গাইয়া বউ

6 11

#গাঁইয়া_বউ।

#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।

#পর্ব_৯

৭ দিন ওরা ঘুরাঘুরি করে,অনেক আনন্দ করে।হানিমুন টা ইঞ্জয় করে।

এবং ৮ম দিনের দিন সবাই মিলে এক সাথে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

আর পথেই একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে ওদের বাসটা এক্সিডেন্ট করে।

আর বাসের অনেকেই আহত এবং নিহত হয়।

আর সেই এক্সিডেন্টে অপূর্ব মনা আর অয়ন হালকা ব্যথা পেলেও গুরতর আহত হয় অর্না।

অনু অয়নের কোলে থাকে বলে ও বেঁচে যায়।

অর্নার অবস্থা দেখে অপূর্ব চিৎকার দিয়ে উঠে।

-অর্না, এ কি হয়ে গেলো।অর্না,এই অর্না কথা বলো।(অপূর্ব)

অনু খুব ভয় পেয়ে গেছে অনু কাঁদছে,অনু অয়নের কোলে।

অয়নও হাউমাউ করে কাঁদছে।

-অনু,তুমি ফুফাবাবার কোলে যাও।আম্মুকে বাঁচাতে হবে, আম্মুকে হসপিটালে নিতে হবে।

এই বলে অয়ন অর্নাকে কোলে করে পাশের একটা হসপিটালে নিয়ে যায়।

অর্নার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়।

ডাক্তার রা বলেন প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে,

রক্তের প্রয়োজন।

-যত রক্ত লাগে আমার শরীর থেকে নিন ডাক্তার,তবুও অর্নাকে ভালো করে দিন।(অপূর্ব)

-জ্বী তাহলে আপনার রক্তের গ্রুপ জানতে হবে,এবং দুজনের রক্তের গ্রুপ মিলতে হবে।

-আমাদের দুজনের রক্তের গ্রুপই

A+ ডাক্তার।আপনি রক্ত নেয়ার ব্যবস্থা করুন।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

এদিকে মনা আর অয়ন বিস্ময়ের সাথে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে।

ওদের মনে হাজারো প্রশ্ন,

কিন্তু এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার মত পরিস্থিতি নেই।অর্নার বাঁচা মরা অবস্থা এখন।

ডাক্তার অপূর্বের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে অর্নার শরীরে দিচ্ছে।

এদিকে মনা বাসায় ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়।

ওর বাবা অর্নার মা বাবাকে জানান,আর অর্নার নানু আবার অপূর্বের বাবা মাকে জানান যে অর্নার অবস্থা খুব খারাপ ও এক্সিডেন্ট করেছে।

মনার বাবা আর অর্নার বাবা মা এক সাথে রওনা দেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

এদিকে অর্নার ট্রিটমেন্ট চলছে।

অয়ন পাগলের মত কাঁদছে আর বার বার বলছে,তোমার কিচ্ছু হবেনা অর্না,

কিচ্ছু হবেনা তোমার।

এখন তো তোমার সুখের সময়।

এই দেখোনা অনু কত কাঁদছে তোমার জন্য।আমরা না নতুন ভাবে জীবন শুরু করবো?তবে কেন তুমি মাঝ পথে এসে আমাদের ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?

আমাকে আর অনুকে কে দেখবে অর্না?তাড়াতাড়ি ফিরে এসো আমাদের মাঝে প্লিজ।আমি আর অনু বাঁচতে পারবোনা তোমাকে ছাড়া।

মনা অয়নকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

-কিচ্ছু হবেনা ভাই,কিচ্ছু হবেনা অর্নার।

ও সুস্থ হয়ে যাবে দেখিস।তুই এভাবে কাঁদিস না।

-ওই দিকে অপূর্বও ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।

মনা আর অয়নের মনে যেন প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার।

অপূর্ব কেন অর্নার জন্য এভাবে কাঁদছে?

আর ও কি করে জানলো অর্নার রক্তের গ্রুপও A+.

কয়েক ঘন্টা হয়ে গেছে কিন্তু অর্নার জ্ঞান ফেরার কোন খবর নেই।

এদিকে অয়নের বাবা আর অর্নার বাবা মা হসপিটালে এসে পৌছে।

-কোথায় অর্না?কোথায়?

-কোথায় আমার বউমা?

অয়ন ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।

-কিছু হবেনা বউ মার,তুই চিন্তা করিস না।

অনু ওর নানা নানুর কোলে গিয়ে কাঁদতে থাকে।

অর্নার বাবা মাকে ধরে অয়ন কান্নায় ভেঙে পরে।

-কি হতে কি হয়ে গেলো মা?আমিতো ওর দুঃখ গুলো মুছে দেয়ার জন্য ওর হাত ধরেছি।আর ও কিনা আমার হাত ছেড়ে দিতে চাচ্ছে?

আমি বাঁচবোনা মা আমার অর্নাকে ছাড়া।

-কিছু হবেনা বাবা,কিছু হবেনা তোমার অর্নার।তোমার জন্য অনুর জন্য ওকে বাঁচতে হবে।

হ্যাঁ বাঁচতে হবে।

এদিকে অপূর্ব হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলছে,

সব দোষ আমার,

আমার কালো ছায়া যত দিন ওর উপর আছে তত দিন ও ভালো থাকতে পারবেনা।

শান্তিতে থাকতে পারবেনা ও।

এই বলে আমার কাঁদতে থাকে।

এই কথা শোনে সবাই অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থাকে।

অর্নার মা অপূর্বের কাছে ধীরেধীরে হেঁটে যেতেই অপূর্ব অর্নার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

সব দোষ আমার মা,আমার জন্য আজ আপনার মেয়ের এই অবস্থা।

আগেও ওকে শান্তি দেইনি আমি,আর যখন ও অয়নকে নিয়ে আবার শান্তির সন্ধানে পা বাড়ালো,তখন

আমার অশুভ ছায়া ওর জীবন টা শেষ করে দিচ্ছে।

আমাকে ক্ষমা করে দিন মা।আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমার জন্যই আজ ওর এই অবস্থা।

-তোমার কোন দোষ নেই বাবা,নিজেকে দোষ দিওনা।সব দোষ ওর কপালের।

কপালের লিখন কি আর বদলানো যায় বলো?কেঁদোনা।কিচ্ছু হবেনা অর্নার।

আর সেই মুহূর্তেই এসে হাজির হয় অপূর্বের বাবা মা।

আর অনু ওর নানা ভাই এর কোল থেকে নেমে গিয়ে দৌড়ে ওর দাদীকে জড়িয়ে ধরে।

-দাদীমা দাদীমা,আমার আম্মু চোখ খোলেনা।এত এত রক্ত বের হয়েছে আমার আম্মুর শরীর থেকে দাদীমা।

-দাদুভাই দাদু ভাই আমার আম্মুর কিছু হবেনাতো?

আম্মু কেন কথা বলেনা?ডাক্তার আংকেল রা আম্মুকে কেন দেখতে দেয়না?

-কিচ্ছু হবেনা তোমার আম্মুর দাদুমনি,কিচ্ছু হবেনা,ঠিক হয়ে যাবে তোমার আম্মু।তুমি কেঁদোনা।

এই দৃশ্য দেখে অয়ন মনা আর অয়নের বাবার আর বুঝতে বাকি নেই অপূর্বই যে অর্নার আগের স্বামী।আর অনু অপূর্বেরই সন্তান।তাইতো অনু ওর দাদা দাদীকে দেখে এভাবে দৌড়ে এগিয়ে গেলো।

তাছাড়া অর্নার মাকে জড়িয়ে ধরে অপূর্বের বলা কথা গুলো স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে অর্নার সাথে অপূর্বের আগের সম্পর্কের কথা।

আর সেই জন্যই অপূর্ব ওর রক্তের গ্রুপ জানে।

আর নিজের ভুল বুঝতে পেরে এইভাবে কান্নাকাটি করছে আর নিজেকে দোষী ভাবছে।

কিছু ক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।

আপাতত চিন্তার কোন কারণ নেই,চার পাঁচ দিন থাকতে হবে এখানে।

অয়ন সবাইকে বাসায় চলে যেতে বলে।

-আপনারা সবাই বাসায় চলে যান,আমি আছি অর্নার সাথে।

-বাবা আমিও থাকি, (অর্নার মা)

-না মা,আপনিও বাসায় চলে যান অনুকে নিয়ে যান।ওকে দেখে রাখবেন।

-আচ্ছা ঠিকাছে বাবা,তুমি যা ভালো মনে করো।

-অপূর্ব ভাইয়াকে নিয়ে বাসায় চলে যা,বাবার খেয়াল রাখিস।

-তুই একা থাকবি এখানে?

-হুম সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে যা,আমি একাই আমার বউ এর কাছে থাকবো।

সবাই অর্নার সাথে দেখা করে বাসায় চলে যায়।

-আম্মু তুমি সুস্থ হয়ে বাসায় চলে এসো ঠিকাছে?

-আচ্ছা মা।

-বাবা আমাকে নানীমার সাথে চলে যেতে বলেছেন,তাই আমি চলে যাচ্ছি।তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রেখো।

-আচ্ছা।তুমিও নিজের খেয়াল রেখো।

সবাই চলে যায়।

রাতে মনা অপূর্বকে জিজ্ঞেস করে,

-কেন লুকিয়েছো আমার কাছে এসব?তুমি বিবাহিত ছিলে আমাকে কেন জানাও নি?আর তুমি ই কি সেই অপূর্ব?যে কিনা অর্নাকে ত্যাগ করেছে শুধু মাত্র ও গাঁয়ের মেয়ে বলে।আর অনু?অনু কি দোষ করেছিলো?ছিঃ ছিঃ আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।আমার অপূর্ব কিনা এত ছোট মনের।

-প্লিজ মনা,আমি মানছি আমি ভুল ছিলাম,কিন্তু এখন আমি অনুতপ্ত।আমাকে ক্ষমা করে দাও।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।

-তুমি আমার স্বামী,এভাবে বলোনা।

যাও শুয়ে পরো,অনেক রাত হয়েছে।

৪দিন কেটে যায়।

আজ অর্নাকে রিলিজ দেয়া হবে।

সকালে অয়ন অর্নার হাত ধরে বসে আছে।

কিছুক্ষণ পর অর্নার ঘুম ভাঙে।

-এখন কি ভালো লাগছে?

-হুম।

-চিন্তা করোনা আজই আমরা বাসায় ফিরবো।

-হুম।

-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

-করো।

-কেন লুকিয়েছো আমার কাছে এসব?কেন বলোনি অপূর্বই তোমার...

-কি বলতাম বলো?কি ই বা বলার ছিলো।চাইনি মনা আপু আর তুমি কষ্ট পাও,কিংবা তাকে খারাপ ভাবো।

সংসার টা এলোমেলো হয়ে যাক।

আমি যেদিন প্রথম তোমার বউ হয়ে তোমার ঘরে আসি।সেদিনই আমি অবাক হয়েছি তাকে দেখে।

কিন্তু কি বলবো বুঝতে পারিনি।

তাই আর কাউকে কিছু বলিও নি।

তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ।

-ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে রেডি হতে হবে।কিছু ক্ষণ পরেই আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেবো।

এই বলে অয়ন অর্নার হাত টা ছেড়ে কেবিনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।

চলবে...

5
$ 0.00

Comments

গল্পটা খুব সুন্দর, গাইয়া বউ কাজের দিক দিয়ে এগিয়ে। এরা খুবই কর্মঠ হয়ে থাকে।

$ 0.00
3 years ago

গাইয়া বউ দেখতে খুব সুন্দর। তারা খুব পরিশ্রম করে। তারা স্বামীর সেবা যত্ন করে। তাদের কারণে সংসারের উন্নতি হয়। গল্পটি আমার মন ছুঁয়ে গেছে।

$ 0.00
3 years ago

Golpo ta pore valo laglo . Beshi valo laglo gaiya bou amon akta name sune.donnobad writer.amon gaiya bou er golpo Jani aro sunte Pai apnar thake.donnobad.

$ 0.00
3 years ago

গল্পটা খুব সুন্দর, গাইয়া বউ যেমন ভালো তেমন খারাপ। তবে এরা কাজের দিক দিয়ে এগিয়ে। এরা খুবই কর্মঠ হয়ে থাকে।

$ 0.00
3 years ago

Hmm

$ 0.00
3 years ago

এত সুন্দর একটা গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। গল্পটা সত্যিই অসাধারণ। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

$ 0.00
3 years ago