ভেজা চিরকুট -

0 5
Avatar for Nipa1234
4 years ago

ছাদে এসে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করল শান্তনু। সিগারেট মুখে দিয়ে দেশলাই বের করতে গিয়ে চোখ গেল ছাদের কোণে। অনু আর দীবা দাঁড়িয়ে আছে। দু'জনেই চোখ পিটপিট করে দেখছে তাকে। সিগারেটটা মুখ থেকে নামিয়ে আপাদমস্তক হেসে শান্তনু এগিয়ে গেল। অপ্রস্তুত গলায় বলল, "তোমরা এখানে? আমি তো ভেবেছিলাম তোমরা ঘরেই আছো।"

দীবা বলল, "আমি তো ভেবেছিলাম তুমি নিচে গেছ মোবাইলে রিচার্জ করতে।"

ধরা পরে যাওয়া চোরের মতো অবস্থা হয়েছে শান্তনুর। মুখটা ভীত করে বলল, "নিচেই তো গিয়েছিলাম।"

দীবা চোখ পাকিয়ে বলল, "হু, গিয়েছিলে; তবে সিগারেট কিনতে।"

শান্তনু মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে অনু আর দীবার কাছে এলো।

দীবা শান্তনুর হাত থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বিড়বিড় করে নামটা পড়ে নিলো। ব্যানসন সিগারেট। কৌতূহলী হয়ে দীবা জানতে চাইল, "দাম কত প্যাকেটটার?"

শান্তনু ইতস্ততভাবে বলল, "বেশি না, মাত্র ৫০ টাকা।"

"আসলেই বেশি না।" কথাটা বলেই পিছনের দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা ছুড়ে মারল দীবা।

শান্তনু শুধু অসহায় চোখে দেখল, সিগারেটের প্যাকেটটা ঘুরতে ঘুরতে নিচে গিয়ে একটা ছোট ঝোপের ভিতর পড়ে গেল।

দীবার মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠায় সে আর কিছু না বলে ফোন রিসিভ করে অন্যদিকে চলে গেল কথা বলার জন্য।

শান্তনু অনুর পাশে দাঁড়িয়ে, রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে আরেকবার তাকালো সিগারেটের প্যাকেটটার দিকে। ওটা দেখা যাচ্ছে না এখন আর।

পাশ থেকে অনু বলে উঠল, "দীবা যদি সিগারেটের আসল দামটা জানতো, তাহলে প্যাকেটটার বদলে তোমাকে ছুড়ে মারতো।"

শান্ত তাল মিলিয়ে বলল, "তা যা বলেছ। আমি এত টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে খাই শুনলে ও কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে দিবে।"

"এগুলো খাওয়া ছেড়ে দাও এবার। শেষে আমার মতো ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ছটফট করবে।"

শান্তনু অভিমানী সুরে বলল, "হলেও আমি অন্তত অসুখের কথা গোপন রেখে নিজের ক্ষতি করতাম না।"

"তুমি রাগ করেছ আমার উপর?" অনু সামান্য শব্দ করে হাসল। নিষ্প্রাণ হাসি!

শান্তনু কঠিন গলায় বলল, "রাগ করব না? এতবড় একটা অসুখের কথা তুমি আমার কাছে গোপন করেছ? এটা যতবার ভাবছি, আমার ততবার মনে হচ্ছে, আমি এখনো তোমার কাছে সম্পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারিনি। তুমি আমাকে ভরসা করতে পারোনি। যে কথা তুমি দীবাকে বলতে পারলে, সে-ই কথা তুমি আমাকে বলতে পারলে না? এটা বলো না অসুখটা মেয়েলি। কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সার ছেলেদেরও হয়। তাছাড়া রোগ কখনো মেয়েলি হয় না, রোগ জাস্ট একটা রোগ।"

অনু চোখ বন্ধ করে দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে শান্ত গলায় বলল, "তুমি ভুল বুঝছ আমায়। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। অনেক বেশিই বিশ্বাস করি।"

"তাহলে আমার কাছে গোপন করেছিলে কেন?"

অনু কাতর গলায় বলল, "করেছি কারণ, আমি জানতাম আমার সমস্যাগুলোর কথা শুনলে তুমি একটা হৈচৈ বাঁধাবে। এর ফলে তোমার আর দীবার মাঝে আবার ঝামেলা হতো আমাকে নিয়ে। দীবা চায় না তুমি আমাকে নিয়ে এত ভাবো। এখানে দীবার বিন্দুমাত্র দোষ নেই। ওর জায়গায় আমি থাকলে, আমিও চাইতাম না আমার স্বামী তাঁর প্রাক্তনকে নিয়ে এত ভাবুক। দীবা যেভাবে শান্ত হয়ে আমাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছিল, তুমি হলে সেটা করতে না। চিল্লাফাল্লা করে ঝড় তুলতে। আমার সব মনে আছে শান্তনু। অনার্স পড়ার সময় আমার সামান্য জ্বর হওয়ায় তুমি হলের সব মেয়ের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলে। নানান জনকে ফোন করে নানান হুকুম দিচ্ছিলে। আমি সবই জানি। আর সেজন্যই আমি তোমাকে কিছু জানাইনি। ভেবেছিলাম তুমি আমার বাবার কাছে এসে হৈচৈ শুরু করবে। আমি বাবাকে যতটা শান্ত হয়ে অসুখের কথা বলতে পেরেছি, তুমি তাঁর উল্টোটা করতে। আর এখানেই আমার ভয়। সেজন্যই তোমাকে জানাইনি আমি।"

"এগুলো তো আমার পাগলামি না। আমি তোমাকে নিয়ে বেশি চিন্তিত বলেই এইরকম করি। দীবা যদি তোমাকে নিয়ে টেস্ট করাতে না যেতো, তাহলে তুমি নিজে থেকে কখনোই যেতে না। এতদিন যেভাবে নিজের মধ্যে গুমরে মরেছ, এখনও মরতে। একসময় তুমি পুরোপুরি শেষ হয়ে যেতে।"

দীবাকে এগিয়ে আসতে দেখে অনু জবাবে আর কিছুই বলল না।

দীবা এসে শান্তনুর দিকে তাকিয়ে বলল, "বাড়ি থেকে ফোন করেছিল।আজ নাকি সবাই ডিনার একসাথে করবে। অফ-ডে তো, সবাই বাড়িতে; সেজন্য আরকি।"

শান্তনু নিজেকে সামলে নিলো দ্রুত। ম্লান মুখটা পরিবর্তন করে রসিক সুরে বলে উঠল, "আজ দেখি সবাই দাওয়াত দিচ্ছে। লাঞ্চ করলাম এখানে, আর ডিনার শ্বশুর বাড়িতে। বাহ্ বাহ্!"

শান্তনু কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠল দীবা। অনুও হাসল সামান্য।

শান্তনু আর দীবা বিদায় নিলো সবার সাথে কথা বলে। ইতু আর সৈকত-ও শ্বশুর বাড়ির লোকদের সাথে কথাবার্তা বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়েছে। আকাশে সামান্য মেঘ জমেছে। সূর্য ঢাকা পড়েছে মেঘের আড়ালে। সুন্দর, শান্ত একটা বিকেল। মাঝে মাঝে গাড়ির হর্ন, কিছু লোকের গুঞ্জন, এই আরকি।

ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো অনু। ড্রয়িংরুমে মমতাজ বেগম আর বৃষ্টি আছে। বৃষ্টি ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ করছে, আর মমতাজ বেগম সোফায় বসে টিভি দেখছেন।

অনু টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে বৃষ্টিকে সাহায্য করতে চাইল। প্লেট আগেই ধুঁয়েছে বৃষ্টি। এখন শুধু একটু মুছে আলাদা জায়গায় সাজিয়ে রাখতে হবে। সেই কাজটাই করছে বৃষ্টি।

বৃষ্টি সুযোগটা হাতছাড়া করল না। শ্বাশুড়িকে শুনিয়ে শুনিয়ে অনুর উদ্দেশ্যে বলল, "থাক, শেষবেলায় এসে আর নাম কামাতে হবে না। সব কাজ তো একাই করলাম। আগে না এসে এখন এসেছ। সরো এখান থেকে।"

বৃষ্টির দিকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে থাকল অনু। কিছুক্ষণ পর চোখ নামিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসল।

মমতাজ বেগম একটু কাচুমাচু হয়ে বসলেন অনুকে দেখে। তিনি এমনভাবে টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন, যেন এই মুহূর্তে তাঁর সকল ধ্যান-জ্ঞান জুড়ে টিভির সিরিয়াল বাস করছে। ইন্ডিয়ান সিরিয়াল। এগুলোর প্রভাব যে প্রতিনিয়তই মমতাজ বেগম এর উপরে পড়ছে, তা তিনি নিজেও জানেন। তবুও এগুলো দেখেন।

অনু কিছুক্ষণ নীরব থেকে মায়ের দিকে তাকালো তীক্ষ্ণভাবে। কোমল সুরে ডাকল 'মা' বলে।

বিরক্তিপূর্ণ চোখে অনুর দিকে তাকালেন মমতাজ বেগম। মুখটা রাগী রাগী করে বললেন, "সমস্যা কি?"

অনু জড়ানো গলায় বলল, "সেই কখন এলাম, একবারও জানতে চাইলে না আমার শরীর এখন কী অবস্থায় আছে।"

রুক্ষ গলায় মমতাজ বেগম বললেন, "জমি বিক্রির অতগুলো টাকা দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিলে মরা মানুষও তাজা হয়ে যাবে। আর তোর তো সামান্য রোগ।"

অনুর মুখ 'হা' হয়ে গেল মায়ের কথা শুনে। দুঃখও পেলো খুব। সে বুঝতে পারছে, তাঁর প্রতি বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ক্ষোভ দিগুণ হয়েছে। অনু মনোক্ষুণ্ণ হয়ে মায়ের পাশ থেকে ওঠে ঘরের দিকে হাঁটা দিলো।

শুভ্র শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করছে। অনু বিছানায় বসতে বসতে বলল, "তোমার মোবাইলটা একটু দাও তো।"

ডাটা অফ করে বোনের দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলো শুভ্র।

মামুনের নম্বর অনুর মুখস্থ ছিল। বাড়িতে এসেই শুভ্র'র মোবাইল দিয়ে একবার ফোন দিয়েছিল মামুনকে। কিন্তু মামুনের মোবাইল বন্ধ পেয়েছে৷ আবারও একই নম্বরে ফোন দিলো অনু। কিন্তু লাভ হলো না। ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল অনুর মন। বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হলো।

বোনকে চিন্তিত দেখে শুভ্র জানতে চাইল, "আপু, কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? বাড়িতে আসার পর থেকেই দেখছি কেমন যেন উদাস হয়ে পড়েছ। কী হয়েছে?"

মোবাইল নামিয়ে রেখে শুভ্র'র দিকে তাকালো অনু। অল্প বয়সী তরুণ ছেলে শুভ্র। কিশোর বয়স পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই৷ এখন সবকিছু বুঝে ও। প্রাপ্তবয়স্ক এক যুবকে রূপ নিয়েছে। বালিশটা পিছনে দিয়ে শরীর এলিয়ে দিলো অনু। দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে মনস্থির করে বলল, "মামুনকে মনে আছে, তোর?"

শুভ্র'র কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পড়ল। মাথা ঝাঁকিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বলল, "হ্যাঁ। কেন বলো তো?"

অনু বলল, "আমি উনার সাথে দেখা করতে চাই। কিন্তু উনার মোবাইল বন্ধ।"

"বাড়ির ঠিকানা জানো?"

"উনি বাড়ি চেঞ্জ করেছেন। নতুন বাড়ির ঠিকানা একটা কাগজে লিখে দিয়েছিলেন আমাকে। কিন্তু সেই কাগজটা খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় রেখেছিলাম, সেটাও মনে নেই।"

"এটা তো খুব চিন্তার বিষয়।" শুভ্র'র গলার স্বর গম্ভীর। ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভাবছে সে।

অনু জবাবে নীরব থাকল।

শুভ্র সহসা ক্ষীণ গলায় জানতে চাইল, "তুমি কি মামুন ভাইকে ভালোবাসো?"

অনু ভাবল কয়েক মুহূর্ত। এরপর বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, "আগে উনাকে পাই, তারপর বলব।

অনু ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় আর কিছু বলতে পারল না শুভ্র। আবার ফেসবুকে ঢুকল সে।

৯৯.

রাত প্রায় ৯টা। ঘরের আলো জ্বালাতেই মামুনকে টেবিলের কাছে দেখল মাহিমা। গম্ভীর, অনুভূতিহীন একটা প্রাণীর মতো বসে আছে সে। ঘরে যে কেউ প্রবেশ করেছে, এতে তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাহিমা নিচু গলায় বলল, "ভাইয়া, বাড়িওয়ালা এসেছিল। এই মাসের বাড়ি ভাড়া এখনো দেওয়া হয়নি।"

মামুন মাথা তুলে দেখল মাহিমাকে। এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, "এই সপ্তাহেই দিয়ে আসব আমি।"

বিছানায় বসে মাহিমা ইতস্ততভাবে আবার বলল, "বলি কি, আমরা আগের ওখানেই ফিরে যাই। ওখানে বাড়ি ভাড়া এখানকার চেয়ে কম।"

মামুন গম্ভীর গলায় বলল, "এগুলো নিয়ে তুই ভাবিস না। আমি দেখব এইসব। তুই যা এখন।"

ভাইয়ের কথা শুনে বিছানা থেকে নেমে চলে যেতে লাগল মাহিমা, হঠাৎ আবার পিছনে ঘুরে বলল, "আজ ১৪ তারিখ। তুমি বলেছিলে অনু আপু ১৪ তারিখে দেশে ফিরবে।"

শ্বাসত্যাগ করে মাথা তুলল মামুন। ক্ষীণ গলায় বলল, "হ্যাঁ।"

মাহিমা উজ্জ্বল মুখ করে বলল, "তুমি দেখা করতে যাবে না?"

"না।" স্পষ্ট, তবে ব্যথাতুর গলায় বলল মামুন।

"কেন?" মাহিমা বিস্মিত হলো।

মামুন বলল, "কীভাবে যাবো বল? উনার খারাপ সময়ে আমি উনার পাশে থাকতে পারিনি। উনি তো এখন সুস্থ। এখন আমি কোন মুখ নিয়ে উনার সামনে যাব? নিশ্চয়ই আমার সম্পর্কে অনেক খারাপ ধারণা তৈরি হয়েছে উনার মনে। উনি হয়তো ভাবছেন, উনার অসুখের কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেছি। আমাকে স্বার্থপর ভাবছেন উনি।"

মাহিমা কান্নাভেজা গলায় বলে উঠল, "কিন্তু এটা তো সত্যি না। তুমি তো উনাদের বিল্ডিংয়ের দারোয়ানের মাধ্যমে উনার খোঁজখবর নিয়েছ। উনি যে আজকে আসবেন, সেটাও তুমি জানো।"

মামুন ম্লানস্বরে হেসে বলল, "আমি শুধু দূর থেকে সুস্থতা কামনা করেছি। আর কিছুই করতে পারিনি। যেদিন উনি আমাকে নিজের অসুখের কথা বলেছিল, আমার উচিত ছিল সেদিন থেকেই উনাকে সাপোর্ট দেওয়া। উনার পাশে থাকা। কিন্তু আমি তা করিনি। এখন যখন উনি সুস্থ, তখন কীভাবে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো? উনি ভাববেন, আমি সেসময় বন্ধুত্বের কর্তব্য থেকে পিছিয়ে গিয়ে, এখন সামনে এসেছি।"

"কিন্তু এইসব কিছুই তো তোমার ইচ্ছেতে হয়নি। তোমার নিয়ন্ত্রণে কিছুই ছিল না।"

"সেসব কি উনি বুঝবেন?"

"অনু আপুকে বোঝানোর দায়িত্বটা তোমাকে নিতে হবে। তুমি একবার উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।"

মামুন জড়ানো কণ্ঠে বলল, "সেই সাহস আমার নেই।"

"তাহলে কি এভাবেই সারাজীবন অন্ধকার ঘরে গুমরে মরবে? নিজের কী অবস্থা করেছ দেখেছ? তাছাড়া ঘরের হাল-ও ভালো না। আগে তুমি পত্রিকায় লেখা দিতে। সেখান থেকে আয় হতো তোমার। ওই টাকা সংসারের অনেক অভাব দূর করতো। এখন সেটাও করো না। লেখো না। রিকশাও চালাচ্ছ না। এভাবে তো চলবে না।" মাহিমার গলা দিয়ে চাপা ক্ষোভ বেরিয়ে এলো।

মামুন নির্বাক। বোনের কথার জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে রইল সে, যেমনটা অধিকাংশ সময়ই থাকে।

জবাব না পেয়ে মাহিমা আর কথা বাড়ালো না। চোখের পানি মুছতে মুছতে ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল।

১০০.

পত্রিকা অফিসে গেল অনু, মামুনের আগের বাড়িতে গেল, যেখানে মামুন রিকশা রাখতো, সেখানেও গেল, কিন্তু মামুনের দেখা পেলো না। কেউই মামুনের কোনো খোঁজ দিতে পারল না। অনু পাগল প্রায়! খাওয়াদাওয়া ভুলে গিয়ে হন্নে হয়ে মামুনকে খুঁজতে লাগল। পরিচিত সবাইকেই মামুনের ছবি দেখিয়ে বলেছে, এই মানুষটিকে দেখলে যেন তাকে জানায়। কিন্তু কেউই দেখল না মামুনকে। এভাবেই কেঁটে গেল প্রায় এক সপ্তাহ।

এক সপ্তাহ পর একদিন হঠাৎ মাহিমাকে দেখতে পেলো অনু। মাহিমাকে দেখে হতবাক হয়ে গেল সে। মাহিমাও অবাক অনুকে দেখে। প্রথমে ধীর পায়ে, এরপর প্রায় দৌড়ে এলো অনুর কাছে। দুই হাতে ঝাপটে ধরল অনুকে। অনুও তাই করল। শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরল মাহিমাকে। এতগুলো দিন পর দেখছে মেয়েটাকে। কেমন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত চেহারা হয়েছে। শুকিয়ে গেছে অনেকটা। চোখ দু'টো যেন গহিন কোটরে চলে গেছে। সেই হাস্যোজ্জ্বল মাহিমার ভয়াবহ অবস্থা দেখে অনুর মনপ্রাণ কেঁদে উঠল। চোখ দু'টো ঝাপসা হয়ে এলো।

1
$ 0.20
$ 0.20 from @TheRandomRewarder
Avatar for Nipa1234
4 years ago

Comments