পর্ব:৩ (শেষ)
যেই কান্না কেউ বুঝে না সেই কান্না কারও দেখে লাভ নেই। ----------------------------------------- কাদায় কেডস জুতা জোড়া একেবারে শেষ। বৃষ্টির দিন । একটা স্যান্ডেল পরে চলে আসবে। না, কি সব কেডস পরে আসতে হবে স্মার্ট হবার জন্য। জিন্স এর প্যান্টটা পায়ের কাছ দিয়ে ভিজে গেছে অনেক খানি। পিছন দিক দিয়ে কাদার ছিটেও আছে। জিন্স ফোল্ড করা যাবে না। প্রিয়তির মানা আছে। জিন্স ফোল্ড করলে নাকি কামলা কামলা লাগে। আরে কামলা কি জিন্স পরে কাজ করে? ওরা তো লুঙ্গি পরে। কে বুঝাবে কাকে। শরীরে কড়া বডি স্প্রে দিয়ে এসেছে আজ গালিব। কেমন বমি আসছে গন্ধে নিজেরই। আজ নিশ্চয় প্রিয়তি কোন ভুল ধরতে পারবে না। আনস্মার্ট বলতে পারবে না। এই বৃষ্টির মধ্যেও প্রিয়তি এসে দাঁড়িয়ে আসে। মাথায় ছাতা। একটা ড্রেস পরা। হালকা গোলাপি কালারের। সালওয়ার কামিজ না তাই নাম জানেনা ড্রেসটার গালিব। সামনে এসে ছাতা মাথায় দাঁড়াল গালিব। আজ স্মার্ট হয়ে এসেছে তাই মনটা অনেক খুশি গালিবের। যতগুলো সম্ভব দাঁত বের করে হাসি দিল গালিব। প্রিয়তি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গালিবের দিকে। মনে মনে খুব খুশি গালিব। একটু একটু লজ্জাও করছে। কিভাবে দেখছে মেয়েটা। - এসবের মানে কি? তুমি এমন সং সেজে আসছ কেন? - কেন কি হইছে? - এই বৃষ্টির মধ্যে চোখে ঐটা কি লাগিয়ে রাখছ। খোল ঐটা। গালিব rain glass বা sun glass টা খুলে হাতে নিল। - জুতার কি অবস্থা কাদা দিয়ে। প্যান্টে কাদা। চুল বানিয়ে আসছ সজারুর মতন। you are just looking like a joker. গালিবের হাসি মাখা মুখটা মলিন হয়ে গেল। ও বলল- তুমিই না বলছ স্মার্ট হতে। আমি কি করব? আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি যেভাবে বলছ আমি তো সেভাবেই চলছি। - এই তোমার স্মার্টনেস? - হ্যাঁ, আর কিভাবে হব? - ও unbearable. তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। একটা মানুষ এত বিরক্তিকর হয় কি করে। যাও আমার সামনে থেকে তুমি যাও। যেদিন স্মার্ট হতে পারবা সেদিন আমার সামনে আসবা। - আমি এখন তাহলে স্মার্ট না? - আমার মাথা। এমন একটা সং এর সাথে আমি ঘুরতে পারব না।থাকতে পারব না। আমি তোমাকে সময় দিচ্ছি, তুমি স্মার্ট হবা তারপর আমার সাথে দেখা করবা। আমার সামনে থেকে যাও তো তুমি। - এমন করছ কেন তুমি? - ওকে। তুমি যাবা না? আমিই যাচ্ছি। যদি পার নিজেকে পরিবর্তন কইর। এমন থাকলে কোন মেয়েই জুটবে না কপালে। প্রিয়তি চলে যাচ্ছে ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টি ভেঙ্গে। গালিব তাকিয়ে দেখছে। ফিরিয়ে আনার সাধ্য নেই ওর। কষ্ট হচ্ছে হয়ত। বুঝতে পারছে না। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। এত কিছু করল তাও মনের মত হতে পারল না গালিব। কষ্ট ভুলে থাকার জন্য কিছু করতে হবে। কিছুই মাথায় আসছে না। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে গালিব। ছাতাটা ফেলে দিয়েছে। ঐ ছোট্ট ছাতার কোন দরকার নেই। এর চেয়ে বাবার ছাতা অনেক ভাল। চুল গুলো এলোমেলো করে ফেলল। জুতা খুলে হাতে নিয়ে জিন্সটা ফোল্ড করল। ভাল লাগছে এখন হাঁটতে। হঠাৎ মাথায় আসল আচ্ছা এখন এই পার্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করলে কেমন হয়? বৃষ্টির মধ্যে কেউ খেয়াল করবে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গালিব। প্রিয়তি হারানোর কষ্ট খুব সহজেই চলে যাচ্ছে যতই আনস্মার্ট নোংরা করছে। তার জন্য কষ্ট পাওয়া যায় যে কষ্ট বুঝে। সাদিয়া এতক্ষণ শুধু শুধু কাঁদল। অনিক কখনও ভালবাসেনি সাদিয়াকে। পুরটাই মোহ ছিল। পার্কে কিছু বাচ্চা ছেলে কাদা নিয়ে ছোরাছোরি করছে। সাদিয়া ওদের সাথে গিয়ে যোগ দিল। কাদা ছোরাছোরি করছে ওদের সাথে। ওদের খেলা এক ছেলে জুতা হাতে নিয়ে দেখছে। সাদিয়া তার কাছে গিয়ে ওর জুতা জোড়া দিয়ে বলল- আপনি কি আমার জুতা জোড়া একটু ধরবেন? আপনার হাতে তো জুতাই আছে। আমি ওদের সাথে একটু খেলি। গালিব প্রিয়তির হাত থেকে জুতা জোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। খেলা দেখছে। কাদা দিয়ে। কিছু বাচ্চা ছেলে আর এক মেয়ের। মেয়েটার চোখের কাজল লেপটে আছে। ঠোঁটে হাসি। গালিবও দাঁড়িয়ে হাসছে। কি পাগল মেয়েটা। আর সাদিয়া গালিবকে দেখে হাসছে, জুতা জোড়া নিয়ে কেমন মদনের মত দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। যারা ভালবাসা বুঝে না। যাদের কাছে মন না , ভালবাসার মাপকাঠি অন্য কিছু। তাদের জন্য কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। বরং এটা ভেবে নিলেই হয়, ঐ মানুষটার ভালবাসা মোহের উপর। মোহ কেটে গেলে ভালবাসা কেটে যাবে। তার সাথে থাকার থেকে দূরে থাকা ভাল। এর চেয়ে পাগলি হয়ে কাদায় খেলা, আর মদন হয়ে জুতা নিয়ে দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে থাকা ভাল। প্রিয়তি , অনিক ভালবাসা যেখানে খুঁজেছে ভালবাসা সেখানে না। ভালবাসা অন্য কোথাও।