এইখানে ছিল কালো গ্রামখানি, আম কাঁঠালের ছায়া, টানিয়া আনিত শীতল বাতাস কত যেন করি মায়া। তাহারই তলায় ঘরগুলি ভরে মমতা মুরতি হয়ে, ছিল যে তাহারা ভাইবোন আর বউ ছেলেমেয়ে লয়ে। সুখের স্বপন জড়ায়ে ঘুরায়েছিল যে তাদের বেড়ে, আকাশ হইতে আসিত আশিস দেবর ভবন ছেড়ে।

গঞ্জের হটে সওদা বেচিতে বউ যে কহিত কানে, “আমার জন্য নয়ানজুড়ির শাড়ি যেন কিনে আনে।” হাটের ফিরতি পিতারে বেড়িয়া ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, হাসিত নাচিত বিস্কুট আর চিনির পুতুল পেয়ে। গাজীর গানের বসিত আসর, গায়েনের সুর ধরি, যুগ যুগান্ত পার হয়ে কত আসিত কাহিনী পরী।

কিসে কী হইল, পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি, সারা গাঁও ভরি আগুন জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি। মার কোল হতে শিশুরে কাড়িয়া কাটিল যে খানখান, পিতার সামনে মেয়েরে কাটিয়া করিল রক্তস্নান। কে কাহার তরে কাঁদিবে কোথায়; যূপকাষ্ঠের গায়, শত সহস্র পড়িল মানুষ ভীষণ খড়গ ধায়।

শত শিখা মেলি অগ্নিদাহন চাহি আকাশের পানে, হয়তো-বা এর ফরিয়াদ করি ঊর্ধ্বে নিশ্বাস হানে। আকাশে আজিকে নাহি কোনো পাখি, সুনীল আরোসি তার, দিগন্তে মেলি এ ভীষণ রূপ দগ্ধি হে অনিবার। মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল ভস্মাবশেষ গ্রাম, দাঁড়ায়ে রয়েছে বিষাদ-মলিন দগ্ধ দুটি আধপোড়া খাম।

ওইখানে ছিল কুলের গাছটি, স্খলিত দগ্ধ-শাখ, পাড়ার যত-না ছেলেমেয়েদের নীরবে পড়িছে ডাক। আর তো তাহারা ফিরে আসিবে না, নাড়িয়া তাহার ডাল, পাড়িবে না ফল দস্যু ছেলেরা অবহেলি মার গাল। সিঁদুরে আমের গাছ ছিল হোথা, বছরের শেষ সনে, শাখা ভরা আম সিঁদুর পরিয়া সাজিত বিয়ের কনে। সে গাছে তো আর ধরিবে না আম বোশেখ মাসের ঝড়; সে ছেলেমেয়েরা আসিবে না পুনঃ আম কুড়াবার তরে। সারা গাঁওখানি দগ্ধ শ্মশান, দমকা হাওয়ার ঘায়, দীর্ঘনিশ্বাস আকাশে পাতালে ভস্মে উড়িয়া যায়।

3
$
User's avatar
@Rahat_2020 posted 4 years ago

Comments

Subscribe back Please

$ 0.00
4 years ago