tution

3 10

রাত ১০টা...

টিউশনি শেষ করে রাতে বাসায় ফিরার সময় একটা বিষয় চোখে পড়লো। ব্রিজের উপর সাদা ড্রেস পড়া একটা মেয়ে একা একা দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েটার ঠিক ওপাশেই কয়েক পা দূরে কিছু বখাটে ছেলে আড্ডা দিচ্ছে। কি আশ্চর্য... কি অদ্ভুত... ওই ছেলেগুলো একবারের জন্য হলেও মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছেনা। যেখানে দিন-দুপুরে ছেলেগুলো মেয়েদের সাথে ইতরামি করে, সেখানে এতো রাতে একা একটা মেয়েকে পেয়েও ওরা মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছেনা। বিষয়টা আমার কাছে ভালোই লাগলো। ভাবলাম হয়তো ছেলেগুলো ভালো হয়ে গেছে... সেদিনের মতো বাসায় চলে আসলাম...!!

.

পরেরদিন রাতে আবারো বাসায় ফেরার সময় দেখলাম মেয়েটা ব্রিজের উপর একিই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আজকে ছেলেগুলো এখানে নেই। আমি মেয়েটাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলাম... হুট করে মেয়েটা পিছন থেকে ডাক দিলো-

--এইযে শুনুন !!

মেয়েটার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললাম-

--আমাকে বলছেন?

--জ্বী... একটু এদিকে আসুন !!

আমি মেয়েটার কাছে গেলাম। প্রথমবারের মতো মেয়েটার এতো কাছে গেলাম। এই প্রথম মেয়েটাকে ভালোভাবে দেখলাম। সাদা ড্রেস, খুলা চুল, কাজল দেওয়া চোখ, কপালে ছোট একটা টিপ। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে মেয়েটাকে কোনো এক অপ্সরী মনে হচ্ছিলো... সত্যি বলতে এতো সুন্দর মেয়ে আমি এর আগে কখনো দেখিনি...!!

--এইযে মিস্টার... এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?

মেয়েটার কথায় আমার ঘুর কাটলো... আমতা আমতা করে বললাম-

--না... মানে... কিছুনা, কিছু বলবেন?

মেয়েটা আমার তোতলামি দেখে মুচকি মুচকি হেসে বললো-

--আমাকে ওই সামনের দোকান থেকে এক প্যাকেট বিস্কিট আর একটা পানির বোতল এনে দিতে পারবেন?

--হুম পারবো।

মেয়েটাকে বিস্কিট আর পানি দিয়ে সেদিনের মতো চলে আসলাম। কিন্তু সত্যি বলতে বাসায় এসে একদম শান্তি পাচ্ছিলাম না। বার বার ওই অপ্সরীর মুখটা আমার চোখের সামনে ভাসছিলো। ওর মুচকি হাসিটা যেনো চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি কি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম? আচ্ছা আগামিকাল কি মেয়েটা আসবে? মেয়েটাকে দেখতে পারবো? যদি আর না আসে? যদি আর কখনো মেয়েটাকে দেখতে না পাই? সেদিন রাতে হাজার চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারলাম না। সারারাত এসব প্রশ্ন মাথায় ঘুরঘুর করছিলো...!!

.

পরেরদিন রাত ১০টা...

ব্রিজের কাছে আসতেই দেখলাম আজকেও মেয়েটা একিই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

আমি খুব আস্তে আস্তে পা দিয়ে ব্রিজটা পার হচ্ছিলাম। সত্যি বলতে মেয়েটার ডাকের অপেক্ষা করছিলাম... কিন্তু মেয়েটা এখনো ডাক দিচ্ছেনা কেনো? মেয়েটার সাথে আগে গিয়ে কথা বলা কি ঠিক হবে? আচ্ছা মেয়েটা প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে কি করে? এসব চিন্তা করতে করতে পিছন থেকে মেয়েটার ডাক শুনতে পেলাম-

--এইযে শুনুন...!!

আমি তাড়াতাড়ি মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম-

--বিস্কিট লাগবে? পানি এনে দিতে হবে?

মেয়েটা আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে একদম শেষ... কি সুন্দর ওর হাসি। আমি অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার হাসি দেখছিলাম। মেয়েটা হাসতে হাসতে বললো-

--না না, আজকে পানি বিস্কিট কিছুই লাগবেনা। আমার নাম মিহি... আপনি?

--আমি মেহরাব।

সেদিন-ই প্রথম ওর নামটা শুনছিলাম...!!

.

তারপর থেকে মিহির সাথে প্রতিরাতে দেখা হতো। অনেক গল্প হতো... অনেক দূর অবধী দুজনে একসাথে হাঁটতাম।

মিহিকে জিজ্ঞাস করছিলাম-

--আচ্ছা মিহি, প্রতিদিন রাতে ব্রিজের উপর কেনো দাঁড়িয়ে থাকো?

মিহি ছোট করে বলছিলো-

--ভালোলাগে তাই !!

মিহিকে ওর পরিবারের কথা জিজ্ঞাস করলে কেমন জানি ওর মুখটা কালো হয়ে যেতো। হয়তো অনেক কষ্ট ওর মনে... আমিও বেশি জোর করতাম না... মানুষের মনে অনেক ধরনের কষ্ট তো থাকতেই পারে। কিন্তু সেদিন যখন মিহিকে প্রশ্ন করলাম-

--আচ্ছা মিহি, তুমি আমাকে তোমার সম্পর্কে কিছু বলতে চাওনা কেনো?

মিহি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো-

--তুমি বড্ড তাড়াহুড়ো করো মেহরাব... আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে। অপেক্ষা করো !!

--আচ্ছা আর কিছু জানতে চাইবোনা। শুধু এতটুকু বলো তোমার বাসা কোথায়?

আমার প্রশ্নটা শুনে মিহি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো-

--ওই সামনে একটা চায়ের দোকান আছে। দোকানের ডান দিকের রাস্তায় গিয়ে যে গলিটা আছে, সেই গলির একদম লাস্ট বাসা আমার। আর কিছু জিজ্ঞাস করোনা মেহরাব... সময় হলে সব বলবো আমি...!!

.

ব্যাস... আমিও আর কিছু জানতে চাইতাম না। ওর সাথে প্রতিদিন দেখা তো হচ্ছে... কথা তো হচ্ছে... এটাই বা কম কিসের?

.

সেদিন রাতে অনেক বেশি বাতাস হচ্ছিলো। আকাশের অবস্থা খুব খারাপ... বুঝাই যাচ্ছে একটু পর ঝড় শুরু হবে।

মিহি আমাকে বললো-

--মেহরাব... সম্ভবত বৃষ্টি আসবে, আমার কাছে ছাতা আছে। তুমি ছাতাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাও।

--আর তুমি? তুমি বাসায় যাবে কি করে?

--আরে বোকা, আমার বাসা তো কাছেই তাইনা? আমি বৃষ্টি আসার আগেই চলে যেতে পারবো। তুমি ছাতাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাও।

মিহির জোরাজোরিতে সেদিন ছাতাটা নিয়ে চলে আসলাম। আমি বাসায় পৌছানোর আগেই প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি শুরু হলো। মনে মনে মিহিকে ধন্যবাদ দিলাম। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানি আমার উপর পড়লেই আমার এমন জ্বর হয় যে আমি ২-৩ দিন বিছানা থেকে উঠতেই পারিনা। মিহির কি অবস্থা আল্লাহ জানে। বৃষ্টিতে কি ভিজে গেলো? না'কি বৃষ্টি আসার আগেই বাসায় পৌছে গেছে? কি জানি... আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম রাতটা পার হওয়ার...!!

.

পরেরদিন সকালে মিহির জন্য খুব টেনশন হচ্ছিলো। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর হলো কি'না কে জানে... আমি ছাতাটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। ভাবলাম মিহির বাসায় গিয়ে ওর ছাতাটা দিয়ে আসবো, আর মিহিকেও দেখে আসবো। মিহির কথা অনুযায়ী ব্রিজের ওপাশে একটা চায়ের দোকান... চায়ের দোকানের ডান দিকের রাস্তায় গিয়ে একটা গলি আছে, ওই গলির একদম শেষ বাসাটা ওদের...!!

.

আমি হাঁটতে থাকলাম... মিহির কথা অনুযায়ী একটা চায়ের দোকান ও পেলাম। চায়ের দোকানের ডান দিকে একটা রাস্তাও আছে। আমি ডান দিকের রাস্তায় হাঁটা শুরু করলাম... কিছুদূর যেতেই আমি দেখলাম ওদিকে যাওয়ার মতো আর কোনো জায়গা নেই। এখানে কোনো গলি নেই... অনেক বড় একটা নিম গাছ, আর বিশাল বড় দেয়াল দেওয়া ওই জায়গায়। আমি তাড়াতাড়ি চায়ের দোকানে এসে দোকানদার চাচাকে জিজ্ঞাস করলাম-

--আচ্ছা চাচা, এখানে কোনো গলি নাই?

--না বাজান।

আমার শরীরটা শিউরে উঠলো... হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। চোখটা বন্ধ করে মিহির সাথে কাটানো সময়গুলোর প্রত্যেকটা দিক চিন্তা করতে লাগলাম... মিহির সাথে আমার কেনো রাতেই দেখা হতো?? কেনো আজ অবধী দিনে মিহিকে দেখিনি?? মিহি কেনো ওর পরিবার সম্পর্কে কিছু বলতে চাইতোনা? মিহি কেনো সাদা ড্রেস সবসময় পড়তো? কেনো ওই বখাটে ছেলেগুলো মিহির সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনি? ওরা কি মিহিকে আসলেই দেখতে পেয়েছিলো? না'কি শুধু আমি মিহিকে দেখতে পেতাম। উফফফফ... মাথাটা চিনচিন করছে আমার। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর যেনো ঘুরে-ফিরে একটা কথাই বার বার বলছে। মিহি বলতে কেউ কি এই পৃথিবীতে আছে? না'কি নেই...??

.

রাত ৯টার দিকে ব্রিজের উপর এসে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এই প্রথম মিহির আগে আমি এসে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর দেখলাম ব্রিজের ওপাশ থেকে মিহি আসছে। আস্তে আস্তে হেঁটে মিহি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আমার মনে তখন হাজারটা প্রশ্ন জমা হয়ে আছে। আমি কিছু বলার আগেই মিহি আমাকে বললো-

--অনেক প্রশ্ন তোমার মনে মেহরাব। তাইনা?

আমি মিহির চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। বললাম-

--কে তুমি?

মিহি একটা দ্বীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো-

--মেহরাব... বলেছিলাম সময় হলে সব বলবো তোমাকে। আজকে সেই সময়টা এসে গেছে... তোমার বন্ধু শুভর কথা মনে আছে তোমার?

আমি মিহির মুখে শুভ নামটা শুনে কিছুটা অবাক হলাম। শুভ... আমরা একসাথে স্কুল+কলেজ লাইফে বেস্ট-ফ্রেন্ড ছিলাম। পরে অবশ্য শুভ বিদেশ চলে যায়... আমাদের যোগাযোগ ও কমে যায়। শুনেছি বিদেশ থেকে এসে কোনো এক বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে বেশ সুখে আছে এখন। আমি মিহির দিকে কিছুটা অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম-

--শুভকে কিভাবে চিনো তুমি?

মিহি আমার দিকে তাকিয়ে আবারো একটা দ্বীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো-

--বাবা-মা আমাকে রেখে অনেক আগেই মারা গেছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার আগে ওনার সবকিছু আমার নামে লিখে দিয়ে গেছিলেন। জানো মেহরাব? তোমার বন্ধু শুভকে অনেক ভালোবাসতাম। ভালোবেসে বিয়েও করেছিলাম... কিন্তু বিয়ের পর বুঝতে পারলাম শুভ আসলে আমাকে ভালোই বাসেনি। আমার সম্পত্তি, আমার টাকা-পয়সাকে ভালোবেসেছিলো। ও প্রতিদিন রাতে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরে আমার সাথে ঝগড়া করতো। আমার গায়ে হাত তুলতো... সেদিন রাতে আমি যখন বললাম ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো, তখন রেগে গিয়ে আমার মুখে বালিশ চাঁপা দিয়ে আমাকে মেরে ফেলে...!!

মিহির মুখে লাস্ট কথাটা শুনে আমি ২পা পিছন দিকে হেঁটে গেলাম।

মিহিকে বললাম-

--তারমানে তুমি... তুমি?

মিহি কান্না করতে করতে বললো-

--হুম আমি বেঁচে নেই। জানো মেহরাব... তোমার বন্ধু আমাকে মেরে আমার জানাযা অবধী করায় নি। আমাকে গোসল অবধী করায় নি। ওই চায়ের দোকানের ডান দিকে রাস্তাটায় ঢুকে যে নিমগাছটা দেখছিলা, সেদিন রাতে ওইটার নিচেই আমাকে কবর দিয়ে গেছে। তোমার বন্ধুকে বলোনা প্লিজ আমার লাশটা আবার তুলে আমাকে গোসল করিয়ে, জানাযা পড়িয়ে আবার কবর দিতে... বলোনা প্লিজ।

মিহি অনেক জোরে জোরে কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছিলো... আমি মিহির কান্নাভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে পিছ পা হয়ে হাঁটছিলাম... আমি জানিনা এখন আমার কি বলা উচিত। আমি জানিনা এখন আমার কি করা উচিত। আমি শুধু এটা জানি আমাকে এখন থানায় যেতে হবে... থানায় গিয়ে সবকিছু খুলে বলতে হবে। শুভকে ওর পাপের শাস্তি পেতে হবে... পেতেই হবে...!!

4
$ 0.00

Comments

Nice

$ 0.18
4 years ago

Tnx

$ 0.00
4 years ago

Tnx

$ 0.00
4 years ago

Tnx

$ 0.00
4 years ago

টিউশনি করলে জীবনে অনেক কিছু জানা যায় বুঝা যায় অনেক কিছুর সাথে পরিচিত হওয়া যায়। যেমনটি হয়েছে গল্পে,অজানা বিষয় গুলো সব সামনে চলে আসে। আবার টিউশনি করাতে গিয়ে রোমান্টিক কিছু কাহিনী ঘটে যায়।

$ 0.00
4 years ago

টিউশন কথাটা বর্তমানে ছাত্র সমাজের মধ্যে একটা প্রচলিত শব্দ।বর্তমানে অনেক ছাত্র আছে যারা টিউশনি করিয়ে তাদের সমস্ত খরচ খরচ চালায়। বাস্তবধর্মী একটা টিউশনি রোমান্টিক গল্প পড়তে কার না ভালো লাগে?

$ 0.00
4 years ago

Tution are good. Full article i read. Your article are some words are good. Thank you.

$ 0.00
4 years ago

This article is very good. This post is about tution . It is the good job. Without tution a student can not reach his goal. Thank you.

$ 0.00
4 years ago

This article is very nice. You wrote about tution in this article. Its really good job. Without tution students can not pass or reach their goal. Thank you.

$ 0.00
4 years ago

The story is very nice....thank you for written this story...story ta jodi sotto hoy tobe ata khub e koster akta golpo...onk kharap laglo...kno na valobese biyer porinam ta ki mrittu e holo..

$ 0.00
4 years ago

The story is very nice...thank you writter for write this story....we need again a story as like as it

$ 0.00
4 years ago

The article is really fantastic. author described this story in sequence. I am ipressed to read this article..keep writing.your writting quality is really really good.

$ 0.00
4 years ago

Tution is the most earning source of every student. Tution is very common word. This article is very interesting for all. Thanks.

$ 0.00
4 years ago

যেহেতু আমাদের দেশে বেকারত্বের সংখ্যা অনেক বেশি। সেহেতু নিজের এবং পরিবারের ছোটখাটো সমস্যা সমাধানের জন্য টিউশন করান অত্যন্ত জরুরী।। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটা শেয়ার করার জন্য।

$ 0.00
4 years ago

বর্তমানে সমাজে বেকারত্বের সংখ্যা খুবই বেশি। গরিব ঘরের ছাত্রদের টিউশনি করেই জীবন চালাতে হয়। কিন্তু কেউ কেউ টাকার জন্য নয় নিজের আত্মসম্মান এর জন্য করে থাকে।

$ 0.00
4 years ago

Your imagination power is very good. Tution is the most important part of our students life. Many students are poor. They earn money from it.

$ 0.00
4 years ago

টিউশনি মানুষ শুধু টাকার জন্যই করে না। কেউ সম্মানের চোখে দেখে। ধন্যবাদ লেখককে এত সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।

$ 0.00
4 years ago