকে ভালবাসে না । নিঃশব্দা জানে ছেলেটি সেটা বুঝে যে নিঃশব্দা তাকে ভালবাসে । কিন্তু কেন যেন ছেলেটি তাকে দুরে সরিয়ে রাখে । আর আরেক জন আছে যে কি না নিঃশব্দার জন্য পাগল হয়ে আছে । এসব ভাবতে ভাবতে নিঃশব্দা খেয়াল করলো জিসাত এতক্ষনে তাকে চ্যাট করার জন্য আমন্ত্রন জানিয়েছে । -কেমন আছিশ ? জিসাত লিখে পাঠালো । নিঃশব্দা তার নিজের চোখ উল্টে লিখলো , ভাল । -কি করছিশ ? কিছুটা বিরক্ত হয়েই নিঃশব্দা তাকে বললো , নাচতেছি । জিসাত হাসতে হাসতে বললো , আর কি করছিশ ? -আর গান গাইছি । -কি গান ? -ঐ যে তপুর নতুন অ্যালবামের গান বের হলো না আনিলা সহ গানটা গেয়ে ছিলো । সেই গানটা । 'এক পায়ে নুপূর আমার অন্য পা খালি' গানটা । একট হেসে জিসাত লিখলো , কিন্তু আমিতো তোর পায়ে জুতা দেখছি । নিঃশব্দা অবাক হয়ে গেল , ও কি করে জানে যে সে পায়ে জুতা পড়ে আছে ! সে জিসাত কে কৌতহলী হয়ে জিজ্ঞাস করেই ফেললো , জিসাত তখন হেসে বললো , তোর প্রো পিক এই দেওয়া আছে । আত তো নিঃশব্দা এতোক্ষন খেয়ালই করে নি । তার প্রো পিক এ একটি মেয়ে বই এর দোকানের সামনে দারিয়ে আছে । আর তার পায়ে এক জোরা কফি রং এর জুতা । নিঃশব্দা মনে মনে নিজেকে কিছুক্ষন বকলো । প্রচন্ড রাগ উঠছে তার । সে কেন এতক্ষন খেয়াল করেনি ! কিছুক্ষন চুপ থেকে নিঃশব্দা লিখলো , ঠিক আছে আমি এখন বিদায় নিচ্ছি । পড়তে বসতে হবে । আর তুইও পড়তে বস । পরে কথা হবে । বাই জিসাতের কোন উত্তরের আশা না করেই অফলাইন হয়ে গেল নিঃশব্দা । জিসাত ড্রইংরুমে তার লেপটপ নিয়ে বসে আছে । তার মনের আকাশে এখন রোদ মেঘ দুটোই আছে । নিঃশব্দার সাথে কথা বললে তার মন এমনিতেই অনেক ভাল হয়ে যায় । কিন্তু আজ সে চেয়েছিলো তার অনুভুতিটা নিঃশব্দার কাছে তুলে ধরতে । কিন্তু কিভাবে শুরু করবে সেটা সে বুঝে উঠতে পারছে না । আর এমনিতেই তারা দুজন খুব ঝগরা করে ।তাদের বন্ধুক্তটাও ঝগড়ার মাধ্যমে হয় । বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যে দিন নিঃশব্দাকে দেখেছিল , জিসাত সে দিনই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল তার । কিন্তু তার পরেও তখন বুঝতে দেয় নি তাকে । আজ যখন তার যাওয়ার সময় হয়েছে তখন বোঝানোর চেষ্টা করেও পারছে না । আর বলতেও পারছে না কোন কিছু তাকে । কি করে বলবে , জিসাত তো শুধু তার সাথে ঝগড়া করে । সব সময় খেপায় নিঃশব্দাকে । নিঃশব্দা খুব মিষ্টি একটা মেয়ে । খুব সুন্দর করে কথা বলে । তার কথার মধ্যে এক ধরনের চঞ্চলতা আছে । আর এই চঞ্চলতাই জিসাতকে নিঃশব্দার কাছে আরো টেনে এনেছে । নিঃশব্দার টানা টানা চোখ যেন তাকে আরো পাগল করে ফেলে । আর দুষ্টমি ভরা কথাতে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে থাকে সে । সব মিলিয়ে জিসাতের চোখে খুব সুন্দর একটা মেয়ে নিঃশব্দা । এতো সুন্দর বলেই জিসাত ভয় পায় , এই মেয়ে যদি অন্য কারো হয়ে যায় । সে যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে ফেলে । এ জন্য সে যত তারাতারি সম্ভব তাকে তার মনের কথাটি জানিয়ে দিতে চায় । আরতো কয়েক মাস । মার্স্টাস করার জন্য আবার বিদেশ চলে যেতে হবে । তখন তো আর সুযোগ পাবে না সে । কিন্তু দুর্ভাগ্য তার , আজও পারলো না সে নিঃশব্দাকে মনের কথা জানাতে । একেক সময একেকটা বাধা আসে । কি করে বলবে সে তার মনের কথা নিঃশব্দাকে ! বুঝতে পারে না সে কিছুতেই । নিজের উপর রাগ উঠে তার । আবার পরক্ষনেই নিঃব্দার কথা মনে করে রাগটা উবে যায় । তবে আর যাই হোক , বলতেই হবে তাকে । জিসাত ভাবে কি করে তার মনের কথা নিঃশব্দাকে বলবে । যত তারাতারি সম্ভব তাকে বলতেই হবে । আরতো কয়েক মাস পরেই সে USA চলে যাবে । জিসাত লেপটপটা বন্ধ করলো । আরমোরা দিয়ে উঠলো সোফা থেকে । ড্রইংরুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে গেল জিসাত । বারান্দার গ্রীল ধরে বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখতে লাগলো । আকাশে কিছু মেঘ জমেছে । মেঘ গুলোর দিকে তাকিয়ে জিসাত যেন তার ছোটবেলার স্মৃতিতে ডুবে গেল । মেঘগুলোতে যেন সে ছোটবেলার সকল স্মৃতি খুজে পাচ্ছে। খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গলো নিঃশব্দার । আজ এতো তারাতারি ঘুম ভাঙ্গাতে লেপটপ নিয়ে বসলো সে । অনলাইন হতে না হতে আবার জিসাতের আক্রমন । হ্যালো , হাই বলার পর জিসাত হঠাত্ নিঃশব্দাকে বললে , - আচ্ছা নিশ্ , তুই আমার সাথে USA যাবি ? নিঃশব্দা অবাক হয়ে বললো , কেন ? আমি তোর সাথে USA যাবো কেন ? - না মানে , আমি যদি তোকে আমার সাথে নিয়ে যাই ! - আশ্চর্য ! আমি তোর সাথে USA কেন যাব ? নিঃশব্দা খুব বিরক্ত হল । জিসাতের মতলব কি ? মনে মনে ভাবল সে । তার পর আবার বললো , আমার বাংলাদেশ ভাললাগে , আমি আমার বাংলাদেশেই থাকব । আর যদি আমার USA তে যেতেই হয় আমি নিজে আসতে পারব । তোর সাথে আমি কেন যাব ? জিসাত অনেক্ষন চুপ করে থেকে শেষের দিকে বললো , আমাকে এখান জরুরি একটা কাজে বাইরে যেতে হবে । তোর সাথে পরে কথা হবে । বাই এই বলে জিসাত অফলাইন হয়ে গেল । নিঃশব্দা কিছুই বুঝতে পারলো না । আর বুঝতেও চায় না সে । কেন বুঝবে সে ? বুঝে লাভ কি ? সে এখন কিছুই বুঝতে চায় না । সব কিছু ভুলে গুণ্ গুণ্ করে গান গাইতে লাগলো নিঃশব্দা - -যদি অজানা মনে খোজ আমায় তাকাবেনা তবু চোখ চলে যায় আমার পানে -- । 'অদ্ভুত মেয়ে তো । এতো ইঙ্গিত দেই তার পরও বোঝে না ।' জিসাত মনে মনে বির বির করছে । তার পর আবার ভাবলো , 'নাহ্ থাক , মেয়েরাতো এমনই । কখনই তারা তাদের মনের কথা মুখ ফুটে বলে না । যা বলার ছেলেদেরই বলতে হয় । কিন্তু কি করা যায় এখন ? কিভাবে বলবো কথাটি যে আমি তোকে ভালবেসে ফেলেছি । নাহ্ , তুই করে বলবো না । তুমি করে বলবো । যাহ্ , সে যদি কিছু মনে করে ! পরে যদি আমার সাথে আর কথাই না বলে !' জিসাত ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাচ্ছিল । এমন সময় জিসাতের মা তার ঘরে ঢুকলো । - কিরে ! কি নিয়ে চিন্তা করছিশ এতো ? এমন করে মাথা চুলকাচ্ছাশ কেন ? - মা , খুব জটিল একটা পরীক্ষা দিতে হবে । কি ভাবে দিব সেটাই চিন্তা করছি । - কি এমন জটিল পরীক্ষা যে আমার সোনামানিক কে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ? কি রকম পরীক্ষা ? - মা , ও তুমি বুঝবে না । অন্য এক বিষয় এর । এটা তোমার বোঝার বিষয় না । - হুম । বড় হয়েছিশতো , এখন আমাকে বলবিই বা কেন । যাই হোক , এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটি পরীক্ষার ফল যেমন ভাল করেছিশ , দোয়া করি এবারেরটাও যেন সেই রকমই ভাল হয় । জিসাত তার মাকে জরিয়ে ধরে বললো , দোয়া কর মা , তোমার ছেলে যেন সকল কিছুতেই জয়ি হয় । - অবশ্যই , মা বাবারা তো সব সময় সন্তানদের জন্যই দেওয়া করে । এর পর জিসাত বলল , ঠিক আছে মা , এখন তুমি যাও । আমি আরেকটু চিন্তা করি পরীক্ষা নিয়ে । - আরে তোকে তো আসল কথাটাই বলে হয় নি । যে কারনে এসেছিলাম । তোর জন্য একটা ভাল পাত্রী দেখেছি ।খুব সুন্দরী মেয়েটি । নম্র , ভদ্র , লেখাপড়ায় ভাল । তোর সাথে ভালই..... মাঝ খান দিয়ে কথা আটকিয়ে জিসাত তার মা কে বললো , মা , তোমাকে না কতবার বলেছি , এখন আমি বিয়ে করব না । আগে পড়ালেখা শেষ করি তার পর নিজের ক্যারিয়ার গঢ়ে তুলি । তার পর দেখা যাবে । - দেখা যাবে মানে ? আমি কি আর তত দিন বাচঁবো ? যদি মরে যাই ! - মা , তুমি মরবে না । তোমার জন্য আমি তখন একটা হুলপরী এনে দেব । - আচ্ছা ঠিক আছে , ঠিক আছে । তাহলে আমি আর এই প্রস্তাবে এগুই না । তুই যা ভাল মনে করিশ তাই হবে । -আচ্ছা ঠিক আছে । এখন আমাকে একটু ভাবতে দাও কিভাবে পরীক্ষাটা দিব । - হেরে , প্রশ্ন কি খুব কঠিন হবে ? পরীক্ষা দেওয়ার পর আমাকে বলিশ । - আচ্ছা ঠিক আছে মা । এখন যাও তো । জিসাতের মা রুম থেকে বের হয়ে গেল । জিসাত আবারও নিঃশব্দার কথা চিন্তা করতে লাগলো । বিকেলের আবহাওয়া আজ খুব সুন্দর
0
2