বিসিএস প্রস্তুতির শুরু থেকেই এই গ্রুপের সাথে আছি। বিভিন্ন সময়ে অনেক ইনফরমেশন পেয়ে উপকৃত হয়েছি। কিন্ত নিজে কখনো কিছুই শেয়ার করিনি। আজ বিসিএস ভাইভা প্রত্যাশিদের উদ্দেশ্যে আমার নিজের বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। না, ঋণ শোধ করতে নয়, ঋণ স্বীকার করতে।
ভাইভা :
বেল বাজার কয়েক সেকেন্ড পরে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম। অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। আমার সালাম এর উত্তর নিয়ে উজ্জ্বল বিকাশ স্যার বসতে বলার পর বসে পড়লাম। রুম এ মোট তিনজন স্যার ছিলেন।
স্যার প্রথমে BPSC FORM থেকে আমার নাম, পিতার নাম, জেলা, চয়েস এর ক্রম ইত্যাদি পড়লেন। আমি শুধু "ইয়েস স্যার" বলে যাচ্ছিলাম।
স্যার : কেমিস্ট্রি তে পড়েছো, কিন্ত ফার্স্ট চয়েস ফরেন কেনো?
আমি : (স্যার বাংলায় প্রশ্ন করেছেন তাই বাংলায় শুরু করলাম, কিন্ত স্যার বললেন ইংলিশ এ বলতে)
Sir, After my graduation I took admission into IBA, University of Dhaka. I have completed MBA from IBA, and I think I can relate my academic studies to my first choice.
স্যার প্রথম সেন্টেন্স এর "Took Admission" পার্ট টুকু পুনরায় শুনতে চেয়েছেন, ভালোভাবে শুনতে পাননি হয়তো। পরেও দুই একবার স্যার আমার কিছু উচ্চারণ পুনরায় শুনতে চেয়েছেন, সেক্ষেত্রে এক্সটারনাল-১ স্যার কে হেল্প করেছেন।
স্যার : OK, How can you relate your MBA?
আমি : Sir, my major was marketing. And we all know that Branding is a significant part of it. I love branding and I want to work for Country Branding.
স্যার : How will you brand Bangladesh?
আমি : Sir, I will brand my country as a peace loving one... আরো বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু স্যার কথা বলা আরম্ভ করায় থেমে গেলাম।
স্যার : ঠিক আছে, পিচ লাভিং তো সবাই বলে, অন্য আরো কিছু থাকতে হবে তো !
স্যার : বার্সেলোনার স্বাধীনতা ঘোষণা আর আমাদের স্বাধীনতা ঘোষনা এই দুটির মাঝে কি কি মিল আর অমিল আছে?
আমি : In case of Barcelona, People have been arranging various organized movements for last few years to get Independence. Recently they have voted for freedom. The proclaimation of Independence is a consequence of that result.
In case of Bangladesh, People arranged various massive movements against the ruling party. Finally they voted for a change in government. We find some similarities considering movements, vote against ruling party for political changes.
The people of Bangladesh wanted a change in Government but they didn't want freedom actually. The reason they wanted a change is that that they were oppressed by West Pakistan. Even the resources of East Pakistan were being utilized to enrich the economy of West Pakistan. This type of oppression is not that much obvious in case of Barcelona.
বেশ কিছু জায়গায় স্যার আমার কথা পরিষ্কার বুঝতে পারছিলেন না। এক্সটারনাল-১ স্যারকে হেল্প করেছেন।
স্যার : হুম, বুঝলাম। কিন্ত আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে, সেগুলি বলতে হবে তো!
এক্সটারনাল-২ : বার্সেলোনার স্বাধীনতা কি তাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে?
আমি : Their economy will be more developed.
এক্সটারনাল-২ : What are their resources?
আমি : They have beautiful places to visit, even they earn a lot from sports
এক্সটারনাল-১: তুমি কিভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে?
আমি : (প্রথমে ইংলিশ এ বলা শুরু করলাম, কিন্ত স্যার বললেন, "আমি বাংলায় প্রশ্ন করেছি, তুমি ইংলিশ এ উত্তর দিচ্ছো কেনো? বাংলায় বল, তোমার বাংলা টাও আমার দেখা দরকার।" আমি বললাম যে এর আগে উজ্জ্বল বিকাশ স্যার এর বাংলা তে করা প্রশ্নের উত্তর বাংলায় দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত স্যার নিষেধ করেছিলেন। এরপর উজ্জ্বল স্যার বললেন যে, "ঠিক আছে, যিনি যেভাবে শুনতে চাইবেন সেভাবেই বলতে হবে। তুমি বাংলায় বলো।) আমি আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান, সরকারি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা, চিপ লেবার কস্ট এর কথা বললাম।
এক্সটারনাল-১: প্রমিত বাংলা কি জানো? এর ইংলিশ কি?
আমি : বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রণীত যে বাংলা।
এক্সটারনাল-১: তাহলে অন্য কোনো বাংলা কি প্রমিত নয়? আচ্ছা, প্রমিত এর ইংলিশ কি?
আমি : সরি স্যার, মনে করতে পারছি না।
স্যার : মনে করো তুমি আমেরিকাতে এ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছো, উনি ডোনাল্ড ট্রাম্প (এক্সটারনাল-১), Introduce your country.
আমি : Your Excellency, I am a first secretary at...
স্যার : কি বললে? তোমাকে তো এ্যাম্বাসেডর করে দিয়েছি, তুমি ফার্স্ট সেক্রেটারি কেনো বলছো?
আমি : Sorry Sir, খেয়াল করিনি !
স্যার : ওকে, তুমি তাকে কি বলে সম্বোধন করলে?
আমি : Your Excellency
স্যার আমার কথা মনে হয় বুঝতে পারলেন না, এক্সটারনাল-১ তাকে আবার বললেন, পরে স্যার হা সূচক মাথা নাড়লেন, স্যার কে সন্তুষ্ট মনে হলো।
এক্সটারনাল-১ : মনে করো তুমি একটা পার্টি এটেন্ড করছো, সেখানে বাইরের অনেক অফিসিয়ালস এসেছেন। তুমি আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কে রিপ্রেজেন্ট করো।
আমি : Once Bangladesh was a part of Pakistan. The majority of people used to talk in Bengali. But the government tried to impose Urdu as the state language. The people of Bangladesh denied the decision. They donated (মুখ ফসকে এই ওয়ার্ড টা চলে আসছে ) blood....
স্যার : Donated !!! Blood?
আমি : Sacrificed blood
স্যার : Sacrificed Blood !?
আমি : Sacrificed their lives also.
এক্সটারনাল-১: এটা কি হল তাহলে? তারা তো আসল ঘটনার কিছুই বুঝতে পারবে না। তাছাড়া এতো সময় তো তুমি পাবে না।
এক্সটারনাল-২ : (শুরুতে তিনি একটা প্রশ্ন করেছিলেন, পরে একদম চুপচাপ ছিলেন) লাস্ট অমুক সম্মেলন কোথায় হলো
আমি : সরি স্যার, মনে করতে পারছি না
এক্সটারনাল-২: Least Developed Countries নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত আছে, কি সেগুলি?
আমি : (দুই বছর আগের এক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত, AIIB এর ব্যাপারে বলার এবং বোঝানোর চেষ্টা করলাম।)
বোর্ড বুঝলো যে সাম্প্রতিক এই ব্যাপারে আমার জানা নেই, মৃদু হাসাহাসি করলো। এরপর উজ্জ্বল বিকাশ স্যার আমাকে বললেন, "ঠিক আছে, তুমি আসো"। আমি ইতস্তত করে উঠতে যাবো এমন সময় পাশ থেকে এক্সটারনাল-১ প্রশ্ন করলেন।
এক্সটারনাল-১ : চাকুরী করো?
আমি : জি স্যার
এক্সটারনাল-১ : কোথায়?
আমি : একটি প্রাইভেট ব্যাংকে আছি।
এক্সটারনাল-১ : কোন ব্যাংক, পোস্ট কি?
আমি : ঢাকা ব্যাংক, প্রিন্সিপাল অফিসার।
এক্সটারনাল-১: বাবা কি করেন?
আমি : শিক্ষক
এক্সটারনাল-১ : কোথায়?
আমি : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এক্সটারনাল-১ : এখনও চাকরি করেন?
আমি : জি স্যার
এক্সটারনাল-১: ঠিক আছে, যাও তাহলে।
আমি উজ্জ্বল বিকাশ স্যার এর দিকে তাকালাম, স্যার হা সূচক মাথা নাড়লেন । আমি সালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
ভাইভা দিয়ে আমি মোটেই খুশি ছিলাম না। কিছু উত্তর অনুমান করে দিয়েছি, যেগুলি জানার ভিতরে ছিল সেগুলো বোর্ডের কাছে ভালো লাগেনি। প্রিপারেশন না থাকায় আমার প্রেজেন্টেশন, আত্মবিশ্বাস, বডি ল্যংগুয়েজ, স্পিচ কোয়ালিটি কোনো কিছুই আমার মনের মত ছিলোনা। তবে বোর্ড খুবই ভালো ছিলো। সবার আচরণ খুব চমৎকার ছিলো, বিশেষ করে এক্সটারনাল-১ আমার প্রতি খুব হেল্পফুল ছিলেন।
৩৭ তম বিসিএস নিয়ে মোটেই কোনো স্বপ্ন দেখিনি আমি। প্রিলির এক মাস আগে জব এ ঢুকেছিলাম, পরীক্ষার আগের রাতেও কোনো পড়াশুনা করিনি। প্রিলির পর রিটেন এর আগে একদিনের জন্যও পড়তে বসার সুযোগ হয়নি, পরীক্ষার হলে গিয়েছি আর এসেছি। ভাইভার আগে পড়ালেখা তো দূরের কথা, হাফ ডে অফিস কামাই করে ভাইভা দেওয়াটাই ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ।
প্রথম যে বিসিএস পরীক্ষা মোটামুটি প্রস্তুতি ও ব্যপক আগ্রহ নিয়ে দিয়েছিলাম সেটি ছিল ৩৬ তম। এর আগে বিসিএস এর ব্যাপারে কোনো আগ্রহ আমার ছিলোনা। কর্পোরেট ক্যারিয়ার এর স্বপ্ন ছিল আমার চোখে, মুখে আর চিন্তা, চেতনায়। কিন্ত ৩৬ তম বিসিএস এ ভাইভা ভাগ্য খুব বাজে ছিল, আশানুরূপ কিছু পাইনি। পরে জব, ফ্যামিলি, ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে এত বেশি এনগেইজড হয়ে গিয়েছিলাম যে বিসিএস এর প্রস্তুতি নেয়ার সময়, সুযোগ, এনার্জি কোনটাই আমার ছিলোনা। বিসিএস ব্যাপারটা মন থেকে মুছে ফেলেছিলাম ক্রমশ। ৩৭ তম জাস্ট এটেন্ড করেছিলাম মাত্র। অথচ সৃষ্টিকর্তা এখানেই ভালো কিছু রেখেছিলেন।
৩৭ তম বিসিএস এ যখন আবেদন করি তখন আমার প্রথম পছন্দ পররাষ্ট্র ছিল। কিন্ত পরবর্তীতে পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমার জন্য প্রশাসন ক্যাডারই মোস্ট সুইটেবল। তাই বিসিএস সাধনার সমাপ্তি এখানেই।
সবশেষে একটি কথাই বলবো, আপনি নিজেও জানেন না যে সৃষ্টিকর্তা কখন কি নির্ধারণ করে রেখেছেন আপনার জন্য। স্বপ্ন দেখুন, পরিশ্রম করুন, আর সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনা করে থাকেন।
সবাই ভালো থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন।
শুভ কামনা রইলো, সবার জন্য।