মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছাস, জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী...
ধুরর!! চোখ বুঝে শুয়ে থেকে এলোমেলো ভাবনাগুলি তাড়িয়ে উঠে বসলাম আমি। ২৫ তারিখ ওরিয়েন্টশন আর আমি ২২ তারিখ এসে বসে আছি। নিজেই নিজের সিদ্ধান্তে বিরক্ত বোধ করলাম।
খুলনা শহরের সুন্দরের জয়গান প্রায় মানুসের মুখেই শুনতাম। ভেবেছিলাম আগে এসে ঘুরে ঘুরে পুরো শহরটা চষে বেড়াবো কিন্তু বিধাতা না চাইলে গাছের পাতাও যে নড়ে না তারই আবার প্রমান পেলাম।।
তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে,গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আর আমি বাইরে বের হলেই এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝুম বৃষ্টি তে পরিণত হয়...কিসের যে এতো শত্রুতা!!
আমি বৃষ্টি পছন্দ করি,বৃষ্টি তে ভিজতে পছন্দ করি ঠিকাছে কিন্তু তাই বলে এই অ-টাইমে বেটাইমে এতো বৃষ্টিও ভাল লাগে না।
নতুন রুম মেট টাও এসেছে রাত্রিবেলা। কথা হয়নি,ঘুমিয়ে গেছে ও আর আমার চোখে ঘুম নেই....চোখে একসময় তন্দ্রা ভাব এলো। খোলা জানালা থেকে শীতল বাতাসের স্পর্শটা ভালই লাগছে। বৃষ্টির ঝিমঝিম ছন্দটা নীরব শান্তির অবয়েব তৈরি করেছে....
উজ্জ্বল রোদের আলোতে ঘুম ভেংগে গেলো। রাতে কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি,জানালা খোলাই ছিল। ঝকঝকে আকাশের ছবি দেখা যাচ্ছে। নাহ,এমন সুন্দর একটা দিনে ঘরে বসে থাকা যায় না। পাঞ্জাবী টা গায়ে জড়িয়ে বের হতেই হঠাত মনে এলো আজই তো ২৫ তারিখ.....প্রতিক্ষিত ওরিয়েন্টশন। তারপর??......তারপর ইনশাল্লাহ কুয়েটিয়ান!! ^_^ ^_^
সাজানো সুন্দর ক্যাম্পাসে এসে থমকে দাড়ালাম। উঁহু, পরিচিত কাউকে খুজছি না। হাস্যজ্জল মানুষ দেখছি,সবার ভিতর এক অন্যরকম ভালো লাগা বিরাজ করছে যেন....
"এই ছেলে...এই!!"
পাশ ফিরে তাকালাম। কয়েক গজ দূরেই অসম্ভব রূপবতী বলা যাবে না তবে অসম্ভব আকর্ষণীয় এক মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আমার দিকে হেটে আসছে অদ্ভুত ছন্দে। হাসিতে ভরা সারা মুখ। ওমাহ! হাসলে কি সুন্দর ডিম্পল হয় গালে। আবার ঠোটের নিচে তীলও আছে।বাহহ! মুগ্ধ দৃষ্টিতেই তাকিয়ে থাকলাম মেয়েটির দিকে।
"ওদিকে এতো মেয়েদের দিকে তাকানো লাগে কেন,হ্যা?? অভ্যেসটা গেলো না আর তোমার।হুহ।। " কপট রাগ নিয়ে মেয়েটি জিজ্ঞেস করল।
প্রতিপক্ষর কাছ থেকে মোটেই এমন কিছু আমি আশা করিনি। ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে দেখে নিলাম....নাহ প্রশ্নটা আমার জন্যই ছিল।
"দুঃখিত! আপনার কোথাও ভুল....
কথা শেস করতে দিলো না আমার
"কিহহ! তুমি আমাকে চিনতে পারছ না??__আমি রিদিতা!! দেখো,"রু" এখন কিন্তু রাগ লাগছে।।"
চমকে উঠলাম আমি।..হ্যা,এভাবেই তো বলত ও__আয়াত", রু বলে ডাকত আমায়।।
এখন এগুলো সবি সৃতিমাখা আচ্ছন্ন অনুভূতি। সময় মানুসকে অনেক কিছু দেয় আবার সময়ের তাড়নায় অনেক কিছু কেড়েও নেয়।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বিভ্রান্তিকর এক হাসি দিলাম আমি।
"যাক চিনতে পেরেছো তাহলে।"
আমি সার্থক। না চিনলেও একটা মানুসকে তো আর সরাসরি সেটা বলা যায় না। আর তাছাড়া মানুসটা এতো আন্তরিক। পরে ঠিকই চিনে নেয়া যাবে।।
"কেমন আছ রিদিতা??"
"ভালই। আমি আগেই শুনেছিলাম তুমিও কুএট এ এডমিট হয়েছো.....
একা একাই মেয়েটি কথা বলতে লাগল। কথা বলে মাঝে মাঝে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে।।
আনমনা হয়ে পড়লাম। কতগুলো দিন, মাস পিছনে ফিরে গেলাম নিজ অনুভূতিতে। আচ্ছা,মানুষ যে মুখে বলে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক শেস,আসলেই কি তা হয়?? এই যে এতোদিন পর এসেও সবি তো মনে পড়ছে,অনুভব করছি....নাহহ,কোন সম্পর্কই মোমের দিপ শিখার মত ক্ষয়ে শেস হয়ে যায় না।।
"দুর্বার বাংলা" এর সামনে আমরা এসে পড়েছি। রিদিতাকে সামনে এগিয়ে যেতে বলে পদ্ম পুকুরের সামনে কিছুক্ষণ দারালাম। সেদিনের ছেড়া পাতায় কবিতাটি মনে পড়ল____
তবুও শতবর্ষ কেটে গেলো তাকে ছাড়া,
তাকে না দেখে।
কতগুলো দিন আঙুলেরা ছোঁয়নি তার নরম অধর।
টলমলে জলের মত সময়টাও আর নেই,নেই মুখটাও।
সেই টান-টান মুখে এখন কত ওলি-গলি,কত ব্যাথা-কান্নার ভাজ!
অভিমানের কাটা দাগগুলোও ঢেকে গেছে পৃথিবীর নিরন্তর ঘুর্ননের তালে।।
শরীরের এখানে-ওখানে ভাজ পড়েছে,মরে গেছে হৃদয়ের সব উত্তাপ, চোখের পাতায় তুষার পাতের মত সাদা রঙ এরা রাজত্ব করে এখন....
চোখ বেয়ে নেমে আসা জেদি জলপ্রপাতেরাও মরে গেছে এতোদিনে।
শুদু তাকে মনে পড়ে।
এক বাক্যে মনে পড়ে,একটা শব্দে মনে পড়ে
এক ঘর ভরা নিস্তব্ধতায় মনে পড়ে।
কেউ তো করেনি এতো অপেক্ষা!
কেউ বেচে থেকে মরেনি এভাবে এতোদিন।।
শুদু সে,
চলে গেছে সমস্ত অভিমান কে আলিঙ্গন করে।
সে চলে গেছে শরীরে,অাত্মায়!
তারপর থেকে শতবর্ষ কেটে যাচ্ছে তাকে ছাড়াইই.........
শেস দৃশ্যঃ অনেকে চলে এসেছে,চেনা পরিচিত কাছের বন্ধুরাও। নাহ আর দারিয়ে থাকা যায় না...চলে এলাম বন্ধুদের ভীড়ে,হাসি-ঠাট্টার মাঝে।।
এভাবেই আমার খেয়ালি মনের সুপ্ত কল্পনার সমাপ্তি ঘটে।।