জোড়াবিলের অশরীরী ভয়ংকর বড় সত্য ঘটনা

14 18
Avatar for Sajeeb_alex
4 years ago

আজ আমি যে গল্পটি শোনাতে যাচ্ছি সেটা আমি শুনেছিলাম আমার দাদুর কাছ থেকে। দাদুরা ছিলেন পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) লোক। দাদুর বেড়ে ওঠা ফরিদপুরে। এখন হয়ত যুগের নিয়মে সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটে গেছে, কিন্তু যখন কার কথা বলছি তখনও গ্রামে আলো আসেনি। সন্ধ্যে সাত টার মধ্যে গ্রামের লোকেরা যে যার বাড়ীতে ঢুকে যেত আর তার কিছুক্ষনের মধ্যেই খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ত। রাত নটায় দাদুদের গ্রাম ছিল একেবারে নিঝুম পুরী। ঝিঁঝিঁপোকার তারস্বর চিৎকার ছাড়া আর কোনও আওয়াজ পাওয়া যেতনা। দাদুর বয়স তখন সদ্য বারো পেরিয়েছে। দাদুকে সব সময় ই দেখেছি ভীষণ ডাকাবুকো
ধাঁচের। কোনও কিছুতে ভয় পাওয়া তার ধাতে ছিলনা। অন্যরা যখন ভূত পেত্নীর নাম
শুনে ভঁয়ে শিঠোত তখন দাদু
ছিলেন একজন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
ওই বারো বছর বয়সে শ্মশানে
যাওয়া, মড়া পোড়ান দেখা
তার কাছে ছিল জলভাত
ব্যপার। আমার বড় দাদু মানে
দাদুর বাবা অনেক মেরে বকেও
ছেলেকে শোধরাতে পারেন
নি। একসময় তিনি ও হাল ছেড়ে
দেন। আমার দাদুর মা, দাদু
জন্মানোর এক বছরের মধ্যেই
মারা যান। দাদুর আপন দিদি
দাদুকে বড় করেন। দিদির যখন
বিয়ে হয়ে যায় তখন দাদুর বয়স দশ
বছর আট মাস। দিদি চলে
যাওয়ার পর দাদুকে শাসন করার
মতো বাড়ীতে কেউই
রইলোনা। পাল্লা দিয়ে দাদুর
দস্যিপনা বাড়তে থাকলো।
শ্মশান, পোড়োবাড়ী,
কবরখানা এসব ছিল তার
খেলার জায়গা। দাদুর বাবা
এসব দেখেশুনে বললেন “একদিন
ওসব যায়গায় ভূতের হাতেই
তোর শিক্ষে হোক”। দাদু
দুষ্টুমির হাসি হাসতেন আর মনে
মনে বলতেন “ভূত বলে কিছু
হয়না”।
এবার আসল গল্পে আসি। দাদুর
বয়স তখন বারো পেরিয়েছে।
তখন বাংলাদেশে ভরা
বর্ষাকাল। খাল বিল পুকুর দিঘি
সব কিছু জলে পরিপূর্ণ। পদ্মা তে
বাণ ডেকেছে। দাদুর বন্ধুরা
সবাই মিলে ঠিক করে পদ্মার
বাণ দেখতে যাবে। দাদু আরও
বলেন, ফেরার পথে
জোড়াবিলে এর পুকুরে মাছ
ধরা হবে। জোড়াবিলে এর
নাম শুনেই সব বন্ধুরা “থ” মেরে
যায়।
জোড়াবিল এর নামে দাদুদের
গ্রামে কিছু কাহিনী প্রচলিত
ছিল। কেউ বলত ওখানে
অশরীরী দের বাস, কেউ বলত
ওখানে গেলে কেউ ফেরত
আসেনা, যদিও দাদুদের গ্রামে
এমন কেউ ছিলনা যারা
কোনদিন জোড়াবিল গিয়ে
আসল ঘটনা চাক্ষুষ করে এসেছে।
বড় দাদু বলতেন ওখানে নাকি
অনেক যুগ আগে কালু ডাকাতের
আস্তানা ছিল। যারাই ওখান
দিয়ে যেত তাদের সবকিছু
লূঠপাঠ করে তাদের কে
জোড়াবিলে এর খালে
ডুবিয়ে মারত। একদিন এক বৃদ্ধা
তার পঙ্গু স্বামী কে নিয়ে
ওখানে দিয়ে ফিরছিল। বৃদ্ধার
সামনেই কালু ডাকাত তার
স্বামী কে জোড়াবিলে এর
খালে ডুবিয়ে মারে। বৃদ্ধা
তখন অভিশাপ দেন “তোরও
একদিন এভাবে অপঘাতে মৃত্যু
হবে, মড়েও তোর আত্মা শান্তি
পাবেনা”। কিছুদিন পরে
নাকি সত্যি সত্যি ই কালু
ডাকাত জলে ডুবে মারা যায়।
অনেকে বলে অনুশোচনায়
আত্মহত্যা করে, আবার কেউ
কেউ বলে বুড়ীর অভিশাপ
অক্ষরে অক্ষরে ফলে
গিয়েছিলো। আসলে কি
হয়েছিলো সে কথা কেউ
জানেনা।
যাই হোক দাদুর প্রস্তাবে দাদুর
কোনও বন্ধুই রাজী হয়নি যা
একরকম অবধারিত ছিল। সবাই
মিলে পদ্মার বাণ দেখে
ফেরার পথে দাদু একরকম জোর
করেই জোড়াবিলে যায়।
বলাবাহুল্য দাদু সেখানে একাই
গিয়েছিলো। দাদু যখন
জোড়াবিলে পৌঁছায় তখন
আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার।
রোদ না থাকলেও আলোর আভা
রয়েছে। আজ মনে হয় আর বৃষ্টি
নামবেনা। জোড়াবিলের
খাল লাগোয়া একটা
পোড়োবাড়ী আছে। এটা
নাকি পাঁচশ বছর পুরনো। যদিও
তাতে বাড়ীর আর কিছু অবশিষ্ট
নেই। দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে,
পলেস্তরা খসে পড়েছে।
জায়গায় জায়গায় বট অশ্বত্থ
গাছ দেয়াল বেয়ে উঠেছে।
এখানেই নাকি কালু ডাকাত
থাকত। বাড়ীটাতে ভূতুড়ে ছাপ
একেবারে স্পষ্ট। কোথাও
কোনও জন মনিষ্যি নেই।
কোথাও একটা ডাহুক ডেকে
উঠলো। দাদুর গা টা একটু ছমছম
করে উঠলো।
ছিপ দাদুর সাথেই ছিল, আর
সাথে ছিল পিঁপড়ের ডিম,
মাছের ধরার টোপ হিসেবে।
দাদু ছিপ ফেলে বসে রইলো।
বেশ কিছুক্ষণ বসার পর মশার
জ্বালায় দাদুর মাছ ধরা মাথায়
উঠলো। মশা তো নয় যেনও
পাখী। এই য়া বড় বড়। অনেকটা
সময় পেরিয়ে গেছে। আসার
পথে আকাশে যে আলোর আভা
ছিল তাও ক্রমে ক্রমে ধূসর হয়ে
আসছে। পশ্চিম কোণে ঘন মেঘ
জমেছে। খুব জোর বৃষ্টি আসবে
বলে মনে হল। হটাৎ দাদুকে
চমকে দিয়ে দুরে কোথাও
একটা কড়কড় করে বাজ পড়ল। দু এক
ফোটা করে বৃষ্টি পড়াও শুরু হয়ে
গেল। দেখতে দেখতে জোর
বৃষ্টি শুরু হল আর সাথে দমকা
এলো মেলো হাওয়া। দাদু পড়ি
কি মড়ি করে পোড়োবাড়ীর
দিকে ছুট লাগালেন। যখন
বাড়ীটা তে দাদু পৌঁছল
ততক্ষণে দাদু পুরো ভিজে
গেছে। কোমরের গামছা খুলে
ভাল করে চিপে দাদু গা মুছতে
লাগল।
এইবার কাছ থেকে দাদু ভাল
করে বাড়ীটা দেখতে শুরু করল।
বাড়ীটা অনেকটা জায়গা
নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। বাড়ী
ভর্তি মাকড়সার ঝুল। এখানে
কতদিন পরে যে কারোর পা
পড়েছে কে বলতে পারে। দাদু
যেখানে দাড়িয়ে রয়েছে
সেটা একটা বারান্দা। সাথে
লাগোয়া দুটো পেল্লাই ঘর।
একটা ঘরের ছাদ প্রায় নেই
বললেই চলে, আর আরেকটা ঘর এর
ছাদ মোটামুটি অক্ষত। দাদু ঠিক
করল ওখানে গিয়ে দাঁড়াবে
কারণ এলো মেলো হাওয়াতে
বৃষ্টি দাদুকে ভিজিয়ে
দিচ্ছিল। দাদু ঘরে ঢুকতে যাবে
হটাৎ মনে হল বারান্দার পশ্চিম
প্রান্তে কেউ দাড়িয়ে আছে।
দাদু ভাল করে চোখ মেলে
চেয়ে দেখল একটা কলাপাতা
বৃষ্টি তে ভিজে চকচক করছে।
নিজের ওপর নিজে হেসে দাদু
ঘরে ঢুকল। ঘরে একটা বিকট গন্ধ। মড়া ইঁদুর, বারুদ আর মাটির সোঁদা গন্ধ একসাথে মেলালে যে গন্ধটা হয় অনেকটা সে রকম। বৃষ্টি আজ থামলে হয়, এরপর যদি সয়লা নদীতে বাণ ডাকে তাহলে তো মহা বিপদ। গতবারের সয়লা নদীর বাণে গ্রামে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। সর্বনাশ এবার ও যদি তেমন কিছু হয়। একটা ঊচূ জায়গা দেখে রাখতে হবে। তেমন হলে ছাদে উঠে যেতে হবে। দাদু ঘর থেকে বেড়িয়ে ছাদের রাস্তা খুঁজতে চলল। বারান্দার এক বাক ঘুরতেই আবার সেই দৃশ্য, কেউ একজন দাড়িয়ে রয়েছে। দাদু ভাল করে চোখ কচলে দেখল এবার সত্যি সত্যি ই কেউ দাড়িয়ে আছে। দেখে মনে হল একজন বুড়ী গোছের মহিলা, পড়নে সাদা শাড়ী। ইনি কে? ইনি ও বোধ হয় বৃষ্টি তে আটকে পড়েছেন। দাদু কাছে যেতে গেলে উনি একটা ঘরে ঢুকে গেলেন। দাদু ও পেছন পেছন ঘরে ঢুকে যান। কিন্তু ঘর খালি। কেউ কোথাও নেই। হটাৎ করে পেছন ফিরে দাদু দেখেন মহিলা দাদুর ঠিক পেছনে দাঁড়ীয়ে। চোখটা অগ্নিকুণ্ডের মতো জ্বলজ্বল করছে। পা তার মাটীতে নেই। দাদুর বুঝতে ভূল হলনা আজ সাক্ষাৎ মৃত্যুর সামনে দাঁড়ীয়ে আছেন। সেই অশরীরী রাগে ফুঁসতে শুরু করল। দাদু কিছু বোঝার আগেই একটা আওয়াজ ভেসে এলো। অট্টহাসির আওয়াজ। পুরুষ কণ্ঠ। সাথে তার কথাও শোণা গেল “ আজ অনেক যুগ পরে মানুষের খুনে নিজের কলিজা ঠাণ্ডা করব”। আর সাথে হাড়হীম করা অট্টহাসি। হটাৎ করে দাদুর সামনে থাকা অশরীরীটা দাদুকে শূন্যে ছুড়ে দিলো। দাদু জ্ঞান হারালেন শুধু এইটুকু শুনলেন এক নাড়ীকণ্ঠ বলছে “আমি থাকতে তা তুই কোনোদিন ই পারবিনা”। দাদুর যখন জ্ঞান ফেরে দাদু তখন বিছানায়, নিজের ঘরে। সামনে বাবা, বন্ধুরা সবাই ভীড় করে রয়েছে। কয়েক রাত দাদুর খুব জ্বর গেল। দাদু যখন সুস্থ হল তখন বন্ধুদের মুখ থেকে শুনল, তারা সবাই এসে পাড়াতে দাদুর জোড়াবিলে যাওয়ার কথা বলে। সবাই পাড়া থেকে দাদুকে খুঁজতে বের হয়। সবাই যখন জোড়াবিলের সামনে এসে দাড়ায় তখন সন্ধ্যা নামে নামে। বৃষ্টি ও ধরে এসেছে। হটাৎ কিছু একটা পড়ার আওয়াজে সবাই পেছন ফিরে দেখে দাদুর জ্ঞানশূন্য শরীর পরে রয়েছে। রাতে দাদুর জ্বর চরমে উঠে যায়। জ্বরের ঘোরে দাদুর মুখ থেকে বিকট বিকট আওয়াজ বেড় হয়। কখনো দাদু বলেছে “কাঊকে ছাড়বনা, সবাইকে শেষ করে ফেলব” আবার কখনো বা বলছে “আমি সবাই কে বাঁচাবো, তুই কারোর কোনও ক্ষতি করতে পারবিনা” কালক্রমে দাদু সুস্থ হয়ে ওঠে।
ঘটনার অনেকদিন পর একদিন দাদু বাড়ীর দাওয়া তে বসে আছে, সন্ধ্যে তখন সবে নেমেছে। হটাৎ দাদু পাশ ফিরে দেখেন সেদিন কার সেই মহিলা। আজ আর তার চোখ জ্বলছেনা, চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি। বড় মায়াবী তার মুখ খানি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আবার অদৃশ্য হয়ে যান।


কেমন লাগলো ঘটনাটি সেটা অবশ্যই জানাবেন. সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ.

10
$ 0.00
Avatar for Sajeeb_alex
4 years ago

Comments

Outstanding article.my grandmother also tall me story.

$ 0.00
4 years ago

Awesome story really i am curiosity for listen any horror story keep it up

$ 0.00
4 years ago

Nice article

$ 0.00
4 years ago

এবার আসল গল্পে আসি। দাদুর বয়স তখন বারো পেরিয়েছে। তখন বাংলাদেশে ভরা বর্ষাকাল। খাল বিল পুকুর দিঘি সব কিছু জলে পরিপূর্ণ। পদ্মা

$ 0.00
4 years ago

ধন্যবাদ বন্ধু

$ 0.00
4 years ago

Interesting story...carry on

$ 0.00
4 years ago

Thanks

$ 0.00
4 years ago

গল্পটা অনেক মজাদার। ধন্যবাদ আপনাকে।

$ 0.00
4 years ago

ধন্যবাদ

$ 0.00
4 years ago

nice article, carry on

$ 0.00
4 years ago

Thanks

$ 0.00
4 years ago

I like horror stories so much. Thanks for sharing

$ 0.00
4 years ago