যদি আপনাকে এই প্রশ্ন করে, তার বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তরে হয়তো বলতে পারেন, গানের ইন্সট্রুমেন্টাল আওয়াজ মানুষের শ্রবণ শক্তি কমিয়ে দেয়, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে ইত্যাদি ছাড়া তেমন আর কিছু বলতে পারবেন না। ইনস্ট্রুমেন্টবিহীন বা লো লেভেলের ইন্সট্রুমেন্টাল নয়েস যুক্ত গান আমাদের কি ক্ষতি করবে? এই প্রশ্নের জবাব দেয়া কিছুদিন আগে হলেও দুরহ ছিলো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আসলে এসব গানেরও ইমপ্যাক্ট আছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর।
গানের কথা ও সুর আমাদের মন ও মস্তিষ্কে কেমন প্রভাব ফেলে তা আমাদের ধারণার বাইরে। অনেকে দিনের পর দিন বিরহের গান (সোজা বাংলায় যেটাকে বলে ছ্যাঁকা খাওয়া গান) অথবা ধামাকা মেটালিক সং শুনে যাচ্ছে।এভাবে নিজের ইচ্ছামতো গান শুনার ইফেক্ট কি সেটা নিয়ে গবেষণা হয়েছে।
আমরা জানি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য 'আবেগ নিয়ন্ত্রণ' একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ত্রুটিযুক্ত 'আবেগ নিয়ন্ত্রণ' সিস্টেমের কারণে বিভিন্ন ধরণের মনের মেজাজ সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয় যেমন, ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। অনেকেই ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য 'গান' শোনে এবং এই গানগুলো তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে কিরূপ প্রভাব ফেলে সেটা তাদের অজানা।
একদল বিজ্ঞানী বছর দুয়েক আগে, মানুষ রেন্ডমলি যেসব গান শোনে 'মাইন্ড ও ব্রেইনের' উপরে এর ইফেক্ট কি তা নিয়ে গবেষণা করেন। সাধারণত মানুষ পূর্বের কোনো খারাপ স্মৃতি নিয়ে সর্বদা ভাবতে থাকলে মেন্টাল হেলথের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন স্টাইলের 'গান' শুনলেও কি মনের উপর একই প্রভাব পড়ে?
নিউরো সাইকোলজি ফিল্ডের নামকরা জার্নাল 'ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউমান নিউরোসায়েন্স' এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। একদল মানুষ যারা নিজেদের ইমোশন কন্ট্রোল করার জন্য গান শুনে থাকে, তাদের উপর গবেষণা করে দেখা যায়, যারা নিজেদের নেগেটিভ ফিলিংস (দুঃখ, রাগ, কষ্ট) প্রকাশ করার জন্য বিরহের অথবা কিছুটা আক্রমণাত্মক গান শুনে থাকে তারা অন্যদের থেকে বেশি এংজাইটিতে (দুশ্চিন্তা) ভোগে। নিজেদের নেগেটিভ ফিলিংস প্রকাশের জন্য গান শুনলেও আদতে তাদের নেগেটিভ মুড দূর হয়না বরং আরো বাড়ে।
ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (fMRI) এর মাধ্যমে দেখা যায়, হ্যাপি, স্যাড বা এগ্রেসিভ ধরণের গান শুনলে ব্রেইনের 'মেডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স' (mPFC) এর এক্টিভিটির পরিবর্তন আসে। বিরহ প্রকাশের জন্য বিরহের গান শুনলে mPFC এর একটিভিটি কমে যায়, যা খুব খারাপ লক্ষণ। কারণ এর আগের স্টাডিগুলোতে দেখা গেছে যাদের ডিপ্রেশন, স্ট্রেস ও বিভিন্নধরনের মানসিক রোগ রয়েছে তাদের ব্রেইনের PFC এর সাইজ ছোট হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধরণের গান শোনার সাথে ব্রেইনের mPFC এর এক্টিভেশনের যোগসূত্র প্রমান করে নির্দিষ্ট ধরণের গান শোনা ব্রেইনের উপর লং টার্ম ইফেক্ট ফেলতে পারে।
সাধারণত, যারা গান শোনে তাদের ৯০ শতাংশেরও বেশি বিরহের অথবা ধামাকা টাইপের এগ্রেসিভ গান শোনে এবং গান শোনার সাথে সাথে পুরোনো কোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকে। মাইন্ড & ব্রেইনের জন্য এটা দীর্ঘ মেয়াদি বিপদ ডেকে আনতে পারে, যা উপরের স্টাডি থেকে পরিষ্কার।
বিজ্ঞানের যুগ, বিজ্ঞান ভিত্তিক জবাব ছাড়া যেহেতু 'অন্যকোনো' প্রমাণাদি একসেপ্ট না করার ট্রেন্ড চালু হয়েছে তাই বৈজ্ঞানিক প্রমাণই দেয়া হলো। এখন মাইন্ড আপনার, ব্রেইন আপনার, হেডফোনের বাটনও আপনার হাতে, সিদ্ধান্ত কি নিবেন সেটাও আপনার হাতে।