#তুমি_ছাড়া
৫ম ও শেষ পর্ব
লেখনীতেঃ #raiyan
,
দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেছে।এই একমাসে দানিয়া খুব হাসি খুশি কাটিয়েছে। স্বপ্নে আর কষ্ট হয়না। প্রতিরাতে কেও যেন তার একবুক অনুভূতি দানিয়াকে দিয়ে যায়। অনুভূতি গুলো জটলা করতে করতে সময়টা কিভাবে চলে গেছে দানিয়া বুঝতেই পারেনি। কিন্তু বারবার মনে হয় মানুষটা কবে আমার সামনে আসবে।
,
,
মেয়েকে ভালো থাকতে দেখে দানিয়ার মাবাবা খুব খুশি। তারা এসেছিলো দানিয়ার অতিত জানতে কিন্তু কি জানবে তারা নিজেও জানে না। অবশ্য ডক্টর মেহেরাবের সাথে ফোনে কথা বলার সময় উনি বলেন, "যার অতিত সে নিজের বের করে নিবে"।
,
ডক্টর নেহেরাবের কথা মিস্টার ওয়াহিদের বুঝতে কষ্ট হয় না। কারণ দানিয়ার অতিত দানিয়া নিজেই খুজে নেবে। তবে মেয়ের এই ভালো থাকা দেখে দেখে তারা আর চিন্তা করেন না। এমনকি সিদ্ধান্তও নিয়্র ফেলেছেন যে এখন থেকে বাংলাদেশেই থাকবেন মেয়েকে নিয়ে।
,
এই একমাসে অচেনা মানুষটাকে খুজে পাওয়ার ইচ্ছাটা যেন বেড়েই চলেছে দানিয়ার মধ্যে।
,
মেয়ের কষ্ট আর হয়না ঠিকই কিন্তু মেয়েটা দেশে আশার পর থেকেই সারাদিন হাসি খুশি থাকলেও সকাল বেলা যেন খুব উদাসীন থাকে।
,
মিস্টার ওয়াহিদ নিজে তো আর মেয়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে পারেন না তাই স্ত্রীকে দায়িত্ব দিলেন।
,
দানিয়া ছোট্ট বাচ্চার মত করে মায়ের কোলে চুপটি করে শুয়ে আছে। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
,
-আচ্ছা দানিয়া মা, তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?
,
- পারমিশন নেওয়ার কি আছে মা জিজ্ঞাসা করোতো!
,
-না মানে বাংলাদেশে আসার পর থেকে তোকে খুব হাসিখুশিই দেখেছি। শুধু মাত্র সকাল্টা ছাড়া।
,
দানিয়া শুয়ে থাকা অবস্থায় মাকে জড়িয়ে ধরে,
-জানো মা, সারা রাত টা আমি খুব মজাই মজাই কাটাই। ভালবাসার মানুষটার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো, তার কাধে মাথা রেখে তার পাশে বসে তার বলা কিছু কবিতার লাইন শুনে নিজেকে হারিয়ে ফেলা। এভাবেই রাতটা কাটে কিন্তু সকাল হলেই যখন বুঝতে পারি মানুষটা একটা ভ্রম তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।
,
দানিয়া মায়ের সাথে খুব ফ্রি তাই নিজের মনের অনুভূতিগুলো মাকে জানিয়ে দেয়।
,
-কিন্তু তুই যাকে স্বপ্ন দেখে ভালোবেসেছিস তার অস্তিত্ব তো নাও থাকতে পারে।
,
-জানো মা কেন জানি মনে হয়। সে আসবে আমার জীবনে। বার বার একটা কথায় বলে আগের বার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারিনি। কিন্তু এবার সে আমাকে তার মনের ভাষা জানাবেই।
,
- একটা স্বপ্ন নিয়ে এভাবে পড়ে থাকিস না মা।
,
- মা এটা কোনো স্বপ্ন না। স্বপ্ন তো মানুষ ভুলে যায় কিন্তু এই অনুভূতি গুলো এমন যে আমার মনে গিথে আছে। আমি কোনো ভাবেই ভুলতে পারিনা।
,
মিসেস ওয়াহিদ মেয়ের সাথে আর তর্কে জড়ালেন না। যায়হোক মেয়েটা ভালো তবে আছে এটাই শান্তি।
এভাবে আরো কয়েকদিন চলে যায়। দানিয়ার সাথে অনেকেরই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে রায়মা,রিয়া,তানিয়া জানের দোস্ত হয়ে উঠেছে।
,
দানিয়া একদিন বাসায় ফিরে মাবাবাকে জানায় যে সে সিলেট বেড়াতে যেতে চায়। মাবাবা প্রথমে রাজি না হলেও রিয়া এসে জোর করায় তারা রাজি না হয়ে পারে না। তাছাড়া মেয়েটা একটু ঘুরতে গেলে স্বপ্ন ওসব আজগুবি চিন্তাও হয়তো ভুলতে পারবে। তাই তারা রাজি হয়ে যায়।
,
কালকেই সিলেট যাবে। কিন্তু কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবে না। তানিয়া নিজেদের প্রাইভেট কার নিবে যাওয়ার জন্য। কারণ চারজন যাওয়ার এটাই পারফেক্ট উপায়। সাথে আশে পাশের পরিবেশ কে উপলব্ধি করতে পারবে।
,
পরদিন সকালে মাবাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রায়মা,রিয়া,তানিয়া, আর দানিয়া সিলেটের উদ্দেশ্যে বের হয়।
,
পথমধ্যে,
দানিয়া রিয়াকে জিজ্ঞাসা করে,
- আচ্ছা আমরা সিলেটের কোথায় যাচ্ছি সেটাতো জানালি না?
,
রিয়া- তানিয়ার মামার বাসা সেখানেই যাচ্ছি আমরা।
,
-জায়গাটার নাম কি?
,
রায়মা বলল- কেন শ্বশুর বাড়ি বানাবি নাকি? জায়গার নাম শোনার এতো ইচ্ছা কেন?
,
-আরে না এমনিতেই জিজ্ঞাসা করছি।
,
তানিয়া- বিজয় নগর।
,
-হোয়াট।
দানিয়া একরকম চিল্লে কথাটা বললো।
,
-কি ব্যপার তুই এতো অবাক হলি কেন? চিনিস নাকি জায়গাটা?
সবাই একসাথে জিজ্ঞাসা করলো।
,
-না মানে, কিছু না এমনিতেই বললাম।
দানিয়ার মাথা ভনভন করতে লাগলো। বিজয়নগর নামটা তো আগেও শুনেছে। সেই স্বপ্ন! রিতু রিমনের গন্তব্য! কিন্তু কেও সেখানে যাতে পারে না যাওয়ার আগেই মরে যায়।
,
রাস্তার মাঝে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
চারজন মিলে জোগেজাগে গাড়িটা ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ধারে নিয়ে যায়। এখন কি করবে তারা ভেবে পায়না।
,
তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় কারো কাছথেকে হেল্প চাইবে। হঠাৎ রাস্তায় দিয়ে একটা ইস্কর্পিয়ন কার আসতে দেখে। তারা ইশারা করে যে তাদের হেল্প লাগবে?
,
গাড়িটা ওদের সামনেই রাখে। ৫০ এর কাছাকাছি বয়সের একজনকে বের হতে দেখে সবাই কিন্তু দানিয়া ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকায় লোকটার দিকে তাকানো হয়না।
,
-এনি প্রব্লেম?
,
-আসলে আংকেল আমাদের গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।
,
-আচ্ছা, তোমরা আমার সাথে চলো। সামনেই গ্যারেজ আছে ওখান থেকে মিস্ত্রি নিয়ে আসা যাবে।
,
-আপনি যদি একটু গিয়ে মিস্ত্রিকে খবর দিতেন খুব উপকার হতো।
,
-তা দেব। কিন্তু জায়গাটা ভালো না। তোমরা গাড়িতে ওঠো। মিস্ত্রি এসে ঠিক করে গ্যারেজে নিয়ে গেলে তোমাদের গাড়িও পেয়ে গেলে নিজেরাও সুরক্ষিত থাকলে।
,
লোকটার কথা শুনে সবাই ভরসা পায়। তারা গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখে দানিয়া এখনও দাড়িয়ে আছে। ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত।
তাই রিয়া দানিয়া নাম ধরার আগেই,
লোকটা বলে বলে,
-রিতু গাড়িতে এসে বসো।
,
বারবার রিতু নামটা শুনে রিতু এবার সত্যিই মনে হচ্ছে যে তার পুনর্জন্ম এটা। তার মানে স্বপ্ন অদেখা সেই মানুষটাই আগের জন্মের রিমন? রিমন আর সেই কবিটা যদি একজনই হয় তাহলে কেন একজনের চেহারা ইস্পষ্ট দেখা যায় আর আরেকজনের আবছা?
,
-দানিয়া ওর নাম। (রিয়া লোকোটাকে বলল)
,
এবার দানিয়া লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলল,
-আমান ভাইয়া?
,
রায়মা,রিয়া, তানিয়া দানিতার মুখে নামটা শুনে অবাক হয়ে যায়।
,
সবাই একসাথে জিজ্ঞাসা করে,
-তুই ওনাকে আগে থেকেই চিনিস?
,
লোকটা বলে- না ও আমাকে কিভাবে চিনবে।হয়তো পরিচিত কারো নাম আমান আর তার চেহারার সাথে আমার মিল পেয়েছে। তাই হয়তো আমাকে আমান ভাইয়া বলেছে।
,
সবাই গাড়িতে বসে আছে। দানিয়ার এখন সব পরিষ্কার যে তার দেখা স্বপ্নগুলো ছিলো তার আগের জন্মের।
,
হঠাৎ সামনে থেকে একটা বড় ট্রাক আসতে থাকে।
,
দানিয়া গাড়িটাকে দেখে চমকে ওঠে। যেন আগেত বারের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। লোকটা গাড়ি সাইড করার আগেই বড় গাড়িটা এসে ধাক্কা দিয়ে দেই। সবাই গাড়ি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে।
,
দানিয়ার চোখ নিভুনিভু হয়ে আসে। হঠাৎ সামনে কারো অস্তিত্ব লক্ষ্য করে।
,
যদি চলে যাও
আবার ডেকে নিবো
যদি পালিয়ে যাও
ধরে নিবো।
শুন্য আমি
তুমি ছাড়া।
থাকতে চাইনা
তুমি হীনা।
,
অজান্তেই দানিয়ার মুখ থেকে বের হয়ে যায়
,
- রিমন!!!!!!
,
-হ্যা রিমন।
কথাটা বলে রিমন দানিয়ার হাতে হাত রাখে।
,
হাতের স্পর্শ পেয়ে দানিয়ার যেন মনে হয় ও তার আগের জন্মেই ফিরে গেছে। সেই আগের জায়গায় আছে। যেখানে আগের বার নিজেদেত অনুভুতি না জানিয়ে পৃৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হয়।
তাই দানিয়া আবারো মুখ ফসকে বলে ফেলে,
-আগেরবার ভালোবাসার কথা জানাসনি আজকে তুই জানিয়ে দে। যদি আবার না বলায় হয়ে থাকে।
,
এবার আর কোনো কিছুই না বলা থাকবে না।
তোকে যতটুকু ভালোবেসেছি হাজারবার জন্ম নিলেও আমার এই ভালোবাসা শেষ হবে না। আগের বারের আর এবারের ভালোবাসা একসাথে তোর সামনে নিয়ে বলছি। আমি তোকে ভালোবাসি আমার জীবনের থেকেও তুই কি আমাকে ভালোবাসবি।
,
-ভালোবাসি রিমন। তোকে অনেক ভালোবাসা এবার আর তোকে ছাড়বো না। আমাকে ফাকি দিতে পারবিনা।
,
-তুইও তবে ফাকি দিয়েছিলি আমাকে।
,
-আর ফাকি দেবনা রিমন। সারাজীবন তোর পাশে থাকবো।
,
রিমুন মুচকি হেসে জবাব দেয়,
-সারাজীবন নারে। সারামরণ।
,
-মানে কি বলছিস তুই? আর এখন আমি কোথায়?
,
-আয় তোকে দেখাচ্ছি।
এই বলে দানিয়ার হাতটা ধরে রিমন দানিয়াকে ঊঠায়। দানিয়া দাড়িয়ে পিছন ফিরে অবাক হয়ে যায়। ওতো এখনও রাস্তায় পড়েই আছে। বাকিরা নড়াচড়া করছে কিন্তু দানিয়ার নিজের দেহটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।
,
-সব বুঝতে পারছিস তো? আমাকে ছাড়াতো একজমন বেচে ছিলি। কিন্তু বিধাতা আমাকে আর দুনিয়ায় পাঠায়নি রে। এতো দিন পর এটাই হয়তো তার ইচ্ছা ছিলো। তুই আবার ফিরে এসেছিস। এখন থেকে সারাজীবন মরবো একসাথে। দানিয়া মরলেও নিজের ভালোবাসা ফিরপেয়েছে এটাই তার প্রাপ্তি। বেচেথেকে বলা হয়নি তো কি হয়েছে মরে গিয়ে তো বলা হল "ভালোবাসি"। দানিয়া, সরি, রিতু রিমনের কাধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাদের গন্তব্যে যেতে থাকে।
যাওয়ার পথে রিমন পিছন ফিরে সেই লোকটা টাকে চোখের ইশারায় বলে দেই।
,
ধন্যবাদ, আমান ভাইয়া।
,
,
,
সমাপ্ত।
,
বানান ভুল হলে মাফ করবেন।
,
বিঃদ্রঃ আমিও পুনর্জন্মে বিশ্বাসী না। এটা জাস্ট একটা গল্প। তাই বাস্তবতা দিয়ে দেখবেন না আশাকরি।
1
9
Nice story