The Villain Husband
পার্ট : ২৫💜
হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো, তানহার যেন বিরক্তির শেষ হচ্ছেনা, এক্সেম শেষে বাড়ি যাবে তাও পারছেনা, ওদিকে রিদির স্কুল ও ছুটি হওয়ার টাইম হয়ে গেছে, এক রাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা,
বৃষ্টির কারনে ক্যাফেতে অনেক লোক এসে বসেছে, বেশিরভাগ সবাই চা কফি। খাচ্ছে ঝুম বৃষ্টিতে কেওই বাহিরে যেতে পারছে না তাই
ক্যাফেরে আশ্রয় নিয়েছে বেশিরভাগ মানুষ। বৃষ্টিতে চা কফি ভালোবাসেনা এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে, তার ওপরে স্নেহার বানানো কাপকেক।
- খালা কি বৃষ্টি শুরু হলো বলোতো? তানহা আর রিদি ফিরবে কিভাবে,!!
- তুই চিন্তা করিসনা মা, ওরা চলে আসবে,,,,
- রিদির আর তানহার চিন্তায় স্নেহা, তানহার সাইনাসের প্রবলেম আছে, তার ওপরে বৃষ্টিতে ভিজলে তো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে, ভাবতে ভাবতে আনমনে বাহিরে তাকিয়ে স্নেহা,,
স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, বেশিরভাগ বাবা মায়েরা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে গেছে, খুব অল্প বাচ্চারা বাবা মায়ের জন্য ওয়েট করছে তার মাঝে রিদিও একজন,
তারা শুধু ওয়েট করছে না, একে ওপরকে পানির ছিটে দিচ্ছে, দুষ্টুমি তে মেতে উঠেছে,,,,
রিদির জন্য সব বৃষ্টি উপেক্ষা করেই পৌছালো তানহা,
কিন্তু এসে দেখে যার জন্য এতো কষ্ট করলো সে দিব্বি বৃষ্টি নিয়ে খেলছে,
তানহা রিদির সামনে যেয়েই শক্ত করে ধরলো রিদিকে,
- তোর জন্য কতো কষ্ট করে এসেছি জানিস? আর সেই তুই কিনা এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছিস? আজ আপুকে দিয়ে তোকে পেটানি খাওয়াবো চল বাসায় একবার,
- না খালামনি এমন করোনা প্লিজ,
- না আমি বলবোই পাজি মেয়ে, তোর আজ হচ্ছে,
- ওকে বইলো আমিও কালকের কথা মাম্মামকে বলে দিবো হিহি,
- ওরে দুষ্টু এতো চালাকি?
এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি চল,
- আচ্ছা চলো,,
আজ সারাদেশে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, সকালের রুদ্র রাঙামাটি এসেছে, কিন্তু আশিসকে ফোন দিচ্ছে নেটের অবস্থা এতো যে ফোনই ঢুকছে না,বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্র, স্নেহা বৃষ্টি খুব ভালোবাসতো, একবার সে চিঠিতে লিখেছিলো যে সে রুদ্রের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চায়, বৃষ্টির প্রতিটা ফোটাকে তাদের ভালোবাসার কথা জানাতে চায়, কিন্তু আর স্নেহা আর তার সন্তান কোথা রুদ্র তাই জানে না, আনমনে বৃষ্টি দেখতে লাগলো রুদ্র, হাতে থাকা ছাতাটা ফেলে দিলো, আজ হয়তো স্নেহার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে পারছেনা রুদ্র, তবে আজ বৃষ্টির মাঝে স্নেহা অনুভব করার চেষ্টা করছে রুদ্র।
বিকেল হয়ে এসেছে বৃষ্টি থেমে গেছে, তানহার বৃষ্টিতে ভেজার কারনে মাথা ব্যাথা হচ্ছে মনে হয় জ্বর আসবে,
রিদি বসে বসে নৌকা বানাচ্ছে, বৃষ্টির কারনে অনেক যায়গায় হালকা হালকা পানি জমেছে সেই যায়গায় নৌকা গুলো ছাড়বে, লাল, নীল, সবুজ নৌকা।
তানহা রুমে শুয়ে আছে, গুটিগুটি পায় রিদি বাসা থেকে বেড় হচ্ছে কারন তানহা এই সময়ে তাকে বাহিরে যেতে দেয়না।
বাসা থেকে একটু দূর এসেই নৌকাগুলোকে পানি ভাসাচ্ছে রিদি,
ফোনে আশিসকে ঝাড়ি মারতে মারতে যাচ্ছে রুদ্র।
হঠাৎ রিদির নৌকাটা রুদ্রের পায়ের নিয়ে পরে মুচড়ে যায়, রুদ্র খেয়াল করেনি কারন সে ফোনে কথা বলছিলো,
- এএ তুমি আমার নৌকাটাকে নষ্ট করে দিলে,??( কাঁদো, কাঁদো হয়ে রুদ্রকে প্রশ্ন করলো রিদি)
পেছন থেকে কারো এমন মায়াবি কন্ঠ রুদ্রকে থমকে দিলো, রুদ্র পেছনে তাকাতেই দেখলো একটা ছোট্ট মেয়ে দাঁড়িয়ে, চুলগুলো কাধ বেয়ে পড়ছে, মনে হচ্ছে একটা ছোট্ট পড়ি দাড়িয়ে আছে,
রুদ রিদির কাছে এসে হাটু ভাজ করে বসলো,
- সরি লক্ষি সোনা আমি দেখিনি,
- কেনো দেখনি? আমার নৌকাটা নষ্ট হয়ে গেলো।( ঠোট ফুলিয়ে কথাগুলো বললো রিদি)
- হুম নষ্ট করে দিলাম, কিন্তু এখন কি করা যায় বলোতো?? আচ্ছা তোমাকে চকলেট কিনে দেই?
- না মাম্মাম বলেছে অচেনা কারো থেকে কিছু না নিতে,
- ও হ্যা মাম্মাম তো ঠিক বলেছে, আচ্ছা চলো আমরা ফ্রেন্ডশিপ করি তাইলে তো আমি তোমার চেনা হয়ে যাবো। তখন ফ্রেন্ডের কাছ থেকে তো তুমি কিছু নিতেই পারো!!
- কিন্তু আমার তো স্কুলে অনেক ফ্রেন্ড আছে, আর তুমিতো অনেক বড় আমার ফ্রেন্ড হও কি করে??
- হওয়া যায় মামনি, ফ্রেন্ড সবাই হতে পারে, এখন বলো তুমিকি আমার ফ্রেন্ড হবে?
-উম্মম্মম( কিছুক্ষন ভাবার পর) ওকে হবো,
- তাইলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড ওকে?
- ওকে💜( রিদি)
তারপর রুদ্র রিদিকে দোকানে নিয়ে চকলেট কিনে দিলো, রিদি রুদ্রকে চুমু দিয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে এলো।
আশিস আসতে সময় লাগবে, বৃষ্টির হওয়ার কারনে চারিদিক বেশ ঠান্ডা লাগছে এক কাপ গরম কফি খুব দরকার রুদ্রর আসে পাশে কফিসপ খুজতে লাগলো রুদ্র,
- খালা তুমি একটু সামলাও আর আজ তাড়াতাড়ি ক্লোজ করে দিও আমি বাসায় যেয়ে দেখি তানহা আর রিদির কি অবস্থা,
- আচ্ছা মা যা,
ব্যাগ নিয়েই বেড়িয়ে গেলো স্নেহা,
আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে কফিশপ পেয়ে গেলো রুদ্র, দেড়ি না করে ঢুকে পড়লো কফিশপে, স্নেহা তাড়াহুড়ো করে বেড় হতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো, তাড়াহুড়োয় সরি বলে বেড়িয়ে গেলো স্নেহা,
খুব চেনা কারো কন্ঠ পেয়ে রুদ্র এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো, এই চার বছরে এমন ভুল সে প্রায়ই করেছে, পেছন থেকে অনেকেই স্নেহা ভেবে দৌড়ে গেছে, যখন দেখে সে তার স্নেহা না নিরাশ হতে গিয়েছে, আজকের দিনটাকেও তেমনি একটা দিন ভেবে নিলো রুদ্র!!
তিতির অনেকক্ষন ধরে বসে আছে, শ্রাবন পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে,
- আচ্ছা একটা কথা বলি?
- হুম বলো( কাজ করতে করতে উত্তর দিলো শ্রাবন)
- আচ্ছা ভাবির ভাবির বাবুটা হ হয়তো কতো বড় হয়ে গেছে তাইনা? থাকলে আপনাকে মামা বলতো, আর আমাকে কি বলতো? আমিতো ওর ফুপিও আবার মামি ও। আচ্ছা ও কি দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে? ভাবির মতো??
শ্রাবন ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো, তারপর এসে তিতিরের কাছে বসলো।
তিতির মাথা নিজের বুকে সাথে মিশিয়ে বলতে লাগলো,
- হ্যা হয়তো অনেক মিষ্টি দেখতে হয়েছে, আমার বোন টা রুদ্রকে ভুল বুঝে নিজে দূরে সরে গেলো আর সাথে সাথে রুদ্রের সন্তানকেও, দেখো তুমি আমার কাছে আছো আমার সন্তান ও কিন্তু তারপর ও তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে ঘুমাতে দেয়না। আর রুদ্র তো অলরেডি হারিয়ে ফেলেছে তাহলে ওর যন্ত্রনা কতোখানি? আমি সব সময় দোয়া করি আমার বোনটা যেন আবার রুদ্রের কাছে ফিরে আসে। রুদ্র তার সন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনুক।
তিতির আর শক্ত করে শ্রাবনের বুকে চেপে রইলো,
- আমি কখনো আপনাকে ভুল বুঝবো না,
হুম, তুমি ভুল বুঝলে আমি যে বাচবোনা তির। কারন রুদ্রের কতো এতো শক্তি আমার নেই।
- আপু, এএএএ( তানহা)
- একদম চুপ! এখন এ তাইনা দুটোতে মিলে আমাকে জালিয়ে মাড়ছিস কে বলেছিলো ভিজতে,( স্নেহা)
- আপু ইচ্ছা করে ভিজিনি
- চুপ কর তোর ইচ্ছা না থাকলে ভিজলি কিভাবে চাঁদ ফাটিয়ে বৃষ্টি তোকে ভিজিয়েছে??
দরজার সামনে পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিদি, মাম্মাম যে অনেক রেগে আছে তা বুঝতে পারছে সে, তাই মাম্মাম এর কাছে আসার সাহস পাচ্ছেনা সে।
- এদিকে এসো( স্নেহা ডাকলো রিদিকে)
গুটিগুটি পায়ে স্নেহার কাছে আসলো রিদি, নিচের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।
- কি হয়েছে? মাম্মাম টার?
- ভয় লাগছে,( রিদি)
রিদিকে হাত বাড়িয়ে কোলে বসালো স্নেহা,
- কেনো মা? ভয় পাচ্ছো? আমিতো খালামনিকে বকেছি খালামনি দুষ্টুমি করেছে তাই,,উম্মা আমার মেয়েটা তো খুব লক্ষি তাই মেয়েটাকে বকবো না আদর করবো।
- আমার মাম্মাম, বলেই স্নেহাকে জড়িয়ে ধরলো রিদি!
তানহার পাশে বসে আছে স্নেহা জ্বরটা বেড়ে চলেছে তানহার, জ্বরের সময় তানহা মাঝে মাঝেই কেপে ওঠে তাই ওর পাশে থাকতে হয়।
রিদি তানহার পাশেই বসে ছিলো তারপর স্নেহার কোলে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই, স্নেহা তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
নিজের আরেকটা সন্তানের মতো তানহাকে ভালোবাসে স্নেহা, রিদির কষ্ট তাকে কাদায় তেমন তানহার কষ্ট ও। ভাবতে ভাবতে তানহার বালিশেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে স্নেহা,
রুদ্র শুয়ে আছে বিছানায়, বার বার আজকে দেখা হওয়া বাচ্চাটার কথা মনে পড়ছে, হয়তো তার সন্তান ও আজ এতোবড় হয়েছে, হয়তো এভাবেই কথা বলে। আজকের দেখা হওয়া বাচ্চাটাকে রুদ্রের অন্যরকম লেগেছে, মনে হয়েছে খুব চেনা কেও।
একটা ছোট্ট পড়ি যাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে,
কিন্তু বাচ্চাটার সাথে কথা বলতে বলতে তার নামই জানা হয়নি। সে কোথায় থাকে তাও জানা হলোনা।
এতদিন নিজের সন্তানকে দেখার কাছে পাওয়ার আকুতি ছিলো রুদ্রের, কিন্তু আজকের বাচ্চাটাকে দেখার পর বাবা ডাক শোনার লোভ জন্মেছে রুদ্রের ভেতরে,
- কেন স্নেহা? ভুল বুঝে দূরে সরে গেলে, কেন বাবা আর সন্তানকে আলাদা করে দিলে এতো নিষ্ঠুর কি করে হলে স্নেহা!!মনে মনে এগুলো ভেবে আজ যেন রুদ্রের অন্তরটা ছিরে যাচ্ছে, ইচ্ছা করছে নিজেকে শেষ করে দিতে।
-- সকালের রোদ মুখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো তানহার,কাল লাস্ট এক্সেম ছিলো নয়তো বিপদে পড়ে যেত। এই শরীর নিয়ে এক্সেম দেয়া সম্ভব না।
পাশেই কোনোরকম শুয়ে আছে স্নেহা,
- আপু, এই আপু!
তানহার ডাক শুনেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো স্নেহা,
- কি কি? তুই ঠিক আছিস? আবার জ্বর উঠেনি তো বলেই তানহার কপালে হাত দিলো স্নেহা,
নাহ জ্বর নেই, হাফ ছেড়ে বাচলো স্নেহা,
- আপু সারারাত এভাবে ঘুমিয়েছ?
- হ্যা রে রিদিটা আমার কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো, আমি নড়লে ওর ঘুম ভেঙে যেত। তাই এভাবেই শুয়েছি,
- সরি আপু, তোমাকে সারা রাত অনেক কষ্ট দিয়েছি।
- একদম মাইর খাবি, ভাবিস না এমনি এমনি সেবা করেছি এক্সে শেষ আমাকে এখন থেকে কাজে হেল্প করবি।
-তানহা স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে বললো
আমার আপু দুনিয়ার সেরা আপু,স্নেহাও তানহাকে জড়িয়ে ধরলো,
- তানহা আস্তে আস্তে ওঠ শুয়ে থাকলে বেশি খারাপ লাগবে, আমার সাথে ক্যাফেতে চল রিদিকেও নিয়ে যাবো তুই ওকে পড়াবি আর আমি কাজ করবো!!
- আচ্ছা আপু, বলেই তানহা উঠে গেলো।
স্নেহা জিনিসপত্র নিয়ে বেড়িয়ে গেলো,
তানহা রিদিকে নিয়ে কিছুক্ষন পরে রওনা দিলো,
তানহা আর রিদি যাচ্ছে, রিদি তানহাকে হাজারো প্রশ্ন করছে, হঠাৎ তানহার মাথাটা ঘুরে গেলো, শরীর অনেক উইক তাই এমনটা হলো!!
তানহা, পরে যাওয়ার আগেই কেও তানহাকে ধরে ফেললো,
চলবে,,,
prothomei golper lekhok k thanks janai amader maje amon akta golpo post korar jonno......golpo ta pore onek valo laglo, next a apnar kach theke amon aro golpo asa kori amra..... Thank You