ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ধনঞ্জয় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। লালবাজার থানার পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বের করেছে ধনঞ্জয়কে। বেদম পিটানি আর চাপের মুখেও সে একই কথা বলে চলেছে " আমি কিছু করিনি স্যার"। ধনী পরিবারের একমাত্র মেয়ের ধর্ষণ ঘটনায় নড়েচড়ে উঠেছে সুশীল সমাজ। পত্রিকায় নিউজের পর নিউজ হচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন 'অপরাধীর বিচার চায়'। জনতা, মিডিয়া এবং রাষ্ট্রীয় চাপের মুখে প্রমাণ না হলেও প্রধান আসামি হিসাবে ধনঞ্জয়ের ফাঁসির রায় আসে আদালত থেকে। অবশ্য আরো কিছুদিন বেঁচে যেতে পারতো ধনঞ্জয় কিন্তু কেস চালানোর মত অর্থ অবশিষ্ট নেই ধনঞ্জয়ের পরিবারের কাছে। শেষ অবলম্বন ভিটেটুকুও বন্ধকী রাখা হয়ে গেছে। অগত্যা কেস আর চললো না। ধনঞ্জয়ের ফাঁসির রায় এবং তা কার্যকর হয়ে গেল। অবশেষে একটি ধর্ষণ মামলার পরিসমাপ্তি হল। কিন্তু আদৌ কি হল?
কিছু বছর পরের ঘটনা। ধর্ষণ মামলা রিওপেন হল। শহরের এক বড় উকিল নিজে এগিয়ে এলেন। প্রমাণ হল যে, ধনঞ্জয় অপরাধী নয়। মেয়ে নিজ ইচ্ছায় শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো প্রেমিকের সাথে। বাড়িতে ধরা পড়ার পর বেদম পিটানিতে মারা যায় মেয়েটি। ধনী পরিবার, আর পুলিশের কারসাজিতে বাড়ির দারোয়ান ধনঞ্জয়কে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ষণের মত এমন সেনসিটিভ ইস্যু আর জনতার বিচার চায় মিছিল মিটিং এর চাপে প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও দেশের সামনে এক দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ফাঁসির শান্তি হয়ে যায় ধনঞ্জয়ের। কিন্তু পুলিশ যদি সঠিক নিয়মে তদন্ত করতো, মিঠিয়া যদি ভুলভাল রিপোর্ট না করে জনতাকে ক্ষেপিয়ে না তুলতো, জনতা যদি আদালতের উপর চাপ না দিতো, সমাজ যদি অাবেগে ক্ষেপে না উঠতো, আদালত যদি সঠিক নিয়মে পরিচালিত হতো তবে কি এই নির্দোষ মুক্তি পেত না? প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পেত না?
ভাবুন! নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন!
আমি এতক্ষণ কথা বলছিলাম অরিন্দম শীল পরিচালিত ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ধনঞ্জয় মুভিটি নিয়ে। মুভির বিষয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে। একুশ শতকে ভারতের ইতিহাসে একমাত্র নিরপরাধ ফাঁসি হওয়া ব্যক্তি ছিলেন ধনঞ্জয়। মুভির ঘটনাক্রম হলো নব্বইয়ের দশকে কলকাতায় নাবালিকা হেতল পারেখের ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। মামলায় ধনঞ্জয়ের বিপক্ষের আইনজীবীর একমাত্র হাতিয়ার ছিল সার্কামস্ট্য়ানিশিয়াল এভিডেন্স বা পরিস্থিতির সাপেক্ষে পাওয়া প্রমাণগুলি। তার ওপরে নির্ভর করে মামলাটি কীভাবে এগিয়েছে ও তার পরিণতি নিয়েই এই ছবি।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের নাম খবরের কাগজের শিরোনাম হয় ১৯৯০ সালে। সেই বছরের ৫ মার্চ কলকাতার পদ্মপুকুর এলাকার আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টের চারতলার ফ্ল্যাটে ১৮ বছর বয়সের আইসিএসই পরীক্ষার্থিনী খুন হন। ধনঞ্জয় ছিল সেই অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তারক্ষী। সন্ধেহের বশে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। অভিযোগ ওঠে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই কিশোরীকে। চলে দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারপর্ব। শেষে বাঁকুড়ার কুলুডিহি গ্রাম থেকে কলকাতায় কাজ করতে আসা ধনঞ্জয়কে আটক করা হয়। দীর্ঘ সুনানি শেষে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে, এবং ২০০৪ সালের ১৪ অগস্ট তাঁর ফাঁসি হয়।
দীর্ঘ ১৪ বছরের বিচারপর্বে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রথমবার ফাঁসির নির্দেশ পিছিয়েও যায়। তবু শেষে রায় হয়— মৃত্যুদণ্ড। শোনা যায়, ফাঁসির আগে সেই সময়ের কারাকর্তার কাছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় একটি আর্জি করছিলেন। বলেছিলন, ‘আপনি বড় অফিসার। দেখবেন, "কোন অপরাধী যেন বিনা অপরাধে শাস্তি বা পায়, তদন্ত যেন ঠিকঠাক হয়।" একজন ফাঁসির আসামির এমন শেষ ইচ্ছায় অন্তত বোঝা যায় এক নির্দোষের ফাঁসি হতে চলেছে।
ছবিতে অভিনয় করেছেন একঝাঁক গুণী অভিনেতা অভিনেত্রী। সর্বোপরি উঠতি অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য যেভাবে ছবি জুড়ে নিজের অভিনয় প্রতিভা তুলে ধরেছেন তা অনবদ্য। অরিন্দম শীল যে পরিচালক হিসাবে অনির্বাণের ওপর ভরসা করে ভুল করেননি, তা প্রমাণিত অনির্বাণের অভিনয়ে। সংলাপ পরিবেশন, বাচনভঙ্গি সর্বোপরি তাঁর কণ্ঠস্বরে অনির্বাণ মন কেড়েছেন দর্শকের। অন্যদিকে মিমি চক্রবর্তী , সুদীপ্তা চক্রবর্তী প্রত্যেকেই নিজের জায়গা থেকে সেরা অভিনয়টি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অরিন্দম শীল যে দক্ষ পরিচালক তা তাঁর একের পর এক হিট ছবিই জানান দেয়। ভিন্ন স্বাদের গল্প বাছাই করে এররকম এক সাহসী কাহিনি বিন্যাস নিয়ে ছবি তৈরি করা সহজ কথা নয়। একটি জানা কাহিনিকে কীভাবে পরতে পরতে নতুনত্ব এনে অন্যচোখে দেখানো যায় তা অরিন্দম শীল দেখিয়েছেন এই ছবিতে।
ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ধনঞ্জয় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। লালবাজার থানার পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বের করেছে ধনঞ্জয়কে। বেদম পিটানি আর চাপের মুখেও সে একই কথা বলে চলেছে " আমি কিছু করিনি স্যার"। ধনী পরিবারের একমাত্র মেয়ের ধর্ষণ ঘটনায় নড়েচড়ে উঠেছে সুশীল সমাজ। পত্রিকায় নিউজের পর নিউজ হচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন 'অপরাধীর বিচার চায়'। জনতা, মিডিয়া এবং রাষ্ট্রীয় চাপের মুখে প্রমাণ না হলেও প্রধান আসামি হিসাবে ধনঞ্জয়ের ফাঁসির রায় আসে আদালত থেকে। অবশ্য আরো কিছুদিন বেঁচে যেতে পারতো ধনঞ্জয় কিন্তু কেস চালানোর মত অর্থ অবশিষ্ট নেই ধনঞ্জয়ের পরিবারের কাছে। শেষ অবলম্বন ভিটেটুকুও বন্ধকী রাখা হয়ে গেছে। অগত্যা কেস আর চললো না। ধনঞ্জয়ের ফাঁসির রায় এবং তা কার্যকর হয়ে গেল। অবশেষে একটি ধর্ষণ মামলার পরিসমাপ্তি হল। কিন্তু আদৌ কি হল?
কিছু বছর পরের ঘটনা। ধর্ষণ মামলা রিওপেন হল। শহরের এক বড় উকিল নিজে এগিয়ে এলেন। প্রমাণ হল যে, ধনঞ্জয় অপরাধী নয়। মেয়ে নিজ ইচ্ছায় শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো প্রেমিকের সাথে। বাড়িতে ধরা পড়ার পর বেদম পিটানিতে মারা যায় মেয়েটি। ধনী পরিবার, আর পুলিশের কারসাজিতে বাড়ির দারোয়ান ধনঞ্জয়কে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ষণের মত এমন সেনসিটিভ ইস্যু আর জনতার বিচার চায় মিছিল মিটিং এর চাপে প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও দেশের সামনে এক দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ফাঁসির শান্তি হয়ে যায় ধনঞ্জয়ের। কিন্তু পুলিশ যদি সঠিক নিয়মে তদন্ত করতো, মিঠিয়া যদি ভুলভাল রিপোর্ট না করে জনতাকে ক্ষেপিয়ে না তুলতো, জনতা যদি আদালতের উপর চাপ না দিতো, সমাজ যদি অাবেগে ক্ষেপে না উঠতো, আদালত যদি সঠিক নিয়মে পরিচালিত হতো তবে কি এই নির্দোষ মুক্তি পেত না? প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পেত না?
ভাবুন! নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন!
আমি এতক্ষণ কথা বলছিলাম অরিন্দম শীল পরিচালিত ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ধনঞ্জয় মুভিটি নিয়ে। মুভির বিষয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে। একুশ শতকে ভারতের ইতিহাসে একমাত্র নিরপরাধ ফাঁসি হওয়া ব্যক্তি ছিলেন ধনঞ্জয়। মুভির ঘটনাক্রম হলো নব্বইয়ের দশকে কলকাতায় নাবালিকা হেতল পারেখের ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। মামলায় ধনঞ্জয়ের বিপক্ষের আইনজীবীর একমাত্র হাতিয়ার ছিল সার্কামস্ট্য়ানিশিয়াল এভিডেন্স বা পরিস্থিতির সাপেক্ষে পাওয়া প্রমাণগুলি। তার ওপরে নির্ভর করে মামলাটি কীভাবে এগিয়েছে ও তার পরিণতি নিয়েই এই ছবি।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের নাম খবরের কাগজের শিরোনাম হয় ১৯৯০ সালে। সেই বছরের ৫ মার্চ কলকাতার পদ্মপুকুর এলাকার আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টের চারতলার ফ্ল্যাটে ১৮ বছর বয়সের আইসিএসই পরীক্ষার্থিনী খুন হন। ধনঞ্জয় ছিল সেই অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তারক্ষী। সন্ধেহের বশে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। অভিযোগ ওঠে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই কিশোরীকে। চলে দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারপর্ব। শেষে বাঁকুড়ার কুলুডিহি গ্রাম থেকে কলকাতায় কাজ করতে আসা ধনঞ্জয়কে আটক করা হয়। দীর্ঘ সুনানি শেষে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে, এবং ২০০৪ সালের ১৪ অগস্ট তাঁর ফাঁসি হয়।
দীর্ঘ ১৪ বছরের বিচারপর্বে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রথমবার ফাঁসির নির্দেশ পিছিয়েও যায়। তবু শেষে রায় হয়— মৃত্যুদণ্ড। শোনা যায়, ফাঁসির আগে সেই সময়ের কারাকর্তার কাছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় একটি আর্জি করছিলেন। বলেছিলন, ‘আপনি বড় অফিসার। দেখবেন, "কোন অপরাধী যেন বিনা অপরাধে শাস্তি বা পায়, তদন্ত যেন ঠিকঠাক হয়।" একজন ফাঁসির আসামির এমন শেষ ইচ্ছায় অন্তত বোঝা যায় এক নির্দোষের ফাঁসি হতে চলেছে।
ছবিতে অভিনয় করেছেন একঝাঁক গুণী অভিনেতা অভিনেত্রী। সর্বোপরি উঠতি অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য যেভাবে ছবি জুড়ে নিজের অভিনয় প্রতিভা তুলে ধরেছেন তা অনবদ্য। অরিন্দম শীল যে পরিচালক হিসাবে অনির্বাণের ওপর ভরসা করে ভুল করেননি, তা প্রমাণিত অনির্বাণের অভিনয়ে। সংলাপ পরিবেশন, বাচনভঙ্গি সর্বোপরি তাঁর কণ্ঠস্বরে অনির্বাণ মন কেড়েছেন দর্শকের। অন্যদিকে মিমি চক্রবর্তী , সুদীপ্তা চক্রবর্তী প্রত্যেকেই নিজের জায়গা থেকে সেরা অভিনয়টি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অরিন্দম শীল যে দক্ষ পরিচালক তা তাঁর একের পর এক হিট ছবিই জানান দেয়। ভিন্ন স্বাদের গল্প বাছাই করে এররকম এক সাহসী কাহিনি বিন্যাস নিয়ে ছবি তৈরি করা সহজ কথা নয়। একটি জানা কাহিনিকে কীভাবে পরতে পরতে নতুনত্ব এনে অন্যচোখে দেখানো যায় তা অরিন্দম শীল দেখিয়েছেন এই ছবিতে।
Excellent post buddy