পর্ব:২
ময়লা জামা পরে যাচ্ছে না আজ।সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হবে যে। ------------------------------------------------------ সাদিয়া কখন থেকে অপেক্ষা করছে। অনিক মোবাইল এ কল করছে না। মেসেজও না। ফেসবুকেও নেই। আজ দেখা হচ্ছে দুজনের প্রথম বারের মতন। একটু সাজগোজ করে এসেছে আজ সাদিয়া। কখনও সাজে না। কিন্তু অনিক এর সাথে দেখা করতে আসছে না সাজলেই নয়। আসার আগে সাদিয়ার ছোট বোনটা ওকে দেখে হা করে তাকিয়ে ছিল। - আপু তোকে না পরীর মত লাগছে। শুনে একটু লজ্জাই পেয়েছিল সাদিয়া। কেউ এভাবে সুন্দর বললে খুব লজ্জা লাগে। শাড়ি পড়েছে একটা নীল রঙের। নাকে ছোট্ট পাথর বসানো একটা নাক ফুল। কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সত্যি নিজেকে অনেক সুন্দর লাগছিল। ধ্যাৎ কি একটা ছবি দেখাল অনিককে। আজকে একটা ছবি তুলে ওকে দেখালে কত ভাল হত। এভাবে কখনও সাজেনি সাদিয়া। সাজগোজ করা একদম পছন্দ না সাদিয়ার। শুধু অনিকের জন্যই করা। ভালবাসার মানুষের জন্য মাঝে মাঝে কিছু কিছু করতে হয়। হ্যাঁ, ভালবাসার মানুষ। একটু লাজুক প্রকৃতির মেয়ে সাদিয়া। ফেসবুকে পরিচয় অনিকের সাথে। হুটহাট করে যে কারও রিকুয়েস্ট এসেপ্ট করত না সাদিয়া। পরিচিত ছাড়া অন্য কেউ ফ্রেন্ডলিস্ট এ ছিল না। অনিক রিকুয়েস্ট পাঠানোর পর থেকেই মেসেজ করতে থাকে সাদিয়াকে এসেপ্ট করার জন্য। আকুতি মিনতি কিংবা কাকুতি শুনে মন কিছুটা নরম হওয়াতে , অপরিচিত অনিককে ফ্রেন্ড লিস্টে জায়গা দেয় সাদিয়া। অপরিচিত কারও সাথে বড্ড বেশিই কথা বলা হত। দিন রাত সারাক্ষণ ২ জনের চ্যাট হত। ভাললাগা মন্দলাগা বিনিময় করতে করতে কখন যেন আবেগ অনুভূতিগুলোও বিনিময় হয়ে গেল। বোঝার সাধ্য দুজনের কারই ছিল না। ঘুম থেকে উঠার আগে মেসেজ চেক,রাতে ঘুমে টলে টলে ভুল ভাল বানানে মেসেজ দেওয়া। কখনও সারারাত জাগা। একদিন অনিক বলল, তোমাকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। - হুম কর। - যদি সারাজীবন করতে চাই? - হ্যাঁ, করবে। - পাশে থাকবে? - থাকব। এমন অনেক কথাই হয়। সাদিয়ারও মনে হল অনেক দিনের পর অনেক বেশি বিশ্বাস করার মত কাউকে পেয়েছে। যার জন্য আবেগ কাজ করে। কখনও দেরি হলে মেসেজ দিতে কষ্ট কাজ করে। সাদিয়াকে একদিন অনিক বলল- তোমার কথা শুনতে বড্ড বেশি ইচ্ছা করে। কথা বলবে আমার সাথে? তারপর অনিক নিজের নাম্বারটা দিয়ে বলে, জোর করব না।যদি কখনও ইচ্ছা করে। বিশ্বাস করতে পার। মনে হয় আমার সাথে কথা বললে বিরক্ত লাগবে না। তাহলে ফোন দিও। এতদিন ধরে তোমার সাথে ফেসবুকে চ্যাট করি । খুব শুনতে করে তোমার কথা। তাই বললাম। আমাকে খারাপ ভেবো না আবার।আমি সব মেয়ের নাম্বার চেয়ে বেরাই না। আমি এটা নিয়ে আর কিছু বলব না। যদি ইচ্ছা করে তো কথা হল। না ইচ্ছা করলে এই জিনিস নিয়ে আর কখনও কথাও বলব না। এই মেসেজটা দেখার পর সাদিয়ার ভিতরে কেমন যেন করে উঠেছিল। খুব বেশি দোটানায় পরে গিয়েছিল কল করবে কি করবে না। ২ দিন খুব অস্বস্তিতে থাকার পর সাদিয়ার মনে হল , না ছেলেটা তো খারাপ না। কথা বলা যায়। আর বিশ্বাস তো অবশ্যই করে ওকে। কয়েকবার নাম্বারটা ডায়েল করেও কেটে দিল সাদিয়া। কেমন যেন লজ্জা লাগছিল কথা বলতে। কারও সাথে যে কথা বলে না তা না। কিন্তু অনিকের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগছে কেন বুঝল না। অবশেষে কল করল। অনিক ধরেই বলল, কে সাদিয়া? একটু অবাক হল সাদিয়া। কোন কথা বলার আগেই বুঝল কি করে সাদিয়া ফোন দিয়েছে। কারণটা এখনও জানে না সাদিয়া। তবে অনিক বলে, ভালবাসার মানুষের নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনলেই বুঝা যায়। যদিও তখন ভালবাসার সম্পর্ক ছিল না দুজনের। কথা হত মোবাইল এ। অনেক বেশিই। ফেসবুকের চেয়ে এখন মোবাইল এ কথা বলাটাই বেশি গুরুত্ব পেত। সারাদিন মোবাইল এ কথা বলত। কি বলত না বলত। এত কি বলত? সময় এত তারাতারি কি করে যেত বোঝা খুব কঠিন ছিল। কথা বলতে বলতে দুজন খুব বেশি দুর্বল হয়ে পরল দুজনের প্রতি। সব বাদ দিয়ে দুজনের মনে সারাক্ষণই দুজনের ভাবনা। অনিক এর মাঝে কয়েকবার বলল, তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে। - আমি সুন্দর না। দেখে কি করবে? - যে এত সুন্দর করে যে কথা বলে ,সে সুন্দর না হয়ে পারে নাকি? - আমি আসলেই সুন্দর না। দেখ না ফেসবুকে কোন পিকচার দেই না। - আচ্ছা তুমি সুন্দর না হও। আমি তোমাকে দেখব। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে। প্লিজ আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করবে না? এমন করে অনেক দিন আবদার করেছে। সাদিয়া কখনই নিজের ছবি দেখায় নি। মুখে না বলুক। দুজনই বুঝতে পারত দুজন দুজনকে ভালবাসে। সারাদিন সময় দিচ্ছে। ভালবাসা না থাকার কথাই না। অনিক মাঝে মাঝে বড্ড বেশি বাচ্চা ছেলের মত করত, মোবাইল করেই কান্নাকাটি করত। আর বলত, আমাকে ভুলে যাবে না কিন্তু কখনও। আরে পাগল সাদিয়াও তো পারবে না ভুলে থাকতে। কান্নাকাটির কি আছে? ভালবাসার কথা যেদিন অনিক বলল, সেদিন সাদিয়া একদমই চুপ হয়ে গিয়েছিল। গম্ভির হয়ে বলেছিল, আমাকে ভালবাসার কিছু নেই। - না থাকুক। আমি ভালবাসি। কেন বাসি ওটা আমার ব্যাপার। আমাকে বাসা না বাসা তোমার ব্যাপার। না বাসলে কষ্ট পাব, বাসলে আমি আরও ভালবাসব। সোজা সাপটা কথা অনিকের। না করতে পারেনি সেদিন সাদিয়া। কতক্ষণ পর কান্নাকাটি শুরু করে দেয় অনিক। কেন বাসবে না ভাল। ও কি এতই খারাপ। তাই হ্যাঁ বলেই দিল সাদিয়া। আর সাদিয়া যে বাসে না তা তো না। সাদিয়াও ভালবাসে। হৃদয়ের এক কোণে লুকিয়ে রাখা ভালবাসা অনিক এর জন্যই শুধু সায় দিয়েছিল। জীবনে সব কিছু, দুঃখ , সুখ ,আনন্দ, যার সাথে ভাগ করে নিয়েছে তাকে ভাল না বাসার কিছু নেই। অনিক যদি সাদিয়াকে না দেখে অন্ধের মত ভালবাসতে পারে। সাদিয়া কেন পারবে না এই ছেলেটার পবিত্র ভালবাসা টাকে সায় দিতে। সেদিন রাতে সাদিয়া ফোন দিয়ে বলল অনিককে। - অনিক, আজ আমরা সারারাত কথা বলি? - হ্যাঁ, কেন বলব না। তোমার কথা আমার শুনতে অনেক ভাল লাগে। - আজ আমি সারারাত কাঁদবো। তুমি শুনবে। - এই কাঁদবে কেন? কি হইছে? - কিছু হয় নি। শুনবে না কান্না আমার? অনিক শুনবে তুমি বল? বলেই নীরবে কাঁদতে লাগল সাদিয়া।অনিক কয়েকবার জিজ্ঞাসা করল কেন কাঁদছে। কোন উত্তর দিল না। অনিক চুপচাপ কান্নার শব্দ শুনে গেল। কান্না শেষে সাদিয়া অনিককে বলল- অনিক, আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমার জীবনটা শুধু কষ্টেই কেটেছে সবসময়। আমি তোমার মত এত কাছে কখনও কাউকে পাই নি। এত ভালবাসাও না। আমার পাশে থাকবে না তুমি সবসময়? - থাকব। কেদনা তো আর। পাগলি, কাঁদো কেন? তুমি আমাকে ছেড়ে না গেলে আমিও কখনও যাব না। - promise কর। - আমাকে তুমি বিশ্বাস কর না? promise কেন করতে হবে? - করি তো। - তাহলে? আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সাদিয়া একটা কথা বলব? - বল। - রাখবে কিন্তু? না করতে পারবে না। - আচ্ছা। - আমি তোমাকে দেখতে চাই।কতদিন তোমার ছবি দেখতে চাইলাম দিলে না। চল না আমরা কাল দেখা করি। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল সাদিয়া। আচ্ছা কাল বিকেলে আমরা দেখা করব। - সত্যি তো? - হ্যাঁ। রাতেই একটা ছবি মেসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছিল সাদিয়া।আর এখন অপেক্ষা করছে অনিকের জন্য দাঁড়িয়ে। সত্যি সুন্দর লাগছে তো দেখতে? নাকি ছোট বোনটা মিথ্যা বলল। মোবাইল টা বের করে তার স্ক্রিনে নিজের চেহারাটা আর একবার দেখল সাদিয়া। আজ চোখে কাজলও দিয়েছে। সত্যি সুন্দর লাগছে তো। নিজেকে এত সুন্দর লাগে নি কখনও। শুধু গায়ের রঙটা একটু কালো। মোবাইল স্ক্রিনে চেহারা দেখতে দেখতেই হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল। অনিক মেসেজ করেছে। খুব স্বস্তি লাগছে। নিশ্চয় লিখে পাঠিয়েছে ওর আসতে আর বেশি সময় লাগবে না। মেসেজটা ওপেন করল সাদিয়া। মেসেজ এ লেখা- আমি জানি আমার কাজটা করা ঠিক হচ্ছে না। তবুও কঠিন হলেও সত্য যে আমি আমার জীবনে সবসময় একটা পরীকে চেয়েছি ভালবাসার মানুষ হিসেবে। আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম ঠিক আছে। তোমার কথা শুনে, একটানা কথা বলতে বলতে আমি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কল্পনাতে আমি তোমার একটা ছবি একেছিলাম। সেই তোমাকে আমি ভালবেসেছিলাম। কাল তোমার ছবি দেখার পর আমার ভাবনা সব বদলে গেছে। নিজের সাথে অনেক বেশি যুদ্ধ করেছি। বুঝানর চেষ্টা করেছি, তুমি অনেক ভাল মেয়ে , তোমাকে ভালবাসি আমি। কিন্তু আমি পারিনি। আমি আজ হয়ত তোমাকে মেনে নিলাম, কিন্তু ২ দিন পরই আবার তোমাকে আমার অসহ্য লাগবে। তোমার ছবি দেখে তোমাকে আমার পছন্দ হয় নি। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। এতদিন তোমার সাথে ভালবাসার কথা বলার জন্য আমি সরি। তুমি চাইলে আমরা ভাল বন্ধু হয়ে থাকতে পারি। মাফ করে দিও আমাকে। আমার কাছে আমার ভালবাসার মানুষকে দেখতে সুন্দর হতে হবে। আর তুমি যদি কষ্ট পেয়ে থাকো তার জন্য তুমিই দায়ি। তুমি আমাকে আগেই ছবি দেখালে তোমার আমাদের সম্পর্কটা এত দূর আসত না। হাতটা কাপছে সাদিয়ার মেসেজটা পড়ার পর। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। কালো পানি। চোখের কাজলের সাথে মিশে কালো পানি পরছে। হয়ত কাঁদছে কেউ বুঝতে পারবে না। সাদিয়া নিজেই তো কালো। কালো মানুষের কালো চোখের পানি কে দেখতে যাবে? কাজল লেপটে চোখ ভরে যাচ্ছে। এতদিন কিসের পিছনে ঘুরেছে সাদিয়া এখন ভেবে পাচ্ছে না। বৃষ্টি শুরু হয়েছে । তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির ভিতর কাঁদছে সাদিয়া। কেউ দেখতে পাচ্ছে না সাদিয়া কাঁদছে। যেই কান্না কেউ বুঝে না সেই কান্না কারও দেখে লাভ নেই।