ভেজা চিরকুট -- ৬২তম পর্ব

0 0
Avatar for Nipa1234
3 years ago

ভেজা চিরকুট -- ৬২তম পর্ব

রিফাত হোসেন।

১১৫.

মুক্তমঞ্চে বসে ক্লাসের এসাইনমেন্টগুলো করছে ইতু। বাড়িতে এগুলো করার সময় হয় না। পরিবারের অতগুলো মানুষ; একতলা বাড়ি, ড্রয়িংরুমে সবাই একসাথে বসলে দারুণ একটা আসর উপস্থিত হয়। ওইসময় সবাইকে সঙ্গ না দিয়ে থাকতে পারে না ইতু। দিনেও সময় হয় না। বড়-জা এর বাচ্চাগুলোর সাথেই সময় কেটে যায়। তাই এই ক্যাম্পাসে এসে কাজগুলো করছিল। বন্ধুরা কেউ আশেপাশে নেই। সে একা, নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। কাজটা এগোচ্ছিল ঠিকমতই, কিন্তু আচমকাই পাশে এসে একজন বসল। গুরুত্বহীন ভাবে আড়চোখে পাশে তাকালো ইতু। শুভ্রকে দেখেই চমকে উঠল; যেন শুভ্র কোনো মানুষ না, একজন ভূত, যাকে দেখতে চমকাতে হয়! এক হাত বুকের উপর রেখে চমকিত স্বরে ইতু বলল, "তুমি!"

শুভ্র প্রাণবন্ত ভাবে বলল, "হ্যাঁ, আমি।"

"আমি সেতু না, ইতু।" আগেই সতর্ক করল ইতু। আগের কোনোকিছুই সে ভোলেনি। এইসব ভাবলে এখনো সচকিত হয় সে।

ইতুর কথা শুনে হাস্যরত গলায় শুভ্র বলল, "আমি জানি তুমি সেতু না, ইতু। সেতু তো ক্লাস করছে। আমি দেরি করে গেলাম বলে ঢুকতেই দিলো না স্যার।"

ইতু আড়ষ্টভাবে জবাব দিলো, "ওহ্!" শব্দটা বলেই শুভ্রকে এড়ানোর জন্য আবার এসাইনমেন্টের মনোযোগ দিলো ইতু। কিন্তু পারল না। চোখ জোড়া যেন বাঁকা হয়ে বারবার শুভ্র'র দিকে চলে যাচ্ছে। ভীষণ অস্থিরতা অনুভব করছে ইতু।

শুভ্র পা দু'টো সামনে ছড়িয়ে দিয়ে স্বাভাবিক গলায় আবার বলল, "তাছাড়া একই ভুল দু'বার করব না আমি। বিয়ের পর তোমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এগুলো আমি লক্ষ্য করতে পারছি। সেতু কিন্তু আগের মতো আছে। তাই তোমাদের চেনা এখন খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়।"

ভিতরে ভিতরে শিউরে উঠতে লাগল ইতু। শুভ্র তাকে এত তীক্ষ্ণ ভাবে লক্ষ করছে, অথচ সে জানতোই না। তাঁর অগোচরে শুভ্র পার্থক্য খুঁজে বের করেছে। এই পার্থক্য নিশ্চয়ই শারীরিক দিক থেকে। এগুলো ভাবতেই ইতুর সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল।

ইতুর কোনো জবাব না পেয়ে শুভ্র ওর মুখের দিকে তাকালো। সামান্য ঝুঁকে দেখল, চোখ দু'টো পিটপিট করে আছে ইতু। কাচুমাচু হয়ে বসে আছে এক জায়গায়। হাতের কলমটা শক্ত করে ধরেছে। আগ্রহী চোখে তাকিয়ে থেকে শুভ্র জানতে চাইল, "তোমার কি হয়েছে বলো তো? আগে তো আশেপাশে এলেই বকাবকি করতে, ধমকাতে। এখন এত চুপচাপ। রাগ জমাচ্ছ নাকি? একসাথে ছুড়ে মারবে সব।"

ঈষৎ শক্ত গলায় ইতু বলল, "তুমি যাও তো। দেখছ না আমি কাজ করছি। পরের ক্লাসে এটা জমা দিতে হবে।"

শুভ্র রসিক গলায় বলল, "মনে হয় তোমার তিন-চারটে বাচ্চাকাচ্চা আছে; তাই বাড়িতে পড়াশোনার সময় পাও না।"

"তুমি চুপ করবে?" চোখ কটমট করে শুভ্র'র দিকে তাকালো ইতু।

শুভ্র সচকিত হয়ে বলল, "ওরে বাবা, আমি তো জ্বলেপুড়ে ছাঁই হয়ে গেলাম। এভাবে কেউ তাকায়?"

"প্লিজ, যাও এখন।" হাল ছেড়ে দিলো ইতু। তাঁর সত্যিই এখন শুভ্র'র সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। শুভ্র'র কাছাকাছি থাকলেই তাঁর অস্বস্তি হয়, বুকের ভিতর দ্রিমদ্রিম করে।

ইতুকে হঠাৎ নিভে যেতে দেখে শুভ্র'র মুখটা গম্ভীর হলো। তবে চলে গেল না। পা দু'টো গুটিয়ে নিয়ে ইতুর মুখোমুখি বসে ভাবান্তর স্বরে বলল, "জানো, একটা ব্যাপার অনেকদিন ধরে আমার মাথায় খচখচ করছে। ব্যাপারটা কিছুতেই ঝেড়ে ফেলতে পারছি না।"

"কোন ব্যাপার?" ইতুও এবার ভুরু কোঁচকালো। আগ্রহী ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল।

শুভ্র এক মুহূর্ত নীরব থেকে ক্ষীণ গলায় বলল, "তোমার মনে আছে, সেদিন তুমি হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে। তোমার বিয়ের দিন। বিদায় নেওয়ার সময় সিড়িতে আমাকে জড়িয়ে ধরলে হঠাৎ। এরপর হঠাৎই চলে গেলে।"

শুভ্র'র কথাগুলো শুনে ইতুর হৃদপিণ্ডে কম্পন শুরু হলো। নিঃশ্বাস যেন কেউ আটকে দিলো সহসা। চোখ ফিরিয়ে নিলো অন্যদিকে।

শুভ্র ভুরু জোড়া এবার উপরে তুলে চিন্তামগ্ন হয়ে বলল, "সেদিন রাতে অনু আপু একবার বলেছিল, 'মূল্যবান কিছু হারালে, শুভ্র।' কথাটার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারিনি আমি। বুঝার কথাও না। আমি আবার কী হারালাম? তবে পরপর এই দু'টো ব্যাপার আমাকে খুব ভাবিয়েছে। তোমাকে বলব বলব করেও বলতে পারছিলাম না কিছুতেই। সুযোগই পাচ্ছিলাম না। আজ স্যারের জন্যই সুযোগটা পেলাম।"

ইতুর কপালে সামান্য ঘাম জমেছে ইতোমধ্যেই। শুভ্র'র কোনো প্রশ্নের জবাবই সে দিতে পারবে না। সেদিন ধরিয়ে ধরার আগে এতকিছু ভাবেনি সে। সম্মুখে এসে গিয়েছিল শুভ্র, চোখের পানিটুকু লুকানোর জন্যই আচমকা জড়িয়ে ধরেছিল। তৎক্ষনাৎ বুঝতে পেরে নিজেই কেঁপে উঠেছিল।

জবাবা না পেয়ে বেশ অবাকই হলো শুভ্র। ইতুর মতো স্পষ্টভাষী মেয়ে সে দু'টো দেখেনি৷ সেই ইতুই সামান্য প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে না এই মুহূর্তে। ইতু যেন কাঁপছে কিছুটা। অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ঘনঘন চোখের পলক ফেলছে। বিস্মিত হয়ে শুভ্র আবার বলল, "তোমার কি কোনো অসুবিধা হচ্ছে?"

বড় করে শ্বাস নিলো ইতু, আবার শ্বাস ছেড়ে বলল, "তুমি এখন নিজের চিন্তা না করে আমাকে নিয়ে পড়ে আছ।"

"কেন, আমার কী হইছে?" শুভ্র আরও অবাক!

ইতু বলল, "সেতুর জন্য যে পাত্র দেখা হচ্ছে, সেটা কি জানো না তুমি? বাবা তো কালকেও ফোন করে এই বিষয়ে আলোচনা করছিল।"

শুভ্র ক্রুদ্ধ হলো। মুখ শক্ত করে বলল, "তোমার বাবা অসহ্যকর একটা মানুষ। সাধারণ জ্ঞান নেই। আরে ভাই, কী দরকার এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার? একজনের দিয়েছ ঠিক আছে, তাই বলে দ্বিতীয়টাকেও দিতে হবে?"

ইতু মিটমিট করে হেসে বলল, "এই কথাগুলো আমার বাবাকে গিয়ে বলো।"

শুভ্র সংকোচিত হয়ে বলল, "কী বলব?"

ইতু বলল, "গিয়ে বলো, কী দরকার এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার? অন্তত অনার্স পর্যন্ত মেয়েকে পড়তে দেওয়া উচিত। বিয়ের পর যে ও পড়াশোনার সুযোগ পাবে, তাঁর গ্যারান্টি কি?"

শুভ্র অনিহার স্বরে বলল, "ধুর! তোমার বাবাকে এগুলো কীভাবে বলব আমি?"

"পারবে না?" ইতু ভুরু নাচালো। আবার বলল, "খুব সহজ কাজ। গিয়ে বলবা, আঙ্কেল, আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি। আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আপনার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত পাত্র হয়ে উঠবো। আর এর মধ্যে ওকে বিয়ের জন্য জোরাজোরি করতে পারবেন না।"

আগের মতোই অনাগ্রহ প্রকাশ করল শুভ্র। বলল, "তোমার বাবার সামনে গিয়ে এইসব বলার অধিকার কি আমার আছে?"

গম্ভীর স্বরে ইতু বলল, "অধিকার কি কেউ দান করবে তোমায়? এটা তোমাকে আদায় করতে হবে।"

"না, আমার দ্বারা এটা সম্ভব না।" শুভ্র ঢোক গিলল।

ইতু শক্ত গলায় বলল, "তাহলে অপেক্ষা করো। সেতু বিয়ে করে বিদায়ের আগে তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে। তুমি না হয় সেটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থেকো।"

"এভাবে বলো না। আমি সেতুকে খুব ভালোবাসি।" শুভ্র কণ্ঠ শীতল, কাতর ভাব। মুখ গোমড়া করে মাথা নুইয়ে বসে রইল।

ইতু আগের মতোই শক্ত গলায় বলল, "তাহলে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াও। প্রেমিক হয়েছ, প্রেমিকার জন্য এইটুকু সাহস দেখাতে পারবে না? কেমন প্রেমিক তুমি? প্রেমিকদের যে সাহসী হতে হয়, সেটা জানো না?"

শুভ্র অসহায় ভাবে তাকালো ইতুর দিকে।

ইতু বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল, "দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই। এটাই একমাত্র অপশন।" কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না ইতু, পালিয়ে যাওয়ার মতো করেই দ্রুত পায়ে হেঁটে স্থান ত্যাগ করল।

শুভ্র দাঁড়িয়ে বিস্ময় গলায় বলল, "পুরো প্রসঙ্গটাই পাল্টে দিলো। খুব চালাক এই মেয়ে।"

১১৬.

"হ্যাঁ-রে, তূবা এখনো আসছে না কেন?" মোনার থাই-এ হালকা থাপ্পড় মেরে জানতে চাইল অনু।

মোনা বলল, "আসছে, একটু দেরি তো হবেই।"

মোনা আর অনু, দু'জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে এই মুহূর্তে। মোনার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল ৩মাস আগে। এরপর অনু চিকিৎসার জন্য বাহিরে যাওয়ার আগে একবার ফোন করে জানিয়েছিল, তখন সময় ছিল না আর, তাই মোনা আসতে পারেনি। এরপরও অনুর সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। আজ অনু শ্রেয়সীদের নাটকের অনুষ্ঠান দেখতে আসছে শুনে মোনা সব কাজ ফেলে সঙ্গে সঙ্গে বলেছে, আমিও আসব। কথাটা তূবাকেও বলা হয়েছে। ইউনিভার্সিটির এই তিনজনই এখন কাছাকাছি আছে, তাই তিনজনই আজ ক্যাম্পাসে দেখা করার মত দিয়েছে। এছাড়া অনুর চাকরির সুখবর তো আছেই। মঞ্চটা এখনো রেডি হয়নি পুরোপুরি। সেটাই করা হচ্ছে এই মুহূর্তে। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। নাটকও শুরু হবে। মঞ্চের সামনের আসনে পাশাপাশি অনু আর মোনা বসে আছে। মোনা সঠিক সময়ে চলে এলেও তূবা এখনো এসে পৌঁছায়নি। ওর জন্যই অপেক্ষা করছে দু'জনে।

মোবাইলে সময়টা দেখে চিন্তান্বিত গলায় অনু আবার বলল, "ও সত্যিই আসছে তো? মানে ওর মা আসতে দিবে তো? জানিসই তো বিয়ে হচ্ছে না বলে ওর মা ওর সাথে কেমন করে সবসময়।"

মোনা মাথা দুলিয়ে বলল, "আরে ও আসবে। অফিস থেকে সরাসরি এখানে আসছে ও। ওর মা আটকাবে কোত্থেকে?"

"তাও ঠিক।" মৃদুস্বরে বলল অনু।

মোনা আবার বলল, "তাছাড়া আমি যখন খাটাশ বরকে ফাঁকি দিয়ে আসতে পেরেছি, ও পারবে না?"

শ্রেয়সীর গলার আওয়াজ শুনে অনু আর জবাব দিতে পারল না। সে ওঠে দাঁড়িয়ে, শ্রেয়সীর দিকে তাকালো। শাড়ি পরিহিত শ্রেয়সী এগিয়ে আসছে। সব সময়ের মতোই উজ্জ্বল চেহারা। এই মুহুর্তে ওকে আরও সুন্দর দেখতে লাগছে। শাড়ি তো প্রানবন্ত মেয়েদের শরীরেই মানায়!

শ্রেয়সী এগিয়ে এসে অনুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য। মুখে বলল, "অনেকক্ষণ ধরে এসেছ নিশ্চয়ই। আসলে আমি সাজছিলাম, তাই আসতে পারিনি।"

মুখশ্রী উজ্জীবিত করে অনু বলল, "কোনো অসুবিধা নেই।" পাশের মোনাকে দেখিয়ে অনু বলল, "ও আমার বান্ধবী, মোহনা। আমরা মোনা বলেই ডাকি। আমরা একসাথেই অনার্স শেষ করেছি এই ইউনিভার্সিটি থেকে।"

"বাহ্!" ভুরু নাচিয়ে মোনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো শ্রেয়সী। এরপর আবার অনুর দিকে তাকিয়ে বলল, "নাটক এক্ষুণি শুরু হবে। পুরোটা দেখতে হবে কিন্তু। এখানেই বসে থাকবে। নাটক শেষে আমি আবার আসবো। আর জয়েনিং লেটারটা তখনই দিবো, যখন ট্রিট দিবা।"

অনু হেসে উঠল, "ঠিক আছে।"

শ্রেয়সী চলে গেল আবার।

কিছুক্ষণ পরই তূবা এলো। অনু জড়িয়ে ধরল তূবাকে। পাশে বসিয়ে বলল, "এখানে বোস, নাটক পুরোটা দেখে যাব।"

তূবা চোখ বড় বড় করে বলল, "দেরি হবে না? সন্ধ্যে হয়ে গেলে?"

মোনা পাশ থেকে বলল, "হলে হবে।"

"সর্বনাশ! মা তো আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।" তূবা চেঁচিয়ে উঠল।

অনু বলল, "আরে বেশি দেরি হবে না। চিন্তা করিস না।"

অনুর কথায় যেন ভরসা পেলো তূবা। বড় করে শ্বাস নিয়ে কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রাখল পাশে। কিছুটা সময় নিয়ে বলল, "তাহলেও অনু চাকরি পেয়ে গেল।"

পাশ থেকে মোনা বিষণ্ণ গলায় বলে উঠল, "খালি আমিই চাকরি করতে পারব না।"

তূবা হাস্যরত ভাবে বলল, "করছিস তো, পতিসেবা! এটাও তো চাকরি।"

"তা-যা বলেছিস।" মোনা হেসে উঠল উচ্চস্বরে।

অনুষ্ঠান শেষ হলো সন্ধ্যার পর। অনু এতটা সময় থাকতে চাচ্ছিল না, কিন্তু আর কোনো উপায়ও পেলো না। শ্রেয়সীকে না বলে যাওয়া ঠিক হবে না। আর নাটকের মাঝে ওর সাথে কথা বলা মুশকিল। তূবা, মোনা, অনু তিনজনেই যেন উৎকণ্ঠিত কিছুটা। ইতোমধ্যেই মোনার স্বামী তাকে বেশ ক'বার তো দিয়েছে। তূবাকেও বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছে কয়েকবার। অনুকে অবশ্য এখনো ফোন দেয়নি কেউ। কারণ সন্ধ্যার পর বাড়ি যাওয়াটা তাঁর জন্য স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বিকেলের পর মামুনও আর ফোন দেয়নি।

শ্রেয়সী এলো ক্লান্ত, বিধ্বস্ত চেহারা করে। এসেই ব্যস্ত গলায় বলতে লাগল, "সরি সরি, তোমাদের অনেক দেরি করিয়ে দিলাম। আসলে নাটকটাই দেরি করে শুরু হয়েছে। না হলে দেরি হতো না। নাটকের মাঝে আসতেও পারিনি। সরি গো!"।শ্রেয়সী অনুর হাত ধরে চোখ পিটপিট করল।

অনু বলল, "আরে তুমি সরি বলছ কেন? তোমার তো হাত নেই এখানে।"

"তবুও!" শ্রেয়সী মুখ কালো দাঁড়িয়ে থাকল।

অনু বলল, "আহা! মন খারাপ করো না। তুমি তোমার ওই বান্ধবীকে ডাকো। খাওয়াদাওয়া করে আমরা দু'জন চলে যেতে পারব।"

শ্রেয়সী মুখ ভার করে বলল, "ও আজ আসেনি। আমি ফোন করলাম একটু আগেনি, বলল ও আসেনিই ও। এটা আমি জানতাম না আগে। বিশ্বাস করো।"

শ্রেয়সীর চোখ-মুখের অবস্থা দেখে অনুর খারাপ লাগল ভীষণ। নির্লিপ্ত চোখে তূবা আর মোনার দিকে তাকালো।

তূবা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "অনু না হয় আমাদের বাড়িতে থাকলো আজ।"

সবাই তাকালো তূবার দিকে। শ্রেয়সীও কিছুটা উজ্জ্বল চাহনিতে তাকালো। তূবা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে হাসতে বলেল, "আমাদের অবস্থাটা এমন যে, যাই হয়ে যাক না কেন, দিনরাত নিয়ম করে ঝাড়ি খেতেই হবে। আমি এখন একা বাড়িতে গেলেও মায়ের কথা শুনবো, অনুকে সাথে নিয়ে গেলেও কথা শুনবো। মোনার স্বামীও হয়তো বকাঝকা করবে। প্রতিদিন যখন বকাঝকা খেতেই হয়, আজও না হয় খেলাম। অনুও এতবড় একটা অসুখ পার করল। চাকরি পেলো আবার। বিয়েও সামনে। তাই আজকের একটু আনন্দ করি।"

মোনা পাশ থেকে বলে উঠল, "সেই পরিচিতি চায়ের দোকানে চা খেতে ইচ্ছে করছে। আগে হল থেকে বেরিয়ে রোজ চা খেতাম, মনে আছে?"

অনু মাথা ঝাঁকালো। তবে সংকোচিত গলায় বলল, "আমি না হয় বাবাকে বলে ম্যানেজ করতে পারব। কিন্তু মোনা তুই, রাত করে বাড়ি ফিরলে তোর স্বামী রাগারাগি করবে না?"

মোনা বলল, "ওকেও ডেকে নেই। অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। ফোন করে যদি খাওয়াদাওয়ার কথা বলে, তাহলে হয়তো রাগটা কম করবে। সবসময় তো এভাবে ঘোরার সুযোগ আমাদেরও হয় না।"

মোনার কথা শেষ হতেই তূবা বলল, "আমি মা কে বলছি, আসতে একটু দেরি হবে। আর সাথে অনুকে নিয়ে আসব। প্রতিদিন তো দেরি করি না। কতক্ষণ আর বকবে বল। অন্তত আজকের এই সময়টা সবকিছু ভুলে আনন্দ করি, প্লিজ।"

সবাই সম্মতি দিলো। অনু বাবাকে ফোন করে বলল ব্যাপারটা। তূবার সাথে কথা বলিয়ে দিলো। সাথে যে মোনা আছে, সেটাও বলল। নুরুল ইসলাম মোনাকে আগে থেকে চিনলেও তূবাকে তেমন চিনতো না। তবে তিনি জানেন, অনু ডিভোর্সের পর তূবার বাড়িতে ক'দিন থেকেছিল। তাই এবারও না করলেন না তিনি। মোনা নিজের স্বামীকে বলল, ইউনিভার্সিটিতে আসতে। আর তূবা নিজের মাকে সবটা খুলে বলল। মায়ের জবাবে অপেক্ষা করল না সে। জানে মা কী বলবে। শুধু ২ ঘন্টা সময় চেয়ে ফোন কেটে দিয়ে, মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখল।

চা খেলো সবাই, এরপর ফাস্টফুড খাবার খেলো রাস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে। যদিও ট্রিট অনুর দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শ্রেয়সীর জোরাজোরি করে সব বিল সে দিলো। কারণ হিসেবে বলল, সে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছে।

মোনা তাঁর স্বামীর সাথে বাড়িতে চলে গেল। শ্রেয়সীর বাসা কাছেই, তাই সহজেই চলে গেল সে। তূবা আর অনু বাসে ওঠে বাড়িতে রওয়ানা দিলো। মনেমনে তূবা বেশ ভয় পাচ্ছিল। তখন মায়ের কথা না শুনেই ফোন কেটে দিয়েছিল। মা মত দিবে না সেটা জানতো, মূলত এই কারণেই প্রতিক্রিয়া উপেক্ষা করেছিল। তবে সে জানে, বাড়িতে গিয়ে শুরুতেই একটা ঝড়ের মুখোমুখি হতে হবে।

৬২ পর্ব এখানেই সমাপ্ত। পরবর্তী পর্ব শীঘ্রই আসছে।

গত পর্বের লিংক - https://www.facebook.com/groups/bdofficials/permalink/852371108901720/

1
$ 0.05
$ 0.05 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
3 years ago

Comments