আর কতক্ষন যে লাগবে মোটিটার আসতে আল্লাহই জানে।
সেই কখন থেকে বলতেছে ৫ মিনিট দাড়া, আজ সিউর ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রাখবে শয়তান ম্যাডামটা।
বজ্জাত মেয়ে একটা কোন অলুক্ষনে সময় যে মেয়েটার সাথে পরিচয় হইল।
- কি রে চিকন আলী ভাল আছস তো ??
- দেখ তো কয়টা বাজে ???
- জানি ২০ মিনিট লেইট হইছে, জানতাম আজ ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে থাকতে হবে আর একা একা দাড়িয়ে থাকলে ওই বদি নামে বজ্জাত ছেলেটা হা কইরা তাকাই থাকে। আর আজে বাজে কথা বলে, তাই তুই থাকলে একটু আড্ডা মারতে পারব।
- তুই তো দেখি বদিরুলের থেকে বজ্জাত।
একটু আগে বের হইতে পারিস না ??
- আর বলিস না ঘুম থেইক্কাই উঠতে পারি না।
জানিস আজ অনুপম মানে ভূতুম আমার সপ্নে আসছিল।
- সারাজীবন সপ্নেই শুধু দেইখা যাবি চল এইবার।
- কি ব্যাপার রে চিকনা মুড বন্ধ কেন ??
- দেখ নিয়াশা মেজাজ খুব খারাপ। রিমুকে দেখলাম একটা ছেলের হাত ধরে রিক্সায় যাচ্ছে।
- হা হা হা তুইও যেমন রিমুও তেমন।
তুই যদি একটা ধইরা আর একটা ধরতে পারিস তাইলে ও কেন পারবে না ??
শোন দোস্ত চিন্তা করিস না, আজকের মধ্যে আরেকটা জুটাই ফেলবি।
- হ্যা রে মোটি দোয়া কর আজকের মধ্যে যেন পাইয়া যাই।
এই নিয়াশ দেখ দেখ মাইয়াটা কত্ত কিউট।
দোস্ত আমি গেলাম, ভাগ্য বুঝি আমার খুলছেরে।
- এ্যাঁ কি বলে ছেলে, এর মধ্যে আবার ??
শয়তান ছেলের জন্য আজ আবার একা একা বাইরে দাড়াইতে হবে।
তোর এই শোধ আমি নিবই।
..
..
ক্লাস শেষে বাসার দিকে যাচ্ছি হঠাৎ দেখি চিকন আলী ওই কিউট মাইয়া মানে আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র মেয়ে টুম্পার হাতে হাত রেখে বটতলা বসে আছে।
এই পোলায় পারেও বটে এর মধ্যে পটিয়ে ফেলছে।
মেয়েরাও আছে চিকন আলী বলতে দেরী করে রাজি হইতে সময় লাগে না।
যেই সব ছেলেদের চেহারা গুলু গুলু হয় তারা হাজারটা প্রেম করে।
আরাফ ঠিক তেমনই, সিনিয়ার আপুদের পর্যন্ত ছাড়ে না।
ছাড়বেই বা কেন ? আন্টিদের উপর ক্রাশ খায় এই বদ পোলায়। তবে ওর আরেকটা গুন আছে খুব ভাল গান গাইতে পারে। কলেজে মোটামুটি নাম ডাক আছে।
কেন যে আমার মত এত সাধারন মেয়ের বন্ধু হইল সেইটা বুঝলাম না।
যেদিন প্রথন কলেজে আসলাম মাথায় একটা গাট্টি মেরে আমার পাশে বসল।
- আরে কি আজব আপনি আমার মাথায় গাট্টি মারলেন কেন ?
- এই তুই আর আমি একই সাথে পড়ি, তাইলে আপনি কইরা কথা বলিস কেন ??
- হুম (ভ্রু কুচকে) কি অসভ্য ছেলে প্রথম কথাই তুই, ভদ্রতার খাতিরেও তো মানুষ আপনি অথবা তুমি বলে।
সেদিন থেকেই এই বদ পোলা আস্তে আস্তে ভাল বন্ধু হয়ে উঠে।
কিভাবে যে এতটা সময় পার হয়ে গেল বুঝতেই পারি নাই।
শুধু বলে অনেক মেয়ের সাথেই চলাফেরা করছি তোর মত বেহায়াপনা মায়াবী মেয়ে একটাও দেখি নাই।
- আমিও তোর মত ইনোসেন্ট মার্কা লুইচ্চা একটাও দেখি নাই। যে কিনা আন্টিদের উপর ক্রাশ খায়।
- ওই নিয়াশ তোর সাথে আমি কি করছি? আন্টিরা যদি কিছু না কয় তোর এত গায়ে লাগে কেন ??
- ওই হারামি আমার নাম নিয়াশা কত্ত কিউট একটা নাম আর তুই কি না...
- এত বড় নাম আমি ডাকতে পারব না।
- শয়তানের হাড্ডি একটা।
এর পর থেকে কখনো ভাল নামে ডাকে নাই।
আমিও ওরে ভাল নামে ডাকি না, আমিও কম নাকি ??
..
..
এই মোটি এই মোটি কানে কম শুনিস নাকি ??
কার কথা ভাবিস ??
(ওর ডাকে ঘোর কাটল)
- কি রে লম্বু ডেটিং শেষ ?
- ধুর আর বলিস না মাইয়া আমারে নিয়া শপিংয়ে যাইতে চায়, তাই ফাক বুইজা দৌড়।
- হি হি হি হি
- দেখ ওই ভাবে হাসিস না কইলজাডা মোচর দিয়া উঠে।
- এ্যাঁ কি বললি ??? ওই কুত্তা তুই আমার লগেও মজা নিতাছস ?? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
- আরে আরে আমি কি পাগল তোর মত মেয়ের লগে মজা নিমু। কলার ছাড় বলছি, এইটা মেয়ে নাকি লেডী কিলার। পাক্কা লাল মরিচ একটা।
- ওই চল ক্ষিধা লাগছে ফুচকা খামু।
- এইরকম মারামারি করলে তো ক্ষিধা লাগবেই।
..
..
মামা দুই প্লেট ফুচকা দেন তো॥ একটাতে বেশি করে খুইদ্দা মরিচ দিবেন।
- দেখ লম্বু মাইর খাওয়ার কাজ করিস না। এই মাইয়ারে ফুচকা খাওয়াইতে পারলেই মাথা ঠান্ডা হয়। খাইতেছি এমন সময় নিশা হাজির।
- এই আরাফ তুমি না বললা ফুচকা ভাল না, এই গুলা খাইলে পেট খারাপ করে আর তুমি খাইতেছ ?? (নিশা)
- আরে বেবী তোমার মত কিউট মেয়ে এগুলা খাইলে পেট খারাপ করবে, আর এই মোটি তো খুইদ্দা মরিচ ওর এতে কিছু হবে না।
- মুখের মধ্যে বাকি একটা ফুচকা দিয়ে, ওর দিকে তাকালাম। (আমি)
- এই নিয়াশ রাগ করিস না মজা করতেছি (আস্তে আস্তে বলল)।
ওর হাত থেকে ফুচকার প্লেট নিয়া টপাটপ খেয়ে ফেললাম।
- এটা কি হল (হা করে তাকিয়ে)
- লাল মরিচ তো তাই বুঝলি, বলেই উঠে দাড়ালাম।
যাচ্ছি গো বেএএবী
*****************
- এই মেয়েটা দিন দিন বেহায়াপনা বেড়ে চলেছে। এই তো সেই দিন রিমুর সাথে বসে ছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে যেন মোটি উদয় হইল, শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে নিয়া আসল রিমুর কাছ থেকে।
শুধু শুধুই কি বলি লাল মরিচ !! ঝাঝটা একটু বেশিই। আমার জীবনটারে তেজপাতা বানাই ফেলছে।
তবে ও অন্যদের থেকে একটু আলাদা, যখন প্রথম কলেজে আসলাম। মেয়েটাকে দেখে মনে করেছিলাম ইনোসেন্ট হবে হয়ত।
ওর পোষাক আসাক ছিল অন্যদের থেকে আলাদা।
কালো বোরকা আর কালো স্কার্প পরা, তাই ভুল ভাবছিলাম।
আমার সব ধারনা পাল্টে দিল যখন ওর সাথে মিশছি।
কিন্তু ওর ভিতর অদ্ভুদ এক শক্তি আছে।
যা অন্য মেয়েদের মধ্যে নাই।
খুব সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারে।
- এই আরাফ কি ভাবছ চল ওইখানে বসি। (নিশা)
- ও বেবী তুমি তো জানো দুই দিন পর কলেজে ফাংশন আছে অনেক কাজ করতে হবে বলেই দৌড়।
এই মেয়ে গুলা অসময় খালি বিরক্ত করে।
এখন যদি মোটি থাকত হাসতে হাসতে গাল দুটো লাল করে ফেলত।
তখন ইচ্ছা করে থাপ্পর দিয়া আরো লাল করে দেই বদ মেয়ে একটা।
****
ভূমিকম্পে আমার আরামের ঘুম হারাম করছে। মেজাজটা চরম মাত্রায় পোছে গেছে। লম্বু আইজকা তোর খবর আছে।
ওই হারামি কল করার আর সময় পাইলি না ???
- কয়টা বাজে দেখছস জলদি কলেজে আয়।
কলেজে আসলাম কিন্তু লম্বুকে কোথাও খুজে পাচ্ছি না।
এই দিকে চাচাত বোন ফোন দিছে, ওর ননদ মানে আখি আপু খুব অসুস্থ বেবীটা নাকি মারা গেছে, এখন নাকি তার রক্ত লাগবে।
আরাফকে কত করে কল করতেছি, কিন্তু কাইটা দিতাছে। হবে হয়ত কোন মেয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। খুব রাগ লাগতেছে।
উপায় না দেখে মিল্টনকে বলছি।
ও নাকি ম্যানেজ করতেছে, হসপিটালে যেতে হবে।
বট তলায় আইসা দেখি টুম্পার সাথে বইসা রইছে।
- দোস্ত একটু অপেক্ষা কর আসতাছি। (আরাফ)
- বান্দর ছেলে তুই জীবনে আমার সাথে কথা বলবি না।
লুইচ্চামির একটা সীমা থাকে, কখনও ফোন দিবি না তুই আমারে।
কত বার ফোন দিছি তোরে, একবারো বুঝলি না। ভাল থাক তুই এই সব মেয়েদের নিয়া।
- এই নিয়াশ কি হইছে বল, ফোন আমার কাছে ছিল না।
টুম্পার কাছে ছিল, কান্না করিস না প্লিজ।
- কই যাচ্ছিস এই বৃষ্টির মধ্যে ?
- খবরদার সাথে আসবি না।
বলেই চলে আসলাম
..
..
ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে, মোটি ফোন ধরছে না। তিন দিন থেকে কলেজে আসে না। ওরে ছাড়া যে কলেজটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে সেইটা বুঝতে পারছি ও না থাকায়। ফাজিল মেয়েটা এখনও ফোন ধরে না। আসছি দাড়া তোর খবর আছে।
এত রাগ কিসের ??
আমি মিল্টন, দিপু, আর নাফিসা চলে গেলাম মোটির খোজ নিতে।
কলিং বেল চাপতেই আন্টি দরজা খুলে দিল।
- আরে নাফিসা তোমরা? আসো ভিতরে আসো।
- না মানে আন্টি নিয়াশা কলেজে যাচ্ছে না তাই দেখতে চলে আসলাম। (নাফিসা)
- আর বইল না জ্বর বাধাই বসে আছে, যাও গিয়া দেখ।
..
..
বাহ ঘরটা তো বেশ পরিপাটি, ওর পড়ার টেবিলের উপরে দেয়ালে আমার আর নিয়াশে ছবিটা সুন্দর করে বাধান।
আর কাগজের প্রজাপতি দিয়ে দেয়ালটা সুন্দর করে সাজান।
নাফিসা গিয়ে ডাকতেই ঘুম ঘুম চোখে অবাক হয়ে বলল তোরা কখন আসলি। ভাবতেই পারে নাই আমরা আসব।
এই প্রথম নিয়াশকে বোরকা ছাড়া দেখলাম।
মোটি আমারে বলে চিকন আলী আয়নায় নিজেকে দেখছে কখনও ?
কালো একটা থ্রি পিছ পরা, চুল গুলো খোলা, ঘুম জড়ানো চোখ, অবাক করা দৃষ্টি, আর ঠোটের পাশে কাল তিল টা ওর রুপের উজ্জলতা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে অন্য রকম মায়া কাজ করছে।
- এই তুই আসছস কেন ?? (নিয়াশা)
- তুই ফোন ধরস না কেন ?? তাইতো ছুটে আসতে হলো রে পাগলী।
- কেন এখন আর টুম্পা, নিশা, রিমুর সাথে কথা হয় না ? আর তোর সেই আন্টি গুলা কই ?? যাদের দেখলে তোর মাথা ঠিক থাকে না!!
- ধুর মোটি ওদের সাথে তো ফাইজলামি করি। তুই তো সব জানস। তারপরও এমন করিস কেন ?? এই দেখ কান ধরে আছি কিন্তু তুই মুখ ফিরিয়ে থাকিস না। জানিস কত কষ্ট হইছে, এই তিন দিনে।
- এই চুপ থাক শয়তান ছেলে।
- এই নিয়াশ জানিস আমার মনে হয় আমি সত্যি সত্যি প্রেমে পরছি।
- আবার ??
তুই জীবনেও শুধরাবি না যা এইখান থেকে।
- হ্যা দোস্ত সত্যি তোকে ছাড়া এক মূহুর্তও থাকা যায় না।
- তোর সাহায্য লাগবে রে নিয়াশ।
- ঠিক আছে।
- কাল কিন্তু আসতেই হবে, বোরকা ছাড়া আসবি, বলে উঠল নাফিসা।
- আচ্ছা
ওরা চলে গেছে কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।
আরাফের কথা শুনে মনে হল সত্যি প্রেমে পরছে।
আরে চিকন আলী কলিং ?
মাত্রই গেল আবার ফোন !!
- হুম বল
- কিরে মন খারাপরে চিকনী ??
- নাহ
- তোকে কিন্তু আজ সেই লাগছেরে।
- আমারে কি টুম্পা মনে হইতেছেরে হারামি ??
- রাগ করিস কেন দোস্ত ??
- আচ্ছ পরে কথা বলব।
আজ আমার এমন লাগছে কেন, যাক গে ও ওর মত থাক।
..
..
কি ব্যাপার কলেজের সবাই কই ?? কোথাও খুজে পাচ্ছি না কাউকে, অডিটরিয়ামে ঢুকতেই সবাই এক সাথে বলে উঠল "শুভ জন্মদিন নিয়াশা"। খুশিতে লোনা পানি টুকু আটকে রাখতে পারলাম না। হঠাৎ কাধে শীতল ছোয়ায় ঘুরে তাকালাম। একি আরাফ হাটু গেরে বসে আছে।
কি হচ্ছে এসব!!
- এই নিয়াশা তোর ভূতুম হইতে চাই দিবি তো সেই সুযোগ ?? সুযোগ দিবি, তোর পুচকুর বাবা হতে ?? তোর চলার পথের সঙ্গী হতে পারি ? আমি আমার লাল মরিচের বর হইতে চাই দিবি তো বল ?? তোর ওই হাতটা শক্ত করে ধরতে দিবি ?? সবাই এক সাথে বলে উঠল হ্যা হ্যা রাজি হয়ে যা নিয়াশা।
- চুপ করে থাকিস না নিয়াশ তোর জন্য আমি সব ছাড়তে পারব।
- শয়তান ছেলে আর যদি লুচু গিরি করতে দেখছি। তাইলে তোর একদিন কি আমার একদিন বলেই হাতটা শক্ত করে ধরলাম।
হয়ত টুম্পা রিমু নিশা আরো অনেকে হিংসায় জ্বলছে। জ্বলছে জলুক তবে ভূতুম তোরে এইবার আমি জ্বালামু। তখন বুঝবি লাল মরিচের কত ঝাঁঝ॥