শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল

4 49
Avatar for Pluto.725
4 years ago

শ্রোডিঞ্জার সাহেবের একটা বিড়াল ছিলো যা এই পৃথিবীতে দ্বিতিয়টি নেই।মহাবিজ্ঞানী আইন্সটাইন ও বলেছিলো এমন বিড়াল থাকতে পারে না কিন্তু তাকেও শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে হয়েছে যে বিড়ালটি আছে।তবে,শ্রোডিঞ্জার সাহেব নিজেও বলতেন,আমার কাছে এমন কোনো বিড়াল নেই।বিড়ালটি মূলত কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত।

বিড়াল সম্পর্কে জানার আগে আমাদের একটু মধ্যযুগে যেতে হবে, সন ১০৬৬ ইংল্যান্ডের আকাশে এক প্রকান্ড ধূমকেতু দেখা দিলো যা দেখে সবাই আতংকিত,এখন কি হবে?তখন ধারণা করা হতো ধূমকেতু খারাপ খবর নিয়ে আসে। আকাশে ধূমকেতু দেখা মানে রাজার মৃত্যু। ১৬৮২ সালে আবার যখন ধূমকেতু দেখা যায় তখন শখের জ্যোতির্বিদ হ্যালী ছুটে যান এক জ্ঞানী ব্যাক্তির কাছে।

জ্ঞানী ব্যাক্তি বললেন,এ নিয়ে দুশ্চিন্তা হবার কিছু নাই। এই বস্তু আবার আকাশে দেখা যাবে ১৭৫৮ সনে।

হ্যালী জিজ্ঞেস করলো কিভাবে বলছেন?

জ্ঞানী ব্যাক্তি বললো আমি হিসাভ করেছি। ধূমকেতু সূর্যের চারদিকে Ellipse পথে ঘুরছে,ঘূর্ণন এর সময় Inverso Square Law সূত্র মেনে চলছে।

হ্যালী জানতে চাইলো সূত্রটা কি?

কমেটের উপর বল সূর্যের দূরত্ব স্কয়ারে পরিবর্তিত হয়।

শুধু ধূমকেতু নয়, গ্রহ-নক্ষত্র সব এই সূত্র মেনে চলে, এই সম্পর্কে একটি বই আছে, Mathematical Principles of natural philosophy.

এই জ্ঞানী ব্যাক্তি হলো,স্যার আইজাক নিউটন।

এক চন্দ্রে জগত আলো আর এক নিউটনে পদার্থবিজ্ঞান। কিন্তু দেখা গেলো বেশ কিছু গবেষণার ফল নিউটনের ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিক্স দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।যেসব ফলাফল ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিলো না তার মধ্যে একটি হলো "ব্ল্যাক বডি রেডিয়েশন "।

এর মাঝে হাইজেনবার্গ " অনিশ্চয়তার সূত্র" নামে একটি সূত্র দিলো যাতে বলা হলো, কোনো বস্তুর গতি এবং অবস্থান একসাথে বের করা যাবেনা। অনিশ্চয়তা থাকবে। এ বিষয়ে আইন্সটাইন বলেছিলেন এসব আমাদের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হচ্ছে। তখন তিনি তার বিখ্যাত উক্তি বলেছিলেন, "God doesn’t plays dice" আইন্সটাইন হাইজেনবার্গ এর সূত্রটি ভুল প্রমাণে উঠে পড়ে লাগলেন এবং একটি চিন্তা পরীক্ষা করলেন। তাহলো,

যদি একটি বক্সে কিছু ফোটন আছে এবং বক্সে সাটার দেয়া।সাটার একটি করে ফোটন বের করতে পারে। যেহেতু সাটার স্পিড নির্ভুলভাবে মাপা যাবে এবং একই সঙ্গে ফোটনের এনার্জিও মাপা যাবে,কাজেই ফোটনের অবস্থান ও গতি নির্ভুলভাবে মাপা যাবে। কাজেই অনিশ্চয়তার সূত্র মিথ্যা এবং কোয়ান্টাম থিওরি মিথ্যা।

কিন্তু নীলস বোরের মাথায় হটাৎ চিন্তা এলো, বাক্স থেকে যদি একটি করে ফোটন বের করা মাত্র বাক্সটি হালকা হবে।কারণ বস্তু এবং শক্তি একই।ফোটনের ওজন আছে।এটি ফোটনের শক্তিতে অনিশ্চয়তা নিয়ে এলো।

আইন্সটাইন যুক্তি মানতে বাধ্য হলো,তিনি একটা চিঠিতে লিখলেন, "I am convinced that this theory undoubtedly contains a piece of definitive truth."

তিনি বিশ্বাস করতেন পদার্থবিদ্যা paradox এর কারখানা হতে পারে না।

এমন বিশ্বাস ছিলো Erwin Schroedinger এর অথচ তিনি কোয়ান্টাম থিওরির একজন,তরঙ্গ সমীকরণ এর আবিষ্কারক। কিন্তু তিনি চেষ্টা করছিলেন কোয়ান্টাম থিওরির ভুল প্রমাণ করার। তিনি তা করতে তার বিড়াল নিয়ে চিন্তা পরীক্ষা ব্যাখ্যা করলেন যা থেকে এসেছে প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি, মাল্টিভার্স থিওরি।

শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল পরীক্ষাটা এমন,

মনে করি একটা বক্সে একটা বিড়াল বন্ধ করে রাখা হয়েছে।বিড়ালের এক পাশে বিষাক্ত গ্যাস রাখা হয়েছে। বোতলটার উপর একটা হাতুড়ি। হাতুড়ি একটা গাইটার কাউন্টারের সাথে যুক্ত।গাইটার কাউন্টার এর পাশে রাখা হয়েছে একটুকরো ইউরেনিয়াম।

রেডিও একটিভ ভাঙন একটি কোয়ান্টাম ইভেন্ট কখন তা হবে তা আগেভাগে বলা যাচ্ছে না।

ধরা যাক ৫০% সম্ভাবনা ইউরেনিয়াম অ্যাটম এক সেকেন্ড পরে ভেঙ্গে যাবে।যেই মূহুর্তে ইউরেনিয়াম ভাঙবে গাইটার কাউন্টার সচল হবে। হাতুড়ি আছড়ে পড়বে বোতলটার উপর এবং বিষ্ক্রিয়ায় বিড়লাটি মারা যাবে। তবে বক্স খোলার আগ পর্যন্ত জানা যাবে না বিড়লাটি জীবিত না মৃত। বক্স খোলার আগ পর্যন্ত বিড়ালটি একই সাথে জীবিত ও মৃত।

বিড়ালটির অবস্থান বর্ণনার জন্য জীবিত এবং মৃত দুই অবস্থার ওয়েভ ফাংশন লাগবে।

যখন বক্স খোলা হবে তখন বিড়ালটির wave function collapse করবে এবং আমরা দেখতে পারবো বিড়ালটি জীবিত না মৃত।

তিনি বললেন, আমরা দেখবো তখনই ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তার আগে না। এটা কেমন কথা?

দেখা গেলো এটাই সত্যি কথা এবং এই কোয়ান্টাম থিওরি ব্যাবহার করে এটম বোমা তৈরি করা হয়েছিলো!

সূত্রঃ কাঠপেন্সিল(হুমায়ূন আহমেদ)

11
$ 0.00
Avatar for Pluto.725
4 years ago

Comments

হুমায়ুন আহম্মেদ এর গল্প গুলো অসাধারণ।

$ 0.00
4 years ago

Great

$ 0.00
4 years ago

Nice post

$ 0.00
4 years ago