র্যাগিং যে একটা মানুষের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা কেবল ভুক্তভোগীই জানে। একটা হাসিখুশি চঞ্চল প্রকৃতির মানুষকেও একদম ভেতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে এই র্যাগিং। আর যারা এই ঘৃণ্য কাজটি করে এবং যারা এদের সাহায্য করে তারা সবাই সমান অপরাধী।
আর এ র্যাগিং নিয়েই নির্মিত বলিউডের '১৩ সালের মুভি ' Table no. 21'। গল্পের প্রথমে দেখা যায় এক দম্পতি লটারিতে জিতে ফ্রিতে ফিজি যাচ্ছেন। দম্পতি টি ৫ বছর আগে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে বিয়ে করে। আর এই লটারি বিজয়ী টিকিটে তাদের ৫ম বিবাহবার্ষিকীতে ফিজিতে ট্যুরে যায়। প্রথমত সেখানের সবাই তাদেরকে ভীষন আপ্যায়ন করে।
তারা যে রিসোর্টে উঠেছে সেই রিসোর্টের মালিক তাদের অভ্যর্থনার্থে একটা গেম এর ব্যবস্হা করে। If You Lie,You Die। ৮ টি প্রশ্ন থাকবে এ গেম এ জিতলে ১০ মিলিয়ন ফিজিও মুদ্রা ভারতীয় টাকায় ২১কোটি। প্রথম প্রশ্ন ১কোটি ২য় প্রশ্ন ২ কোটি এভাবে আগাবে। শর্ত হলো খেলার মাঝে তারা গেম অসমাপ্ত রেখে চলে যেতে পারবেনা,হ্যা বা না এ উত্তর দিতে হবে সেই সাথে প্রতেকটা ধাপে একটা কাজ দিবে যেটা করতে হবে।মিথ্যে বললে মরতে হবে। সত্য মিথ্যে যাচাইয়ের জন্য তাদের হাতে একটা যন্ত্র বসানো থাকবে, সত্য বললে গ্রিন সিগনাল দিবে আর মিথ্যে বললে লাল। ২১কোটি টাকার লোভে তারা সানন্দেই রাজি হয়ে যায়।
এখন কথা হল, তারা কি পারবে শেষ অব্দি ৮টা প্রশ্ন আর কাজ কমপ্লিট করতে। কেনইবা শুধু তাদের সাথেই এমনটা হবে ???
কিংবা তারা কি এমন করেছিলো যার জন্য এই লাইফ রিস্ক গেমিং এর চক্করে পড়তে হলো?????
তারা কি গেম রেখে পালিয়ে যেতে পারবে???
তারা কি এভাবেই সানন্দে ৫ম বিবাহবার্ষিকী পালন করে আবার ইন্ডিয়া যেতে পারবে?????
কিংবা গেম অফারকারী এই রিসোর্টের মালিক আসলেই কে????
সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একটি একটি করে মুভিটিতে পেয়ে যাবেন। যারা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক মুভি পছন্দ করেন এবং Ragging কি জিনিস জানেন না তারা নিঃসন্দেহে দেখতে পারেন হতাশ হবেন না ।
গল্প,থ্রিল,ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক,অভিনয় সবই খাপে খাপ ছিল। এন্ডিং এর সিনটা দেখে চোখের কোনায় এক বিন্দু পানি টের পেয়েছিলাম। বলিউডের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড থ্রিলার মুভি বলতে হবে। আমার রিভিউ দেখার পরও যদি আপনার মুভিটি দেখতে ইচ্ছা না করে মনকে জোর করে মানিয়ে দেখতে বসুন। শেষের মেসেজটা বর্তমান সমাজের কিছু লোকেদের জন্য। একটা স্ট্রং মেসেজ পাবেন। অসাধারণ একটি মুভি।
📌 ভালোলাগা
মুভির ডিরেকশন পারফেক্ট ছিলো। আদিত্য দত্ত এখানে র্যাগিংকে সামাজিক ব্যাধির পাশাপাশি একটি গুরুতর অন্যায় হিসেবে প্রেজেন্ট করেছেন। পরেশ রাওলায়ের মনমাতানো অভিনয়ের পাশাপাশি রাজীব খানদেয়ালের ডায়লগ ডেলিভারি নজর কাড়বে। টিনা দেশাই তার রোল মোটামুটি ভালো ক্যারি করেছেন। ক্যামেরার কাজ, এডিটিং আর পরেশ রাওয়ালের প্রত্যকটি ডায়লগ অসাধারণ। শুধু থ্রিলারপ্রেমী নয়, ভার্সিটির বড় ভাই যারা গেস্টরুম নামক কালচারে আসক্ত তাদেরকে বিশেষভাবে সাজেস্ট করছি!!
📌 কিছুকথা
অন্যের অপমান দেখার বড় নেশা। আর এই নেশা এমনই নেশা যে, অন্যকে বিব্রত করে, অপমান করে, লাঞ্চিত করে মানুষ বিনোদন নেয়! কেন জানি মনে হয়, সুষ্ঠু বিনোদনের তার বড়ই অভাব! এক্ষেত্রে ভার্সিটির র্যাগিংএর সাথে মোটামুটি অনেকেই পরিচিত। যারা র্যাগিং করে, তারা এটাকে নিছক ঠাট্টা মনে করে। নতুন কোনো শিক্ষার্থীকে কষ্ট দিয়ে, তার মনকে সংকুচিত করে তারা আনন্দ পায়। কিন্তু সেইম ঘটনা যখন তার জীবনে ঘটলে সে কি ঐ র্যাগিংএর অপমানটা বুঝতে পারে??
📍 To know, that you don't know is very important.
Yeaa... You sai absolutely right dear sister