বাড়িতে বা অফিসে হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়লে রীতিমতো হুলুস্থুল শুরু হয়ে যায়। কেউ মাথায় পানি ঢালতে থাকে, কেউ পায়ের তালুতে তেল ঘষে, কেউ মুখের ভেতর কিছু দিয়ে মুখ খোলার চেষ্টা করে। আসলে জানা উচিত, এই মুহূর্তে কীভাবে আশপাশের লোকজন দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
⚠️মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি, রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক কমে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় এটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
➰ প্রথম কাজ হবে জরুরি সেবাদানকারীকে ফোন করা। এখন বাংলাদেশেও ৯৯৯ নম্বরে কল করে জরুরি সেবাদানকারীদের ডাকার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এ ছাড়া অনেক অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস আছে যাদের ফোন করলে দ্রুত বাড়ি পৌঁছে যায়। প্রথমেই এই কাজ করে ফেললে সেবাদানকারী এসে পৌঁছানো পর্যন্ত বাকি কাজগুলো করার সময় পাওয়া যাবে।
✅কেউ অজ্ঞান হলে যা করবেন
১. অজ্ঞান লোককে লম্বা করে সমতল স্থানে শুইয়ে দিন। খেয়াল রাখতে হবে, পা যেন মাথার চেয়ে উঁচুতে অবস্থান করে।
২. সব জামা ঢিলে করে দিন।
৩. মাথার পেছনের দিকে সামান্য হেলিয়ে দিন, যেন মুখ খোলা থাকে। এতে শ্বাস-প্রশাস নিতে সহজ হয়।
৪. বাতাসের ব্যবস্থা করুন। ফ্যান না থাকলে পত্রিকা বা যেকোনো বস্তু দিয়ে বাতাস করুন।
৫. ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ ও ঘাড় মুছে দিতে থাকুন।
৬. এ সময় খিঁচুনিও হতে পারে। খিঁচুনি হলে আঘাত লাগতে পারে, এমন কিছু থাকলে সামনে থেকে সরিয়ে দিন। ধারালো বস্তু, রান্নাঘর, আগুনের উৎস ইত্যাদি বিপজ্জনক জিনিস থেকে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনুন।
৭. রোগীর খিঁচুনি শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে খিঁচুনি থামতে দিন জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন না। সম্ভব হলে দ্রুত এক দিকে কাত করে দিন, যাতে মুখে, গলায় যে লালা বা নিঃসরণ আছে, তা বেরিয়ে আসতে পারে।
৮. শ্বাস বন্ধ থাকলে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে। বুকের ওঠানামা থেকে লক্ষ করুন রোগী শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে কি না। যদি বাড়িতে বা আশপাশে কারও জানা থাকে কীভাবে মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস চালু করতে হয়, তবে তাঁকে ডাকুন।
৯. সাধারণত অজ্ঞান হওয়ার এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই মানুষ আবার জ্ঞান ফিরে পায়। এর চেয়ে বেশি সময় ধরে কেউ অজ্ঞান থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
১০. আজকাল প্রায় সব বাড়িতেই রক্তচাপ মাপার যন্ত্র থাকে। রক্তচাপ খুব কম হলে বা পাওয়া না গেলেও পায়ের দিকটা একটু উঁচু করে দিন বা পায়ের নিচে বালিশ দিন।
১১. ডায়াবেটিসের রোগী হলে গ্লুকোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন রক্তে শর্করা কমে গেছে কি না। যদি যন্ত্র না-ও থাকে, তবু মুখের ভেতর একটু চিনি দিয়ে দেওয়া ভালো।
❌কেউ অজ্ঞান হলে যা করবেন না
১. কোনো অবস্থাতেই রোগীকে ঝাঁকাবেন না। অজ্ঞান রোগীর মুখে বা গালে চড়-থাপ্পড় মেরে জাগানোর চেষ্টা করবেন না।
২. পরিপূর্ণভাবে জ্ঞান ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু পান করতে দেবেন না। এতে গলায় পানীয় আটকে যাওয়ার বা ফুসফুসে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. অজ্ঞান ব্যক্তিকে কখনোই বসা বা দাঁড় করানোর চেষ্টা করবেন না।
৪. বিনা কারণে তাকে সরাতে চেষ্টা করবেন না।
৫. মুখে কোনো চামচ বা এ জাতীয় জিনিস ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না। জোর করে ধরে খিঁচুনি থামানো বা নাকের কাছে বিভিন্ন জিনিস শোঁকানোর চেষ্টা করবেন না।
৬. অযথা ভিড় বাড়িয়ে ও চেঁচামেচি করে লাভ নেই। বরং এটি অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের কারণে হয়ে থাকলে রোগীর সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
⭕ সবশেষ কথা, নানা কারণেই একজন সুস্থ-সবল মানুষ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। যে কারণেই হোক, জ্ঞান ফিরে আসুক আর না আসুক তাকে প্রাথমিক পরিচর্যার পর যেকোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করুন।