ভীষণ কিউট দেখতে মেয়েটি। ফেসবুক একাউন্ট খুলতে খুলতে সে অনেক দেরি করে ফেলেছে। কিন্তু তাতে কি! খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সে পেয়ে গেছে প্রায় সাতশ’র মতো বন্ধুতার আহবান। তার ইনবক্স ভর্ত্তি এত্ত এত্ত ক্ষুদেবার্তায়। অপরিচিত কারও বন্ধুতার আহবানে মেয়েটি সাড়া দেয় না। উত্তর দেয়না অপরিচিত কারও কাছ থেকে আসা ক্ষুদেবার্তারও। পাছে খাল কেটে কুমির আনা হয়ে যায়- এই ভয়ে। একদিন হলো কি, মোটা কাচের চশমা পরা একটা ছেলের কাছ থেকে একটা বন্ধুতার আহবান এলো। একদম অচেনা ছেলেটি। তবুও কেন কে জানে মেয়েটি গ্রহণ করে ফেলল তার বন্ধুতার আহবান! তারা বন্ধু হলো। তাদের মধ্যে প্রায়ই ফেসবুক-মেসেঞ্জারে কথোপকথন হয়। কিন্তু একটাই সমস্যা। দু’জনের কথোপকথনের মাঝখানে ছেলেটি প্রায়ই ভুলভাল ইমো ব্যবহার করে বসে। যেমন, যখন মেয়েটি লেখে খুব সুন্দর একটা ড্রেস কিনেছি আজ, তখন উত্তরে ছেলেটি পাঠিয়ে দেয় মুখ বেজার করা একটা ইমো। তারপর এই ধরুন, অন্য আর একদিন মেয়েটি যখন লিখেছে জানো আমার খুব মন খারাপ, তখন ছেলেটি ছেড়ে দেয় একটা হাসির ইমো। মেয়েটি রেগে গিয়ে বলে, ‘এই ছেলে, তুমি উল্টাপাল্টা ইমো দাও কেন?’ ‘কি করব বলো? আমি তো ঠিক মতো দেখতে পাই না চোখে। একটা বাটন চাপতে গিয়ে আর একটা চেপে ফেলি।’ বলে ছেলেটি। মেয়েটিও যেন কেমন! ছেলেটি চোখে ঠিকমতো দেখতে পায়না শুনে কোথায় মন খারাপ করবে তা না, পাঠিয়ে দেয় একটা হাসির ইমো। এভাবেই চলে গেল যায় বছরখানেক। মেয়েটি একদিন ছেলেটিকে বলে, ‘তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ ছেলেটি বলে, ‘অসম্ভব। আমি তোমার সামনে যাব না। মরে গেলেও না।’ সত্যি বলতে কি, ছেলেটির ভয় ছিল সামনাসামনি মেয়েটা তাকে দেখলে হয়তো মেয়েটি তাকে অপছন্দ করে দূরে সরে যাবে, আগের মতো আর কথোপাকথন হবে না, তাদের এই অম্লমধুর সম্পর্কটারও ইতি ঘটবে। তাই যেতে রাজি হয় না প্রথমটাতে। কিন্তু মেয়েটাও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। ছেলেটিকে রাজি করিয়ে ফেলে, যেভাবেই হোক। অবশেষে একদিন এলো সেই বিশেষ দিনটি। রমনা পার্কের বেঞ্চে মেয়েটি বসে আছে। ছেলেটিরও এখানে আসার কথা রয়েছে। আজই প্রথম তারা একজন আর একজনকে দেখবে। সামনাসামনি। এক সময় মেয়েটা দেখতে পেল, চোখে মোটা আর ঘোলা কাচের চশমা পরা ছেলেটা আসছে, তার চোখ মাটির দিকে। যেন হারিয়ে ফেলা কোন কিছু খুঁজে ফিরছে! মেয়েটি তাকে দেখেই চিনতে পারল। কিন্তু একি! ছেলেটি চলে যাচ্ছে তাকে পাশ কাটিয়ে, তাকে পিছনে ফেলে। লজ্জার মাথা খেয়ে মেয়েটি জোরে বলে উঠল, ‘এই ছেলে, কোথায় যাচ্ছ? আমি এখানে।’ ছেলেটি খুব লজ্জা পেয়ে বললো, ‘তুমি তো জানোই, আমি চোখে দেখি না ঠিকমতো।’ তারপর অনেকটা সময় কাটল পার্কের বেঞ্চিতে বসে। দু’জনে অনেক কথা হলো। তার অধিকাংশই এলোমেলো, ভীষণ রকমের অদরকারী। ঘড়ির কাঁটাগুলোও যেন বদ্ধ উন্মাদ, ত্রিশ সেকেণ্ডেই বানাতে লাগল এক একটা মিনিট। সন্ধ্যা ঘনানোর আগে মেয়েটি উঠে দাঁড়াল চলে যাবে বলে। হাঁটা শুরু করার আগে বললো ছেলেটিকে, ‘তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তোমার হাত দু’টো একটু ধরতে দেবে?’ ছেলেটি চশমা খুলে চোখ মুছল। ‘এ কি, কাঁদছ কেন! তোমার তো খুশি হওয়ার কথা।’ বিস্মিত মেয়েটা জিজ্ঞেস করল। ‘সব সময় তো আমি ভুল ইমো’ই দিই। আজও না হয় তা’ই দিলাম।’ বললো ছেলেটি। তারপর হেসে উঠল। বলতে ভুলে গেছি। রমনা পার্কে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল ঠিক এক বছর আগের আজকের এই দিনটাতে। দিনটা ছিল ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১৩। বৃহষ্পতিবার।
1
8
দু’জনের কথোপকথনের মাঝখানে ছেলেটি প্রায়ই ভুলভাল ইমো ব্যবহার করে বসে। যেমন, যখন মেয়েটি লেখে খুব সুন্দর একটা ড্রেস কিনেছি আজ, তখন উত্তরে ছেলেটি পাঠিয়ে দেয় মুখ বেজার করা একটা ইমো। তারপর এই ধরুন, অন্য আর একদিন মেয়েটি যখন লিখেছে জানো আমার খুব মন খারাপ, তখন ছেলেটি ছেড়ে দেয় একটা হাসির ইমো। মেয়েটি রেগে গিয়ে বলে, ‘এই ছেলে, তুমি উল্টাপাল্টা ইমো দাও কেন?’ ‘কি করব বলো? আমি তো ঠিক মতো দেখতে পাই না চোখে। একটা বাটন চাপতে গিয়ে আর একটা চেপে ফেলি।’ বলে ছেলেটি। মেয়েটিও যেন কেমন!