আঠারো উনিশ শতকের লেখকদের লেখায় "আঁতুড় বা আঁতুড় ঘর" একটি অতি পরিচিত শব্দ।
===============
আঁতুড় বা আঁতুড় ঘর মূলত হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত একটি সংস্কার বা আচার। তবে তাদের নিকট হতে গ্রামাঞ্চলে অনেক মুসলিম পরিবারেও এই প্রথাটি প্রচলিত হয়েছে।
সন্তান জন্ম হওয়ার পর প্রসূতি মায়ের ক্ষেত্রে কয়েকদিন চলমান অস্পৃশ্যতা ও অশুচিকালীন অবস্থাই হচ্ছে আঁতুড়। আঁতুড় অবস্থায় নবজাতকের মাকে আঁতুড় ঘর নামক একটি পৃথক ঘরে বাস করতে হয়। এসময় সে কোন কাজকর্ম করতে পারে না। আবার পরিবারের অল্প কয়েকজন নির্দিষ্ট সদস্য ছাড়া অন্য কেউ ওই ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।নবজাতকের মায়ের প্রয়োজনীয় সব কাজই ওই
আঁতুড় ঘরেই সম্পন্ন হয়।
উদ্দেশ্য এবং বর্তমান অবস্থাঃ
আঁতুড় ব্যবস্থার পিছনে রয়েছে সামাজিক এবং বৈজ্ঞানিক কারণ। নবজাতক এবং প্রসূতি মাতার স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। সন্তান জন্মদানের পর নবজাতক এবং প্রসূতি মাতা উভয়ই দুর্বল থাকে। এসময় প্রসূতির পক্ষে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা সম্ভব নয়।
বর্তমানে শহরাঞ্চলে এই ব্যবস্থার প্রচলন নেই। তবে এর আধুনিক রূপ পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশে প্রসূতি মাকে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়। তাছাড়া শহরাঞ্চলে প্রসূতি মা এবং নবজাত উভয়ই বিভিন্ন রকম আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে গ্রামাঞ্চলেও এখন আর আগের মত সব আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয় না।
আচার-অনুষ্ঠানঃ
আতুড়'কালীন সময় বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হতো। যেমন:
পাঁচ উঠানি => কোন কোন ক্ষেত্রে সন্তান জন্মের পঞ্চম দিনে প্রসূতি মাকে আতুর ঘর থেকে মূল বাসভবনে নেয়া হতো। এদিন নাপিত নবজাতক এবং প্রসূতি মায়ের নখ কেটে দিতো। ধোপাবউ দুজনকে ক্ষার দিয়ে গোসল করাতো। এই অনুষ্ঠানকে পাঁচটি অনুষ্ঠানও
বলা হয়।
সূতিকাষষ্ঠী => পাঁচ উঠানে অনুষ্ঠানের পরদিন অর্থাৎ সন্তান জন্মের ষষ্ঠ দিনে সন্ধ্যায় সূতিকাষষ্ঠী বা ষেটের পূজা হয়। এই অনুষ্ঠানে গান-বাজনার আয়োজন করা হতো এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের মিষ্টিমুখ করানো হতো। কোন কোন অঞ্চলে একে ছয়ষষ্ঠীও বলে। হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, এদিন নবজাতকের ভাগ্য লেখা হয়। তাই তার মাথার পাশে দোয়াত-কলম রাখা হয়।
আটকড়াই => কোন কোন অঞ্চলে সন্তান জন্মের অষ্টম দিন সন্ধ্যাবেলায় কুলা বাজিয়ে তালে তালে ছড়া গেয়ে নবজাতক শিশুর মঙ্গল কামনা করা হয়। এ সময় পাড়া-প্রতিবেশীদের 'আটকলাই' খাওয়ানো হয়। ছোলা, কলাই, মুগ, মটর, খেসারি ভাজা, এবং চিড়া মুড়ি খই – এই আট রকম ভাজা দিয়ে আটকড়াই বা আটকলাই প্রস্তুত হয়। এছাড়াও এ দিন সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। আট ধরণের ভাজা খাওয়ানোয় এই অনুষ্ঠানের নাম আটকলাই, আটকড়াই অথবা আটকৌড়ে।
নন্তা => সন্তান জন্মের নবম দিনে কোন কোন অঞ্চলে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
এছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে প্রসূতি মা পরিপূর্ণ সিদ্ধিলাভ করে একুশতম বা ত্রিশতম দিনে। এদিন পুনরায় নবজাতক এবং প্রসূতি মাতাকে গোসল করানো হয় এবং তাদের নখ কাটা হয়। কোন কোন অঞ্চলে
এ দিন পুনরায় ষষ্ঠীপূজাও করা হয়।
Awesome article.i really love this article.