ভেজা চিরকুট -- ৭৩তম পর্ব/শেষ পর্ব।

0 17
Avatar for Nipa1234
3 years ago

ভেজা চিরকুট -- ৭৩তম পর্ব/শেষ পর্ব।

রিফাত হোসেন।

১৪১.

কলিংবেলে চাপ দিয়ে দাঁড়াল শান্তনু আর দীবা। ফ্ল্যাটটা অনুর। অনু দরজা খুলে দিতেই দুজনে ভিতরে ঢুকল।

অনু ড্রয়িংরুমের মাঝখানে এসে সোফায় দেখিয়ে বলল, "বসো।"

দীবা আর শান্তনু বসল সোফায়। বসার পর শান্তনু চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলল, "শ্রেয়সী কোথায়?"

"বাইরেই কোথাও আছে হয়তো।" জবাব দিলো অনু।

"আমরা তো ভেবেছিলাম তোমাকেও পাবো না ঘরে। তাই আগে নিচে গেলাম। আঙ্কেলই বলল উপরে আছো। তাই একটু কথা বলে এখানে চলে এলাম।"

অনু হেসে বলল, "আমি আসলে একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। ওখানে গেলে কে কোন কাজ ধরিয়ে দিবে; তখন হবে আরেক ঝামেলা।"

শান্তনু কৌতুকের সাথে বলল, "ফাঁকিবাজ কোথাকার!"

পাশ থেকে দীবা ধাক্কা দিয়ে বলল, "আহা! তুমি শুধু ফাঁকিবাজিটাই দেখলে। একজনের জন্য অপেক্ষা করছে, সেটা দেখলে না। তা মিস অনু, সেই একজনটা কী মিস্টার মামুন?"

দীবার কথা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে শুরু করল অনু। ওর অবস্থা দেখে শান্তনু আর দীবা, একসাথে উচ্চস্বরে হেসে উঠল।

কিছুক্ষণ পর অনু বলল, "আমার কথা বাদ দাও। তোমরা বলো, এভাবে আর কত দিন?"

"কোনভাবে?" শান্তনু জানতে চেয়ে দীবার দিকে তাকালো একপলক।

অনু চোখ পাকিয়ে বলল, "এই যে সবার বাচ্চাকাচ্চা এত্তো বড় বড় হয়ে গেল, আর তোমরা এখনো সুসংবাদটাই দিলে না৷ এভাবে আর কতদিন শুনি? তোমাদের বিয়ের প্রায় সাড়ে ৪ বছর হয়ে গেল। এখন বাচ্চা না নিয়ে কি ৫০ বছর পর নিবে?"

অনুর কথা শুনে দীবা সশব্দে হেসে বলল, "ও, এই কথা। আগে তোমার বিয়ে হোক, এরপর না আমাদের বাচ্চার কথা।"

"এবার বোলো না, তোমরা পণ করেছ আমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা নিবে না।"

"ধরে নাও তাই। আগে তোমার বিয়ে, এরপর আমাদের সন্তান। যদি তোমাদের মেয়ে হয়, আর আমাদের ছেলে হয়, তাহলে আমরা ওদের বিয়ে দিবো।"

অনু ভুরু জোড়া উপরে তুলে অবাক হওয়ার মতো করে বলল, "ওরে বাপ্রে! কতদূর চলে গেছ তুমি। আমার এখনো বিয়েই হলো না, আর তুমি বলছ মেয়ের কথা। আবার ওর বিয়েও ঠিক করে ফেললে।"

দীবা হাসতে হাসতে বলল, "পরিকল্পনা করে রাখছি। সব ঠিকঠাক থাকলে ভবিষ্যতে চিন্তামুক্ত থাকতে পারব।"

"কিন্তু, তখন তো ওরা সমবয়সী হয়ে যাবে।"

"তোমার মেয়ে দুই বছর বড় হলেও সমস্যা নেই। তোমার আর শান্তনুর সাথে যা হয়েছিল, আমরা অন্তত সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করব না।"

"আর যদি দুজনেরই ছেলে বা মেয়ে হয়?"

"তাহলে আবার বাচ্চা নিবো। তবুও না হলে বুঝবো আল্লাহ চায় না এমনটা হোক।"

দীবার কথা শুনে অনু হেসে উঠল জোরে জোরে। শান্তনুও হাসল। তবে কিছুক্ষণ পর আবার হাসি থামিয়ে শান্তনু বলল, "আসলে, বাবার দায়িত্ব অনেক বড়। আমার মনে হয়, আমি এখনো উপযুক্ত হইনি এই দায়িত্বটা সামলানোর। আমার যা বেতন, তা দিয়ে বাড়ি ভাড়া, খাওয়াদাওয়া সহ আনুষঙ্গিক খচরেই চলে যায়। আগে কিছু জমাই, এরপর বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাববো। এমন না হোক, ভবিষ্যতে উন্নত চিকিৎসার অভাবে দীবা বা বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়। আমি এইরকম অনেক দেখেছি। যারা শুধুমাত্র চিকিৎসার অভাবে নিজের স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে ফেলছে। আমি এই ঝুঁকি এড়াতে চাইছি।"

"আরে, আগাম এত কিছু ভাবলে চলবে? বেঁচে থাকা না থাকা, পুরোটাই তো আল্লাহর হাতে। তাছাড়া এমনও অনেক আছে, যাদের সন্তান নিজ ঘরেই পৃথিবীর আলো দেখছে। ওদের তো সেভাবে কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না, তবুও সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে; মা-ও সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকছে। সুতরাং, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।"

অনুর সাথে তাল মিলিয়ে দীবা বলল, "এই কথাটা অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। ও বুঝতেই চাইল না।"

অনু চোখ কটমট করে শান্তনুর দিকে তাকিয়ে বলল, "এইরকম ঘাড়ত্যাড়া বরদের আদর দিয়ে বুঝালে কাজ হবে না। পিটিয়ে বোঝাতে হবে। তবেই বুঝবে।"

অনুর কথা শুনে দীবা আর শান্তনু, দুজনেই হেসে উঠল একসাথে। অনুও তাল মিলিয়ে হাসল।

৩টা বাজতেই অনুর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। শান্তনু আর দীবার সাথে বসেছিল অনু। মোবাইল স্ক্রিনে মামুনের নম্বর দেখে সে দাঁড়িয়ে বলল, "মামুন এসেছে বোধহয়। তোমরা বসো।।আমি ওদের নিয়ে আসছি।"

দীবা ওঠে দাঁড়াল, অনুকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলল, "বেশ সুন্দর দেখতে লাগছে। মামুন সাহেব দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়বে নিশ্চিত। বিয়ের প্রস্তাবও দিতে পারে।"

অনু লাজুক হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মামুন। অনু সিঁড়ি দিয়ে নিচে আসতেই ওকে দেখল সে৷ শাড়ি পরে, অনেকটা বধূবেশে মতো সাজে সজ্জিত হয়ে এগিয়ে আসছে মেয়েটা। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝলকানিতে বিমোহিত হয়ে গেল মামুন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। অনু এগিয়ে আসতে আসতে সম্মুখে এসে দাঁড়াল।

মাহিমা পাশেই ছিল। অনুকে জড়িয়ে ধরল এবার। শক্ত করে আলিঙ্গন করে বলল, "কেমন আছো, অনু আপু?"

অনু আন্তরিক গলায় বলল, "আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?"

"ভালো আছি।" উজ্জ্বল হাসি দিয়ে জবাব দিলো মাহিমা।

"চলো, ভিতরে চলো।"

মামুন পাশ থেকে বলল, "আমাকে কেউ জিজ্ঞেসই করল না, কেমন আছি।"

"আহারে!" আহ্লাদী চেহারা করে মামুনের দিকে তাকালো অনু।

মাহিমা ঠোঁট টিপে হাসল। অনু আবার বলল, "ঠিক আছে। জিজ্ঞেস করছি। বলো, কেমন আছো তুমি?"

মামুন হাস্যোজ্জ্বল ভাবে বলল, "আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?"

"অনেক বেশি ভালো আছি।"

মামুন খোঁচানোর জন্য বলল, "সে তো দেখেই বুঝতে পারছি। যেভাবে সেজেছে, মনে হচ্ছে বিয়েটা তোমারই। তা কার জন্য এত সেজেছ শুনি?"

"পাশের বাড়ির মিন্টু কাকুর ১৫ বছর বয়সী একমাত্র ছেলের জন্য। ও বলেছিল, অনু আপু, তোমাকে শাড়ি পরলে অনেক সুন্দর দেখতে লাগে। ওর জন্য পরলাম।"

"তাই নাকি? হঠাৎ এই সতীন উদিত হলো কোত্থেকে?"

"সতীন!" শব্দটা উচ্চারণ শরীর ঝাঁকিয়ে হাসতে শুরু করল অনু।

মাহিমাও হেসে গড়িয়ে পড়ল অনুর উপর। মামুনও থেমে থাকল না, মিটমিট করে হাসতে লাগল।

অনু নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলল, "এসো, ভিতরে এসো।"

"হুম।" মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল মামুন।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল সবাই। দুতোলা পেরোতেই মামুন বলল, "তুমি তো বলেছিলে পাঁচ তলায় থাকো।"

অনু জবাবে বলল, "হ্যাঁ। আমার ঘরে শান্তনু আর দীবা বসে আছে এখন। আগে চলো, শুভ্র'র সাথে দেখা করে আসি। তোমাদের দেখলে ও অনেক খুশি হবে। যখন আমি বললাম, তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি খুশি শুভ্র-ই হয়েছিল। পাগল ভাই আমার। আমাকে অনেক ভালোবাসে ও। গত ৪বছর যারা আমাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছে, আমাকে ধৈর্য ধরতে সহায়তা করেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলো শুভ্র। প্রতি মুহূর্তে আমাকে সাহস দিয়েছে ও।"

"বেশ, তাহলে আগে ওর সাথে দেখা করি৷"

"ওকে। ঘরেই আছে ও। রেডি হচ্ছে বোধহয়।"

মামুন আর মাহিনাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের মাঝে এলো অনু৷ প্রতিবেশীদের ভীড় এখানে। কিছু আত্মীয়স্বজনও আছে। ব্যক্তিগত ভাবে অনু যাদের অপছন্দ করে, তাঁরাও আছে। বেশ আয়োজন করেই হচ্ছে শুভ্র আর সেতুর বিয়েটা।

মমতাজ বেগম অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মামুন আর মাহিমাকে দেখে এগিয়ে এলেন তিনি।

মামুন অনুর মায়ের দিকে তাকিয়ে সসম্মানের সাথে বলল, "আসসালামু আলাইকুম, আন্টি। কেমন আছেন?"

মমতাজ বেগম সস্নেহে জবাব দিলেন, "ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?"

"আমিও ভালো আছি।"

"আরে, মাহিমা যে; কতবড় হয়ে গেছ!" মাহিমার থুতনিতে হাত রাখলেন মমতাজ বেগম। সামান্য ডান-বামে নাড়িয়ে আন্তরিক ভাবে বললেন, "কেমন আছো, মা?"

মাহিমা সুপ্রসন্ন হাসি দিয়ে বলল, "আমি ভালো আছি, আন্টি।"

পাশ থেকে অনু বলল, "শুভ্র কি রেডি হয়েছে, মা?"

মমতাজ বেগম বললেন, "হ্যাঁ। ঘরেই বসে আছে এখন। যা, ওদের নিয়ে যা ওখানে।"

"ঠিক আছে।"

অনু মামুনকে ইশারা করে শুভ্র'র ঘরের দিকে গেল। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বলল, "শুভ্র, দেখ কে এসেছে।"

শুভ্র বিছানায় বসে ছিল। অনুর গলার আওয়াজ পেয়ে নেমে এলো। মামুনকে দেখেই চমকিত হয়ে বলল, "আরে, ভাইয়া আপনি। আসুন, ভিতরে আসুন।"

মামুন, অনু আর মাহিমা, তিনজনেই ভিতরে ঢুকল। শুভ্র'র ফ্রেন্ডরা বসে ছিল ঘরে। নেহাল, মিষ্টি সহ আরও কয়েকজন। সবাই ওঠে দাঁড়াল।

মামুন শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছ। মনে হচ্ছে অনেক বছর পর তোমাকে দেখছি। তা কেমন আছো?"

শুভ্র উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বলল, "আমি খুব ভালো আছি, ভাইয়া।"

"ভালো তো থাকবেই। যাকে ভালোবেসেছ, তাকেই স্ত্রী হিসেবে পাচ্ছ। এর থেকে সৌভাগ্যের আর কী হতে পারে?" আড়চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে চোখ মারল মামুন।

শুভ্র হেসে বলল, "এইরকম সৌভাগ্য আপনারও হবে, ভাইয়া। শুধু আমার বিয়েটা হয় যাক, এরপর দেখবেন, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অনু আপুর সাথে আপনার বিয়ে দিবো। কোনোভাবেই দেরি করব না।"

অনু হাত উঁচিয়ে শুভ্র'র দিকে মারের ইশারা করে বলল, "বাচ্চা ছেলে, এত কথা বলিস কেন, হু? চুপ করে বসে থাক।"

মামুন বলল, "বেঠিক কিছু বলেনি কিন্তু।"

অনু লাজুক হেসে, নাক একটু ফুলিয়ে মামুনকে শাসালো, "তুমি চুপ করবে?"

মামুন হেসে বলল, "ওকে। আপাতত চুপ করলাম।"

"ভেরি গুড। এবার এসো।"

"কোথায়?"

"বাবার সাথে দেখা করবে।"

মামুন সহসা গম্ভীর হলো কিছুটা। মাহিমার দিকে তাকিয়ে দেখল, সে-ও গম্ভীর হয়ে গেছে।

অনু দু'জনের দিকে ক্রমান্বয়ে তাকিয়ে বলল, "প্লিজ, আমার জন্য অন্তত চলো। সব ঠিক হয়ে যাবে।"

মামুন তবুও ইতস্তত বোধ করল। ওই মানুষটার কথা মনে পড়লেই নিজের অপমানের কথা মনে পড়ে যায়। মূল দোষী যতই অন্যজন হোক, ওই মানুষটাও অন্যায় করেছে।

মামুনকে এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে দেখে মাহিমা পাশ থেকে বলল, "চলো, ভাইয়া। একবার কথা বলো, এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে।"

মাহিমার কথা শুনে আশ্বস্ত হলো মামুন। মাহিনার জন্যই সংকোচ বোধ করছিল সে। এখন মাহিমা যেহেতু যেতে বলছে, তখন আর আপত্তি করল না। অনুর দিকে তাকিয়ে সে বলল, "চলো।"

মামুন, অনু আর মাহিমা বেরিয়ে যেতেই শুভ্রর কাঁধে হাত রেখে নেহাল বলল, "মেয়েটা কে রে দোস্তো?"

শুভ্র নেহালের দিকে তাকাল। ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল, "কোন মেয়েটা?"

"আরে, অনু আপুর সাথে যে এলো। সুন্দর দেখতে মেয়েটা। পরীর মতো।"

শুভ্র, নেহালের থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে, সন্দিহান ভঙ্গিতে বলল, "ও মামুন ভাইয়ার ছোট বোন। কেন?"

নেহাল চোখের চশমাটা সঠিক জায়গায় বসিয়ে আবার শুভ্র'র কাছে এসে ভনিতা করে বলল, "না মানে, তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। মিষ্টির বিয়ে সামনে। মনে হচ্ছে মাস্টার্স শেষ করার আগেই সবাই বিয়ে করে ফেলবে। সবাই যখন ডাবল হয়ে যাচ্ছে, তাহলে আমি একা সিঙ্গেল থাকব কেন বল?"

"তুই পরিষ্কার করে বলতো, কী বলতে চাচ্ছিস?"

পাশ থেকে মিষ্টি শুভ্রর পেটে চিমটি কেটে বলল, "আরে গাধা, বুঝতে পারছিস না; বেচারা মেয়েটার প্রেমে পড়েছে।"

"সর্বনাশ! ওকে তো সেভাবে দেখলিই না।"

নেহাল বলল, "আমি দেখেছি। ও যখন ভিতরে এলো, তখন থেকে দেখতে শুরু করেছি।"

"আর তাতেই প্রেমে পড়ে গেলি?"

"হ্যাঁ। এক দেখাতেই প্রেম। ওকে দেখার পরই আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে। হাতুড়ি পেটার মতো দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে বুকের ভিতর।"

"কই, আমরা তো শব্দ শুনতে পাচ্ছি না?" পাশ থেকে মিষ্টি বলল কথাটা।

নেহাল বলল, "এভাবে শোনা যাবে না।"

শুভ্র রসিকতা করে বলল, "হেডফোন ব্যবহার করতে হবে নাকি?"

"ধুর বাল! তোরা বিষয়টি ফানি ভাবে নিচ্ছিস। আমার সত্যিই মেয়েটাকে ভালো লেগেছে। ভালোবেসে বিয়ে করার মতো ভালোলাগা। ভীষণ সিরিয়াস ইস্যু।"

"মহা ঝামেলায় ফেলে দিলি তো। আমি তো কখনো ওর সাথে কথা বলিনি।"

"সে আমি জানি না। সেতুর সাথে তোর প্রেমে অনেক সাহায্য করেছি আমি। এখন তোদের বিয়ে হচ্ছে। এবার আমার প্রেমে তোকে সাহায্য করতেই হবে।"

শুভ্র চিন্তান্বিত ভাবে বলল, "ওকে। তবে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আগে আমাকে জানতে হবে মেয়েটার কারোর সাথে সম্পর্ক আছে কী না। এরপর অনু আপুর বিয়ে হয়ে গেলে আমি কিছু একটা করব।"

"ঠিক তো?"

শুভ্র হেসে বলল, "পাক্কা।"

নুরুল ইসলাম বসে আছেন বিছানায়। তাঁর পাশে অনু। মামুন বসেছে একটা চেয়ারে। আর মাহিমা অনুর পাশে।

নুরুল ইসলামকে দেখে অবাক হয়ে গেছে মামুন। এত রোগা হয়েছে মানুষটা। আগে দেখলে মনে হতো শক্তপোক্ত এক যুবক। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বৃদ্ধ একজন মানুষ। কপালের চামড়ায় ভাজ পড়েছে। চোখ দু'টোও কোটরের ভিতরে চলে গেছে। মামুন কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর স্বাভাবিক ভাবে বলল, "আঙ্কেল, আপনি কিন্তু অনেক শুকিয়ে গেছেন।"

মামুনের কথা শুনে মৃদু আওয়াজ করে হেসে নুরুল ইসলাম বললেন, "বয়স হচ্ছে, একটু-আধটু তো হবেই।"

অনু বলল, "শুধু বয়সের জন্য না। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকতো। তুমি তো ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াই করো না। সারাক্ষণ এখানে বসে থাকো, শুয়ে থাকো। আজ ছেলের বিয়ে, তবুও তুমি এখানে।"

"তোরা তো আছিসই। ছেলের বিয়েতে আমি কী করতে পারছি বল? ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে বাবা-মায়ের। তোর মা যা করার করছে, আমি তো কিছুই করতে পারছি না। উল্টো সর্বনাশ করেছি তোর।"

মামুন বলল, "আঙ্কেল, আপনি এভাবে বলবেন না।"

"কী আর বলব, বলো? মেয়েটা আমার সারাজীবন তো দুঃখই পেয়ে গেল। আমি ওকে একটু শান্তি দিতে পারিনি। যখন তোমাকে ভালোবেসে সুখী হতে চাইল, সেখানেও আমি বাধা দিলাম।"

"ওটা একটা ভুল বুঝাবুঝি ছিল, আঙ্কেল।"

উপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়লেন নুরুল ইসলাম। মুখে বললেন, "হুম, ভুল বুঝাবুঝি। এই ভুল বুঝাবুঝির জন্যই তোমাদের ৪টা বছর নষ্ট হলো।"

মামুন বলল, "নষ্ট হয়নি তো। বরং আমাদের জীবনে উন্নতি হয়েছে। আমি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। দেশে আমার জন্য একটা আলাদা সম্মানের জায়গা তৈরি হয়েছে এখন। অনু চাকরি করছে। এই ৪টা বছরকে আমি কখনোই তাচ্ছিল্য করতে পারি না। এই ৪টা বছর আমাদের জীবনে না এলে আমরা জীবনের অর্থই বুঝতে পারতাম না। আপনি এর জন্য নিজেকে শুধু দায়ী করবেন না।"

"অর্ক'র একার দোষও তো না। ওর কথা বিশ্বাস করে তোমার আর তোমার বোনের নামে অতগুলো খারাপ কথা বলাটা আমার গুরুতর অপরাধ ছিল। তবে এটা বিশ্বাস করো, মাহিমা যে ঘরে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল, এটা আমি জানতাম না। জানলে আমি কখনোই ওইরকম কথা বলতাম না। অর্ককে আমি অনেক ভরসা করতাম। তাই ও যা বলেছিল, এক কথাতেই সব বিশ্বাস করেছিলাম। ওর কথাগুলোই আমি কপি-পেস্ট এর মতো তোমাকে বলেছিলাম। অনুকেও কিছু জানায়নি। মাহিমা যে কখন চলে এসেছিল, সেটা আমি বুঝতেই পারিনি।"

"আমি বুঝতে পারছি, আঙ্কেল।"

"তবে অর্ককে আমি উচিত শিক্ষা দিয়েছি। ওর অফিসে গিয়ে ওকে থাপ্পড় মেরে এসেছি সবার সামনে। শুনেছিলাম ওর বাবাও ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। ও এরপর মাফ চেয়েছিল আমাদের কাছে। তবুও আমি ওকে ক্ষমা করিনি এখন পর্যন্ত। এরপর আর ওর সাথে কখনো কথা হয়নি। ওর বাবা-মা কাল আসবে বলেছে।"

অনু বলল, "অর্কও কী আসবে, বাবা?"

"আমার মনে হয় না আসবে।" নুরুল ইসলাম বললেন।

আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা চলল সবার মাঝে। এরপর বাইরের লোকদের তাগাদায় ঘর থেকে বেরোলো সবাই।

অনুর বান্ধবী, মোনা আর তূবা তাঁদের স্বামীকে সাথে নিয়ে এলো কিছুক্ষণ পর। খাওয়াদাওয়া শেষ হতেই সেতুদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসল সবাই। কাজি এলো সন্ধ্যার বেশ কিছু সময় আগেই। সেতু আর শুভ্র যেসময় কবুল বলছিল, সেসময় নেহাল মাহিমাকে দেখছিল। ব্যাপারটা মাহিমাও লক্ষ্য করেছে ক'বার। সে চোখ পাকিয়ে নেহালকে শাসিয়েছে প্রতিবারই।

বিয়ে সম্পন্ন হলো সন্ধ্যার আগেই। দরজা পর্যন্ত সেতুকে এগিয়ে দিলো সেতুর মা-বাবা। তারা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বললেন। এরপর সেতুর বাবা শুভ্রর হাতে মেয়ের হাত ধরিয়ে দিলেন। পাশের ফ্ল্যাটের দরজাটা খোলাই ছিল। গাড়ি লাগল না, কোথাও যেতে হলো না, চট করে শুভ্র আর সেতু ঢুকে গেল পাশের ফ্ল্যাটে। অনেকেই মজা পেলো বিষয়টিতে। দুই বাড়ির মাঝের দূরত্ব মাত্র দুই কদম। লাফ দিলেও পার হওয়া যায় জায়গাটুকু।

১৪২.

"শুভ্রর আর সেতুর বিয়ে দেখে আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।" সহসা কথাটা বলে উঠল মামুন।

সন্ধ্যা ৭টা বাজে। মাহিমা, শ্রেয়সী, শান্তনু আর দীবা ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা মারছে৷ অনুর ঘরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মামুন আর অনু। মামুনের কথা শুনে খানিক চমকালো অনু। ভুরু উপরে তুলে বলল, "তুমি ঠিক আছো তো?"

মামুন বলল, "সত্যিই বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।"

অনু লজ্জাপূর্ণ ভাবে বলল, "তো আমাকে বলছ কেন? আন্টিকে বলো মেয়ে দেখতে।"

"আন্টি বলেছে নিজের বিয়ের পাত্রী নিজেই ঠিক করতে।"

"তাহলে সেই পাত্রীকেই গিয়ে বলো।"

"কীভাবে বলব, বুঝতে পারছি না। লজ্জা পাচ্ছি।"

"এই বয়সে এসে এত লজ্জা!" হেসে উঠল অনু।

মামুন বলল, "তুমিও তো লজ্জা পাচ্ছো।"

"আমি মেয়ে মানুষ। একটু-আধটু তো লজ্জা পাবোই। তুমি পুরুষ মানুষ।"

"তাহলে বলছ, পুরুষ মানুষের লজ্জা নেই?"

"নেই।"

"একটুও নেই?"

"আছে। তবে সেটা প্রকাশ না করলেও চলে।"

অনুর কথাটার প্রতিউত্তরে কিছুই বলল না মামুন। অকস্মাৎ পকেটে হাত দিয়ে একটা আংটির বক্স বের করল। এই ব্যবস্থা আগে থেকে করা ছিল। সে অনুর আরও কাছে গেল। দূরত্ব বেশ কমিয়ে দিলো। এরপর বক্স থেকে আংটিটা বের করে অনুর হাত ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। মৃদু হাসি ঠোঁটের কোণে।

অনু সহসা চোখ নামিয়ে বলল, "এভাবে তাকিও না। আমার লজ্জা লাগছে।"

মামুন অন্য হাত অনুর থুতনিটা উঁচু করল। দেখল, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছে মেয়েটা। অনুর হাতে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে মামুন বলল, "মিস অনু, আমার জীবনে তুমি সত্যিই আল্লাহর দেওয়া একটা উপহার। তুমি আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছ। তুমি আমাকে প্রেম শিখিয়েছ। আমাকে অনেককিছু দিয়েছ তুমি। এর বিনিময়ে আমি তোমাকে শুধু কষ্ট দিয়েছি। ৪টা বছর আমার জন্য কষ্ট পেয়েছ তুমি। এই ৪টা বছর তো আর ফিরে আসবে না। তাই আমি চাই, আগামী ১০০ বছর তোমাকে সুখে রাখতে। সর্বোচ্চ সুখ তোমাকে এনে দিতে চাই আমি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, অনু।"

আস্তে আস্তে চোখ মেলে মামুনকে দেখল অনু৷ চোখাচোখি হতেই মামুনের বুকে মুখ লুকালো। মামুনও বুকে আঁকড়ে ধরল অনুকে। ভালোবাসার উষ্ণতায় একে অপরকে আবদ্ধ করে ফেলল।

১৪৩.

বইমেলা শেষ হলো। প্রকাশক আফজাল আঙ্কেল এবং তাঁর স্ত্রী, মামুন আর মাহিমাকে সাথে নিয়ে একদিন অনুদের বাড়িতে এলো। সেদিনই বিয়ের তারিখটা পাকা করে ফেলল সবাই মিলে।

বেশি সময় দেরি করেনি কেউই। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হলো। আয়োজন জাঁকজমকপূর্ণ। খবরের কাগজেও মামুনের বিয়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল। দেশের অনেক গুণী মানুষগুলো উপস্থিত হলো প্রকাশক আফজাল আঙ্কেলের দাওয়াত পেয়ে। কবি, লেখক, শিল্পী, অনেকেই এলো। মামুনের সাথে পরিচিত হলো সবাই। অনুর সাথে পরিচিত হলো।

দিনটি শুক্রবার ছিল। মার্চের মাঝে গরম গাঢ়তর হতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। দুপুর হলেই রোদের তীব্রতা সবাইকে ক্লান্ত করে দেয়। বিকেলের দিকটায় আচমকা মেঘলা হয়ে এলো বিয়ের দিন। সাভারের ৫তলা বিল্ডিং বেশ সুন্দর করে সাজানো হলো। শুভ্র, বাঁধন আর মমতাজ বেগম, সবাই মিলে বেশ দারুণ আয়োজন করেছেন। অনুর বিয়েতে গ্রাম থেকে লিপি আর মাহবুবও এলো ওদের সন্তান নিয়ে। বেশ খুশি ওরা। বিয়ে সম্পন্ন হলো সন্ধ্যার আগেই। এরপর বিদায়ের পালা।

বিদায়ের সময় বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে অশ্রু ঝড়াল অনু। একে একে সবাইকে জড়িয়ে ধরে আবেগ প্রকাশ করল। এরপর মামুনের সাথে গাড়িতে ওঠে বসল। ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো গাড়িটা এক নবদম্পতিকে নিয়ে ছুটে চলল শহরের পথে।

১৪৪.

বুকের উপর ভারী কিছু অনুভূব হতেই চোখ মেলে তাকালো মামুন। অনু শুয়ে আছে তাঁর বুকের উপর। ঘুমে আচ্ছন্ন মেয়েটা। বিয়ের পর আজ তাঁদের প্রথম সকাল, প্রথম দিন। পর্দার ফাকা দিয়ে যতটুকু আলো আসছে, ততটুকুতে অনুকে বেশ ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে। একটা সুন্দর, সচ্ছল মুখ। মেকাপ কাল রাতেই পরিষ্কার করে ফেলেছিল অনু। ফলে এই সকালে অনুর প্রকৃত রূপটা স্পষ্ট ভাবে, এত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হলো মামুনের।

ঘুমের ঘোরেই অনুর মনে হলো, কেউ তাকে খুব তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে। সেজন্যই চোখ মেলে তাকালো সে। মামুনের সাথে চোখাচোখি হলো। দুই সেকেন্ড সময় লাগল পুরো ব্যাপারটা বুঝতে। সে কোথায়, কীভাবে এলো, সবটাই মনে পড়ল। গতকাল তাঁর বিয়ে হয়েছে। এরপর এই বাড়িতে এসেছে। এরপর বাসর হয়েছে। এবং শেষ রাতে স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে৷

মামুন মাথাটা সামান্য তুলে অনুর কপালে একটু চুমু দিয়ে বলল, "ঘুম ভাঙল তাহলে।"

মুচকি হেসে ঘুমন্ত কণ্ঠে অনু বলল, "হ্যাঁ।"

"কেমন হলো ঘুম?"

"বেশ ভালো।"

"এখন উঠবে?"

আরও একটু সামনে এসে মামুনের গলা জড়িয়ে ধরল অনু। মাথাটা আবার বুকের উপর নামিয়ে বলল, "আর একটু পর। মনে হচ্ছে এই প্রথম এত আরামের ঘুম দিলাম। উঠতে ইচ্ছে করছে না।"

মামুন মৃদু শব্দ করে হাসল। এক হাত দিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল, "তুমি কি এখানেই থাকতে চাও, অনু? না নিজেদের একটা আলাদা বাসা চাও? আফজাল আঙ্কেলের বাড়িতে থাকতে যদি তোমার আপত্তি থাকে, তাহলে আমি আমাদের থাকার জন্য একটা ফ্ল্যাট দেখব।"

অনু মাথা না তুলে ঘুম ঘুম গলাতেই বলল, "তোমার মন কি চায়?"

মামুন বলল, "এখানেই থাকতে চাই আমি। আমার আজ যা আছে, তাতে আঙ্কেলের অনেকটা অবদান আছে। বরং অনেক বেশিই৷ উনাদেরও কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। আমি আর মাহিমা উনাদের সন্তানের মতো। আমরা চলে গেলে উনারা কষ্ট পাবেন।"

"তাহলে এখানেই থাকবো। আমারও তো শ্বশুর-শাশুড়ি দরকার; যারা আমাকে সাংসারিক কাজ শেখাবেন, দায়িত্ববোধ শেখাবেন।"

মামুন মুগ্ধ হয়ে গেল অনুর কথা শুনে। আলতো করে অনুর গালে চুমু দিয়ে বলল, "আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান।"

অনু মাথা তুলে মামুনের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল, "আর আমি সৌভাগ্যবতী।"

১৪৫.

মামুন আর অনুর সংসার বেশ সুখে, স্বাচ্ছন্দ্যে কাটতে লাগল। ভালোবাসা, রাগ, অভিমান, আহ্লাদ, সবকিছুর সংমিশ্রণে তাঁদের সাংসারিক জীবন অতিবাহিত হতে লাগল। অনু আর মামুনের বিয়ের প্রায় মাস তিনেক পর শ্রেয়সীর বিয়ে হলো অফিসের এক কলিগের সাথে। অনু আর শ্রেয়সী, দু'জনেই মানুষটাকে কাছ থেকে দেখেছে। শ্রেয়সীর অসাধারণ পার্সোনালিটিই মানুষটা পছন্দ করতো। অনুকেই প্রথম বিষয়টি জানায় ছেলেটা। এরপর অনু শ্রেয়সীর অনুমতি নিয়েই ছেলেটার পরিবারকে আসতে বলে। সব ঠিকঠাক হওয়ায় দুই পক্ষের অনুমতিতেই বিয়েটা সম্পন্ন হয়। এরপর মধ্যে অনুর কাছে আরও একটা খবর আসে। সেটা হলো নেহাল মাহিমাকে পছন্দ করে। এই ব্যাপারে মাহিমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, পড়াশোনা শেষ করার আগে বিয়ে নিয়ে ভাবছে না সে। নেহাল বিষয়টি পজিটিভ ভাবেই নিয়েছে। সেও মাস্টার্স শেষ করে ভালো একটা পজিশনে যেতে চায়। মাঝে মাঝে মাহিমার সাথে ফোনে কথা বলে সে। মাহিমাও এড়িয়ে যায় না। স্বাভাবিক ভাবে কথাবার্তা বলে। হয়তো একদিন বিয়ে হবে ওদের দু'জনের। সেভাবে আপত্তি করেনি কেউই। মাহিমা শুধু সময় চেয়েছে, আর নেহাল সমর্থন করেছে।

ওদিকে শুভ্র আর সেতুর সাংসারিক জীবনটাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যময়। মা-বাবার খোঁজখবর নিয়মিত নিতে পারছে সে। যখন ইচ্ছে তাঁদের সাথে গল্প করতে যেতে পারছে।

দীবার কোল আলো করে এক ছেলে সন্তান আসে। এরপর প্রায় দেড় বছর পর অনু আর মামুনের জীবনেও এক নতুন সদস্যার আগমন হয়। এক মেয়ে সন্তান হয় তাঁদের। দীবা আর অনু, দু'জনেই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ উত্তেজিত। ছেলে-মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের সাথে আরও একটা সম্পর্ক যুক্ত হবে।

৭৩ পর্ব/ শেষ পর্ব সমাপ্ত।

গত পর্বের লিংক - https://www.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/862494771222687/

1
$ 0.00
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments