বাসে উঠে দেখি আমার সিট দখল করে বসে আছে সুন্দরী একজন মহিলা, মহিলা বলা মনে হয় ঠিক হবে না। মেয়ে বলা যায় বয়স পঁচিশের বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না।অবশ্য মেয়েদের বয়স নির্ণয় করা আমার সাধ্যের বাহিরে।ভ্রমণে জানালার পাশের সিট আমার লাগবেই। অন্য অনেক কিছু ছাড় দেয়া যায় এটা ছাড়া আমার চলে না।চারপাশের দৃশ্য দেখা সাথে প্রিয় গান।না হলে ভ্রমণের স্বাদ পাইনা!
সুন্দরী মেয়েদের জ্ঞান বুদ্ধি থাকে একটু কম ! অতি যত্নে বিধাতা এদের সুন্দর করে গড়ে বুদ্ধিটা দেয় একটু কম ।এ জন্য সুন্দরী মেয়েরা বখাটের পাল্লায় পড়ে! অধিকাংশ সুন্দরী মেয়ের জীবন কাটে দুঃখের মাঝে! কালো মেয়েগুলো প্রথম জীবনে অবহেলিত হলেও জীবনে সুখী হয়।
ময়মনসিংহ যেতে হবে কিছু ছেলে নিমন্ত্রণ করেছে ওদের একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে ।ময়মনসিংহ শহরে প্রথমবার যাচ্ছি। একটা বিভাগীয় শহরে একবারও যাওয়া হয়নি তাই ছেলেগুলোর আবদারে প্রথমবারে রাজি হয়ে যাই।অনেক দিনের ইচ্ছে ময়মনসিংহ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় দেখার ।শুনেছি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিশ্বাবিদ্যালয়। দেখতেও নাকি বেশ সাজনো গুছানো।এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টা দেখা হয়ে যাবে।
ওদের একটা কালচারাল প্রোগ্রামে একটা বিষয়ে আলোচনা করতে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান আমার খুব একটা পছন্দ না।এখানে ভারি ভারি আলোচনা হয় সব জ্ঞানী লোকজন আসে।আমি মুখ্য মানুষ জ্ঞানীদের সাথে মানিয়ে নেয়াটা কষ্টকর হয়ে যায়। এখানে আলোচনা শুনতে না সবাই বলতেই আসে।এসব অনুষ্ঠান আমি সাধারণত এড়িয়ে যাই এবার শহরটা দেখার লোভ।কয়েক ঘন্টা বিরক্তিকর আলোচনার মাদ্যমে একটা শহর ঘুরার সুযোগটা নেয়া যায়।
বাসের টিকিট ওরা কেটে দিয়েছে আমার চাহিদা চার নাম্বার লাইনে জানালার পাশের সিট। ডেকে বললাম আপু এটা আমার সিট।মেয়েটি আমার দিকে এমনভাবে তাকলো মনে হয় এ জীবনে এমন কথা কখনো শুনেনি! হালকা লাল চোখ! ভিজানো মুড়ির মত ফুলে আছে! চোখের নিচে নোনা জলের দাগ।বুঝা যাচ্ছে একটা লম্বা সময় ধরে কেঁদেছে!
আমি বোয়াল মাছের মত ভাবলেশহীন মানুষ। সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকি।মেয়েটি উদাস চোখে আমার দিকে তাকালো আমি নির্লপ্তভাবে চোখের ইশারায় ইঙ্গিত বুঝালাম আমার সিট! একরাশ বিরক্তি নিয়ে ক্লান্তভাবে আমায় সিট ছেড়ে দিয়ে পাশের সিটে বসলো।সুন্দরী মেয়েদের আত্মবিশ্বাস থাকে তাদের কেউ না বলতে পারে না।এমন ঘটতে পারে কল্পনা করেনি! হতাশ চোখে আমায় একটু দেখলো।
সিটে বসে ব্যাগ থেকে ব্লুটুথ হেড ফোন ট্যাব বের করে আমার যাত্রার আনন্দময় সঙ্গী গান শুনা শুরু করলাম। মেয়েটা চোরা চোখে আমায় দেখলো কয়েকবার।
বাস চলতে শুরু করেছে তীব্র গতিতে পাশের ছুটন্ত দৃশ্য সাথে প্রিয় গান। আমার পাশে একজন মেয়ে আছে সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই।আমি আমার মত আছি হঠাৎ টের পেলাম মেয়েটি কাদঁছে!
পাশে একজন সুন্দরী মেয়ে নীল শাড়ির আচঁলে বারবার চোখ মুচ্ছে এ দৃশ্য দেখে স্বাভাবিক থাকা যায়! মনের মধ্যে কেমন কেমন করে! একটা অসস্তি আচ্ছন্ন করে রেখেছে।গানে মন শান্ত হচ্ছে না।একটা অজানা কৌতূহল হচ্ছে! বুঝে উঠতে পারছিনা কি করবো।মেয়ের ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই।তার দুঃখ আমাকে আকৃষ্ট করছে। শান্ত থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।মেয়েদের এড়িয়ে চলার ক্ষমতা আল্লাহ পুরুষদের দেয়নি!
ক্রন্দনরত নারিকে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই।মানুষ আমার আগ্রহের বিষয় নয় এদের আমি খুব কম বুঝি। মেয়ে মানুষ বুঝি আরো কম!শান্তনা দিতে মোটেই পারিনা, শান্তনা দেয়ার উপরে কোন বই আছে? জানা নেই থাকলে ভালো হতো। আমার মত মানুষের জন্য এটা খুব দরকার। শান্তনা দেয়ার একশো উপায় এনামে একটা বই। সেদিন অফিসে হঠাৎ করে কলিগের মা মরার খবর এলো কলিগ কান্নায় ভেঙে পড়লো তাকে শান্তনা দেবো কি করে জানি না।বোকার মত চেয়ে রইলাম! আগুন লাগলে কার্বনডাই-অক্সাইডে নিভে, মানুষের বুকের জ্বলা আগুন নিভিয়ে দেয়ার কিছু একটা থাকলে ভালো হতো।কিছু কথা বা কোন পদ্ধতি নিশ্চয় আছে!
ইউটিউবে কোন ভিডিও আছে কিনা একটু দেখা দরকার। কতসব আজগুবি ভিডিও থাকে এমন প্রয়োজনীয় বিষয়ে ভিডিও মনে হয় আছে। দেখতে পারছিনা মোবাইলে নেট নেই! এ এক যন্ত্রণা প্রয়োজনে এদেশে কিছুই পাওয়া যায় না।একটা হিন্দি ছবিতে দেখেছিলাম একটা মেয়ে কাঁদছে নায়ক তাকে পানি দিয়েছিলো।কাদঁলে পানি শুন্যতা বেড়ে যায় কি? এটা অবশ্য আমার জানা নেই অথবা পানি পান করলে শরীর শীতল হয়। এটাও একটা কারন হতে পারে বা পানির কথায় মনটা পানির দিকে আকৃষ্ট হলে দুঃখবোধটা কমে যায়।পানির প্রস্তাব ভালো মনে হলো ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে ধরলাম।মেয়েটি ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো" আমি আপনার কাছে পানি চেয়েছি? আপনি মনের সুখে গান শুনেন "
ফুটো বেলুনের মত সবটুকু হাওয়া বের হয়ে একবারে চুপসে গেলাম।আর কিছু বলার সাহস হলো না।মনে মনে ভাবছি সাধে মানুষ বলে মেয়ে মানুষের মন বিধাতা বুঝে না।আমি আমার মত আছি গান শুনছি আড় চোখে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছি।কান্নার এখন বিরতি চলছে।কান্নার বিরতির সাথে বাসের বিরতির সময় হলো।নিচে নেমে এলাম না রূপসী কে নামার কথা বলা সাহসে কুলালো না।নিচে এসে একটু অপেক্ষা করলাম নামে কিনা।কি অদ্ভুত আমি অপেক্ষা করছি! মেয়েটি নামলো না।ওয়াশরুমের কাজ সেরে একটা ফাঁকা টেবিলে বসে আছি খাওয়ার কোন ইচ্ছে নাই।শুধু একটা কফি অর্ডার করলাম। চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছি মেয়েটি নেমেছে কিনা। একটু কেমন হতাশ হলাম! কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছিনা!
আমি বরাবর মেয়েদের ব্যাপারে উদাসীন! এ নিয়ে মামুন ভাই আমাকে নানা কথা শুনায় আমি নাকি কোন পুরুষেই না।
রাস্তায় কখনো কোন মেয়ের দিকে আমি ফিরে তাকাই না।যত সুন্দর হোক এটা অন্যদের কাছে অস্বাভাবিক লাগে।না, কোথাও দেখা মিললো না।মনে হয় নামেনি। আচ্ছা যদি নামতো আমি কোন কিছু বলতাম? মনে হয় বলতাম না।
বাস আবার চলতে শুরু করেছে না মেয়েটির কান্না থেমে গেছে। আমি আমার মত গান শুনতে শুনতে কখনো ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারেনি।রাতের বাসে ভালো ঘুমাতে পারি ।রাতের জার্নি খুব ভালো লাগে।
ঘুম ভাঙলো সুপারভাইজারের ডাকে বাস তার শেষ গন্তব্যে এসে গেছে। রাত এখন গভীর আমার জন্য একটা ডাক বাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এনিয়ে কোন চিন্তা নেই।ডাক বাংলো বস স্টপেজের নিকটে। বাস থেকে নেমে হাটা শুরু করলাম কয়েক মিনিটের পথ।
ডাক বাংলোয় এসে আমার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে আসলাম।বেশ বড় রুম সাথে বিশাল বারান্দা।সামনে খোলা মাঠ। চমৎকার পরিবেশ! বাহির থেকে এসে আমার প্রথম কাজ গোসল করা এটা অনেকদিনের অভ্যাস। অবশ্য গোসল করতে আমার সময় লাগে না।চড়ুই পাখির মত ফটাফট গোসল শেষ হয়ে যায়।গোসল সেরে বাহিরে এসে দেখি কলিং বেল ভাচ্ছে।দরজা খুলে ভুত দেখার মত অবস্থা দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সেই রুপসী! আমি কিছু বলার আগে রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো
আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।অনেক বেশি অবাক হলে মানুষ ভাষা হারিয়ে ফেলে।অনুভূতির তীব্রতার একটা মাত্রা পর্যন্ত ভাষায় প্রকাশিত হয়। মাত্রা অতিক্রম করলে ভাষা শুন্য হয়ে যায়।
নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছি মেয়েটির দিকে।রুমে প্রবেশ করে দেয়ালঘেরা সোফায় ধপাস করে বসে পড়লো! এসময় আমার মোবাইলের রিংটোন ভেজে উঠলো। মোবাইলের পর্দায় ভেসে উঠলো অন্তুর নাম।আমার এক ছোট ভাই ওর মাধ্যমে এখানে আমন্ত্রিত হয়েছি।ওর বাড়ী এখানে। রিসিভ করলাম হ্যালো
ভাই খুব ভালো লাগছে আপনি এসেছেন, কোন সমস্যা হয়নিতো?
না অন্তু কোন সমস্যা হয়নি খুব ভালোভাবে পৌঁছেছি। তোমাদের অনুষ্ঠানের কি খবর?
খুব ভালো ভাইয়া সব ভালোভাবে হয়েছে আশা করি খুব ভালো একটা প্রোগ্রাম হবে।খুব ভালো লাগছে আপনি ভাবি কে নিয়ে আসছেন!আগে জানালে ভালো ব্যবস্থা করতে পারতাম।বাংলো থেকো জানালো ভাবি আপনার একটু পরে এসেছে! কোন সমস্যা ভাইয়া?
আমার কলিজা মরুভূমির মতো শুকিয়ে গেছে কথা শুনে।অন্তু জেনে গেছে মানি ওদের ব্যাচের সবাই জানবে।এদের থেকে কথা ছড়াতে সময় লাগবে না।অন্তু ভালো করে জানে আমি অবিবাহিত। এসব খবর বাতাসের বেগে ছড়ায়! আমি হিসাব করছি এ সংবাদ মায়ের কানে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে! কিযে কান্ডবাধে আল্লাহ জানে! "না ভাইয়া কোন সমস্যা হয়নি "এতটুকু বলতে খুব কষ্ট হলো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
ঠিক আছে ভাইয়া সকালে দেখা হবে।কোন সমস্যা হলে জানাবেন।
কল কেটে দিলাম কিছুই বললাম না।আমি স্পট দেখছি অন্তুর টিপটিপ হাসি মুখখানা! রাগে শরীর জ্বলছে! অগ্নি দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম "এই আপনি বাংলোর ওদের কি বলে এসেছেন? " কথার ভীতরে জ্বলন্ত আগুনের তাপ ছিলো ভালোই।
মেয়েটি প্রথমে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়, কথা শুনে কান্না শুরু করে দিলো,কি বিপদ! "এই কাদবেন না উত্তর দিন, কী? বলেছেন।
এটা বলার পর কান্নার ভলিউম আরো বাড়ছে! মধ্যে রাতে লুকিয়ে নিঃশব্দে ভিডিও দেখার সময় আচমকা সাউন্ড ভেজে উঠলে দ্রুত কমাতে যেয়ে বেড়ে গেলে যেমন হয়! একে নিয়ে কি করবো এখন! এখন বের করে দেয়া যাবে না।অন্তু জেনে গেছে সকালে একে না দেখলে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিবে, যে দাগ লাগবে তা মুছাঁ যাবে না।
নিজেকে শান্ত করে মোলায়েম কন্ঠে বললাম" আপনি এখানে কেন এসেছেন এটাতো বলুন? " বিরতিহীন কান্না চলছে, কেমনডা লাগে! এমন কাঁদে কি করে এরা! কোন উত্তর দিচ্ছে না! কি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লাম।এমনিতেই মেয়ে মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান আমার শুন্যের কাছাকাছি। কোন মেয়ে বন্ধু নাই যারে কল দিয়ে পরামর্শ চাইবো।বন্ধুদের জানাবো? এক একেটা বদের হাড্ডি! ওদের বললে ঝামেলা বিরাট আকার ধারন করবে।
কি বা বলবো গভীর রাতে একটা মেয়ে আমার রুমে প্রবেশ করে বসে আছে! একথা দুনিয়ার কোন পুরুষতো দূরের কথা কোন মেয়েও বিশ্বাস করবে না।
আচ্ছা কিছু বলতে হবে না অনেক পথ ভ্রমণ করেছেন ফ্রেশ হয়ে নেন পরে কথা হবে।একথা বলার সাথে সাথে বাথরুমে ডুকে পড়লো।রুম সার্ভিস কল দিয়েছে স্যার রাতে কি খাবেন? কিছু খাবারের অর্ডার দিলাম মেয়েটির কথা চিন্তা করে।
বাথরুমে গেছে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে।অবশ্য মেয়েদের বাথরুমে সময় খুব বেশী লাগে।পানি মেয়েদের খুব প্রিয় জিনিস।পানি পেলে সহজে বের হতে চায় না।অনেকটা সময় পর বুঝতে পারলাম মেয়ে কাপড় ছাড়া বাথরুমে গেছে!
কি অদ্ভুত! আমি ভেবেছিলাম মেয়ে বুঝি বোকা এখন দেখি কয়েকধাপ এগিয়ে সে আমার শার্ট প্যান্ট পড়ে বেরিয়েছে! এ সব নিলো কখন!
ইতোমধ্যে খাবার দিয়ে গেছে।মেয়ে বের হয়ে আমার কোন প্রশ্নের উত্তর সে দিচ্ছে না।টেবিলে রাখা খাবার দেখে সুন্দর করে খাওয়া শুরু করলো!
একি কান্ড! এতো কোন কথাই আর বলছে না।ওমা খাওয়া শেষ করে সে
খাটে শুয়ে পড়েছে! আমি বললাম "আমি শুবো কোথায়? "
বলে" আপনার ইচ্ছে মত শুয়ে পড়েন খাটতো ছোট না!"
কি মেয়েরে বাবা এমন মেয়ে জীবনে দেখাতো দূরের কথা শুনিওনি! কোন কিছু মাথায় ঠুকছে না।মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। মেয়েটি শুয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছে! কেমনে সম্ভব? গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! হাত পা গুটিয়ে বাচ্চাদের মত ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত মুখখানি কি নিস্পাপ! অসম্ভব সুন্দর লাগছে!
আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম আকাশে আজ বড় চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলো এসে পড়েছে সামনের খোলা মাঠে। চারিদিকে শুনসান নিরবতা।
চাঁদের ঝাপসা আলোতে দূরের গাছপালা দেখা যাচ্ছে।চাঁদের আলো গায়ে মাখলে মনটা কেমন ভালো হয়ে উঠে! মনের অবসাদ অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে।ক্লান্ত শরীর কখন সোফায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের শব্দে। ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে বসে আছি!
আমি সোফায় কেন? ধীরে ধীরে রাতের সব মনে পড়লো।বিছানা খালি মেয়েটি কোথায়? বাথরুমের দরজা খোলা। দরজায় বেল ভাচ্ছে।
দ্রুত উঠে দরজা খুললাম।ছোটভাই অন্তু এসেছে। " কি খবর ভাইয়া? "
ভীতরে এসো।তোমাদের কি খবর বলো?
অদিকে সব ঠিক আছে আপনারা দ্রুত প্রস্তুত হয়ে বের হোন আমরা নিচে আছি।
রুমে এসে বারান্দায় গেলাম দেখি শার্ট প্যান্ট পড়ে দাড়িঁয়ে আছে মেয়েটি।
খোলা চুল ছড়িয়ে পড়েছে। শার্ট প্যান্টে মেয়েটিকে দারুণ লাগছে! কিছু মেয়ে থাকে এদের সব ধরনের পোশাকে ভালো লাগে।মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কি এখন মন ভালো হয়েছে?
আমার দিকে একটুখানি তাকালো কি ময়াবী চাহনি! এ চোখের গভীরতায় পৃথিবী হারিয়ে যাবে! "আপনাকে অনেক ঝামেলায় ফেলেছি না? "
ভালো লাগছে যাক স্বাভাবিক কথা বলছে।ভয় করে আবার না কান্না শুরু হয়ে যায়।দেখুন আমি এমন পরিস্থিতি কখনো পড়িনি।মেয়েদের সাথে মিশার অভিজ্ঞতা আমার খুব কম।একটু ঘাবড়ে গেছিলাম। আপনার নামটা জানা হয়নি এখনো।
আপনি খুব ভালো মানুষ! আমি তারিন।
আমি মোটেই ভালো মানুষ না, আপনি আমায় চিনতে ভুল করেছেন।মোবাইল রিং হচ্ছে। অন্তু কল দিচ্ছে। আচ্ছা দ্রুত তৈরি হোন এখন বের হতে হবে আমার একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে।
আপনি যান আমি চলে যাবো।
বলে কি মেয়ে! "আপনি বুঝতে পারছেন না, আপনি না গেলে ঝামেলা বাড়বে সে পরে খুলে বলবো।এখন সময় কম।
অনুষ্ঠান ভালোই আয়োজন করেছে এরা। অনেক গন্যমান্য লোকজন এসেছে।অল্প কিছু বলে আমার আলোচনা শেষ করেছি। সেই বাংলো থেকে ছোট ভাইরা আমাকে রেখে তারিন কে নিয়ে ব্যস্ত! ভাবি বলে ডাকছে, কেমন লাগে! কি আশ্চর্য মেয়েটি কিছু বলছে না! সুন্দর হাসি মুখে ওদের সাথে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষে এখন এসেছি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আসলে বিশাল জায়গা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি।বিভিন্ন কৃষি কাজের জন্য বিশাল খেত সেখানে নানা রকমের ফসল লাগানো।ছোট ছোট মাছ চাষের ব্যবস্থা আছে, হাস মুরগির নানা প্রজনন। অসম্ভব সুন্দর একটা বিশ্ববিদ্যালয়।তারিন ওদের সাথে একটু দূরে ঘুরে ঘুরে সব দেখছে এখন মনে প্রান খুলে হাসছে। এ সময় মোবাইল ভেজে উঠলো বের করে দেখি মা কল দিয়েছে। কল রিসিভ করলাম কোন কথা বলছে না কান্নার শব্দ। কি হয়েছে মা? কাদঁছো কেন!
মা কান্নার মাঝে একটু ঝাড়ি দিয়ে বললো কে তোর মা?
আবার কি হলো?
কি হয়নি তুই বিয়ে করেছিস সেটা আমাকে শুনতে হলো অন্য মানুষের কাছে! আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে করেছে আমি জানি না।সে বউ নিয়ে ঘুরতে যায়। আমায় বলে যায় না।আমি কি তোর বউ কে মনে নিতাম না।কতবার তোরে জিজ্ঞেস করেছি তোর পছন্দ থাকলে বল।আমি সেই মেয়েকে মেনে নিবো।ছেলে আমার বলে কিনা এখন বিয়ে করবে না।আর আমায় না জানিয়ে বউ নিয়ে ঘুরতে যায়।
কি বলছো তুমি? এসব তোমায় কে বললো।
আমি কোন কথা শুনতে চাইনা বউ নিয়ে সোজা বাড়িতে আয়।
মায়ের কথায় অবাক হলাম, মা জানবে কিছুটা আচঁ আগেই করেছিলাম তাই বলে এতো দ্রুত! এটা বড় কোন ব্যাপার না, মা কে পরে বুঝানো যাবে।এখন এসেছি জয়নাল আবেদীন নামে একটা পার্কে। পার্কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদী।নানা রকম গাছের সারি মাঝে মাঝে বসার কিছু বেঞ্চ। খুব বড় না হলেও দেখতে বেশ ভালো লাগে পার্কটা।
ময়মনসিংহ শহরটা খুব গোছানো বলা যায় সব শহরের মতো এখানেও আছে যানযট নামক যন্ত্রণা! ঢাকা চট্টগ্রামের মত বড় না হলেও খুব একটা ছোট না এ শহর।দিনের বড় একটা সময় কেটে গেলো শহর ঘুরে দেখতে।এ লম্বা সময় ধরে তারিন আমাদের সাথেই আছে এটা কেমন অস্বাভাবিক লাগলো আমার কাছে অচেনা একটা মেয়ে হুট করে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে! ছেলেগুলোর সাথে এমনভাবে মিশে গেছে সত্যি সত্যি আমাদের মাঝে একটা বন্ধন আছে! সব কেমন রহস্যময় লাগছে! কে এই তারিন?
তারিন কে প্রশ্ন করার অবকাশ হলো না।পুরোটা সময় জুড়ে ছোট ভাই গুলো সাথে সাথে ছিলো।এখন ফিরার পালা ওরাও আমার সাথে ফিরবে।
কি আশ্চর্য তারিন আমাদের সাথে আসছে! এতে ওর মাঝো কোন ধরনের অসংকোচ নেই।মনে হচ্ছে সব স্বাভাবিক। তারিনের সাথে সত্যি একটা সম্পর্ক আছে এমন মনে হচ্ছে দেখে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা তারিন কে। শুরু থেকে কেমন একটা রহস্যের দেয়াল ঘিরে আছে। মায়ের সামনে এ মেয়ে উপস্থিত হলে বড় হাঙ্গামা বাধঁবে।আচ্ছা তারিন কি কিছুই বুঝতে পারছেনা।না বুঝার কারন নেই। ও ইচ্ছে করেইতো সব করছে। এমন না সে আচমকা এ পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে।
বাড়িতে এসেছি সাথে তারিন অন্তুরা সবাই। বাড়িতে এসেতো আমার অবস্থা চোখ ছানাবড়া! প্রায় সব আত্মীয় স্বজন উপস্থিত।বাড়ি সাজগোছ করা ঘটনা এতো দূর গড়িয়েছে! মা দেখি হাট ঘাট বেঁধে নেমেছে।
বাড়িতে প্রবেশ করতেই খালাতো বোন দৌড়ে এসেছে ভাইয়া বউ নিয়ে এসেছো?
আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম ভাগ এখান থেকে। তারিন মনে হয় মজা পাচ্ছে! মায়ের কাছে গেলাম মা এসব কি শুরু করেছো?
মা রাগ দেখিয়ে বলছে কোন কথা বলবি না।তোর সাথে কোন কথা নেই।তবে বউ আমার পছন্দ হয়েছে।
আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না।মা কোন কথা শুনতেই চাচ্ছে না। আমিও দেখি কি হয়।একটু পর মামা ডাকলো যেয়ে দেখি খালা, মামা বসে আছে।আমার মামা একটু গুরুগম্ভীর প্রকৃতির লোক।খালা মনঃখারাপ করে বসে আছে! আমার দিকে শুকনো মুখে তাকিয়ে মুখ সরিয়ে নিলো অন্য দিকে।খালা আমায় বড় ভালোবাসে।খালার কোন ছেলে নেই এ জন্যে ভালোবাসার মাত্রাটা খুব বেশি। মামা কে সালাম দিলাম। কেমন আছেন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একটু গম্ভীরমুখে বসতে বললেন।
মামা বলা শুরু করলো তোমার কাছে এমনটা প্রত্যাশা করিনি।তুমি আমাদের বলতে পারতে।তুমি ছাড়াতো বুবুর কেউ নাই।তোমার বাবা গত হওয়ার পর কত কষ্টে তোমাকে মানুষ করেছেন।তোমাকে ঘীরে আমাদের অনেক স্বপ্ন। যা হওয়ার হয়েছে এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাদের আবার বিয়ে দিবো।পূর্বে কি করেছো সেতো আমরা দেখিনি।
আমাকে বলার সুযোগ দেয়া হলো না।সব এরা আগে থেকেই করে রেখেছে। আসলে গত দুবছর ধরে আমাকে বিয়ে করানোর জন্য এরা উঠে পড়ে লেগে কোন কূলকিনারা করতে পারেনি।এ সুযোগে আমায় বেঁধে দেয়ার সব রকম ব্যবস্থা করে ফেলেছে। মনে হয় না এখান থেকে বের হতে পারবো।বের হওয়ার ইচ্ছে খুব একটা নেই। তারিন আমার পছন্দ।
তারিন আর আমার বিয়েটা হয়েই গেলো।তারিন খুব মজার মধ্যেই আছে।সব অবিশ্বাস্য লাগছে তাইনা? আত্মীয় স্বজনের পাল্লায় পড়লে বুঝতেন এরা কি জিনিস!
বাসর ঘরে এসে দেখি তারিন বসে আছে বড় ঘোমটা দিয়ে।আমি রুমে প্রবেশ করে তারিনের পাশে বসে বললাম এখনো কি? কাদঁবে, না জবাব দিতে পারবে নিতু।আমার কথা শুনে ঘোমটা ফেলে বড় বড় চোখে তাকালো।নিতুর চোখে বিস্ময়!
তোমরা কি ভাবছো আমি কিছুই বুঝবো না।এতোসব ঘটনা কি স্বাভাবিক হয়?
তুমি প্রথমে আমাকে চিনেছো?
না,বাসের মধ্যে চিনতে পারিনি।সেই ছোটবেলায় দেখেছি এতোবছর পরে চিনা যায়।
তাহলে কখন বুঝতে পারলে?
অজানা একজন ছেলের রুমে প্রবেশ করে একা একটা মেয়ে এতো নির্ভয়ে! আমার সন্দেহ হলো যখন তুমি হুট করে বাথরুমে চলে গেলে।
একটা মেয়ে কখনোই এটা করতে পারে না।অজানা কোন ছেলের রুমে বলার সাথে সাথে বাথরুমে চলে যাবে না।যে মেয়েটি শুধুই কাদঁছে হঠাৎ করে এমন আচরণের পরিবর্তন আমায় ভাবিয়ে তুললো।
তাতেই বুঝে গেলে আমি নিতু?
না,ভাবতে শুরু করলাম তখন তোমার ছোট হাতব্যাগটা কিছুটা সহায়তা করলো।
তাইতো বলি বলদটা এতো নিঃসংশয় থাকে কি করে।বলে আমি ঘুমাবো কোথায়! এতোটা স্বাভাবিক! আন্টি যেমন বলেছে তার সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না।অবশ্য রুমে প্রবেশ করার পর তোমার যা অবস্থা হয়েছিল। দেখে এমন হাসি পাচ্ছিলো অনেক কষ্টে হাসি লুকিয়েছি।রুমে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো না।এটা অন্তুর বুদ্ধি।
অন্তু সব জানতো! তাইতো বলি বেটা এতো স্বাভাবিক কেন? কান্না বুঝি হাসি লুকানোর মাধ্যম, ওমন করে কাঁদা যায়!নিতু হলো আমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে ছোটবেলায় আমরা একসাথে কত খেলা করেছি।ওরা বিদেশে চলে যাওয়ার পর খুব একটা যোগাযোগ ছিল না।মার হয়তো ওদের সাথে যোগাযোগ ছিলো।তুমি যে আমার রুমে রাতে থাকলে ভয় করলো না? যদি আমি কিছু করে ফেলতাম।
তোমাকে আমি চিনি না? তুমি কোন মেয়ের ক্ষতি করতেই পারো না।এতটুকু বিশ্বাসতো আছে।না হলে বিয়েতে রাজি হতাম।আন্টি বললো তুমি মেয়েদের ব্যাপার অনাগ্রহী। বিয়ে করতে চাচ্ছো না।
সব খবর নেয়া হয়ে গেছে দেশে এসে, শুধু আমিই কিছু জানিনা।সেদিন ছেড়ে দিয়েছি আজ ছাড়বো এমন আশা করো না।
আজ তোমাকে ছাড়তে বলেছে কে? নিতু হাসছে।
কি সুন্দর হাসি মনে হয় মুক্তা ঝরে পড়ছে সারা ঘরটা হাসির আনন্দে ভরে গেছে, দেয়ালা গুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে আনন্দের আমাজে!
সমাপ্ত
@ নাবিল মাহমুদ