ইসলামিক উক্তি

5 268
Avatar for Sadiasapa
3 years ago

সেরা সেরা কিছু ইসলামিক উক্তি যা প্রত্যেক মুসলিমের পড়া উচিত। নিজের ইমানি শক্তি বাড়াতে উক্তি গুলা নিয়মিত পড়ুন।

  • আবু বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“সেই ব্যক্তিই অভিশপ্ত যে মরে যায় অথচ তার খারাপ কাজগুলো পৃথিবীতে রয়ে যায়।” — আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“অপরের কষ্ট দূর করার জন্য কষ্ট করার মাঝে রয়েছে মহত্বের প্রকৃত নির্যাস।”
— আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“মৃত্যুকে খুঁজো (অর্থাৎ, সাহসী হও) তাহলে তোমাদেরকে জীবন দান করা হবে।”
— আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে সবর করার চেয়ে পরীক্ষা থেকে সুরক্ষিত থেকে কৃতজ্ঞ হওয়া আমার কাছে বেশি পছন্দের।”

— আবু বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

  • উমার ইবনুল খাত্তাব

“কোন ভাই যদি আপনাকে গোপনে কিছু কথা বলে চলে যাবার আগে যদি তা অন্য কাউকে বলতে নিষেধ না করেও থাকেন, তবু কথাগুলো আপনার জন্য আমানাত।
— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন:

“এসো আমরা আমাদের ঈমানকে বাড়াই, আর তাই চলো আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি।”

​”যিনি ছাড়া কোন রব নেই সেই আল্লাহর কসম, যদি আমার কাছে দুনিয়ার সকল স্বর্ণ এবং রৌপ্য থাকতো, আমি সেগুলোর বিনিময়ে হলেও মৃত্যুর পরে যে ভয়াবহতা রয়েছে তা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম।”​

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“যারা সবসময় ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে তাদের সাথে উঠাবসা করুন, কেননা তাদের হৃদয় সবচেয়ে কোমল।”

— হযরত উমার (রা) .

এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা চিন্তাভাবনা করছিলেন। হযরত উমার (রা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কেন তোমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাও?

সে উত্তর দিলো, “আমি তাকে ভালোবাসি না।”

উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, “সমস্ত সংসারের ভিত্তি কি ভালোবাসা হতেই হবে? পারস্পারিক সহানুভূতি আর আনুগত্যের কী হবে?”

“নিজেকে নিয়মিত জাহান্নামের (আগুণের) কথা স্মরণ করিয়ে দিন, কেননা নিশ্চিতভাবেই জাহান্নামের উত্তাপ অত্যন্ত বেশি, গভীরতা অত্যাধিক এবং তার অস্ত্র হলো লোহা।”

— উমার বিন খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আমরা তো মর্যাদাহীন লোক ছিলাম, আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন ইসলামের মাধ্যমে। সুতরাং, আমরা যদি আল্লাহ আমাদেরকে যা দ্বারা সম্মানিত করেছেন তা থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য কোথাও সম্মান খুঁজি তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় অপমানিত করবেন।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আজকের কাজ আগামীকাল করার জন্য রেখে দিবেন না। পরে দেখা যাবে কাজগুলো জমা হয়ে যাবে এবং আপনি কিছুই অর্জন করতে পারবেন না।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আল্লাহকে ভয় করো, কেননা যে তাকে ভয় করে সে কখনো একাকীত্ব অনুভব করে না।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আমি সাদা পোশাক পরিহিত কুরআন তিলাওয়াতকারীর দিকে তাকাতে ভালোবাসি।”
— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখে বোকা হয়ে যেয়ো না কারণ তখন আমরা কেবল শব্দগুলো উচ্চারণ করি। বরং, তার দিকে লক্ষ্য করো যে কুরআন অনুযায়ী আমল করলো।”
— হযরত উমার (রা)

“যতক্ষণ তোমার ভাইয়ের বলা কোন কথার ব্যাপারে তোমার কাছে ভালো কোন ব্যাখ্যা আছে ততক্ষণ তা নিয়ে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করবে না।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ

“তোমাদের ভালোবাসা যেন নির্বুদ্ধিতায় পরিণত না হয়, তোমাদের ঘৃণা যেন ধ্বংসে পরিণত না হয়।”
তাকে প্রশ্ন করা হলো, “সেটা কীভাবে হয়?”
তিনি উত্তর দিলেন,
“যখন তোমরা ভালোবাসো, তোমরা শিশুদের মতন নির্বোধ হয়ে যাও। আর যখন ঘৃণা করো, তখন তোমরা তোমাদের সঙ্গীদের ধ্বংস কামনা করতে ভালোবাসো।”

“যতদিন আপনার হৃদয় পরিশুদ্ধ থাকবে, ততদিন আপনি সত্য কথা বলবেন।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব

“তোমরা অন্যদের আরবি ভাষা শেখাও কেননা এটা তোমাদের দ্বীনের একটি অংশ।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

আবু আল-আশহাব বলেন:

একদিন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একটি ময়লা-আবর্জনার স্তূপ অতিক্রম করার সময় থমকে দাঁড়ালেন, দেখে মনে হচ্ছিলো তার সঙ্গীগণ এতে (দুর্গন্ধে) কষ্ট পাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, “এটা তোমাদের সেই পৃথিবী যার জন্য তোমাদের এত আগ্রহ এবং যার জন্য তোমরা কান্নাকাটি করো।”

“প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ভিত্তিগুলো একের পর এক ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি ইসলামে এমন মানুষদের আবির্ভাব হয় যারা কখনো অজ্ঞতাকে চিনতে পারেনি।”

— হযরত উমার (রা)

“সেই মানুষগুলোর মাঝে ভালো কিছু নেই যারা অন্যদের সদুপদেশ দেয় না, এবং সেই মানুষদের মাঝে ভালো কিছু নেই যারা উপদেশ গ্রহণ করতে পছন্দ করে না।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তার খিলাফতকালে গভর্নরদের প্রতি তার লেখা চিঠিতে বলেছিলেন:

“আপনাদের ব্যাপারে যে বিষয়টি আমার চোখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নামাজ; যে নিয়মিত নামাজ আদায় করে সে তার ঈমানকে সুরক্ষিত করে, কিন্তু যে নামাজকে অবহেলা করে, সে ঈমানের অন্যান্য বিষয়গুলোতে অবহেলা করতে বাধ্য হয়।”

“নিজেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কথা স্মরণ করিয়ে দাও কারণ তাতে রয়েছে রোগের উপশম, মানুষজনের কথা নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিয়ো না কেননা ওটা হলো রোগ।”

— হযরত উমার (রা)

“একাকী হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো তুমি খারাপ সঙ্গ পরিত্যাগ করেছ। কিন্তু একজন ভালো বন্ধু থাকা একাকীত্বের চাইতে উত্তম।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আমাদের জীবনের সবচাইতে স্বাস্থ্যকর উপাদান হচ্ছে সবর (ধৈর্য)।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“তোমাদের মধ্যে যারা ফাতওয়া দেয়ার ব্যাপারে দুঃসাহসী তারা দুঃসাহসী (পাপ করে) জাহান্নামে যাওয়ার ব্যাপারেও।”

— হযরত উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“কোন মুসলিম ভাইয়ের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা কোন শব্দের কারণে তার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সেটির পেছনে ভালো কোনো কারণ খুঁজে পাবেন।”

— হযরত উমার (রা)

উতবান ইবনে মুসলিম (রা) বলেন যে, একবার তিনি ৩০ মাস উমার বিন খাত্তাবের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সঙ্গী ছিলেন। সে সময় উমারকে (রা) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় এবং তিনি প্রায়ই বলতেন যে, তিনি জানেন না।

“জাহিলিয়াতের প্রকৃতি অনুধাবনে ব্যর্থতা শুরু হলে একে একে ইসলামের বন্ধনী বিচ্ছিন্ন হতে থাকবে।”

— উমার বিন খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আল্লাহর আনুগত্য করা ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে আল্লাহর সাথে একজন ব্যক্তির কোন সম্পর্ক থাকে না।”

— হযরত উমার (রা)

“যারা অন্যদের মন কাড়তে এমন কিছু বিষয় দাবী করে যা তাদের মাঝে নেই, আল্লাহ তাদেরকে অপমানিত করবেন।”

— উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

  • উসমান ইবনে আফফান

“দুনিয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করা অন্তর হলো অন্ধকারাচ্ছন্ন,
আখিরাত নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করা অন্তর হলো আলোকিত”

— উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“অন্তরসমূহ যদি পরিশুদ্ধ হয় তাহলে আল্লাহর গ্রন্থ কুরআনুল কারীমে তাদের তৃষ্ণা কখনো সম্পূর্ণ মিটবে না।”
— উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

  • আলী ইবনে আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করতে পারবে, সে কখনো সফলতা থেকে বঞ্চিত হবেনা।
হয়তবা সফল হবার জন্য তার একটু বেশি সময় লাগতে

পারে।”

— — আলী ইবনে আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তার ছেলেকে উপদেশ দিয়েছিলেন,

“হে আমার সন্তান! আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করো যে সমগ্র মানবজাতির ভালো কাজের সমতূল্য সওয়াব নিয়েও যদি তুমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করো তবু তিনি তা কবুল করবেন না; এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন আশাবাদী হও যে সকল মানুষের করা পাপকাজের সমপরিমাণ পাপ নিয়েও যদি তুমি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করো তবু তিনি তোমায় ক্ষমা করে দিবেন।”

““সবচেয়ে সুখী ব্যক্তিই সেই যাকে আল্লাহ তা’আলা একজন পূণ্যবতী স্ত্রী দান করেছেন।”

— আলী ইবনে আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“যেসব পাপকাজ তোমরা গোপনে করে থাকো সেগুলোকে ভয় করো, কেননা সেসব পাপের সাক্ষী বিচারক স্বয়ং নিজেই।”
— হযরত আলী (রা)

“অতিরিক্ত সমালোচনা করবেন না। অতিরিক্ত সমালোচনা ঘৃণা এবং খারাপ চরিত্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”

— হযরত আলী (রা)

“কারো অধঃপতনে আনন্দ প্রকাশ করো না, কেননা ভবিষ্যত তোমার জন্য কী প্রস্তুত করে রেখেছে সে সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞানই নেই।”

— হযরত আলী (রা)

“সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান যিনি পরম করুণাময় আল্লাহর দয়ার ব্যাপারে আশা ও আত্মবিশ্বাস না হারানোর জন্য মানুষকে উপদেশ দেন।”
— হযরত আলী (রা)

“আপনার গর্বকে ছুঁড়ে ফেলুন, দাম্ভিকতাকে দমিয়ে দিন আর আপনার কবরকে স্মরণ করুন”

— — আলী ইবনে আবি তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)

“হে লেখক! তুমি যা লিখছ তার সবই একজন ফেরেশতা নজরদারী করছেন।তোমার লেখালেখিকে অর্থপূর্ণ করো কেননা অবশেষে একদিন সব লেখাই তোমার কাছে ফেরত আসবে এবং তুমি যা লিখেছ তার জন্য তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

— হযরত আলী (রা)

“আপনার দ্বারা নেক কাজ সাধিত হলে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করুন, এবং যখন অসফল হবেন তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।”

— আলী ইবন আবু তালীব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“হৃদয় থাকা সকল মানুষের বোধ থাকে না, কান থাকা সকল মানুষই শুনতে পায় না, চোখ থাকা সকল মানুষই দেখতে পায় না।”
— আলী ইবনে আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“কল্যাণপ্রাপ্ত তো সেই ব্যক্তি যার নিজের পাপসমূহ তাকে অন্যদের পাপের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ থেকে বিরত রাখে।”

— হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“জ্ঞানের মত সম্পদ আর নেই, অজ্ঞতার মতন দারিদ্র আর নেই।”

— আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“ফুলের মতন হও, যে তাকে দলিত করে তাকেও সে সুগন্ধ বিলায়।”

— আলী ইবনে আবু তালিব

“রেগে যাবার সময়ের এক মূহুর্তের ধৈর্য রক্ষা করে পরবর্তী সময়ের হাজার মূহুর্তের অনুশোচনা থেকে।”
— হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট সম্মানজনক একটি বিষয় হলো, যারা তেমন একটা জ্ঞানার্জন করেননি, তারাও তা দাবী করেন এবং তাদেরকে যখন জ্ঞানী বলে সম্বোধন করা হয়, তারা আনন্দিত হন। অন্যদিকে অজ্ঞতার জন্য এটাই যথেষ্ট লজ্জাজনক যে, একজন অজ্ঞ লোকও তাকে অজ্ঞ বলে সম্বোধন করাকে ঘৃণা করে।”

— আলী ইবনে আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

  • আয়েশা (রা

এক ব্যক্তি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো,

“আমি কখন জানতে পারবো যে আমি দ্বীনদার?”

তিনি উত্তর দিলেন,
“যখন আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনি একজন গুনাহগার।”

সে জিজ্ঞাসা করলো,
“আর আমি কখন বুঝবো যে আমি একজন গুনাহগার?”

আয়েশা (রা) উত্তর দিলেন,
“যখন আপনি মনে করবেন আপনি একজন দ্বীনদার।”,

​আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন:

“আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনদিন কোন ভৃত্য অথবা কোন মহিলার গায়ে হাত তোলেননি।”

  • আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)

মৃত্যুশয্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছিলেনঃ

“গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দিনগুলোতে সাওম পালন করা এবং রাতের বেলা সলাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া এই পৃথিবীর আর কোন কিছুকে ছেড়ে যেতে আমি দুঃখবোধ করি না।”

হযরত উমারের যুগে যখন সকল সাহাবীর ভাতা নির্ধারিত হয়, তখন ইবনে উমারের ভাতা নির্ধারিত হয় আড়াই হাজার দিরহাম। পক্ষান্তরে উসামা ইবন যায়িদের ভাতা নির্ধারিত হয় তিন হাজার দিরহাম। ইবন উমার পিতা উমার (রা) -এর নিকট এ বৈষম্যের প্রতিবাদ করে বলেন, কোন ক্ষেত্রেই যখন আমি তার থেকে এবং আপনি তার পিতা থেকে পিছিয়ে নেই, তখন এই বৈষম্যের কারণ কি? উমার (রা) বলেন, সত্যই বলেছ। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পিতাকে তোমার পিতা থেকে এবং তাঁকে তোমার থেকে বেশি ভালোবাসতেন। জবাব শুনে ইবন উমার (রা) চুপ হয়ে যান।

“লোকে বিদ’আতে কিছু ভালো খুঁজে পেলেও প্রতিটি বিদ’আতই পথভ্রষ্টতা।”

— আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)

” আল্লাহর শপথ! যদি আমি না খেয়ে সারাদিন রোযা রাখি, সারারাত না ঘুমিয়ে সলাতে দাঁড়িয়ে থাকি, আমার সমস্ত সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করি; এরপর যদি যারা আল্লাহকে মেনে চলেন এমন মানুষদের প্রতি অন্তরে ভালোবাসা না রেখে এবং যারা আল্লাহর অবাধ্য তাদের প্রতি অন্তরে ঘৃণা না রেখে মারা যাই ; সেই কাজগুলো আমাকে একটুও উপকৃত করবে না।”
— আবদুল্লাহ বিন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)

সত্য কথা বলতে আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কখনো ভয় পেতেন না।

একবার হাজ্জাজ খুতবা দিচ্ছিলেন। ইবন উমার তাকে লক্ষ্য করে বললেন:
“এই লোকটি আল্লাহর দুশমন। সে মক্কার হারামের অবমাননা করেছে, বাইতুল্লাহ ধ্বংস করেছে এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হত্যা করেছে।”

ইবনে উমারের জীবনীতে আমরা দেখতে পাই, তাঁর আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত স্বচ্ছল ছিল। হাজার হাজার দিরহাম একই বৈঠকে ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। কিন্ত তার নিজের ঘরের আসবাবপত্রের মোট মূল্য একশ দিরহামের বেশি ছিলনা। মায়মূন ইবন মাহরান বলেন, “আমি ইবন উমারের ঘরে প্রবেশ করে লেপ, তোষক, বিছানাপত্র ইত্যাদির দাম হিসাব করলাম। সব মিলিয়ে একশ দিরহামের বেশি হলনা।” তিনি এমনই সরল ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। নিজের কাজ তিনি নিজ হাতে করতেন। নিজের কাজে অন্য কারো সাহায্য গ্রহণ তাঁর মনঃপু

  • আব্দুল্লাহ বিন মাস’উদ

“জঘন্য পাপগুলোর একটি হলো যখন একজন মানুষ তার অপর ভাইকে বলে, “আল্লাহকে ভয় করো” এবং সে তার জবাবে বলে, “তোমার নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো।”

— আব্দুল্লাহ বিন মাস’উদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার আগেই তা অর্জন করো, আর জ্ঞান হারিয়ে যায় যখন আলেমগণ ইন্তেকাল করেন। তোমরা জানো না যে কখন তা তোমাদের কাজে লাগবে।”
— আব্দুল্লাহ বিন মাস’উদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আল্লাহ যা আগে থেকেই নির্ধারিত রেখেছেন সে ব্যাপারে ‘যদি এমনটি না হতো’ বলার চেয়ে উত্তপ্ত লাল কয়লা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত কামড়ে ধরে থাকাও আমার কাছে অনেক প্রিয়।”

— আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

​হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জীবিত ছিলেন উসমান (রা) এর খিলাফতকাল পর্যন্ত । তিনি যখন অন্তিম রোগ শয্যায়, তখন উসমান (রা) একদিন তাকে দেখতে গেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ

– আপনার অভিযোগ কীসের বিরুদ্ধে?
— আমার পাপের বিরুদ্ধে।

– আপনার চাওয়ার কিছু আছে কি?
— আমার রবের রহমত বা করুণা।

– বহুবছর যাবত আপনার ভাতা নিচ্ছেন না, তা কি আবার দেয়ার নির্দেশ দেব?
— আমার কোন প্রয়োজন নেই।

দিনশেষে রাত্রি নেমে এলো, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ তার রফীকে আলা-শ্রেষ্ঠতম বন্ধুর সাথে মিলিত হলেন। খলীফা উসমান তাঁর জানাযার নামায পড়ান এবং হযরত উসমান ইবন মাজউনের (রা) পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

“আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কাজ করে যদি আপনি লোকজনকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করেন তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন না।”

— আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“ভালো কাজকে যিনি বীজ হিসেবে বুনেছেন সম্ভবত তার ফসল হবে আশা,
খারাপ কাজকে যে বীজ হিসেবে বুনেছে সম্ভবত তার ফসল হবে অনুতাপ।”

— আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলা হয়েছিলো,

“আমরা কিয়াম আল-লাইল আদায় করতে পারছি না।”

তিনি উত্তর দিলেন, “তোমাদের নিজেদের পাপকাজগুলো থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখ।”

​”নিশ্চয়ই একজন লোকের কোন কাজ ছাড়া অযথা বসে থাকা দেখতে আমি ঘৃণা করি​,​ যখন ​সে ​​দুনিয়ার জীবনের জন্য কোন কাজ করছে না, এমনকি আখিরাতের জন্যও ​কিছু করছে না।​”

— আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

  • — আবু দারদা

“আমি এমন তিনটি জিনিস ভালোবাসি লোকে যা ঘৃণা করে : দারিদ্র, অসুস্থতা এবং মৃত্যু। আমি এদের ভালোবাসি কেননা দারিদ্র হচ্ছে বিনয়, অসুস্থতা হলো গুনাহের মোচন এবং মৃত্যুর ফলাফল হলো আল্লাহর সাথে সাক্ষাত লাভ করা।”

— আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“কোন দরজায় যখন কেউ কড়া নাড়ে, তখন দরজাটি তার জন্য খুলে যাওয়ার খুব কাছে থাকে।
যে ব্যক্তি অনেক দু’আ করতে থাকে তখন তার দু’আ কবুল হবার দ্বারপ্রান্তে থাকে।”

— আবু দারদা আল আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“শরীরের সম্পদ হচ্ছে সুস্বাস্থ্য।”

— আবু দারদা আল-আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আপনি ততদিন পর্যন্ত ‘আলিম (স্কলার) হতে পারবেন না যতদিন পর্যন্ত আপনি মুতা’আল্লিম (ছাত্র) হতে না পারছেন এবং আপনি ততদিন পর্যন্ত মুতা’আল্লিম (ছাত্র) হতে পারবেন না যতদিন আপনার যেটুকু ‘ইলম (জ্ঞান) আছে তদনুযায়ী ‘আমল (কাজ) না করছেন।”

— আবুদ দারদা আল-আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

“আমি সিজদারত অবস্থায় আমার ৭০ জন দ্বীনী ভাইয়ের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করি, আমি তাদের সবার নাম এবং তাদের পিতার নাম উল্লেখ করি।”

— আবু দারদা আল-আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)

  • আল হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

আল হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“মন্দের মূল তিনটি এবং শাখা ছয়টি।
মূল তিনটি হলো —
১) হিংসা-বিদ্বেষ,
২) লোভ-লালসা এবং
৩) দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা।

আর শাখা ছয়টি হলো —
১) নিদ্রা,
২) পেট ভরে খাওয়া,
৩) আরাম-আয়েশ,
৪) নেতৃত্ব,
৫) প্রশংসা পাওয়া ও
৬) গর্ব-অহংকারের প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা।”

“এই দুনিয়াতে কল্যাণময় হচ্ছে জ্ঞানার্জন ও আল্লাহর ইবাদাত করা
এবং আখিরাতে কল্যাণময় হচ্ছে জান্নাত”।
— — হাসান আল বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

“আল্লাহর যিকরে, সলাতে এবং কুরআন তিলাওয়াতে যে ব্যক্তি সুখ খুঁজে পায় না, সে অন্য কোথাও তা খুঁজে পাবে না।”

— হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

“বুদ্ধিমান ব্যক্তির জিহবা তার হৃদয়ের পেছনে থাকেঃ সে যখন কথা বলতে চায়, প্রথমে সে চিন্তা করে। যদি শব্দগুলো তার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে সে তা বলে। আর যদি কথাগুলো তার জন্য অকল্যাণকর হয় তাহলে সে চুপ থাকে।

একজন মূর্খ ব্যক্তির জিহবা তার হৃদয়ের সামনে থাকেঃ সে কথা বলার সময় খুব কমই চিন্তা করে এবং তার জন্য কল্যাণকর বা অকল্যাণকর যা-ই হোক সে বলে ফেলে।”

— প্রখ্যাত তাবিঈ ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

“একজন মু’মিনের যত গুণাবলী রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো ক্ষমাশীলতা।”

— আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

ইমাম আল-হাসান আল-বাসরী বলেছিলেন:

“পৃথিবীর জীবনটা তিনটি দিনের–
গতকালের দিনটিতে যা করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে সেটি চলে গেছে;
আগামীকালের দিনটিতে হয়ত আপনি না-ও পৌছতে পারেন;
কিন্তু আজকের দিনটি আপনার জন্য সুতরাং যা করার আজই করে নিন।”

আমি এমন মানুষ দেখেছি, যাদের জন্যে এই দুনিয়া তাদের পায়ের নিচের ধুলো থেকেও তুচ্ছ। আমি এমন মানুষ দেখেছি যারা দিনশেষে শুধুমাত্র তাদের নিজের অংশের খাবারটুকু জোগাড় করতে পারতেন, তবুও তারা বলতেন, “আমি এর সবটুকু দিয়ে নিজের উদরপূর্তি করব না। আমি অবশ্যই এর কিছু অংশ আল্লাহর ওয়াস্তে দান করব।” এরপর তারা তাদের খাবারের কিছু অংশ দান করে দিতেন যদিও গ্রহণকারীর চেয়ে ওই খাবারটুকু তাদেরই বেশি প্রয়োজন ছিল।

— হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

“কম বয়সে কোন কিছু শেখার প্রভাব অনেকটা পাথরের উপরে খোদাই করে লেখার মতন।”

— ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

“হায় আদম সন্তান! তোমরা কি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম? যে আল্লাহকে অমান্য করে সে তো তাঁর সাথেই যুদ্ধ ঘোষণা করল! আল্লাহর শপথ! বদরের ৭০ জন যোদ্ধার সাথে আমার দেখা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই পোষাক ছিল পশমের।”

​​তোমরা যদি তাদের দেখতে তাহলে তাদের উন্মাদ বলতে, আর তারা যদি তোমাদের মধ্যে উত্তমদের দেখতেন তাহলে বলতেন, “আখিরাতে তাদের জন্যে কিছু নেই।” তারা যদি তোমাদের মধ্যে অধমদের দেখতেন তাহলে তারা বলতেন, “তারা শেষ বিচারের দিন’-এ বিশ্বাস করে না।”

— হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

“অন্তরমাঝে যেসব কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হয় এবং দূর হয়ে যায় তা সব শয়তানের পক্ষ থেকে। এসব কুমন্ত্রণা দূর করার জন্য আল্লাহর যিকর ও কুরআন তিলাওয়াতের সাহায্য নেয়া উচিত।

আর যেসব কুমন্ত্রণা স্থায়ী হয়ে যায়, বুঝতে হবে তা নফসের পক্ষ থেকে। আর তা দূর করার জন্য সলাত, সাওম এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সাহায্য নেয়া উচিত।”

— আল হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

“দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জন্য বিক্রি করলে আপনি দুই জীবনেই জয়ী হবেন।
আখিরাতের জীবনকে দুনিয়ার জন্য বিক্রি করলে আপনি দুই জীবনেই পরাজিত হবেন।”

— হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

হাসান আল-বাসরীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,

“বান্দার কি লজ্জা পাওয়া উচিত না যে পাপ করার পর সে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তারপর আবার পাপ করে এবং আবারো অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে?”

তিনি বললেন, “শয়তান ঠিক সেটাই চায়, কখনো অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করা (ইস্তিগফার) থামিয়ে দিয়ো না।”

“মুমিন মুমিনের অংশ। সে তার ভাইয়ের জন্য আয়না স্বরূপ; সে তার ভাইয়ের মধ্যে অপছন্দনীয় কিছু দেখলে তাকে সংশোধন ও ঠিক-ঠাক করে দেবে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে তার কল্যাণ কামনা করবে।”
— আল হাসান আল বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

“আমি সেসব মানুষদের (সালাফদের) দেখেছিলাম তারা তাদের দিরহাম ও দিনারের (অর্থাৎ, তাদের টাকার) চেয়ে সময়ের প্রতি অনেক বেশি যত্নবান ছিলেন।”

— আল-হাসান আল-বাসরী (রহিমাহুল্লাহ)

এক ব্যক্তি ইমাম আল-হাসান আল-বাসরীর কাছে এসে বললো: “আমি আপনার সাথে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করতে চাই।”

তিনি উত্তর দিলেন: “আমি আমার ধর্ম সম্পর্কে জানি। আপনি যদি আপনার ধর্মকে হারিয়ে ফেলে থাকেন তাহলে বাইরে যান এবং খুঁজতে শুরু করুন।”

— আল-হাসান আল-বাসরি

“নিকৃষ্ট তো সেই মৃতব্যক্তির পরিবারের মানুষগুলো, যারা মৃত মানুষটির জন্য কান্নাকাটি করে অথচ তার রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ করে না।”

— আল-হাসান আল-বাসরি

​”হে আদমের সন্তানেরা! পৃথিবীর মাটির উপরে যতক্ষণ ইচ্ছা করে হেঁটে নাও কেননা খুব শীঘ্রই সেটা তোমার কবরে পরিণত হয়ে যাবে। মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে তো তোমার জীবনের আয়ু কমে যাওয়াকে তুমি ঠেকিয়ে রাখতে পারনি।”

— ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি যখন একদল তর্করত মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি বলেনঃ

“এই লোকেরা ইবাদাত করার ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে গেছে, কথাবার্তা বলা এদের জন্য খুব সহজ হয়ে গেছে এবং এদের তাকওয়া কমে গেছে, আর তাই এত সহজেই কথাবার্তা বলে এবং তর্কাতর্কি করে।”

এক ব্যক্তি ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে এসে বললোঃ

– ‘আপনার আশেপাশে কিছু মানুষ এসে বসে যেন তারা আপনার দোষ-ত্রুটি খুঁজে পায়।’

তিনি উত্তর দিলেন,

– “আমি আমার অন্তরকে জান্নাত চাইতে অনুপ্রাণিত করেছিলাম এবং তা জান্নাতের জন্য আকাঙ্খিত হয়েছে। এরপর আমি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতে অনুপ্রাণিত করেছি এবং তা সেই মুক্তির আকাঙ্খা করেছে। অতঃপর আমি চেয়েছি আমার অন্তর যেন মানুষের কাছ থেকে মুক্তি পায়, কিন্তু তার জন্য কোন উপায় খুঁজে পাইনি।
যেসব মানুষ তাদের সবকিছুর দাতা আল্লাহর উপরে সন্তুষ্ট হয়নি তারা কীভাবে তাদেরই মত অন্য একজন সৃষ্টির উপরে সন্তুষ্ট হতে পারে?”

“যদি তোমরা কোন ব্যক্তির সাথে শত্রুতা করতে চাও তাহলে প্রথমে তার উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখ। যদি সে আল্লাহর বাধ্য ও অনুগত হয় তাহলে এ কাজ থেকে দূরে থাক। কারণ, আল্লাহ কখনো তাকে তোমাদের আয়ত্ত্বে দেবেন না। আর যদি সে আল্লাহর নাফরমান বান্দা হয় তাহলে তোমাদের তার সাথে শত্রুতার কোন প্রয়োজনই নাই। কারণ, সে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহর সাথে শত্রুতাই তার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।”

— আল হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

“যেসব মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার উপরে সন্তুষ্ট হয়নি যদিও তিনি তাদের সবকিছুর দাতা,
তারা কীভাবে তাদের মত অন্য একজন সৃষ্টির উপরে সন্তুষ্ট হতে পারে?”

— আল হাসান আল-বাসরি

আমরা হাসি-ঠাট্টা করি, কিন্তু কে জানে– হয়তো আল্লাহ আমাদের কিছু কাজকর্ম দেখে বলছেন: “আমি তোমাদের কাছ থেকে কোনো আমলই গ্রহণ করব না।”

— হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

এক ব্যক্তি ইমাম আল-হাসান আল-বাসরীর (রাহিমাহুল্লাহ) কাছে এসে বললো, “হে আবু সা’ঈদ, আমি আপনার কাছে আমার অন্তরের কাঠিন্যের ব্যাপারে অভিযোগ করছি।”

তিনি উত্তর দিলেন, “যিকিরের (আল্লাহর স্মরণ) মাধ্যমে অন্তরকে নরম করো। অন্তরে আল্লাহর স্মরণ যত কম হয়, ততই তা কঠিন হয়ে যায়, কিন্তু কোন ব্যক্তি যখন আল্লাহকে স্মরণ করে তার হৃদয়ের কাঠিন্য বদলে নরম হয় যেমন করে আগুনে নরম হয়ে গলে যায় তামা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে স্মরণের (যিকির) মতন আর কোন কিছুই হৃদয়ের কাঠিন্য দূর করে তাকে নরম করতে পারে না। অন্তরের জন্য নিরাময় ও ঔষধ হলো আল্লাহর যিকির। ভুলে যাওয়া একটি রোগ এবং এই রোগের উপশম আল্লাহকে স্মরণ করা।”

আল-হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

“তোমাদর আগে পৃথিবীতে যারা ছিলেন তারা মনে করতেন মৃত্যু তাদের সন্নিকটে। তাদের একেকজন পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি সংগ্রহ করে নিতেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেন এবং তারপর ওযু করতেন আল্লাহর নির্দেশের (মৃত্যু) ভয়ে যেন তা এমন অবস্থায় না আসে যখন তিনি পবিত্র অবস্থায় নেই।

“সালাফগণ রাতে সলাতে দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং দিনের বেলা কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আমল করতেন।”

— হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

“পারস্পরিক হাত মেলানো (করমর্দন) বন্ধুত্ব বাড়ায়।”

–আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ)

ইমাম আল-হাসান আল-বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ) একদিন এক ব্যক্তির দাফনের সময় উপস্থিত হয়ে বলেছিলেনঃ

“আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক সেসব মানুষদের উপরে যারা আজকের দিনটির মতন দিনের জন্য পরিশ্রম করে; কেননা আজকে তোমরা এমন সব কাজ করতে পারছ যা কবরের বাসিন্দা তোমাদের এই ভাইয়েরা করতে পারছে না। তাই, হিসাব-নিকাশ শুরু হবার ভয়াবহ দিনটি আসার পূর্বেই তোমাদের স্বাস্থ্য এবং অবসর সময়ের পূর্ণ ব্যবহার করো।”

“আমি এমন মানুষদের (সাহাবা) সান্নিধ্য অর্জন করেছিলাম যারা তাদের কোন সৎকাজকে ছেড়ে দেয়া যতটা ভয় করতেন তা তোমরা তোমাদের পাপকাজের পরিণামকে যতটুকু ভয় কর তার চাইতেও বেশি।”
— আল-হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

“দুনিয়ার জীবনের তুচ্ছ আর ক্ষণস্থায়ী ভোগবিলাস ও আনন্দগুলো যেন আপনাকে মোহগ্রস্ত ও বিভ্রান্ত করতে না পারে এবং সবসময় আগামীকালের কথা বলতে থাকবেন না, কেননা আপনি জানেন না যে কখন আপনাকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে।”

— ইমাম আল-হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

“আপনি আসলে কতগুলো দিনের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই না। যখন একটি দিন পার হয়ে যায়, আপনার একটি অংশ ক্ষয় হয়ে যায়।”
— — আল হাসান আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ)

এক ব্যক্তি হাসান আল বাসরীকে (রাহিমাহুল্লাহ) জিজ্ঞাসা করলো, “ইবলিশ কি কখনো ঘুমায়?”
তিনি বললেন, “সে যদি ঘুমাতো, তাহলে আমরা একটু অবসর পেতাম।”

  • উমার বিন আবদুল আজিজ

“তুমি যদি পারো তো একজন আলেম হও। যদি তা না পারো তবে দ্বীনের জ্ঞানের একজন ছাত্র হও। যদি তা না পারো, তাহলে তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাও। যদি তুমি তা-ও না পারো, তাহলে (অন্ততপক্ষে) তাদের ঘৃণা করো না।”

— উমার বিন আবদুল আজিজ (রাহিমাহুল্লাহ)

“নিজেকে আল্লাহর রাহমাতসমূহের কথা বেশি করে স্মরণ করিয়ে দিন, কেননা যিনি বেশি বেশি স্মরণ করেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।”

— উমার বিন আবদুল আজিজ

উমার বিন আব্দুল আযীযের (রহিমাহুল্লাহ) কাছে খবর পৌঁছল যে তাঁর ছেলে ১০০০ দিরহাম দিয়ে একটি আংটি কিনেছে। খলিফা উমার বিন আব্দুল আযীয সাথে সাথে ছেলের কাছে চিঠি লিখলেন–

“আমার কাছে খবর এসেছে তুমি ১০০০ দিরহাম দিয়ে একটি পাথরের টুকরা কিনেছ। তুমি যখনই আমার চিঠি পাবে, তখনই আংটিটি বিক্রি করে দিবে। বিক্রয়কৃত টাকা দিয়ে তুমি ১০০০ অভুক্ত মানুষকে পেট ভরে খাওয়াবে এবং তারপর ২ দিরহামের একটি লোহার আংটি কিনবে যাতে লিখবে–

“আল্লাহ যেন ঐ বান্দার প্রতি রহম করেন, যে তার নিজের মূল্যের ব্যাপারে খেয়াল রাখে”।

“যে ব্যক্তি জ্ঞান ছাড়াই আমল করে সে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে।”

— উমার বিন আবদিল-আযীয

“আমি কখনোই কামনা করিনি যে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে মতানৈক্য না থাক। তাদের মতানৈক্য রহমতস্বরূপ।”

— উমার বিন আবদুল আজীজ (রাহিমাহুল্লাহ)

“কোন গাইর-মাহরাম নারীর সাথে কখনো একাকী অবস্থান করবেন না, আপনি যদি তাকে কেবল কুরআন শেখাতে যান, তবুও না।”

— উমার বিন আবদুল আজিজ

উমার বিন আবদুল আজীজ (রাহিমাহুল্লাহ) একবার উপদেশ পেয়েছিলেনঃ

“হে উমার! জনসম্মুখে আল্লাহর বন্ধু এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর শত্রু হওয়া থেকে সাবধান হও। যদি কারো স্বভাব-চরিত্র প্রকাশ্যে এবং গোপনে সমান না হয়ে থাকে তাহলে সে একজন ধোঁকাবাজ (মুনাফিক) এবং মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।”

খলীফা উমার বিন আবদুল আযীযের (রাহিমাহুল্লাহ) সময়ে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল তখন বিভিন্ন দেশে তার প্রতিনিধিদের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন মুসলিমদের বলে দিতে যেন তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে তাওবা করে, তার কাছে বিনীত হয়ে নিজেদের সোপর্দ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য তার কাছে ইস্তিগফার করে।

  • ইমাম আবু হানিফার

একবার ইমাম আবু হানিফার সাথে একটি ব্যবসার অংশীদার ছিলেন বসরার জনৈক লোক । একবার ইমাম আবু হানিফা তাকে ৭০টি মূল্যবান কাপড় পাঠিয়েছিলেন এবং সেগুলোর সাথে আলাদা করে লিখে দিয়েছিলেন, “এই কাপড়গুলোর একটিতে খুঁত আছে, সেটি হলো অমুক কাপড়টি । সুতরাং, আপনি যখন কাপড়গুলো বিক্রি করবেন তখন ভালো করে খেয়াল রাখবেন যেন কাপড়ের সমস্যাটি ক্রেতাকে উল্লেখ করে দেয়া হয়।”

ইমাম আবু হানিফার ব্যবসার অংশীদার সেই লোকটি কাপড়গুলো ৩০ হাজার দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করেন এবং যখন তিনি টাকাসহ আবু হানিফার কাছে এলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, “আপনি কি কাপড়ের খুঁতগুলো বলে দিয়েছিলেন?” বসরার লোকটি উত্তর দিলেন,”আমি ভুলে গিয়েছিলাম।” আবু হানিফা সেই কাপড় বিক্রির মুনাফা থেকে কিছুই গ্রহণ করেননি বরং তার সবটুকুই সাদাকাহ করে দিয়েছিলেন।”

ইমাম আবু হানিফা তার ‘ইলম (জ্ঞান) এবং ‘আমালের জন্য তো বটেই, তিনি তার রসিকতাবোধের জন্যেও সুপরিচিত ছিলেন। একদিন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, “হে ইমাম! যখন আমি নদীতে গোসল করি, তখন কি আমি কিবলার দিকে মুখ করবো নাকি কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবো?

ইমাম আবু হানিফা গম্ভীরভাবে উত্তর দিলেন, “আমি যদি আপনার জায়গায় থাকতাম তাহলে আমি আমার কাপড়গুলোর দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকতাম যেন কেউ সেগুলো নিয়ে দৌড়ে পালাতে না পারে।”

ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) তার ছাত্র আবু ইউসুফকে বলেছিলেন:

“হায় ইয়াকুব! তুমি আমার কাছে যে কথাই শোনো, সে কথাই লিখে ফেলো না, কেননা এটা নিশ্চিত যে হয়ত আজ আমি যে মত ধারণ করছি আগামীকাল সেটা ত্যাগ করবো, হয়ত আগামীকাল আরেকটা মত ধারণ করবো যা তার পরের দিন ত্যাগ করবো।”

2
$ 0.00
Avatar for Sadiasapa
3 years ago

Comments

ইসলামী পোস্ট, ভাল কাজ, কিন্তু বেশি বড় হয়ে গেল, পড়তে তো অনেক সময় লাগতেছে এটাই কষ্ট😓

$ 0.00
3 years ago

assa next theke cuto cuto lekha likbo...........akn ki pora hoi nai????... sesh hole bolen

$ 0.00
3 years ago

Naa. Pora hoi nai. Emnei like comment korci. Mojaai moja🤣

$ 0.00
3 years ago
$ 0.00
3 years ago

ki ar kora porte na parle seta apnr bertotha.....

$ 0.00
3 years ago